কক্সবাজারের শীর্ষ দর্শনীয় স্থান সমূহ কি কি
কক্সবাজার বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত। পাহাড়, নদী, সাগর সেই সাথে প্রাকৃতিক নৈসর্গে পরিপূর্ণ এই কক্সবাজার। কক্সবাজারে অনেক আকর্ষণীয় এবং দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যে স্থানগুলো এখানে আসলে অবশ্যই দেখা উচিত। নিম্নে কক্সবাজারের দশটি পর্যটন কেন্দ্রর নাম, অবস্থান এবং এর বর্ণনা উল্লেখ করা হলো।
ভূমিকাঃ
কক্সবাজার হল প্রকৃতির রূপে সাজানো একটি নৈসর্গিক স্থান। আর এই নৈসর্গিক স্থানগুলো এতটাই সুন্দর যে প্রকৃতির কাছ থেকে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। যারা এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তারা অবশ্যই কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারেন।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতঃ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত হল পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় প্রাকৃতিক ও অখন্ডিত সমুদ্র সৈকত। এই ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের বিশেষত্ব হল পুরো সমুদ্র তীর বালুকাময়। কক্সবাজার বালুকাময় সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন অত্যাধুনিক হোটেল মডেল এবং নতুন সাজে সজ্জিত বার্মিজ মার্কেট সহ সাময়িক ঝিনুক ও আরো নানা প্রজাতির সমারোহে পর্যটন মৌসুমে পর্যটক এ ভরপুর থাকে এই কক্সেস বাজারের সমুদ্র সৈকত।
এর সমুদ্র সৈকতটি মায়াবী এবং অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী। এটি এক এক সময় একেক রূপ ধারণ করে পর্যটকদের বিমোহিত করে। এই সমুদ্র সৈকতটি বিভিন্ন রীতিতে বিভিন্ন রূপে সজ্জিত হয়ে থাকে যেমন বর্ষাকালে একরকম থাকে শীতকালে একরকম এবং গ্রীষ্মকালে একরকম।
এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি থাকার জন্য বিশেষ পাঁচ তারকা হোটেল এবং বিভিন্ন লজের ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে একজন পর্যটক এখানে রাত্রি যাপন করতে পারে। এবং সেই সাথে এখানে একটি ঝিনুকের মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন ইত্যাদি দেশ গুলোর বিদেশি পণ্য নিয়ে বার্মিজ মার্কেট গড়ে উঠেছে।
দেশের একমাত্র ফিশ একুরিয়াম রয়েছে এই কক্সবাজারে। এছাড়াও এখানে মনোরঞ্জনের জন্য ওয়াটার বাইকিং, বিচ বাইকিং সহ আরো অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কক্সবাজার ডেভলপমেন্ট অথরিটি দ্বারা নির্মিত অনেক স্থাপত্য যেমন ফিচার পার্ক, শিশু পার্ক এবং অনেক ফটোশুট স্পট (যেখানে অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি তোলা যায়)।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সুদূর দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর ও উত্তর পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ। এই দ্বীপটি টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমার উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে কক্সবাজার জেলার নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত।
এখানে প্রচুর পরিমাণে নারকেল থাকায় স্থানীয়ভাবে এটি নারিকেল বিচ নামেও পরিচিত। প্রতিকূল আবহাওয়া থাকায় দারুচিনি বহনকারী একটি আরব বণিক জাহাজ জলের নিচে একটি বিশাল পাথরের সাথে সংঘর্ষের ফলে জাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। যার ফলে দারুচিনি পুরো দ্বীপে ছড়িয়ে পড়ে এবং তারপরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নাম হয়ে যায় দারুচিনি দ্বীপ।
টেকনাফ
টেকনাফ বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার একটি উপজেলা। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৮৬ কিলোমিটার। নাফ নদী টেকনাফ উপজেলার পূর্ব প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে যেখান থেকে এই অঞ্চলটির নামকরণ করা হয়েছে। টেকনাফ উপজেলার অনেকগুলো দর্শনীয় স্থানগুলোর রয়েছে।
কক্সবাজার রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ডঃ
সাগর ও সাদু পানির রঙিন রাজ্যে বাংলাদেশের প্রথম সামুদ্রিক মাছের অ্যাকোরিয়াম। শতাধিক ছোট বড় সামুদ্রিক মাছ অ্যাকোরিয়ামে সাজানো হয়েছে দর্শনীয় নান্দনিক শিল্পকর্ম। বৈদ্যুতিক আলোয় সুরঙ্গের মতো সাজানো হয়েছে এবং সেখানে রয়েছে বিভিন্ন রকমের মাছ। দেখে মনে হবে সাগর তলের রঙিন রাজ্য।
কক্সবাজারের ঝাউতলায় রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড অ্যাকোরিয়ামটি আটটি ভাগে বিভক্ত। আটটি ভাগের মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে থ্রিডি মুভি দেখার নান্দনিক জায়গা। ফটোগ্রাফির জন্য ডিজিটাল কালার ল্যাব। শপিং করার কনফারেন্স হল। পারকিং সুবিধা থাকার জন্য রুম।
তাই কক্সবাজার রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড এ একবার আসলে কখন যে সময় পার হয়ে যায় বোঝাই যায় না। একুরিয়ামের ভিতরে গেলে চতুর্দিকে বিভিন্ন রকম ও প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণী দেখা যাবে।
কক্সবাজার লাবনী বিচঃ
কক্সবাজার পুরাতন সমুদ্র সৈকত যা লাবনী পয়েন্ট নামে পরিচিত। এ পর্যটন কেন্দ্রটি কক্সবাজারের কলাতলীতে অবস্থিত । সকল সমুদ্র প্রেমি ছুটে যায় কক্সবাজারেই লাবনী বীচে। কক্সবাজার শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে সবসময়।
সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন এলাকায় ছোট বড় অনেক দোকান রয়েছে যা পর্যটকের আকর্ষণ করে। এছাড়াও পর্যটকদের জন্য এখানে একটি ঝিনুকের বাজার গড়ে তোলা হয়েছে।এই বীচটি কক্সবাজার শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় লাবনী সমুদ্র সৈকতকে কক্সবাজারের প্রধান সমুদ্র সৈকত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন এলাকায় ছোট বড় অনেক দোকান রয়েছে যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে এছাড়াও পর্যটকদের জন্য এখানে একটি ঝিনুকের বাজার গড়ে তোলা হয়েছে মায়ানমার থাইল্যান্ড চীন এবং অন্যান্য সীমান্তবর্তী দেশগুলোর বাহারি সব পণ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে এই।
কক্সবাজার কলাতলী বীচ
কক্সবাজারের পর্যটকদের জন্য আরেকটা আকর্ষণীয় জায়গা হল কক্সবাজার কলাতলী বিচ বা কলাতলী সমুদ্র সৈকত। এটি কক্সবাজারের একটি সী বিচ পয়েন্ট। বিভিন্ন বয়সের মানুষ বেড়াতে গোসল করতে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসে।
সমুদ্র কলাতলী সমুদ্র সৈকতে খাবার জন্য অনেক রেস্তোরা সহ আরো অনেক পর্যটন সুবিধা রয়েছে। কলাতলী বীচে চাঁদনী রাতে খালি পায়ে হাটা সব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে একটি রোমাঞ্চকর মুহূর্ত।
হিমছড়ি
কক্সবাজার এর জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি হলো হিমছড়ি। হিমছড়ি পর্যটন কেন্দ্রটি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। পাহাড়ের পাদদেশের এই সমুদ্র সৈকতের নাম হিমছড়ি। কক্সবাজার সৈকতের তুলনায় এখানকার সমুদ্র সৈকত তুলনামূলক ভাবে নির্জন ও পরিছন্ন এবং এর সৌন্দর্য কোন অংশেই কম নয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো কক্সবাজার থেকে এই হিমছড়ি সমুদ্র সৈকতের রাস্তাটি হিমছড়ির চেয়েও সুন্দর ও রোমাঞ্চকর। এক পাশে বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকতের বালিরাসে এবং আর এক পাশে সবুজ পাহাড়ী শারি এমন দৃশ্য দেশে অত্যন্ত বিরল। অনেক পর্যটক এই পথে পায়ে হেঁটেই এর সৌন্দর্য উপভোগ করে।
কক্সবাজার ইনানী বিচ
ইনানী বিচ বা ইনানী সমুদ্র সৈকত হিমছড়ি থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ইনানী সমুদ্র সৈকত প্রবাল প্রাচীর দ্বারা পরিপূর্ণ অনেকটা সেন্ট মার্টিন এর মত। এখানে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মত বড় বড় ঢেউ নেই বরং ইনানী সমুদ্র সৈকত তুলনামূলক অনেক শান্ত প্রকৃতির। জোয়ারের সময় এখানে পাথর দেখা যায় না এবং ভাটার সময় এই শিরা গুলি বিশাল এলাকা জুড়ে ভাসতে থাকে।
ধারালো শামুক এবং ঝিনুক প্রবাল পাথরে আঁকড়ে ধরে। তাই এখানে সাবধানে পা ফেলতে হয় তা না হলে যে কোন সময় বিপদ হতে পারে। প্রবাল পাথর ইনানী সমুদ্র সৈকতের প্রধান আকর্ষণ। প্রায় প্রত্যেকটি পাথরেরই বিভিন্ন আকার এবং প্রকার রয়েছে। প্রকৃতি যেন পাথর বিছিয়ে এ সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এবং এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রত্যেক বছর হাজার হাজার পর্যটক কক্সবাজার ছুটে যায়।
সোনাদিয়া দ্বীপঃ
সোনাদিয়া দ্বীপ কক্সবাজার জেলার, মহেশখালী উপজেলায় অবস্থিত। এই ছোট্ট সুন্দর দীপটির আয়তন প্রায় ৯ বর্গ কিলোমিটার। কক্সবাজার জেলার সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে এটি মহেশখালী দ্বীপ থেকে একটি এলাকা পৃথক করা হয়েছে।
তিন দিকে সমুদ্র সৈকত , সাগর লতায় ঢাকা বালিয়ারি, ছোট বড় খাল সহ বনাঞ্চল এবং বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণী এই দিপটিকে অনন্য করে তুলেছে।কক্সবাজার উপকূলের ছোট্ট একটি দ্বীপ সোনাদিয়া। এটি অতিথি পাখিদের একটি আশ্রয় কেন্দ্র। সুন্দর এই দ্বীপের পশ্চিমাংশ বালুকাময় এবং ঝিনুকের জন্য বিখ্যাত।
ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক
ডুলাহাজারা সাফারি পার্কটি কক্সবাজার জেলা সদরের ৪৮ কিলোমিটার এবং চকোরিয়া থানা থেকে দশ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। মূলত এটি একটি হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে ১৯৯৯ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়।
ডুলাহাজারা সাফারি পার্কটি ৯০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তরিত। প্রাকৃতিক অবকাঠামোর চেয়ে অত্যাধুনিক ও কৃত্রিম অবকাঠামো থাকায় এই পার্কটিকে অনেকে সাফারি পার্ক বলতে চান না। এটি ৮ টি ব্লকে বিভক্ত এবং পার্টির মুক্ত পরিবেশে হাঁটাহাঁটি এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভ্রমণের জন্য খুবই উপযোগী।
আদিনাথ মন্দিরঃ
কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার ঠাকুরতলা গ্রামের মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় আদিনাথ মন্দির অবস্থিত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে রয়েছে এই মন্দিরের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব। হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবতা মহাদেবের নাম অনুসারে মন্দিরের নামকরণ করা হয়েছে আদিনাথ। আবার আদিনাথের অন্য নাম মহেশ যা থেকে মহেশখালী নামের সৃষ্টি।
মন্দির সমুদ্রপৃষ্ঠ থেক ৮৫.৩ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। বর্তমানে এই মন্দির কমপ্লেক্সের ভেতরে রাখাইনবদ্ধ বিহার ও মসজিদ রয়েছে এজন্য অনেকে মন্দিরটিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের শিব চতুর্দশী উপলক্ষে ১০ থেকে ১৫ দিনব্যাপী মেলা বসে। তখন হাজার হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটে এখানে।
- সুগন্ধা বিচ
- ছেড়া দ্বীপ।
- মেরিন ড্রাইভ রোড
- রেডিয়ান্ট ফিস ওয়ার্ল্ড
- মহেশখালী দ্বীপ
- বড় রাখাইন পাড়া বৌদ্ধ মন্দির
- কুতুবদিয়া দ্বীপ
এবং এই বিষয়ে যদি কোন মতামত বা পরামর্শ থাকে তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানানোর জন্য অনুরোধ করছি। পরিশেষে পোষ্টটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url