জাতিসংঘ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর ৫১টি রাষ্ট্র জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষর করার মাধ্যমে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং পরবর্তীতে বিলুপ্ত লীগ অব নেশন্সের স্থলাভিষিক্ত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে বিজয়ী মিত্রশক্তি পরবর্তীকালে যাতে যুদ্ধ ও সংঘাত প্রতিরোধ করা যায়- এই উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হয়।
ভূমিকাঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভবিষ্যৎ যুদ্ধ পরিহারের উদ্দেশ্যে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। এ সন্ধির অঙ্গ হিসেবে একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জাতিপুঞ্জ আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে প্রথমে আন্তর্জাতিক এ সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, বৃহৎ রাষ্ট্রের দ্বন্দ্বের কারণে তা ফলপ্রসূ হয়নি। লীগ অকার্যকর থাকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ বিভীষিকা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষকে বেশি মাত্রায় উদ্বিগ্ন করে তোলে। যুদ্ধকালীন রণকৌশল নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে মারাত্মক যুদ্ধের হাত থেকে বিশ্বকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে বৃহৎ শক্তিগুলো কূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রাখে।
বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন তৈরির লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা নেন। তাদের ঐকান্তিক ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় জাতিসংঘের ভিত রচিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় সাত দশক নানা সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে জাতিসংঘ টিকে আছে। আন্তর্জাতিক ইতিহাস খুব দ্রুত পটপরিবর্তন করে।
ইতিহাসের পথপরিক্রমায় জাতিসংঘের কার্যক্রম কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিষ্ফল হলেও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এর উদ্যোগ ও অবদান অস্বীকার করা যায় না। জাতিসংঘের গঠনপ্রক্রিয়ার ইতিহাস ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এর অবদান সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা থাকা উচিত।
কেননা, ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠন সৃষ্টির ইতিহাসে ক্ষুদ্র বাংলাদেশের ভূমিকা না থাকলেও বর্তমানে
জাতিসংঘের অধীনে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের বিস্ময়কর অবদান আছে।
জাতিসংঘের সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
জাতিসংঘ সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত একটি কমপ্লেক্স। ১৯৫২ সালে নির্মাণের পর থেকে এটি জাতিসংঘের দাপ্তরিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যানহাটন বরোর টার্টল বে এলাকায় এটি অবস্থিত।
কয়টি পরিষদ নিয়ে জাতিসংঘ গঠিত
প্রধানত ৬টি সংস্থা নিয়ে জাতিসংঘ গঠিত। যথা-
১। সাধারণ পরিষদ;
২। নিরাপত্তা পরিষদ;
৩। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ;
৪। অছি পরিষদ;
৫। আন্তর্জাতিক আদালত এবং
৬। সচিবালয়।
আরো পড়ুনঃ দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতিসংঘের মহাসচিবগণের নামের তালিকা
জাতিসংঘের অধীন বা সহযোগী সংস্থার সংখ্যা ১৪: যেমন- ইউএনইপি (UNEP), ইউএনডিপি (UNDP), আংকটাড (UNCTAD), শিশু তহবিল (ইউনিসেফ-UNICEF), জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ব খাদ্য পরিষদ ইত্যাদি।
জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ১৭টি। যেমন- আইএলও (ILO), ডব্লিউএইচও (WHO), আইএমএফ (IMF), আইডিএ (IDA), ইউনেস্কো (UNESCO), খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO), বিশ্ব পোস্টাল ইউনিয়ন (UPU) ইত্যাদি।
জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ১৭টি। যেমন- আইএলও (ILO), ডব্লিউএইচও (WHO), আইএমএফ (IMF), আইডিএ (IDA), ইউনেস্কো (UNESCO), খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO), বিশ্ব পোস্টাল ইউনিয়ন (UPU) ইত্যাদি।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গঠন
জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে সাধারণ পরিষদ গঠিত। বিশ্বের যেকোনো শান্তিকামী রাষ্ট্র জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সদস্য হতে পারে। প্রতিবছর একবার সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র ৫ জন সদস্য পাঠাতে পারে। কিন্তু প্রতিনিধি ৫ জন পাঠালেও সদস্য রাষ্ট্রের ভোটদানের অধিকার থাকে একটি। আন্তর্জাতিক শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে সাধারণ পরিষদে তা আলোচনা করা হয়। নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের কাছে জোর সুপারিশ করে।
আরো পড়ুনঃজাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালত
সাধারণ পরিষদে বিশ্বের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনের প্রয়োজন হয়।সাধারণ পরিষদের সম্মতি ছাড়াও প্রস্তাবটি কার্যকরি করার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের উপর নির্ভর করতে হয়। তবে বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত হতে পারে এমন কোনো বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হলে তা সাধারণ পরিষদে আলোচনা করা যাবে।
তবে এক্ষেত্রে উপযুক্ত সিদ্ধান্তের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটের মাধ্যমে তা কার্যকর করা যাবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদকে আরও কার্যকরী করার জন্য কয়েকটি রাষ্ট্র ও আঞ্চলিক সংস্থাকে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দিয়েছে। এর মধ্যে সুইজারল্যান্ড, ভ্যাটিকান, পিএলও উল্লেখযোগ্য।
সাধারণ পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি জাতিসংঘ সনদ সাধারণ পরিষদকে নানাবিধ কার্যসম্পাদনের ক্ষমতা প্রদান করেছে। যেমন- (ক) নির্বাচনমূলক, (খ) অর্থ সম্পর্কিত, (গ) সুপারিশমূলক, (ঘ) নির্বাহীসংক্রান্ত, (ঙ) শান্তির জন্য ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা, (চ) সহযোগী সংস্থা গঠন, (ছ) রিপোর্ট গ্রহণ ও পর্যালোচনা, (জ) উদ্যোগ গ্রহণ, (ঝ) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা ইত্যাদি।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের গঠন
জাতিসংঘের মূল বিভাগ হলো নিরাপত্তা পরিষদ। জাতিসংঘের সব কার্যসম্পাদনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য নিরাপত্তা পরিষদকে জাতিসংঘের মেরুদণ্ড বলা হয়। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যসংখ্যা ছিল ৫টি স্থায়ী ও ৬টি অস্থায়ী রাষ্ট্র।জাতিসংঘ প্রয়োজনীয়তার তাগিদে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করে। ফলে ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে আগস্ট নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ৬টির স্থলে ১০টি হয়। ফলে ৫টি সদস্য স্থায়ী ও ১০টি অস্থায়ী রাষ্ট্রের সমন্বয়ে নিরাপত্তা পরিষদ গঠিত হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য ২ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়।
আরো পড়ুনঃজাতিসংঘের সচিবালয়
নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র আছে যাদের ভেটো ক্ষমতা আছে। বিশ্বের আলোচিত কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যদি কোনো একটি স্থায়ী রাষ্ট্র ভেটো প্রদান করে তাহলে সেটি আর অগ্রসর হতে পারে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীন।
নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি। জাতিসংঘের যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার কেন্দ্রস্থল নিরাপত্তা পরিষদ। নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই জাতিসংঘ নিজেকে একটি অত্যধিক ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্থায় পরিণত করেছে;
নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি। জাতিসংঘের যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার কেন্দ্রস্থল নিরাপত্তা পরিষদ। নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই জাতিসংঘ নিজেকে একটি অত্যধিক ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্থায় পরিণত করেছে;
যেমন- (ক) শান্তিভঙ্গ, ভীতি প্রদর্শন এবং আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা; (খ) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা; (গ) আঞ্চলিক বন্দোবস্তবিষয়ক ক্ষমতা; (ঘ) অছিবিষয়ক ক্ষমতা (ক) নতুন সদস্য গ্রহণবিষয়ক ক্ষমতা; (চ) সদস্য বহিষ্কারবিষয়ক ক্ষমতা; (ছ) নির্বাচনমূলক ক্ষমতা; (জ) মিলিটারি স্টাফ কমিটি গঠন।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ:
আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন বা সমৃদ্ধিসাধনের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ গঠিত হয়েছে। বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য
একদিকে উত্তেজনা প্রশমন, অস্ত্রের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ, নিরস্ত্রীকরণ, শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ মীমাংসা, শান্তি বিঘ্নকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা যেমন প্রয়োজন তেমনি এ উদ্যোগ সফল করার জন্য প্রয়োজন সমগ্র মানবজাতির অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক জীবনের বিকাশ ও অগ্রগতি।
আরো পড়ুনঃজাতিসংঘের উল্লেখযোগ্য কার্যকলাপ
ধ্বংস ও যুদ্ধ প্রতিরোধ করার জন্য এবং মানবজাতির স্থায়ী কল্যাণসাধনের জন্য গঠনমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করাও একান্ত আবশ্যক। এ কারণেই জাতিসংঘের গঠনমূলক উদ্যোগ ও কার্যক্রমের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।ন্যূনতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়নে এ পরিষদ অবদান রেখে চলেছে।
অছি পরিষদ: জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিশেষ বিবদমান রাষ্ট্র বা অঞ্চলসমূহের প্রশাসনিক বিন্যাস, শান্তি- শৃঙ্খলা রক্ষা অছি পরিষদের দায়িত্ব। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে লীগ অব নেশন্সের ম্যান্ডেটভুক্ত ১১টি দেশের দায়িত্ব নিয়ে এ পরিষদের কার্যক্রম শুরু হয়।
নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যবর্গ ও সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে অছি পরিষদ গঠিত হয়। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে অছি পরিষদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালত
জাতিসংঘের মুখ্য বিচার প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক আদালত। আন্তর্জাতিক সমাজের আইনগত বিরোধ মীমাংসার জন্য এটি একটি স্থায়ী বিচার সংস্থা। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে এর প্রধান কার্যালয়। আন্তর্জাতিক আদালতের কাজ হলো তার নিকট পেশকৃত বিরোধসমূহ আন্তর্জাতিক আইনানুসারে মীমাংসা করা।আরো পড়ুনঃজাতিসংঘের সাফল্য
আন্তর্জাতিক আদালতের এখতিয়ার তিন ভাগে বিভক্ত; যথা- (ক) স্বেচ্ছাধীন, (খ) আবশ্যিক ও (গ) পরামর্শমূলক এখতিয়ার। ১৫ জন বিচারক নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালত গঠিত, যারা ৯ বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন। আন্তর্জাতিক আদালতের এখতিয়ার বিস্তৃত। নিরপেক্ষ বিচার সুনিশ্চিত করতে না পারায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালতের সমালোচনা লক্ষণীয়।
জাতিসংঘের সচিবালয় (The Secretariat)
জাতিসংঘের বিশাল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়। সকল প্রশাসনিক কাজ সচিবালয় থেকেই পরিচালিত হয়। এর প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বলা হয় মহাসচিব বা সেক্রেটারি জেনারেল। নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ পরিষদ কর্তৃক পাঁচ বছরের জন্য মহাসচিব নির্বাচিত হন। তবে মহাসচিব নির্বাচনের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের সর্বসম্মতির প্রয়োজন হয়। কোনো একটি সদস্য রাষ্ট্র ভেটো প্রয়োগ করলে সাধারণ পরিষদের কাছে ঐ নাম প্রস্তাব করা যায় না। মহাসচিবের কাজের পরিধি অনেক বিস্তৃত। শুধু প্রশাসনিক কাজ সম্পাদন ছাড়াও আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তায় তার ক্ষমতা ও দায়িত্ব অনেক।
তিনি পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বা মোড়ল। কোনো কোনো মহাসচিব জাতিসংঘের মুখ্য প্রশাসকের ভূমিকা অতিক্রম করে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের এক মুখ্য নির্ধারকে পরিণত হয়েছেন। তারা তাদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা মানবজাতির আশ্বাসের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছেন।
তবে মহাসচিবের ভূমিকা তার বিচক্ষণতা, নিরপেক্ষতা, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা এবং বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রের সহযোগিতার উপর অনেকটা নির্ভরশীল।জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব হলেন নরওয়ের ট্রিগভেলি এবং বর্তমান অর্থাৎ নবম মহাসচিব হলেন পর্তুগালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও গুতেরেস।
তৃতীয় মহাসচিব ছিলেন বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের নাগরিক উ থান্ট। কাজেই এশিয়া মহাদেশ থেকে দু'বার মহাসচিব নির্বাচিত হওয়া কম গৌরবের কথা নয়।
দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতিসংঘের মহাসচিবগণের নামের তালিকাঃ
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা রক্ষায় জাতিসংঘ
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য জাতিসংঘই হলো ইতিহাসের প্রথম ও প্রকৃত আন্তর্জাতিক সংগঠন। সংগত কারণেই এর অঙ্গীকার ছিল বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা। জন্মলগ্ন থেকে প্রায় সাত দশক জাতিসংঘকে অগ্নিপরীক্ষার ভেতর দিয়ে অগ্রসর হতে হয়েছে।দুই পরাশক্তির (রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র) অসহিষ্ণুতার শিকার হয়ে জাতিসংঘ প্রায় অকার্যকর হতে বসেছিল। কিন্তু শান্তি স্থাপনে জাতিসংঘ ও তৃতীয় বিশ্বের পাহাড়সমান সমস্যা সমাধানে এর আন্তরিকতাপূর্ণ ভূমিকা একে জিইয়ে রাখতে সাহায্য করেছে। এ বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছেন কতিপয় মহাসচিব।
মহাসচিবদের ভূমিকা এর অস্তিত্বকেই অর্থবহ করেনি বরং বিশ্ববাসীর কাছে জাতিসংঘের গ্রহণযোগ্যতাকে বহুমাত্রিকতা দান করেছে।মানবজাতির কল্যাণ ও বিকাশের নিমিত্তে যে অবিরাম কাজকর্ম চলছে তার কেন্দ্রস্থল জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা, যা জাতিসংঘ সনদে উল্লেখ আছে।
শান্তি ও নিরাপত্তাবিধান জাতিসংঘের একটি চলমান ও প্রশংসনীয় কর্মকাণ্ড। যুদ্ধের করাল গ্রাস থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্ত করার যে লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভব হয়েছিল, সে লক্ষ্যে জাতিসংঘ এখনো মোটামুটি সফল।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ন্যায় ভয়াবহ কোনো যুদ্ধের মুখোমুখি এখন পর্যন্ত বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ হয়নি, যা জাতিসংঘের এক বিরাট সাফল্য। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে জাতিসংঘ বিশেষ শান্তিরক্ষা মিশন প্রেরণ করে থাকে।
শান্তিরক্ষা হলো এমন একটি কৌশল যা বিরোধ নিরসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। শান্তিরক্ষার প্রকৃতিতে ভিন্নতা আছে। শান্তিরক্ষা সাধারণত সংঘাতপূর্ণ স্থানে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলার সহযোগিতাকে বোঝায়।
শান্তি সৃষ্টি হলো দু'পক্ষের সংঘাত নিরসনের পদ্ধতি আর শান্তি তৈরি হলো সংঘাত-পরবর্তী সময়ের শান্তি প্রতিষ্ঠার মিশন। নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ অনুযায়ী মহাসচিবের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শান্তিরক্ষা মিশনগুলো কাজ করে থাকে। তবে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম আদৌ সামরিক প্রকৃতির নয়।
যদিও জাতিসংঘের কোনো চার্টারে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের স্পষ্ট উল্লেখ নেই; তবে ষষ্ঠ-সপ্তম অধ্যায়ে শান্তির জন্য হুমকি, শান্তির জন্য আশা ও আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে কার্যক্রমসংক্রান্ত সুপারিশ আছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সংগঠিত ও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যকার বিরোধ প্রতিরোধ, সংকোচন, তীব্রতা হ্রাস ইত্যাদি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে পড়ে।
অর্থাৎ বলপ্রয়োগ ও কূটনৈতিক পদ্ধতির মধ্যবর্তী স্থানে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের অবস্থান।
জাতিসংঘের প্রথম শান্তিরক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ইসরাইল ও আরব রাষ্ট্রসমূহ থেকে বিরোধপূর্ণ এলাকায় পর্যবেক্ষণের জন্য সৈন্য প্রেরণের মাধ্যমে।
জাতিসংঘের প্রথম শান্তিরক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ইসরাইল ও আরব রাষ্ট্রসমূহ থেকে বিরোধপূর্ণ এলাকায় পর্যবেক্ষণের জন্য সৈন্য প্রেরণের মাধ্যমে।
সাধারণত বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের উত্তেজনা প্রশমনে, যুদ্ধবিরোধী চুক্তি তদারকি ও কার্যকর করা, স্থিতাবস্থা বজায় রাখা, গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচন পরিচালনা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে শান্তিরক্ষা বাহিনী প্রেরণ করা হয়ে থাকে।
জাতিসংঘের সাফল্য:
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ একটি স্বেচ্ছামূলক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার উপর এর সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তারক্ষায় জাতিসংঘের ভূমিকা অনেকাংশে প্রশংসার দাবি রাখে।ইন্দোনেশিয়া, লিবিয়া, নামিবিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্র জাতিসংঘের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার ফলেই স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করছে। লাওস, কঙ্গো ও কোরিয়ায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করে সেখানে শান্তি স্থাপন জাতিসংঘের বিরাট একটি সাফল্য।
জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সুয়েজ এলাকা থেকে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ইসরাইল, ফ্রান্স ও ব্রিটেন সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করলে জাতিসংঘ তার জরুরি বাহিনী মোতায়েন করলে সুয়েজ সংকটের অবসান ঘটে। পাক-ভারত যুদ্ধ (১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দ) জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় অবসান হয়। আরব-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি (১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ) জাতিসংঘের অন্যতম সফল প্রয়াস।
লেবানন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিন সংকট ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের ফলে স্তিমিত হয়। গ্রিস-তুরস্ক বিরোধ জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় নিষ্পত্তি হয়, যা জাতিসংঘের উল্লেখযোগ্য সাফল্য। ইসরাইলের দখলদার বাহিনীকে লেবাননের সিডন এলাকা থেকে ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে অপসারণ করা জাতিসংঘের প্রচেষ্টা ও সহযোগিতার ফলেই সম্ভব হয়েছিল।
জাতিসংঘের মহৎ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং নিয়মিত তদারকির ফলে সোয়াজিল্যান্ড, ক্যামেরুন প্রভৃতি অছি এলাকা স্বাধীনসার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হয়। ইরাক-ইরান দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে জাতিসংঘের মাধ্যমে।
মারণাস্ত্র তৈরি ও আণবিক শক্তি প্রতিযোগিতায় যাতে বিশ্ব আর কোনো ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় যুদ্ধের সম্মুখীন না হয় সেজন্য জাতিসংঘ নিরস্ত্রীকরণ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৃহৎ শক্তিবর্গকে আলোচনায় বসিয়ে ন্যূনতম নীতিতে ঐকমত্যে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের ভূমিকাকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।
মারণাস্ত্র তৈরি ও আণবিক শক্তি প্রতিযোগিতায় যাতে বিশ্ব আর কোনো ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় যুদ্ধের সম্মুখীন না হয় সেজন্য জাতিসংঘ নিরস্ত্রীকরণ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৃহৎ শক্তিবর্গকে আলোচনায় বসিয়ে ন্যূনতম নীতিতে ঐকমত্যে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের ভূমিকাকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।
বিশ্ব সংস্থার উদ্যোগ ছাড়া বৃহৎ শক্তিসমূহকে আলোচনার টেবিলে বসানো সম্ভব হয়ে উঠত না। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানের পথ উন্মুক্ত হয়, জাতিসংঘ তার জ্বলন্ত প্রমাণ। অনগ্রসর রাষ্ট্রসমূহের জনগোষ্ঠীকে আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বাস্থ্য, কারিগরি ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে সংস্থাটি।
দুস্থ, দুর্দশাগ্রস্ত ও নির্যাতিত আর্তমানবতার কল্যাণে জাতিসংঘ সর্বদাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। আর্মেনিয়া, হাইতি প্রভৃতি দেশে প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের পর জাতিসংঘ ব্যাপক ত্রাণ ও সাহায্য কর্মসূচি গ্রহণ করে। আফগানিস্তান ও ইরাকে সাহায্য কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
শান্তিরক্ষায় জাতিসংঘের কর্মতৎপরতা ও সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে আন্তর্জাতিক নোবেল কমিটি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে। বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তারক্ষায় জাতিসংঘের উপস্থিতি ও প্রচেষ্টা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের শেষ ভরসা।
শান্তিরক্ষায় জাতিসংঘের কর্মতৎপরতা ও সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে আন্তর্জাতিক নোবেল কমিটি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে। বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তারক্ষায় জাতিসংঘের উপস্থিতি ও প্রচেষ্টা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের শেষ ভরসা।
জাতিসংঘ অকার্যকর হলে বিশ্বকে আরও ভয়াবহ শঙ্কা ও ধ্বংসের মুখোমুখি ঠেলে দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মানবজাতি পরস্পর আলোচনা, পরামর্শ, ঐক্য ও সহযোগিতার আশ্রয়স্থল হারিয়ে আরও বেশি অনিশ্চয়তা ও সংকটে নিপতিত হবে। জাতিসংঘের অকার্যকারিতা সমস্যার কোনো সমাধান নয়, বরং সমস্যা সমাধানের পথ চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়ারই নামান্তর হবে।
২। বার্লিন অবরোধ: ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমা দেশগুলো পূর্বানুমতি ছাড়া অভিন্ন জার্মান মুদ্রা চালু করলে
সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনের যোগাযোগব্যবস্থা অবরুদ্ধ করে রাখে। ফলে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির যোগাযোগব্যবস্থা বহির্দেশের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
জাতিসংঘের উল্লেখযোগ্য কার্যকলাপ
১। সোভিয়েত-ইরান বিরোধ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে সোভিয়েত সৈন্য অপসারিত হয়নি- এমন একটি অভিযোগ নিরাপত্তা পরিষদে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে জানুয়ারি করা হয়। সৈন্য অপসারিত হওয়ার পরও অভিযোগ প্রত্যাহার না হওয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন নিরাপত্তা পরিষদ বর্জন করে।২। বার্লিন অবরোধ: ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমা দেশগুলো পূর্বানুমতি ছাড়া অভিন্ন জার্মান মুদ্রা চালু করলে
সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনের যোগাযোগব্যবস্থা অবরুদ্ধ করে রাখে। ফলে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির যোগাযোগব্যবস্থা বহির্দেশের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পশ্চিম বার্লিনে খাদ্যদ্রব্যসহ প্রয়োজনীয় পণ্য আকাশপথে পাঠাতে বাধ্য হয়। নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত চতুর্শক্তির আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসা করতে হয়।
৩। ইন্দোনেশীয় সংকট: ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে নেদারল্যান্ডস তার উপনিবেশ ইন্দোনেশিয়াকে স্বাধীনতার
প্রতিশ্রুতি প্রদান করে একটি চুক্তি করেছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে নেদারল্যান্ডস ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে তা অস্বীকার করে ইন্দোনেশিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ করে।
ভারত বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করলে মীমাংসার জন্য ১৮ দফা উদ্ভাবন করা হয়। ফলস্বরূপ নেদারল্যান্ডস ইন্দোনেশিয়াকে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা প্রদান করতে বাধ্য হয়।
৪। আরব-ইসরাইল বিরোধ: ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে প্যালেস্টাইনকে বিভক্ত করে ইসরাইল নামক রাষ্ট্রের জন্ম
হয়। এতে আরব-ইসরাইল বিরোধ সংঘর্ষে রূপ নেয়। মিশর সুয়েজ খাল ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয়করণ করলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স মিশরের উপর ক্ষিপ্ত হয় এবং ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে আরব-ইসরাইল যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা আন্তর্জাতিক রূপ ধারণ করে।
১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে পুনরায় এ সংকট সৃষ্টি হলে জাতিসংঘকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এ সময় মধ্যপ্রাচ্যে জরুরি ভিত্তিতে জাতিসংঘ বাহিনী পাঠালে সাময়িকভাবে মধ্যপ্রাচ্য সংঘর্ষ স্তিমিত হয়। তবে মধ্যপ্রাচ্যে আরব- ইসরাইল সমস্যার পরিসমাপ্তি এখনো হয়নি।
৫ । ফকল্যান্ড যুদ্ধ: আর্জেন্টিনার পূর্ব উপকূলে ৪৮০ কিলোমিটার দূরে ফকল্যান্ড দ্বীপগুলো অবস্থিত।
উপকূলের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় এই দ্বীপগুলোকে আর্জেন্টিনা নিজেদের বলে দাবি করে। আর্জেন্টিনীয়রা এগুলোকে 'মালবিনাস দ্বীপপুঞ্জ' নামে ডাকে। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে এই দ্বীপগুলোতে ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
ব্রিটিশদের আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এই দ্বীপগুলোর উপর আর্জেন্টিনার দাবি ব্রিটিশরা উপেক্ষা করে। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে আর্জেন্টিনা এই দ্বীপগুলো আবারও নিজেদের বলে দাবি তোলে। এই দ্বীপের সমস্যা সমাধানের জন্য জাতিসংঘের মধ্যস্থতা আহ্বান করে।
১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ এ ব্যাপারে ব্রিটেন ও আর্জেন্টিনার মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করে। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটেন এই দ্বীপগুলো আর্জেন্টিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে কিন্তু একসাথে নয় ধীরে ধীরে। তাছাড়া শর্ত দেয়, এই দ্বীপগুলো আর্জেন্টিনার অধীনে দিলেও এর প্রশাসনিক দায়-দায়িত্ব থাকবে।
জাতিসংঘের ব্যর্থতা সমূহ:
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সহযোগিতা ও আন্তরিকতার অভাব থাকলে সেক্ষেত্রে জাতিসংঘের সফলতায় বিঘ্ন সৃষ্টি হতে বাধ্য। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ নানাবিধ জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতার কারণেও জাতিসংঘের মহান ব্রত পালনে অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে।নিরাপত্তা পরিষদে বৃহৎ শক্তির ভেটো ক্ষমতা জাতিসংঘকে পঙ্গু করে রেখেছে।সামরিক শক্তির অভাবে জাতিসংঘ তার শান্তি ও নিরাপত্তারক্ষার সর্বাত্মক প্রস্তাবকেও কার্যকর করতে সক্ষম হয় না। তাছাড়া আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একমেরুকরণ প্রবণতার কারণে একক বৃহৎ শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতাপ ও প্রভাবের প্রতিক্রিয়া জাতিসংঘের ভূমিকার উপর নিপতিত হয়েছে বলা যায়।
বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তারক্ষায় সম্মিলিত জাতিসংঘের অবদান যেমন অনস্বীকার্য, তেমনি বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভরসা ও আশ্রয়স্থল হিসেবে জাতিসংঘের ব্যর্থতা এর মর্যাদা ও গৌরবকে অনেক ক্ষেত্রে ম্লান করে দিয়েছে।
আফগানিস্তানের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সহযোগিতায় মিথ্যা অভিযোগে ইরাক আক্রমণ করে। ইরাক দখলের পর যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের নিকট ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার অভিযোগের কোনো সত্যতা প্রমাণ করতে পারেনি।
বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তারক্ষায় সম্মিলিত জাতিসংঘের অবদান যেমন অনস্বীকার্য, তেমনি বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভরসা ও আশ্রয়স্থল হিসেবে জাতিসংঘের ব্যর্থতা এর মর্যাদা ও গৌরবকে অনেক ক্ষেত্রে ম্লান করে দিয়েছে।
সংঘাত ও সংঘর্ষে, আক্রমণ ও নির্যাতনে জাতিসংঘকে আজ আশ্রয় ও ন্যায়বিচারের আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। জাতিসংঘের উপস্থিতিতেই বিশ্বের অনেক অঞ্চলে আজ অন্যায় ও অবিচার চলছে। বৃহৎ রাষ্ট্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রকে আক্রমণ করতে, মানবাধিকারকে পদদলিত করতে কুণ্ঠিত হচ্ছে না।
জাতিসংঘ অসহায় নির্বাক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বৃহৎ শক্তি জাতিসংঘকে কোনো তোয়াক্কা করছে না। জাতিসংঘের কার্যকারিতা ও সাফল্য সম্পর্কে আজ বিশ্ব জনমনে ব্যাপক সংশয় ও অনাস্থা দেখা দিয়েছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা আজ সুদূরপরাহত।
বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ আজ আণবিক মারণাস্ত্রের ভয়াবহতায় ভবিষ্যতের দুঃস্বপ্নে চরম অশান্তি ও উৎকণ্ঠায় সময় অতিক্রম করছে। ফিলিস্তিন সমস্যা, ইন্দোচীন সমস্যা, লেবাননের গৃহযুদ্ধ, ইরিত্রিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রাম, আফগান সমস্যা, ইরাক সমস্যা, আফ্রিকার বর্ণবাদী সমস্যা, শরণার্থী সমস্যা,
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকারের অবাধ ও নির্লজ্জ লঙ্ঘন,বুভুক্ষু ও নির্যাতিত-নিপীড়িত মানবতার করুণ আর্তনাদ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার ইস্যুকে সুদূরপরাহত করে রেখেছে। বিশ্বজুড়ে চলছে আধিপত্যবাদের এক নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা। বৃহৎ পরাশক্তি রাষ্ট্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে।
শক্তির জোরে সবল রাষ্ট্র ক্ষমতাহীন দুর্বল রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অনবরত হস্তক্ষেপ করে চলছে; নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে তাদের তাঁবেদার সরকার বসাচ্ছে। জাতিসংঘের ব্যর্থতার কারণে জার্মানি, ইয়েমেন দীর্ঘদিন পূর্ব ও পশ্চিমে এবং উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত হয়ে অবস্থান করেছে।
কোরিয়া আজও বিভক্ত রয়েছে। ইসরাইল বিশ্বজনমতের সকল আবেদন উপেক্ষা করে বেপরোয়াভাবে প্যালেস্টাইনের উপর বর্বরোচিত হামলা ও দখলদারিত্ব অব্যাহত রেখেছে। ফিলিস্তিনিদেরনিজস্ব আবাসভূমির ন্যায়সংগত দাবি এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি; বরং তাদের উপর নানা রকম নির্যাতন ও
নিপীড়ন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহ আজ বৃহৎ শক্তির করাল গ্রাসে আবদ্ধ। ১৯৭৭-৮৭ খ্রিষ্টাব্দে বৃহৎ শক্তিবর্গের মদদপুষ্ট ভিয়েতনাম বাহিনী যখন কম্বোডিয়া দখল করল, জাতিসংঘ তখন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিল।
১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে ফকল্যান্ড সমস্যার সমাধান এবং ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে লিবিয়ার উপর মার্কিন জঙ্গি বিমান হামলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাতিসংঘ শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতারপরিচয় দিয়েছে। সার্ব বাহিনী কর্তৃক বসনিয়ায় মানব-ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞে জাতিসংঘের রহস্যজনক নীরব ভূমিকা বিশ্বজনমতকে হতবাক করেছে।
সোমালিয়া, রুয়ান্ডাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ভূমিকা এ সংস্থার প্রতি বিশ্বের শান্তিকামী জনগণকে বিক্ষুব্ধ করেছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনোযুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারমূলকভাবে আফগানিস্তান দখল করে নেয়।
আফগানিস্তান সরকারকে উৎখাত করে যেখানে তাঁবেদার পুতুল সরকার বসানো হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এরূপ নির্লজ্জ ও গুরুতর অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি।
আফগানিস্তানের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সহযোগিতায় মিথ্যা অভিযোগে ইরাক আক্রমণ করে। ইরাক দখলের পর যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের নিকট ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার অভিযোগের কোনো সত্যতা প্রমাণ করতে পারেনি।
তথাপি ইরাকের উপর চালানো হয় ব্যাপক দখলদারী অভিযান, হত্যা করা হয় নিরীহ সাধারণ জনগোষ্ঠীকে, ধ্বংস করা হয় ঘরবাড়ি, অফিস-আদালতসহ ব্যাপক জাতীয় সম্পদ। এ ক্ষেত্রেও জাতিসংঘের ভূমিকা ছিল অসহায়ের মতো। সাধারণ জনগোষ্ঠী ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিকট জাতিসংঘের অস্তিত্ব তখন নিতান্তই অর্থহীন হয়ে পড়ে।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব জেভিয়ার পেরেজ ডি কুইলার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “বৃহৎ কূটকৌশল লেবাননের সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।" বৃহৎ শক্তিবর্গ আজ পৃথিবীকে ভাগাভাগি করার উন্মত্ত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। পৃথিবীব্যাপী চলছে শক্তি ও আধিপত্য বিস্তারের এক চরম তাণ্ডবলীলা।
বর্তমান বিশ্বের এই চরম অশান্তি, অস্থিরতা ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা প্রত্যক্ষ করে অনেক বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন যে, বৃহৎ শক্তি বিশ্বকে ক্রমেই এক অবশ্যম্ভাবী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছে অনেক পূর্বেই, শুধু তা ভয়াবহ ও সর্বগ্রাসী আকার ধারণ করতে বাকি মাত্র।
জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও মৌলিক অধিকারকে পদদলিত করে বলপ্রয়োগের অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার নামে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হরণ করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে আধিপত্যবাদ ও নৈরাজ্যবাদ।
জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও মৌলিক অধিকারকে পদদলিত করে বলপ্রয়োগের অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার নামে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হরণ করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে আধিপত্যবাদ ও নৈরাজ্যবাদ।
বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তারক্ষায় জাতিসংঘের এহেন ভূমিকা ও ব্যর্থতা পর্যবেক্ষণ করে বিশ্বের শান্তিকামী ও সচেতন জনমনে আজ প্রশ্ন জেগেছে- শান্তি প্রতিষ্ঠার মহান ব্রতে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘ কি এভাবে ব্যর্থতার গ্লানি বহন করতে করতে শেষ পর্যন্ত সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ভাগ্যকেই বরণ করে নেবে?
জাতিসংঘের ব্যর্থতার কারণ:
জাতিপুঞ্জের ধ্বংসাবশেষের পর বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তাকে অধিকতর নিশ্চয়তাদানের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা জাতিসংঘ আজ অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। নিচে জাতিসংঘের ব্যর্থতার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:প্রথমত: জাতিসংঘের ব্যর্থতার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে এর গঠন কাঠামোর ত্রুটি, সদস্যদের মধ্যে ন্যায়বোধ ও সাম্যনীতির অভাব। জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী, সকল সদস্য রাষ্ট্র জাতিসংঘের অভ্যন্তরে সমান মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার অধিকারী।
কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি বৃহৎ রাষ্ট্রের স্থায়ী আসনের ব্যবস্থা এবং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের একক ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকারকে জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী ব্যবস্থা বলা যায়।
দ্বিতীয়ত: নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয়ের উপর সিদ্ধান্ত গ্রহণে পাঁচটি বৃহৎ সদস্য রাষ্ট্রের সকলে একমত হওয়া আবশ্যক। যেকোনো এক সদস্য দ্বিমত পোষণ করে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করলে অন্য সকলে একমত হলেও কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না।
দ্বিতীয়ত: নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয়ের উপর সিদ্ধান্ত গ্রহণে পাঁচটি বৃহৎ সদস্য রাষ্ট্রের সকলে একমত হওয়া আবশ্যক। যেকোনো এক সদস্য দ্বিমত পোষণ করে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করলে অন্য সকলে একমত হলেও কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না।
এরূপ ভেটো ক্ষমতা বৃহৎ শক্তির হাতে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করা ও তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির অন্যতম অস্ত্রস্বরূপ। ভেটো ক্ষমতার কারণে নিরাপত্তা পরিষদ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তাবিধানে বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে না।
তৃতীয়ত: সাধারণ পরিষদ জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত হলেও এর প্রকৃত কোনো কার্যকরী ক্ষমতা নেই বললেই চলে। সাধারণ পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিরাপত্তা পরিষদের মুখাপেক্ষী। সাধারণ পরিষদ কোনো সিদ্ধান্তকে বাস্তব রূপ দিতে পারে না।
সাধারণ পরিষদের এরূপ অক্ষমতার কারণে তাকে অনেক ক্ষেত্রেই শুধু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে হয়।
চতুর্থত: জাতিসংঘের নিজস্ব কোনো সামরিক বাহিনী না থাকায় আন্তর্জাতিক বিরোধ মীমাংসার ব্যাপারে কোনো রাষ্ট্র জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা বা অগ্রাহ্য করলে জাতিসংঘ কোনোরূপ বলপ্রয়োগমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না। সাধারণ সদস্য রাষ্ট্রের সহায়তা অনেক ক্ষেত্রে বিলম্ব বা জটিলতার উদ্ভব ঘটায়।
পঞ্চমত: বৃহৎ শক্তিসমূহের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিরোধ মীমাংসার ব্যাপারে তাদের সদিচ্ছার অভাব বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তাবিধানে জাতিসংঘের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।
ষষ্ঠত : আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো সময় বৃহৎ কোনো রাষ্ট্র তাদের নিজস্ব স্বার্থ ও আঞ্চলিক প্রভাব-প্রতিপত্তি রক্ষার জন্য ক্ষুদ্র ও দুর্বল রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নির্লজ্জভাবে হস্তক্ষেপ করছে।
এর ফলে অন্যান্য রাষ্ট্রও পরবর্তী সময়ে জড়িয়ে পড়ে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। জাতিসংঘের মহান শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষামূলক প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করে তোলে।
সপ্তমত: আর্থিক সংকটে নিপতিত হয়ে জাতিসংঘ বর্তমানে অনেক সাহায্য ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে। জাতিসংঘে এর পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। সদস্যরা ঠিকমতো চাঁদা প্রদান করছে না। অর্থাভাবে জাতিসংঘ ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে।
উপর্যুক্ত ব্যর্থতার কারণে জাতিসংঘ তার মহান ভাবমূর্তি অনেকখানি হারাতে বসেছে। জাতিসংঘ তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে সত্য কিন্তু তার মহা সনদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আজ সুদূরপরাহত।
সপ্তমত: আর্থিক সংকটে নিপতিত হয়ে জাতিসংঘ বর্তমানে অনেক সাহায্য ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে। জাতিসংঘে এর পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। সদস্যরা ঠিকমতো চাঁদা প্রদান করছে না। অর্থাভাবে জাতিসংঘ ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে।
উপর্যুক্ত ব্যর্থতার কারণে জাতিসংঘ তার মহান ভাবমূর্তি অনেকখানি হারাতে বসেছে। জাতিসংঘ তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে সত্য কিন্তু তার মহা সনদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আজ সুদূরপরাহত।
ব্যর্থতার পথে সকল প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে জাতিসংঘ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তারক্ষায় আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে, বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের তা একান্ত কামনা। জাতিসংঘের সফলতা মানবজাতির সফলতা।
লেখকের মন্তব্যঃ
সন্মানিত পাঠক, উপরোক্ত পোস্টটিতে জাতিসংঘ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এর উৎপত্তি কার্যকলাপ সফলতা ব্যর্থতা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পোস্টটি পড়ে জাতিসংঘ সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন আশা করি।
পোস্টটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন এবং মনে করেন যে এই তথ্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার বন্ধু পরিজনদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন যাতে করে তারাও জাতিসংঘ সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে এবং নিজেদের জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পারে।
পোস্টটি সম্পর্কে যদি কোন মতামত কিংবা পরামর্শ থাকে তাহলে তা অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে নিয়মিত পরিদর্শন করতে পারেন।
পরিশেষে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ 💚।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url