এজমা বা হাঁপানি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

এজমা বাহা পানি একটি পরিচিত রোগ হলেও আমরা অনেকেই এর মূল কারণ ও উপসর্গগুলো জানিনা। অনেকে আবার বিভিন্ন ভুল ধারণা পোষণ করেন এ রোগ নিয়ে। আর তাই প্রত্যেক ব্যক্তির এজমা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি ও এর প্রতিকার কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
এজমা  বা হাঁপানি রোগের লক্ষণগুলো কি ও এর প্রতিকার কিভাবে করা যায়?


ভূমিকাঃ

 এজমা বা হাঁপানি অথবা শ্বাসকষ্ট এমন এক ধরনের রোগ যা প্রত্যেকটা মানুষই কোন না কোন সময় অনুভব করে থাকে। বর্তমান বিশ্বের যে জনসংখ্যা রয়েছে তার ১০০ ভাগের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ ভাগ মানুষের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু এই রোগে সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা অনেক কম।যার জন্য সাধারণ যে মানুষগুলোর এই রোগটি রয়েছে তারা বেশি ভোগান্তিতে পড়ে।


কারণ তারা এজমা রোগের লক্ষণগুলো কি ও এর প্রতিকার কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে জানে না। অনেকের ধারণা করে যে এটা একটি শিশুদের সমস্যা। কিন্তু সেটি পুরোপুরি ঠিক নয় কারণ এজমা যে কোন বয়সের মানুষের হতে পারে। আর তাই প্রত্যেকের উচিত সচেতন ভাবে এজমা বা হাঁপানির প্রতিরোধ করা।

এজমা হাঁপানি রোগের লক্ষণ গুলো কি কি?

এজমা হল শ্বাসনালির একটি প্রদাহ জনিত রোগ। এই রোগের ৪ টি প্রধান লক্ষণ বা উপসর্গ রয়েছে। লক্ষণ গুলো হলঃ

  • কাশিবা এবং কাশির সাথে কফ থাকবে
  • বুকে চাপ অনুভূত হবে
  • শ্বাসকষ্ট হবে
  • শ্বাস নেওয়ার সময় বাঁশির শোঁ শোঁ মতো শব্দ হবে
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ গুলো কি কি ও এর প্রতিকার

উপরোক্ত উপসর্গ গুলো ছাড়াও আরো কয়েকটি কারণে হাঁপানি হতে পারে। তবে সাধারণত এ লক্ষণ বা উপসর্গ থাকলে সেটা এজমা বা হাঁপানি রোগের ইঙ্গিত দেয়। অর্থাৎ যে ব্যক্তির শরীরে এ ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাবে সে ব্যক্তি এজমা হাপানি রোগে আক্রান্ত।

এজমা হাঁপানি রোগটি কেন হয় ?

এখনো পর্যন্ত এজমা বা হাঁপানি রোগের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই রোগটা অনেকটা বংশগতভাবে হয়ে থাকে। বংশের কারো যদি এজমা থাকে তাহলে অনেকাংশে পরবর্তী প্রজন্মের কারো এজমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


  • চারপাশের পরিবেশের জন্য এজমা হতে পারে। যেমনঃ ধুলাবালি যুক্ত পরিবেশে থাকলে তা শ্বাস শ্বাসনালী কে ক্ষতিগ্রস্ত করে সৃষ্টি করতে পারে।
  • যদি কোন দ্রব্যের প্রতি অতিমাত্রায় অ্যালার্জি থাকে সে ক্ষেত্রেও এজমা বা হাঁপানি হতে পারে।
  • শাসনালী অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হলে হাঁপানি হতে পারে।
  • যারা ধূমপান করেন তাদের ক্ষেত্রেও এই এজমা বা হাঁপানি রোগটি হতে পারে। এজমা আক্রান্ত ব্যক্তিরা যখন ধূমপান করে তখন তাদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট অনেক অংশে বাড়িয়ে দেয়।
  • কোন খাবারের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকলে এই রোগটি হতে পারে।

এজমা রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি ?

এজমা কাহা পানি রোগ সম্পূর্ণরূপে নির্মল করা না গেলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ এবং পরিকল্পিত চিকিৎসা। নিম্নে এর কোন ব্যক্তির এজমা বা হাঁপানি রোগ হলে এর জন্য কোন ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজন তা উল্লেখ করা হলো।

প্রধানত ইনহেলারের সাহায্যে এজমা রোগের চিকিৎসা করা হয়। আবার দুই ধরনের ইনহেলার এর মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয় যার একটি হলো Blue ইনহেলার এবং অপরটি হল Brown ইনহেলার।

Blue ইনহেলার কিভাবে এজমা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেঃ

Blue ইনহেলার টি মূলত রেসকিউ হিসেবে কাজ করে। যখন রোগের অনেক শ্বাসকষ্ট হয় বা কাশি হয় তখন এই Blue ইনহেলারটি ব্যবহার করা হয় এজমা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। শ্বাসকষ্ট সময় রোগী এটিকে বার বার ব্যবহার করতে পারে।

Brown ইনহেলার কিভাবে এজমা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেঃ

এ ব্রাউন ইনহেলার টি ব্যবহার করা হয় মূলত এজমা রোগটি যেন সহজে আক্রমণ করতে না পারে সেই জন্য। এই ইনহেলার টি ব্যবহার করলে যেসব জীবাণু বা ভাইরাস এর জন্য এজমা বা হাঁপানি রক্ত হতে পারে সে ধরনের জীবাণু বা ভাইরাসকে মানব শরীরে আক্রমণ করতে বাধা প্রদান করে বা তাদের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।

এজমা চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে রোগীদের এজমা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকা প্রয়োজন। কারণ একজন রোগী যদি এই রোগটা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখে তাহলে খুব সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব তবে অবশ্যই তা পরিকল্পিত হবে।

এজমা বা হাপানি প্রতিরোধ করার কার্যকরী উপায়ঃ

এজমা মূলত একটি এলার্জি জনিত সমস্যা। সুতরাং প্রথমে সনাক্ত করতে হবে যে কোন কোন দ্রব্যের বা জিনিসের প্রতি রোগের অ্যালার্জি হয়। যেসব জমবে রোগীর এলার্জি থাকে বা এলার্জি হয় সেই ধরনের দ্রব্য পরিহার করতে হবে।
  • যেমন অনেকের ধুলোবালি, ময়লা আবর্জনা, ঠান্ডা বাতাস, যে কোন প্রকার ঠান্ডা জিনিস অথবা পারফিউম ব্যবহার করলে এনার্জি হতে পারে। অতএব যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে এলার্জি জাতীয় জিনিসের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার।
  • বাড়িকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাসায় যদি কার্পেট থাকে তাহলে তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ কার্পেটে এমন উপাদান রয়েছে যা এজমা সৃষ্টির জন্য দায়ী হতে পারে। বাসায় কুকুর বিড়াল এ জাতীয় প্রাণী পোষা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • এজমা নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাক্তারের সাথে একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে। এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন ধারণ করতে হবে।
  • নিয়মিত এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম করতে হবে। ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে কারণ এর মাধ্যমে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে কারণ তুলনামূলক ভাবে যাদের ওজন বেশি, তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এজন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার।

হাঁপানি হলে কোন কোন খাবার খাওয়া নিষেধ ?

হাঁপানি মূলত এলার্জি জনিত রোগ। আর তাই হাঁপানি রোগীদের খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে হাঁপানি রোগীদের কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

 এলার্জি বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে হতে পারে তাই হাঁপানি হলে এলার্জি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে সেই সাথে আরো কিছু খাবার খাওয়া নিষেধ যে খাবারগুলো এজমা বা হাঁপানির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এই সময় নিম্নে কোন ধরনের খাবার খাওয়া নিষেধ সে খাবার গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
  • আমিষ জাতীয় খাবার যেমন দুধ, ডিম, মাছ ব্রয়লার মুরগি গরুর মাংস ইত্যাদি খাবার হাঁপানি রোগীদের না খাওয়াই ভালো কারণ এসব খাবার প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যে এলার্জির পরিমাণ বাড়িয়ে হাঁপানি সমস্যা সৃষ্টি করে।
  • কৃত্রিম জুসঃ বাজারে অনেক ধরনের কৃত্রিম জুস পাওয়া যায়। অনেকে অনেক সময় এ ধরনের জুস খেয়ে থাকে। কারণ কৃত্রিম জুসের বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল মিশ্রিত থাকে যা হাঁপানের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আর তাই এটি যথাসম্ভব না খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
  • আচার জাতীয় খাবারঃ অনেকে আচারে সালফিটস উপাদান থাকে যা শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সময় সমস্যা তৈরি করে।
  • শুকনো খাবারঃ দুপুরের খাবারের পরিবর্তে অনেকেই শুকনো খাবার খেয়ে থাকে। এসব শুকনা খাবারে অনেক হাঁপানি সৃষ্টিকারী উপাদান থাকে। এজন্য বিস্কিট, বার্গার, পিজ্জা ফ্রাইড চিকেন ইত্যাদি এসব খাবার না খাওয়াই একজন হাঁপানের ক্ষেত্রে উত্তম।
  • ফাস্টফুড ও বাদাম জাতীয় খাবারঃ বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বিফ স্টেক অ্যালকোহল ইত্যাদি খাবার গুলো হাঁপানির পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও চীনা বাদাম স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও হাঁপানি রোগীদের ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর। যতটা সম্ভব এসব খাবার হাঁপানি রোগীদের এড়িয়ে চলা উচিত।
  • কৃত্রিম চুনঃ কৃত্রিম এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো হাঁপানে বৃদ্ধি করতে পারে।
  • লবণঃ লবণ শ্বাস নারীদের প্রদাহ এবং শক্ত হয়ে যেতে পারে। যদি এমনটা হয় সেক্ষেত্রে এজমা নিয়ন্ত্রণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আচারের মতো প্রচুর লবণযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
  • কোন খাবারের সাথে টমেটো এবং লেবু যোগ করবেন না।

হাঁপানি হলে কোন কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত

হাঁপানি একটু শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত জটিল সমস্যা। হাঁপানি বলতে শ্বাস নারী চিকন বা শুরু হয়ে যায় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। হাঁপানি আক্রমণে রোগের প্রাণ পর্যন্ত চলে যেতে পারে। আর তাই সঠিক খাবার এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে এরকমই কিছু খাবারের উল্লেখ করা হলো যে খাবারগুলো খেলে এজমা রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারে আসবে।


  • সকালে ঘুম থেকে উঠে গরম পানি পান করতে হবে। এটি আপনার শ্বাসনালী কে শিথিল করতে সাহায্য করে এবং আপনার শরীর থেকে স্লেষ্মা পরিষ্কার করে।
  • চর্বিযুক্ত এবং টক খাবার এড়িয়ে চলতে হবে বাষ্পযুক্ত স্প্রাউট ও বাষ্প যুক্ত সবজির মত তাজা খাবার বেছে নিতে হবে এবং সেগুলোকে কিছুটা শিলা লবণ এবং ভাজা জিরার গুঁড়ো দিয়ে মিশ্রিত করে তারপর খেতে হবে।
  • আপনি যদি সাধারণত প্রাসের জন্য পরোটা খান তবে সেগুলো কম তেল দিয়ে তৈরি করুন এবং টক উপাদানগুলি এড়িয়ে যান। সবুজ সবজি ও পনিরের মতো স্বাস্থ্যকর ফিলিংস ব্যবহার করুন।
  • অনেকেই সকালের নাস্তায় চা কফি বা জুসের মতো পানীয় পান করে। আপনার এম এন সিস্টেম এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য বাড়াতে আপনি আদা, দারুচিন্‌ লবঙ্গ এবং এলাচের মত আয়ুর্বেদিক ভেষজ করে আপনার চা কে স্বাস্থ্যকর করতে পারেন।
  • গ্রিন টি হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি ভালো নাস্তা হতে পারে কারণ এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • নিয়মিত দুধ পান করতে হবে তবে অবশ্যই এটিকে আরও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে আদা, লবঙ্গ এবং এলাচের মতো আয়ুর্বেদিক ভেষজ যোগ করার কথা বিবেচনা করুন।
  • সকালে আপেল, পেঁপে এবং কমলার জুস খেতে পারেন। কমলার রস ভিটামিন সি তে পরিপূর্ণ এবং এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। গাজর বোতল জাত করলা এবং বিটের মতো সবজির রসও রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট এর তালিকায় থাকতে পারে।
  • বাদাম একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প। বেশি পুষ্টির জন্য প্রতিদিন সকালে কিছু পরিমাণ বাদাম এবং আখরোট খাওয়া যায়।
  • এজমা রোগীদের ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ বিশেষ উপকারে আসে। প্রত্যেকদিন এক ইঞ্চি করে কাঁচা হলুদ ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে হবে অথবা একটু থেঁতো করে হালকা গরম পানিতে গুলেও খাওয়া যায়।
  • দুপুরের খাবারের, আধা ঘন্টা পূর্বে ১ ইঞ্চি পরিমাণ আদা এবং সামান্য লবণ সহ চিবিয়ে খেতে হবে।
  • তুলসী পাতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উপাদান। এটিকে দুইভাবে খাওয়া যায়, তুলসী পাতা থেতো করে অথবা চিবিয়েও খাওয়া যায়। প্রত্যেকদিন প্রায় ৭-৮ টি তুলসী পাতা খাওয়া সবচেয়ে উত্তম। তবে চেষ্টা করতে হবে যেকোনো সময় খাবার পড়বে খাওয়ার তবে রাতে না খাওয়াই ভালো।

যক্ষা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি ও এর প্রতিকার

যক্ষ্মা বা যক্ষা (ইংরেজি: Tuberculosis, টিউবার্‌কিউলোসিস্‌ বা টিবি) একটি সংক্রামক রোগ যার কারণ মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস (Mycobacterium tuberculosis) নামের জীবাণু(Pathogen)।সারা বিশ্বে এই রোগে প্রতি বছর মারা যান ২২ লাখ মানুষ৷ যক্ষা একটি সংক্রামক ব্যাধি। যা প্রধানত ফুসফুসকে আক্রান্ত করে।
যক্ষা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি ও এর প্রতিকার


যক্ষা বলতে সাধারণভাবে আমরা ফুসফুসের যক্ষা কে বুঝি। তবে ফুসফুস ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে যক্ষা হতে পারে। যেমন লসিকা-গ্রন্থি, হাএজমাড় ও গিট, অন্ত্র হৃদপিন্ডের আবরণ ও মস্তিষ্কের আবরণ ইত্যাদি। আর তাই প্রত্যেকের যক্ষা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি ও এর প্রতিকার কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। নিম্নে এটি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো

  • নিয়মিতভাবে অল্পমাত্রায় জ্বর অনুভূত হওয়া। কোন সময়ই জ্বরের পরিমাণ বেশি হয় না। বিশেষ করে সন্ধ্যা বেলার দিকে নিয়মিত এ জ্বর হয়ে থাকে ।
  • মাত্রাতিরিক্ত কাশি হওয়া, কাশির সাথে কফ হতে পারে না হতেও পারে। অনেক সময় কাশির সাথে রক্ত ও বের হতে পারে। অনেক সময় ওষুধ খাওয়ার পরেও কাশি সম্পূর্ণরূপে সেরে না ওঠা।
  • হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া। নিয়মিতভাবে যখন ওজন কমতে থাকে বা হঠাৎ করেই ওজনের কমতি দেখা যায় তখন পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে আসলে যক্ষ্মা হয়েছে কি না। কারণ এটি যক্ষা রোগের লক্ষণ।
  • রোগা হয়ে যাওয়া।
  • হঠাৎ করে যক্ষা রোগীর ক্ষুধা মন্দা বৃদ্ধি পাওয়া।
  • মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। যেমন অকারণে রেগে যাওয়া অথবা অস্বাভাবিক ব্যবহার করা ইত্যাদি।
  • ওপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো যক্ষা রোগের লক্ষণ। কোনো ভাবে কোন ব্যক্তির যদি এ লক্ষণগুলো শারীরিকভাবে প্রকাশ পায় তখন অবশ্যই রক্ষা পরীক্ষা করতে হবে।

ফুসফুসে যক্ষা রোগ হওয়ার কারণ কি ?

  • সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা না হওয়া।
  • নিয়মিত চিকিৎসা না নেওয়া।
  • চিকিৎসা অসময়ে শেষ হয়ে যাওয়া।
  • ইত্যাদি ফুসফুসের যক্ষার প্রধান উপসর্গ।

যক্ষা ফুসফুস থেকে অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পরতে পারে বিশেষ করে যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। তখন একে "অ-শ্বাসতন্ত্রীয় যক্ষা" (Extrapulmonary Tuberculosis) বলা হয়, যেমন প্লুরাতে প্লুরিসি, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে মেনিনজাইটিস, লসিকাতন্ত্রে স্ক্রফুলা, প্রজনন তন্ত্রে প্রজনন তন্ত্রীয় যক্ষা, পরিপাক তন্ত্রে পরিপাক তন্ত্রীয় যক্ষা এবং অস্থিকলায় পট'স ডিজিস। বিশেষ ধরনের ছড়িয়ে যাওয়া যক্ষাকে বলা হয় মিলিয়ারী যক্ষা (Miliary tuberculosis)। অনেক ক্ষেত্রে ফুসফুসীয় এবং অ-ফুসফুসীয় যক্ষা একসাথে বিদ্যমান থাক্তে পারে। পৃথিবীর যক্ষ্মা রোগীদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি (প্রায় অর্ধেক) ভারতীয় উপমহাদেশবাসী। জীবাণু শরীরে ঢুকলেই সবার যক্ষ্মা হয় না। যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে যক্ষ্মা বেশি হয় |

যক্ষ্মা রোগটি কিভাবে ছড়ায় ?

বাতাসের মাধ্যমে যক্ষা রোগের জীবাণু ছড়ায়। যক্ষা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে রোগের জীবাণু বাতাসে গিয়ে মিশে এবং রোগের সংক্রমণ ঘটায়।

যক্ষা রোগ নির্ণয় করার জন্য কোন পরীক্ষাগুলো করতে হয়?

যদি যক্ষা রোগের লক্ষণ গুলো প্রতিমান হয় তাহলে কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে যক্ষা রোগ নির্ণয় করা যায়। পরীক্ষাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এ পরীক্ষাগুলোর ফলাফলের উপর ভিত্তি করে যক্ষা রোগের চিকিৎসা করা হয়। এখন যক্ষা রোগ নির্ণয় করার জন্য সাধারণত যে পরীক্ষাগুলো করতে হয় সেগুলো হলোঃ
  • রক্ত পরীক্ষা
  • কফ পরীক্ষা
  • ত্বকের পরীক্ষা
  • বুকের এক্সরে
  • সিটি স্ক্যান
  • কালচার টেস্ট
  • ডিএনএ পরীক্ষা ইত্যাদি।

কোন ব্যাকটেরিয়ার কারণে যক্ষা রোগ হয়?

যে ব্যাকটের কারণে এই যক্ষা রোগটি হয় সে ব্যাকটেরিয়ার নাম হলো মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসি (Mycobacterium tuberculosis)।

কিভাবে যক্ষা রোগ নিরাময় করা যায়?/যক্ষা রোগের চিকিৎসাঃ

সঠিক সময়ে যক্ষা রোগ নিরাময় করা না গেলে পরবর্তীতে অনেক বড় বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। তবে সঠিক ভাবে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগটি নিরাময় করা সম্ভব। পরীক্ষা করার মাধ্যমে যদি যক্ষা রোগ ধরা পড়ে তাহলে নিম্নে উল্লেখিত চিকিৎসার মাধ্যমে যখন কারো নিরাময় করা যায়।

যক্ষা হলে কোন ওষুধগুলো খেতে হয় ?
প্রথম সারির ওষুধ:

  • রিফাম্পিসিন
  • আইসোনিয়াজিড
  • পাইরাজিনামাইড
  • ইথামব্যুটল
  • স্ট্রেপ্টোমাইসিন
  • দ্বিতীয় সারির ওষুধ
  • ওফ্লক্সাসিন
  • রিফাবিউটিন
  • ইথিওনামাইড
  • সাইক্লোসেরিন
  • প্যারা অ্যামিনো স্যালিসিলেট

তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করার পরে এ ধরনের ওষুধ খাওয়া উচিত। কারণ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরেই সাধারণত ওষুধগুলো দেওয়া হয়। তাই কোনভাবেই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধগুলো সেবন না করাই শ্রেয়।

যক্ষা হলে কোথায় চিকিৎসা করাবেন ?

বাংলাদেশের সকল- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জেলা সদর হাসপাতাল বক্ষব্যাধি ক্লিনিক/হাসপাতাল, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, এনজিও ক্লিনিক ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সমূহে বিনামূল্যে কফ পরীক্ষা, রোগ নির্ণয়সহ যক্ষার চিকিৎসা করা হয় ও ঔষধ দেয়া হয়।

লেখকের মন্তব্যঃ

সম্মানিত পাঠক, এ পোস্টটিতে এজমা এবং যক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে আলোচনা করা হয়েছে এগুলো লক্ষণ, উপসর্গ ও প্রকারভেদ সম্পর্কে। সেই সাথে কিভাবে মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং কিভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

 সেজন্য আপনাদের উচিত হবে উপরোক্ত নির্দেশনা গুলো অনুসরণ করার। আর্টিকেলটি  যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই নিজের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় সজনদের কিংবা পরিচিত জনদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন যাতে করে তারাও এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে এবং সতর্ক হতে পারে।

 এ বিষয়ে  যদি কোনো মতামত দেওয়ার থাকে তাহলে অবশ্যয় কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামতটি জানাবেন। পরিশেষে পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚 ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url