মস্তিষ্ক ভালো রাখার সহজ উপায় - ১০০% কার্যকারী
মস্তিষ্ক হল মানব দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান একটি অংশ। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের যে স্ফীত ও জটিল অংশ মানুষের করোটিকার মধ্যে সুরক্ষিত থাকে এবং দেহের সকল কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে তাকে মস্তিষ্ক বলে। বর্তমান সময়ে অনেকের মনে এ প্রশ্ন থাকতে পারে যে মস্তিষ্ক ভালো রাখার উপায় গুলো কি কি? নিম্নে বিস্তারিত
ভূমিকাঃ
সময়ের সাথে সাথে মানুষের মস্তিষ্ক সম্পর্কে জানার আগ্রহ বেড়েই চলেছে। যেমন মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে? মস্তিষ্ক ভালো করার উপায় এবং মস্তিষ্কের উন্নতির জন্য কোন ধরনের খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা উচিত ইত্যাদি।
গবেষণার ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে যে কিভাবে আমরা আমাদের মস্তিষ্ক কে ইমপ্রুভ করতে পারি সেগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। মস্তিষ্ককে অধিকতর ভালো করতে বা ভালো রাখার জন্য প্রধানত ২ টি উপায় অনুসরণ করা যায়।প্রথমত ব্রেইনটাকে ব্যায়াম করাতে হবে, দ্বিতীয়টি মস্তিষ্ক কে ভালো করতে পারে সেই সব খাবার খেতে হবে।
মস্তিষ্ক ভালো রাখার সহজ উপায়- ১০০% কার্যকারীঃ
মস্তিষ্ক ভালো রাখতে, মস্তিষ্ক এর ব্যায়ামের বিকল্প নেই। এখন কিভাবে মস্তিষ্ক ব্যায়াম করতে হয় তা পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলোঃ
প্রার্থনা (Prayer)ঃ
প্রত্যেক ধর্মেরই প্রার্থনার একটি নিয়ম ও নীতিমালা রয়েছে সেগুলো মনোযোগ সহকারে বুঝে পালন করা। যেমন ইসলামের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও অন্যান্য নীতিমালা, হিন্দুদের পূজার্চনা ও অন্যান্য নীতিমালা, খ্রিস্ট ধর্মের ধর্মীয় নীতিমাল, বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মীয় নীতিমালা ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ মস্তিষ্কের জন্য সেরা খাবার
আর যারা কোন ধর্মই বিশ্বাস করেন না বা মানেন না তারা মেডিটেশন করতে পারেন। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থকে অবশ্যই এগুলো করনীয় এবং এগুলো নিয়মিত করলে মস্তিষ্কের প্রচুর পরিমানে ট্রেইনিং হয়। এটি গবেষনায় প্রমাণিত।
কল্পনা করা (Imagination) ঃ
ধরুন আপনি স্কুলে কলেজে বা আপনার কর্মক্ষেত্রে যাবেন। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে কয়েকটা মুহূর্ত চিন্তা করবেন যে আপনি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কি কি জিনিস দেখতে পারেন?, কয়টা দোকান আছে? বা দোকানে কতজন মানুষ থাকতে পারে? এ বিষয়গুলো আপনি ইমাজিন বা কল্পনা করবেন।
এরপর আপনি যখন ঐ পথ ধরে যাচ্ছেন একটু মিলানোর চেষ্টা করবেন যে, আপনি যা যা কল্পনা করেছিলেন সেইগুলো কি মিলছে কিনা ধরুন কিছুই মিলল না। এতেও কোন সমস্যা নেই। এই যে আপনার মস্তিষ্ক প্রথম একটা জিনিস কে এক্সপেক্ট করেছে, এবং পূর্বের সাথে এটি মিলিয়ে দেখছে এইখানে যে একটা ট্রেনিং হলো, এই ট্রেনিংটা মস্তিষ্ক ফাংশনটাকে ইম্প্রুভ করতে পারবে।
সবগুলো ইন্দ্রিয় একসাথে ব্যবহার করা (Using all the senses together )ঃ
প্রথমে জানতে হবে ইন্দ্রিয় গুলো কি? পঞ্চ ইন্দ্রিয় গুলো হল- চক্ষু (চোক), কর্ণ (কান) , নসিকা (নাক), জিহ্বা (জিভ), ত্বক(চামড়া)। এই সবগুলো ইন্দ্রিয় গুলোকে একসাথে ব্যবহার করতে হবে। গবেষণায় এসেছে যে এগুলোর ব্যবহার যদি একসাথে করা হয় তাহলে মস্তিষ্ক ফাংশনটা ভালো হয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ধরুন যদি আপনি নতুন একটি রেস্টুরেন্টে যান এবং সেখানে গিয়ে একটি নতুন খাবার ট্রাই করেন সেক্ষেত্রে কিন্তু এটা করা সম্ভব। এখন প্রশ্ন হতে পারে কিভাবে? এইটা একটা নতুন রেস্টুরেন্ট আপনি এর আগে কখনো সেখানে যাননি, সেখানকার এনভারমেন্ট বা পরিবেশ আপনার জন্য নতুন।
আরো পড়ুনঃ মানব মস্তিষ্ক সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
তার মানে সেখানে যে শব্দগুলো আপনি শুনছেন সেই শব্দটা আপনার কাছে নতুন শব্দ, যে খাবারের স্বাদ নিচ্ছেন সেটিও নতুন স্বাদ, এই খাবারের যে ঘ্রাণ পাচ্ছেন সেটিও নতুন, খাবারটি যে দেখছেন সেটিও নতুন এবং সেই খাবারটি স্পর্শও করছেন। এরকম আরো উদাহরণ আপনি নিজেও কল্পনা করতে পারেন যে কিভাবে এই পঞ্চ ইন্দ্রিয় গুলো একসাথে ব্যবহার করা সম্ভব।
ব্যায়াম (Exercise)ঃ
যখন আমরা শারীরিক ব্যায়াম করি যেমন, হাটাহাটি করা, খেলাধুলা করা, জিমে জাওয়া ইত্যাদি। বিজ্ঞানের গবেষণায় দেখেছেন যখন আমরা শারীরিক ব্যায়াম করি তখন আমাদের মস্তিষ্কের যে নিউরন গুলো আছে তাদের কানেক্টিভিটি বাড়তে থাকে এবং সেই সাথে মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
পুনরাবৃত্তি (Repetition)ঃ
প্রত্যেক মানুষই সারাদিনে কোন না কোন কাজ করে। সেটা হতে পারে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা কর্মস্থলে বা অন্যান্য যেকোনো জায়গায় হতে পারে। দিন শেষে যখন ঘুমোতে যাবেন তখন সারাদিনের কর্মব্যস্ততা পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করব। প্রতিনিয়ত পুনরাবৃত্তি করার ফলে মস্তিষ্কে স্মৃতিসক্তির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে সেই সাথে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
ঘুম (sleep)ঃ
আমেরিকার সেন্টার ফর ডিসিস কন্ট্রোল (CDS)একটি জাতীয় জনস্বাস্থ্য সংস্থা, তারা এটি প্রকাশ করেছে যে ভারত উপমহাদেশের ক্ষেত্রে প্রত্যেকদিন সর্বনিম্ন ৭ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। এই সময় যদি আমরা ঘুমাই তাহলে দেখা যায় যে আমাদের মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা পুনরায় বৃদ্ধি পায়। এবং সেই সাথে মস্তিস্কের যে নিউরন গুলো রয়েছে একটা নিউরনের সাথে আর একটা নিউরনের সিনাপ্সিং ক্যাপাসিটি ভালো হয়।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবার/ মস্তিষ্কের জন্য সেরা খাবারঃ
মস্তিষ্ক কে শক্তিশালী করার জন্য এবং বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি করার জন্য যে খাবারগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো হলঃ
- মাছঃ মাঝে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে 'ওমেগা থ্রি' ফ্যাটি অ্যাসিড যা মস্তিষ্ক কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
- ডার্ক চকলেটঃ ডার্ক চকলেটে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা, মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- বেরি জাতীয় ফলঃ মস্তিষ্ক কে সুস্থ রাখতে বেরিয়ে জাতীয় ফল খুবই উপকারী। কারণ, বেলি জাতীয় ফলেও রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন উপকারী উপাদান যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
- বাদামঃ বাদামে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে 'ভিটামিন ই' যা কিনা মস্তিষ্ক থেকে ক্ষতিকর পদার্থকে বের করে দিতে সাহায্য করে।
- গোটা দানা শস্যঃ নিয়মিত ব্রাউন রাইস, বার্লি, আটার তৈরি খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ এতে উপস্থিত 'ভিটামিন ই' মস্তিষ্কের খেয়াল রাখার কাজে একাই একশো।
মানব মস্তিষ্ক সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ
আমাদের দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল অঙ্গের নাম হচ্ছে মস্তিষ্ক। মানব মস্তিষ্কের এই উন্নত গঠন প্রণালী এবং কার্যপ্রণালী অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় মানব মস্তিষ্ক সম্পর্কে বেশ কিছু আশ্চর্যকর তথ্য বেরিয়ে এসে। নিম্নে এগুলো উল্লেখ করা হলোঃ
- মানুষের মস্তিষ্ক ওজন প্রায় ৩ পাউন্ড যা আমাদের শরীরের ২ শতাংশ। কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক শরীরের অক্সিজেন ও রক্তের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ গ্রহণ করে থাকে।
- পুরুষদের তুলনায় নারীদের মস্তিষ্ক ছোট হয়ে থাকে। গবেষণায় বলা হয়েছে পুরুষদের মস্তিষ্কের তুলনায় নারীদের মস্তিষ্ক ১০% ছোট হয়ে থাকে।
- মানুব মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশই তৈরি হয় চর্বি বা ফ্যাট দিয়ে। তাই মানব মস্তিষ্ককে বলা হয় মানবদেহে সবচেয়ে ফ্যাটিয়েস্ট অর্গান বা অঙ্গ। সে জন্যই ফ্যাটি এসিড মানব মস্তিষ্কের পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- একটি সজাগ বা সচল মস্তিষ্ক দৈনিক প্রায় ২৩ ওয়াটের মতো শক্তি উৎপন্ন করে। যার দ্বারা একটি ছোট আকারের বৈদ্যুতিক জ্বালানো যেতে পারে।
- গবেষণায় প্রমাণিত যে মানব মস্তিষ্ক একটি সুপার কম্পিউটারের থেকেও জটিল। একটি মস্তিষ্কে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন নিউরন থাকে। এই নিউরন মানব দেহের সবচেয়ে লম্বা এবং দীর্ঘজীবী কোষ।
- মানব মস্তিষ্কে যে রক্তনালী রয়েছে তা একসাথে করলে মোট দৈর্ঘ্য হবে ১৬১০০০ কিলোমিটার। যা দ্বারা পুরো পৃথিবীকে ৪ বার ঘিরে ফেলা যাবে।
- মস্তিষ্কে ধারণক্ষমতা সীমাহীন। মস্তিষ্কের এই সীমাহীন ধারণক্ষমতা দ্বারা ক্রমাগতভাবে ৩০ লক্ষ ঘন্টা বা ৩৪২ বছর একটানা ভিডিও রেকর্ডিং ও মস্তিষ্কে ধারণ করতে পারে।
- মস্তিষ্ক মানব দেহের শক্তির প্রায় ২০ শতাংশ ব্যবহার করে থাকে।
- একজন সুস্থ মানুষের মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা ২৫ লক্ষ্য GB।
- গবেষণায় বলা হয়েছে মানুষের দ্বিতীয় একটি মস্তিষ্ক রয়েছে যা অন্ত্রিয় স্নায়ুতন্ত্র হিসেবে পরিচিত। এই অন্ত্রিয় স্নায়ুতন্ত্র স্বাধীনভাবে চলতে পারে। আমরা এই স্নায়ুতন্ত্রের কারণে অন্ত্রের অনুভূতি বুঝতে পারি।
- অধিকাংশ মানুষ ঘুম থেকে জেগে ওঠার প্রথম ৫ মিনিটে স্বপ্নের পাঁচ শতাংশ ভুলে যায় এবং পরবর্তী ১০ মিনিটে বাকি ৯০ শতাংশ ভুলে যায়।
- মস্তিষ্ক মানুষ ভেদে অর্থাৎ পরিচিত এবং অপরিচিত মানুষের সাথে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখায়।
- শব্দ করে পড়া এবং শিশুদের সাথে কথা বলা মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য মঙ্গলজনক।
- এটা ধারণা করা হয় যে, একবার হাই তোলা মস্তিষ্কে বেশি অক্সিজেন পাঠাতে কাজ করে যাতে মস্তিস্ক শান্ত।
- আপনি নিজে নিজেকে কাতুকুতু বা সুরসুরি দিতে পারবেন না কারণ আপনার মস্তিষ্ক, আপনার স্পর্শ এবং অন্য কোন স্পর্শের পার্থক্য করতে পারে।
- মানুষের মস্তিষ্কের প্রায় ৭৩ % পানি।
লেখকের মন্তব্যঃ
নতুন কিছু শিখতে ,চিনতে ,জানতে কিংবা পর্যবেক্ষণ করতে আমাদের মস্তিষ্ক কতটা ক্রিয়াশীল তা হয়তো অনেকেই জানেন না। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে আধুনিক নিউরো সাইন্স এবং নিউরো সাইকোলজি আমাদের দৈনন্দিন কাজের উপর আমাদের মস্তিষ্ক ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে অনেক দূর গবেষণা চালিয়েছে । আর তাই দিনের পর দিন মানুষের কৌতুহলের বিষয় হয়ে উঠেছে মানব মস্তিষ্ক।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url