সৌরজগত কাকে বলে ও এর পরিধি
সূর্ব এবং তার গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণুপুঞ্জ, অসংখ্য ধূমকেতু ও অগণিত উল্কা নিয়ে
সৌরজগৎ গঠিত। সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। গ্রহগুলো মহাকর্ষ বলের প্রভাবে
সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। সৌরজগতের যাবতীয় গ্রহ-উপগ্রহের নিয়ন্ত্রক হলো সূর্য।
সূর্যকে ভিত্তি করে সৌরজগতের যাবতীয় কাজ-কর্ম চলে। এই মহাবিশ্বের বিশালতার মধ্যে
সৌরজগৎ নিতান্তই ছোট।
পৃথিবীর আকৃতি যেহেতু সম্পূর্ণ গোলাকার নয় সেহেতু পৃথিবীর নিরক্ষীয় 'পূর্ব-পশ্চিম' ব্যাস ও মেরুদেশীয় 'উত্তর-দক্ষিণ' ব্যাস ভিন্ন। মেরুদেশীয় ব্যাস হলো ১২,৭১৪ কিলোমিটার এবং নিরক্ষীয় ব্যাস হলো ১২,৭৫৭ কিলোমিটার। এদের মধ্যে পার্থক্য হলো ৪৩ কিলোমিটার। পৃথিবীর গড় ব্যাস হলো ১২,৭৩৪.৫ কিলোমিটার।
পৃথিবীর আহ্নিক গতি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম। পৃথিবীপৃষ্ঠ পুরোপুরি গোল না হওয়ায় এর পৃষ্ঠ সর্বত্র সমান নয়। সে কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠের সকল স্থানের আবর্তন বেগও সমান নয়। নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর পরিধি সবচেয়ে বেশি। এজন্য নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর আবর্তনের বেগ সবচেয়ে বেশি।
১। ভূপৃষ্ঠে অবস্থান করার কারণে মানুষ, জীবজন্তু, বায়ুমন্ডল প্রভৃতি পৃথিবীর সঙ্গে একই গতিতে আবর্তন করছে, তাই আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতি অনুভব করতে পারি না।
২। ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত সকল বস্তুকে পৃথিবী অভিকর্ষ বল দ্বারা নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করছে, তাই আমরা পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ি না।
৩। পৃথিবীর আয়তনের তুলনায় আমরা এত বেশি ক্ষুদ্র যে এই গতি অনুভব করি না বা ছিটকে পড়ি না।
৪। পৃথিবীর প্রতিটি স্থানের আবর্তন গতি সুনির্দিষ্ট তাই আমরা গতি অনুভব করি না।
৫। দু'টি বস্তুর মধ্যে একটি যদি দাঁড়িয়ে থাকে এবং অন্যটি যদি চলতে থাকে তাহলে বোঝা যায় তার গতি আছে। এভাবে পৃথিবীর সামনে স্থির বা সমান কোনো বস্তু নেই যার সাপেক্ষে আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতি বুঝতে পারি।
১। মহাকাশযানের পাঠানো ছবি: পৃথিবী থেকে যেসব উপগ্রহ ও মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে সেগুলোর প্রেরিত ছবি থেকে দেখা যায় যে, পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে। এ ছবিগুলোই পৃথিবীর আবর্তন বা আহ্নিক গতির সর্বাধুনিক ও নির্ভুল প্রমাণ।
২। পৃথিবীর আকৃতি: কোনো নমনীয় বস্তু যদি নিজের অক্ষের উপর লাটিমের মতো ঘুরতে থাকে তবে তার মধ্যে একই সঙ্গে কেন্দ্রমুখী (Centripetal) এবং কেন্দ্রবিমুখী (Centrifugal) বলের উদ্ভব হয়, যার প্রভাবে গোলাকৃতি বস্তুর প্রান্তদেশ কিছুটা চাপা ও মধ্যভাগ কিছুটা স্ফীত হয়।
৩। রাত-দিন হওয়া: পৃথিবীর বেশিরভাগ স্থানেই পর্যায়ক্রমে দিন ও রাত্রি হয়। অর্থাৎ ১২ ঘণ্টা দিন ও ১২ ঘণ্টা রাত পৃথিবীর আহ্নিক গতির অন্যতম প্রমাণ। এ আহ্নিক গতি না থাকলে পৃথিবীর একদিক চিরকাল অন্ধকারে থাকত এবং অপরদিক আলোকিত হয়ে থাকত।
৪। ফেরেলের সূত্রের সাহায্যে আমরা জানি সমুদ্রস্রোত এবং বায়ুপ্রবাহ উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। এই বেঁকে যাওয়াটা ফেরেলের সূত্র নামে পরিচিত। বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রস্রোতের এই গতিবেগ প্রমাণ করে যে, আহ্নিক গতিতে পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে।
১। পৃথিবীতে দিবারাত্রি সংঘটন পর্যায়ক্রমে দিনরাত্রি সংঘটিত হওয়া পৃথিবীর আহ্নিক গতির একটি ফল। আমরা জানি পৃথিবী গোল এবং এর নিজের কোনো আলো নেই। সূর্যের আলোতে পৃথিবী আলোকিত হয়। আবর্তন গতির জন্ন পৃথিবীর যেদিকে সূর্যের সামনে আসে, সেদিকে সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়।
২। জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি: আহ্নিক গতির ফলেই জোয়ার-ভাটা সংঘটিত হচ্ছে। আমরা দেখি প্রতিদিন জোয়ার-ভাটা একই সময়ে হচ্ছে না। আজকে জোয়ার যে স্থানে যে সময়ে হচ্ছে পরের দিন সেই সময়ে না হয়ে তার ৫২ মিনিট পরে হচ্ছে। এই যে সময়ের ব্যবধান সেটা আহ্নিক গতির কারণেই হচ্ছে।
৩। বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি: পৃথিবীর অভিগত গোলকের কারণে নিরক্ষরেখা থেকে উভয় মেরুর দিকে অক্ষরেখাগুলোর পরিধি ও পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ ক্রমশ কমতে থাকে। এসব কারণে পৃথিবীর বায়ুপ্রবাহ বা সমুদ্রস্রোতের গতির দিক সরাসরি উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়।
৪। তাপমাত্রার তারতম্য সৃষ্টি দিনের বেলায় সূর্যের কিরণ থাকার কারণে তাপমাত্রা বেশি থাকে। রাত হলে তাপ বিকিরণ করে তাপমাত্রা কমে যায়। যদি আহ্নিক গতি না থাকত তাহলে এভাবে দিনের পর রাত আসত না এবং তাপমাত্রার তারতম্য সৃষ্টি হতো না। এই তাপমাত্রার তারতম্য হলো আহ্নিক গতির একটি ফল।'
৫। সময় গণনা বা সময় নির্ধারণ: আহ্নিক গতির ফলে সময়ের হিসাব করতে সুবিধা হয়। একবার সম্পূর্ণ আবর্তনের সময়ের ২৪ ভাগের এক ভাগকে ঘণ্টা ধরে তার ৬০ ভাগের ১ ভাগকে মিনিট। মিনিটের ৬০ ভাগের ১ ভাগকে সেকেন্ড এভাবে সময় গণনা করা হয়।
৬। উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ সৃষ্টি: পৃথিবীর আবর্তনের কারণেই পৃথিবীর সব জায়গায় পর্যায়ক্রমে সূর্যালোক পড়ে এবং দিনরাত্রি হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য সূর্যালোকই বেশি প্রয়োজন। দিনের বেলায় সূর্যালোক থেকে শক্তি সঞ্চয় করে এবং রাতে ঐ শক্তি নিজেদের শারীরবৃত্তীয় কাজে লাগায়।
(ক) পৃথিবীর অভিগত গোলাকৃতি;
পরিশেষে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।💚
ভূমিকা
পৃথিবী মানবজাতির আবাসস্থল। পৃথিবীর চারদিকে ঘিরে রয়েছে অসীম মহাকাশ। সৌরজগতের
কেন্দ্রে সূর্য রয়েছে। মহাকাশে এরূপ বহু 'নক্ষত্র রয়েছে। পাশাপাশি চন্দ্র
(উপগ্রহ), পৃথিবী (গ্রহ), ধূমকেতু, উল্কা, নীহারিকা প্রভৃতি রয়েছে।
ক্ষুদ্র পোকামাকড় ও ধূলিকণা থেকে শুরু করে আমাদের এই পৃথিবী, দূর-দূরান্তের সকল
জ্যোতিষ্ক এবং দেখা না দেখা সবকিছু নিয়েই মহাবিশ্ব। নিম্নে মহাকাশ, মহাবিশ্ব,
সৌরজগৎ, পৃথিবী ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হল।
সৌরজগৎ কাকে বলে
সূর্যের আকর্ষণের ফলে যে সকল মহাজাগতিক বস্তু তার চারিপাশে পরিভ্রমণ করে
সেই সকল বস্তুকে একত্রে সৌরজগৎ বলে।সৌরজগৎ সূর্য, গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহানুপুঞ্জ,
ধুমকেতু, উল্কা ও বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থে সৌরজগৎ গঠিত।
বর্তমানে সৌরজগতের আটটি প্রধান গ্রহ (প্লুটোকে সম্প্রতি গ্রহ বর্হিভূত বলে
বিজ্ঞানীরা ঘোষনা দিয়েছেন) প্রধান গ্রহগুলির ৪৮টি উপগ্রহ চাঁদ, প্রায় ৪০ হাজার
অনুজ্জ্বল গৌণগ্রহ এবং ৭,০০০ কাছাকাছি গ্রহানু রয়েছে।
সূর্যের ব্যাস কত ?
সূর্য একটি নক্ষত্র'। এটি একটি মাঝারি আকারের হলুদ বর্ণের নক্ষত্র। এর ব্যাস
প্রায় ১৩ লক্ষ
৮৪ হাজার কিলোমিটার এবং ভর প্রায় ১.৯৯×১০১৩ কিলোগ্রাম। এটি সৌরজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতিষ্ক। সূর্যের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ। পৃথিবী, অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহের তাপ ও আলোর মূল উৎস সূর্য।
৮৪ হাজার কিলোমিটার এবং ভর প্রায় ১.৯৯×১০১৩ কিলোগ্রাম। এটি সৌরজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতিষ্ক। সূর্যের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ। পৃথিবী, অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহের তাপ ও আলোর মূল উৎস সূর্য।
সূর্যের আলো ছাড়া পৃথিবী চির অন্ধকার থাকত এবং পৃথিবীতে জীবজগৎ ও উদ্ভিদজগতের
কিছুই বাঁচত না। সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে আটটি গ্রহ। সূর্য থেকে গ্রহগুলো
দূরত্ব অনুযায়ী পর পর যেভাবে রয়েছে তা হলো বুধ (Mercury), শুক্র (Venus),
পৃথিবী (Earth), মঙ্গল (Mars), বৃহস্পতি (Jupiter), শনি (Saturn), ইউরেনাস
(Uranus) এবং নেপচুন (Neptune)।
গ্রহদের মধ্যে সবচেয়ে বড় বৃহস্পতি এবং ছোট বুধ। বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও
শনি বেশ উজ্জ্বল এবং কোনো যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই দেখা যায়। ইউরেনাস ও নেপচুন
এতটা কম উজ্জ্বল যে দূরবীক্ষণ ছাড়া এদের দেখা যায় না।
বুধ গ্রহের ব্যাস কত
বুধ সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম এবং সূর্যের নিকটতম গ্রহ। সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ৫.৮ কোটি কিলোমিটার; এর ব্যাস ৪,৮৫০ কিলোমিটার। সূর্যের খুব কাছাকাছি থাকায় সূর্যের আলোর তীব্রতার কারণে সবসময় একে দেখা যায় না। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে আসতে বুধের সময় লাগে ৮৮ দিন। সুতরাং বুধ গ্রহে ৮৮ দিনে এক বছর হয়।
বুধের মাধ্যাকর্ষণ বল এত কম যে এটি কোনো বায়ুমন্ডল ধরে রাখতে পারে না। এখানে
নেই মেঘ, বৃষ্টি, বাতাস ও পানি। সুতরাং প্রাণির অস্তিত্ব নেই। ১৯৭৪ সালে
মার্কিন মহাশূন্যযান মেরিনার-১০ বুধের যে ছবি পাঠায় তা থেকে দেখা যায় যে,
যুধের উপরিতল একদম চাঁদের মতো।
ভূত্বক অসংখ্য গর্তে ভরা এবং এবড়ো-থেবড়ো। এখানে আছে অসংখ্য পাহাড় ও সমতলভূমি।
বুধের কোনো উপগ্রহ নেই।
পৃথিবীর অন্যতম নিকটবর্তী গ্রহ কোনটি
শুক্র পৃথিবীর অন্যতম নিকটবর্তী গ্রহ। একে ভারতবর্ষে শুকতারা নামেও অভিহিত করা
হয়ে থাকে। সূর্য থেকে শুক্রের দুরত্ব ১০ কোটি ৮২ লক্ষ কিলোমিটার। সূর্যকে
প্রদক্ষিন করতে এর সময় লাগে ২৪৩ দিন। পৃথিবী ও শুক্রের আকার প্রায় সমান (ব্যাস
শুক্রের ১২৩০০কি.মি. এবং পৃথিবীর ১২৭৫৭ কি.মি.)। পৃথিবীর মত শুক্র গ্রহের
কেন্দ্রে লোহা ও নিকেল আছে।
শুক্রের ঘনত্ব ও পৃথিবীর কাছাকাছি (৫.৩যেখানে পৃথিবীর ৫.৫)। শুক্রের বায়ুমন্ডল
কার্বন-ডাই অক্সাইডের প্রাধান্যযুক্ত। (CO2- ৯৭%, N2১-৩ %এছাড়া সামান্য জলীয়
বাষ্প, আর্গন, নিয়ন, হিলিয়াম ইত্যাদি রয়েছে। শুক্রে পানি কিংবা প্রাণীর
অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়নি।
সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব কত কিমি
পৃথিবী আমাদের বাসভূমি। এটি সূর্যের তৃতীয় নিকটতম গ্রহ। সূর্য থেকে
পৃথিবীর গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। এর ব্যাস প্রায় ১২,৬৬৭ কিলোমিটার।
পৃথিবী একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭
সেকেন্ড। তাই এখানে ৩৬৫ দিনে এক বছর। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ।
পৃথিবী একমাত্র গ্রহ যার বায়ুমণ্ডলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও
তাপমাত্রা রয়েছে যা উদ্ভিদ ও জীবজন্তু বসবাসের উপযোগী। সৌরজগতের গ্রহগুলোর
মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই প্রাণের অস্তিত্ব আছে। নাইট্রোজেনের প্রধান্যযুক্ত
বায়ুমন্ডল এবং বিস্তৃত জলভাগ সম্পন্ন পৃথিবী সৌরজগতের প্রাণসমৃদ্ধ সবুজ গ্রহ।
মঙ্গল গ্রহের ব্যাস কত
মঙ্গল পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশী। বছরের অধিকাংশ সময় একে দেখা যায়। খালি
চোখে মঙ্গল গ্রহকে লালচে দেখায়। সূর্য থেকে মঙ্গল গ্রহের দুরুত্ব ২২কোটি ৭৭
লক্ষ কি.মি.এর ব্যাস ৬,৭৮৭ কিলোমিটার এবং পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় অর্ধেক। এই
গ্রহে দিনরাত্রির পরিমাণ পৃথিবীর প্রায় সমান।
আয়তনে মঙ্গল পৃথিবী থেকে ছোট।সূর্যের চতুর্দিকে আবর্তন করতে মঙ্গলের সময় লাগে
৬৮৭ দিন। এখানকার বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডই অক্সাইডের পরিমান বেশি (৯৫%)। এছাড়া
নাইট্রোজেন ৩%,১.৫% আর্গন এবং সামান্য হাইড্রোজেন ও অস্ট্রিজেন আছে। মঙ্গলে
অনেক আগ্নেয়গিরি ও গ্রন্থ উপত্যকার সন্ধান পাওয়া গেলেও পানি ও জীবের অস্তিত্ব
আবিষ্কৃত হয়নি।
মঙ্গল গ্রহের উপরিভাগে রয়েছে গিরিখাত ও আগ্নেয়গিরি। এ গ্রহে অক্সিজেন ও পানির
পরিমাণ খুবই কম এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ এত বেশি (শতকরা ৯৯ ভাগ) যে
প্রাণীর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। মঙ্গলে ফোবস ও ডিমোস নামে দুটি উপগ্রহ রয়েছে।
সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ কোনটি
সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির ব্যাস ১,৪২,৯৮৪ কি.মি. এবং আয়তনে এটা পৃথিবী
থেকে ১৩০০গুন বড়। সূর্য থেকে এর দুরুত্ব ৭৮কোটি কি.মি.। সূর্যের চতুর্দিকে
পরিক্রমন করতে বৃহস্পতির সময় লাগে পৃথিবীর হিসেবে ১১.৮৬ বছর।
বৃহস্পতির মধ্যভাগে ৫৭,৬০০কি.মি. ব্যাসের ধাতব কেন্দ্র তার উপর ২৫৬০০কি.মি. বরফ
স্তর এবং তার উপর হাইডোজেন অ্যামোনিয়া, মিথেন ও হিলিয়াম সমৃদ্ধ বায়ুমন্ডল।
বৃহস্পতির উপগ্রহের সংখ্যা ১৪ টি। বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল পৃথিবী হাইড্রোজেন ও
হিলিয়াম গ্যাস দিয়ে তৈরি।
বায়ুমন্ডলের উপরিভাগে তাপমাত্রা খুবই কম এবং অভ্যন্তরের তাপমাত্রা অত্যন্ত
বেশি (প্রায় ৩০,০০০° সেলসিয়াস)। বৃহস্পতির উপগ্রহের সংখ্যা ৭৯টি। এ গ্রহে জীবের
অস্তিত্ব নেই।
শনি গ্রহের উপগ্রহ কয়টি
শনি সূর্যের একটি দুরবর্তী গ্রহ (সূর্য থেকে ১৪২ কোটি ৯০ লক্ষ কি.মি.
দূরেঅবস্থিত)। সূর্যের চারিদিকে ঘুরে আসতে শনির সময় লাগে ২৯ বছর ৫ মাস। শনির
বায়ুমন্ডল ও হাইড্রোজেন, মিথেন ও হিলিয়াম গ্যাসে পরিপূর্ন। এছাড়া জমাটবাধা
অ্যামোনিয়া গ্যাসও রয়েছে এর উপরিভাগে।
শনির আয়তন পৃথিবী অপেক্ষা ৭০০ গুন বেশি। এর ব্যাস নিরক্ষীয় এলাকায় ১,১৯,৩০০
কি.মি.। শনির মধ্যভাগে ৪৫০০০ কি.মি. ব্যাসের কেন্দ্রমন্ডল, তার উপর
১০,০০০কি.মি. ব্যাসের পুরু বরফ স্তর এবং তৎপরে ২৫০০০কি.মি. বায়ুমন্ডল রয়েছে।
শনির উপগ্রহ ৮২ টি।
সূর্য থেকে ইউরেনাস এর দুরত্ব কত কিমি
সূর্য থেকে ইউরেনাস এর দুরত্ব ২৮৭ কোটি ৫০ লক্ষ কি.মি.। আবর্তন সময়
পৃথিবীর সময়মানে ৮৪ বছর। সৌরজগতের দূরবর্তী অন্যন্য গ্রহের মত ইউরেনাসেও
হাইড্রোজেন, মিথেন ও হিলিয়াম গ্যাসের প্রাধান্য বিদ্যমান। পৃথিবী থেকে ইউরেনাস
আয়তনে প্রায় ৫০ গুন বড়।
সূর্যের বর্হিগ্রহের বৈশিষ্ট্য হিসেবে ইউরেনাসেও মধ্যস্থলে ধাতবমন্ডল অর্থাৎ
কঠিন স্তর (ব্যাস ২২,০০০ কি.মি.) তার উপর বরফ স্তর (১০,০০০ কি.মি. বরফ) ও তার
উপর বায়ুমন্ডল (৫,০০০ কি.মি.) বিদ্যমান। ইউরেনাসের ৫ টি উপগ্রহ আবিষ্কৃত
হয়েছে।ইউরেনাস সৌরজগতের তৃতীয় বৃহত্তম গ্রহ। এ গ্রহটি সূর্য থেকে ২৮৭ কোটি
কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে এ গ্রহের সময় লাগে ৮৪ বছর। এ গ্রহের গড় ব্যাস ৪৯,০০০
কিলোমিটার। এ গ্রহটি হালকা পদার্থ দিয়ে গঠিত, আবহমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ
অধিক। শনির মতো ইউরেনাসেরও কয়েকটি বলয় আবিষ্কৃত হয়েছে, তবে শনির বলয়ের ন্যায় এ
বলয়গুলো উজ্জ্বল নয়। এর উপগ্রহ সংখ্যা ২৭টি।
নেপচুনের উপগ্রহ কয়টি রয়েছে
সূর্য থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪৫০ কোটি কিলোমিটার। এখানে সূর্যের আলো ও তাপ
খুব কম। এর ব্যাস ৪৮,৪০০ কিলোমিটার। এ গ্রহ আয়তনে প্রায় ৭২টি পৃথিবীর সমান এবং
ভর ১৭টি পৃথিবীর ভরের সমান। এর বায়ুমন্ডলে বেশিরভাগই মিথেন ও অ্যামোনিয়া
গ্যাস।
এর উপগ্রহ সংখ্যা ১৪টি। সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরতে নেপচুনের সময় লাগে ১৬৫
বছর। সূর্যের চতুর্দিকে ঘুরে আসতে এর সময় লাগে ১৬৪ বছর ৯ মাস। নেপচুন গ্রহের
ব্যাস ৪৮,৪০০ কি.মি.। নেপচুনের উপগ্রহ ২ টি-ট্রাইটন ও নিরিইদ। ট্রাইটন উপগ্রহে
বায়ুমন্ডলের অস্তিত্ব আছে।
সূর্যের চতুর্দিকে আবর্তন করতে পুটো গ্রহের কত সময় লাগে
পুটো সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহ হিসেবে পরিচিত ছিল (৫৯১ কোটি কি.মি.।
সূর্যের চতুর্দিকে আবর্তন করতে এর ২৪৮ বছরের মত সময় লাগে। তবে এই গ্রহসদৃশ
মহাজাগতিক বস্তুটিকে অতি সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ প্রকৃত গ্রহ নয় বলে মতামত দেয়া
হয়েছে।
গ্রহাণু কাকে বলে ও এর অবস্থান কোথায়
মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যবর্তী স্থানে ৫৬ কোটি কি.মি. জায়গায়
গ্রহানুপুঞ্জের অবস্থান। অনেকের ধারনা মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যস্থলে অন্য একটি
গ্রহ বৃহস্পতির মধ্যাকর্ষনে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে গ্রহানুপুঞ্জ সৃষ্টি করে।
ভেঙ্গে যাওয়া অংশগুলি নিয়মিতভাবে সূর্যের চতুর্দিকে প্রদক্ষিন করছে।
গ্রহানুর ব্যাস কয়েক মিটার থেকে কয়েক কিলোমিটার বা তার ও বেশি হয়ে থাকে। ১৮০১
সালে আবিষ্কৃত গ্রহাণু সিরিস ১০০০ কি.মি. দীর্ঘ। উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকটি বৃহৎ
গ্রহাণুর নাম হল জুনো, ভেস্তা, হেবে, ইরিস, ফ্লোরা, অ্যাসট্রাকা ইত্যাদি।
বর্তমানে ৭ সহাস্রাধিক গ্রহাণুর সন্ধান পাওয়া গেছে।
মঙ্গল ও বৃহস্পতির বাইরেও গ্রহাণুর অস্তিত্ব আছে। সৌরজগত সৃষ্টির সময়েই
প্রকৃতপক্ষে অসংখ্য গ্রহাণুর জন্ম হয়।
পৃথিবীর আকার-আকৃতি বর্ণনা কর
মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন ১৯৬১ সালের ১২ই এপ্রিল স্পুটনিকে চড়ে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণের সময় বুঝতে পারেন পৃথিবী 'গোলাকার' তবে উত্তর-দক্ষিণে কিছুটা চাপা। এছাড়া তার তোলা পৃথিবীর ছবিও দেখতে গোলাকৃতি। তবে পূর্ব-পশ্চিমে সামান্য স্ফীত। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রকৃত আকৃতি হলো অনেকটা অভিগত গোলকের (Oblate spheriod) মতো।পৃথিবীর আকৃতি যেহেতু সম্পূর্ণ গোলাকার নয় সেহেতু পৃথিবীর নিরক্ষীয় 'পূর্ব-পশ্চিম' ব্যাস ও মেরুদেশীয় 'উত্তর-দক্ষিণ' ব্যাস ভিন্ন। মেরুদেশীয় ব্যাস হলো ১২,৭১৪ কিলোমিটার এবং নিরক্ষীয় ব্যাস হলো ১২,৭৫৭ কিলোমিটার। এদের মধ্যে পার্থক্য হলো ৪৩ কিলোমিটার। পৃথিবীর গড় ব্যাস হলো ১২,৭৩৪.৫ কিলোমিটার।
গণনার সুবিধার জন্য একে ১২,৮০০ কিলোমিটার ধরা হয়। এই হিসেবে পৃথিবীর গড়
ব্যাসার্ধ হলো ৬,৪০০ কিলোমিটার। পৃথিবীর পরিধির মধ্যে নিরক্ষীয় পরিধি ৪০,০৭৭
কিলোমিটার। এটাই সর্ববৃহৎ পরিধি এবং মেরুদেশীয় পরিধি ৪০,০০৯ কিলোমিটার। গণনার
সুবিধার জন্য গড় পরিধি ৪০,০০০ কিলোমিটার ধরা হয়।
পৃথিবীর গতি কাকে বলে ও কত প্রকার ?
পূর্বে মনে করা হতো পৃথিবী স্থির এবং সূর্যই পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রমাণিত হয় যে, সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং পৃথিবীই সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। পৃথিবী শুধু সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে না, নিজ অক্ষ বা মেরুরেখার উপরও আবর্তন করে। পৃথিবীর গতি দুই প্রকার।
নিজ অক্ষের উপর একদিনে আবর্তন করাকে আহ্নিক গতি (Rotation) এবং কক্ষপথে এক বছরে
সূর্যকে পরিক্রমণ করাকে বার্ষিক গতি (Revolution) বলে
আহ্নিক গতি কাকে বলে
পৃথিবী গতিশীল। পৃথিবী তার নিজের মেরুদণ্ডের বা অক্ষের চারদিকে দিনে একবার নির্দিষ্ট গতিতে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করে। পৃথিবীর এই আবর্তন গতিকে দৈনিক গতি বা আহ্নিক গতি বলে। পৃথিবী তার নিজের মেরুদণ্ডের উপর একবার পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করতে সময় নেয় ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড বা ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ একদিন। একে সৌরদিন বলে।পৃথিবীর আহ্নিক গতি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম। পৃথিবীপৃষ্ঠ পুরোপুরি গোল না হওয়ায় এর পৃষ্ঠ সর্বত্র সমান নয়। সে কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠের সকল স্থানের আবর্তন বেগও সমান নয়। নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর পরিধি সবচেয়ে বেশি। এজন্য নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর আবর্তনের বেগ সবচেয়ে বেশি।
ঘণ্টায় প্রায় ১৭০০ কিলোমিটার। ঢাকায় পৃথিবীর আহ্নিক গতির বেগ ১৬০০ কিলোমিটার।
যত মেরুর দিকে যাবে এ আবর্তনের বেগ তত কমতে থাকে এবং মেরুদ্বয়ে প্রায় নিঃশেষ
হয়ে যায়।
পৃথিবীর আবর্তনগতি থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ি না?
পৃথিবীর আবর্তনগতি থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ি নাবা তা অনুভব করি না। এর কারণ হলো:১। ভূপৃষ্ঠে অবস্থান করার কারণে মানুষ, জীবজন্তু, বায়ুমন্ডল প্রভৃতি পৃথিবীর সঙ্গে একই গতিতে আবর্তন করছে, তাই আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতি অনুভব করতে পারি না।
২। ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত সকল বস্তুকে পৃথিবী অভিকর্ষ বল দ্বারা নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করছে, তাই আমরা পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ি না।
৩। পৃথিবীর আয়তনের তুলনায় আমরা এত বেশি ক্ষুদ্র যে এই গতি অনুভব করি না বা ছিটকে পড়ি না।
৪। পৃথিবীর প্রতিটি স্থানের আবর্তন গতি সুনির্দিষ্ট তাই আমরা গতি অনুভব করি না।
৫। দু'টি বস্তুর মধ্যে একটি যদি দাঁড়িয়ে থাকে এবং অন্যটি যদি চলতে থাকে তাহলে বোঝা যায় তার গতি আছে। এভাবে পৃথিবীর সামনে স্থির বা সমান কোনো বস্তু নেই যার সাপেক্ষে আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতি বুঝতে পারি।
আহ্নিক গতির প্রমাণ
পৃথিবী যে নিজের মেরুদন্ডের উপর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে তার প্রমাণ হলো:১। মহাকাশযানের পাঠানো ছবি: পৃথিবী থেকে যেসব উপগ্রহ ও মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে সেগুলোর প্রেরিত ছবি থেকে দেখা যায় যে, পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে। এ ছবিগুলোই পৃথিবীর আবর্তন বা আহ্নিক গতির সর্বাধুনিক ও নির্ভুল প্রমাণ।
২। পৃথিবীর আকৃতি: কোনো নমনীয় বস্তু যদি নিজের অক্ষের উপর লাটিমের মতো ঘুরতে থাকে তবে তার মধ্যে একই সঙ্গে কেন্দ্রমুখী (Centripetal) এবং কেন্দ্রবিমুখী (Centrifugal) বলের উদ্ভব হয়, যার প্রভাবে গোলাকৃতি বস্তুর প্রান্তদেশ কিছুটা চাপা ও মধ্যভাগ কিছুটা স্ফীত হয়।
আবর্তন গতির প্রভাবেই জন্মকালে নমনীয় পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু একটু চাপা
এবং মধ্যভাগ সামান্য সস্ফীত হয়ে যায়। বিজ্ঞানী নিউটন বলেন যে, পৃথিবীর আবর্তনের
ফলেই এর আকৃতি এমন হয়েছে।
৩। রাত-দিন হওয়া: পৃথিবীর বেশিরভাগ স্থানেই পর্যায়ক্রমে দিন ও রাত্রি হয়। অর্থাৎ ১২ ঘণ্টা দিন ও ১২ ঘণ্টা রাত পৃথিবীর আহ্নিক গতির অন্যতম প্রমাণ। এ আহ্নিক গতি না থাকলে পৃথিবীর একদিক চিরকাল অন্ধকারে থাকত এবং অপরদিক আলোকিত হয়ে থাকত।
৪। ফেরেলের সূত্রের সাহায্যে আমরা জানি সমুদ্রস্রোত এবং বায়ুপ্রবাহ উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। এই বেঁকে যাওয়াটা ফেরেলের সূত্র নামে পরিচিত। বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রস্রোতের এই গতিবেগ প্রমাণ করে যে, আহ্নিক গতিতে পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে।
আহ্নিক গতির ফলাফল বিশ্লেষন কর
পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণে যেসব পরিবর্তন আমরা দেখতে পাই তা হলো-
১। পৃথিবীতে দিবারাত্রি সংঘটন পর্যায়ক্রমে দিনরাত্রি সংঘটিত হওয়া পৃথিবীর আহ্নিক গতির একটি ফল। আমরা জানি পৃথিবী গোল এবং এর নিজের কোনো আলো নেই। সূর্যের আলোতে পৃথিবী আলোকিত হয়। আবর্তন গতির জন্ন পৃথিবীর যেদিকে সূর্যের সামনে আসে, সেদিকে সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়।
তখন ঐ আলোকিত স্থান সমূহ দিন। আলোকিত স্থানের উল্টা দিকে অর্থাৎ পৃথিবীর
যেদিকটা সূর্যের বিপরীত দিকে, সেখানে সূর্যের আলো পৌছায় না, সেদিকটা অন্ধকার
থাকে। এসব অন্ধকার স্থানে তখন রাত্রি।পৃথিবীর পর্যায়ক্রমিক আবর্তনের ফলে আলোকিত
দিকটি অন্ধকারে আর অন্ধকারের দিকটি সূর্যের দিকে বা আলোকে চলে আসে।
ফলে দিনরাত্রি পাল্টে যায়। অন্ধকার স্থানগুলো আলোকিত হওয়ার ফলে এসব স্থানে দিন
হয়। আর আলোকিত স্থান অন্ধকার হয়ে যাওয়ার ফলে ঐসব স্থানে রাত হয়। এভাবে
পর্যায়ক্রমে দিনরাত্রি সংঘটিত হতে থাকে, কোনো স্থানে ১২ ঘণ্টা দিন ও ১২ ঘণ্টা
রাত্রি হয়।
২। জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি: আহ্নিক গতির ফলেই জোয়ার-ভাটা সংঘটিত হচ্ছে। আমরা দেখি প্রতিদিন জোয়ার-ভাটা একই সময়ে হচ্ছে না। আজকে জোয়ার যে স্থানে যে সময়ে হচ্ছে পরের দিন সেই সময়ে না হয়ে তার ৫২ মিনিট পরে হচ্ছে। এই যে সময়ের ব্যবধান সেটা আহ্নিক গতির কারণেই হচ্ছে।
৩। বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি: পৃথিবীর অভিগত গোলকের কারণে নিরক্ষরেখা থেকে উভয় মেরুর দিকে অক্ষরেখাগুলোর পরিধি ও পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ ক্রমশ কমতে থাকে। এসব কারণে পৃথিবীর বায়ুপ্রবাহ বা সমুদ্রস্রোতের গতির দিক সরাসরি উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়।
৪। তাপমাত্রার তারতম্য সৃষ্টি দিনের বেলায় সূর্যের কিরণ থাকার কারণে তাপমাত্রা বেশি থাকে। রাত হলে তাপ বিকিরণ করে তাপমাত্রা কমে যায়। যদি আহ্নিক গতি না থাকত তাহলে এভাবে দিনের পর রাত আসত না এবং তাপমাত্রার তারতম্য সৃষ্টি হতো না। এই তাপমাত্রার তারতম্য হলো আহ্নিক গতির একটি ফল।'
৫। সময় গণনা বা সময় নির্ধারণ: আহ্নিক গতির ফলে সময়ের হিসাব করতে সুবিধা হয়। একবার সম্পূর্ণ আবর্তনের সময়ের ২৪ ভাগের এক ভাগকে ঘণ্টা ধরে তার ৬০ ভাগের ১ ভাগকে মিনিট। মিনিটের ৬০ ভাগের ১ ভাগকে সেকেন্ড এভাবে সময় গণনা করা হয়।
৬। উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ সৃষ্টি: পৃথিবীর আবর্তনের কারণেই পৃথিবীর সব জায়গায় পর্যায়ক্রমে সূর্যালোক পড়ে এবং দিনরাত্রি হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য সূর্যালোকই বেশি প্রয়োজন। দিনের বেলায় সূর্যালোক থেকে শক্তি সঞ্চয় করে এবং রাতে ঐ শক্তি নিজেদের শারীরবৃত্তীয় কাজে লাগায়।
কোনো প্রাণী দিনে আবার কোনো প্রাণী রাতে খাদ্য সংগ্রহ করে। পৃথিবীর আবর্তন গতির
ফলে দিনরাত্রি সংঘটিত হয় তার উপরই উদ্ভিদ ও - প্রাণিজগতের নিয়মশৃঙ্খলা অনেকখানি
নির্ভর করে।
বার্ষিক গতি কাকে বলে
সূর্যের মহাকর্ষ বলের আকর্ষণে পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর অবিরাম ঘুরতে ঘুরতে একটি নির্দিষ্ট পথে নির্দিষ্ট দিকে (ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে) এবং নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। পৃথিবীর এই গতিকে বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ গতি বলে।বার্ষিক গতির ফলাফল বর্ণনা করঃ
বার্ষিক গতির ফল (The results of Revolution): বার্ষিক গতির ফল হলো- (১) দিবারাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি, (২) ঋতু পরিবর্তন।
দিবারাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি: পৃথিবীর দিবারাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধির প্রকৃত
কারণ-
(ক) পৃথিবীর অভিগত গোলাকৃতি;
(খ) পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথ;
(গ) পৃথিবীর অবিরাম আবর্তন ও পরিক্রমণ গতি,
(ঘ) পৃথিবীর মেরুরেখার সর্বদা একই মুখে অবস্থান
(ঙ) পৃথিবীর কক্ষপথে কৌণিক অবস্থান।
সূর্যকে প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবী আপন মেরুরেখায় কক্ষপথের সঙ্গে ৬৬.৫° কোণে হেলে
থাকে। পৃথিবী ৬৬.৫° কোণ করে চলার কারণে ২১এ মার্চ সূর্য নিরক্ষরেখার উপর
লম্বভাবে কিরণ দেয়। এরপর ধীরে ধীরে সূর্যের কিরণ উত্তর গোলার্ধের দিকে যেতে
থাকে।
সূর্যকে পরিক্রমণ করতে করতে ২১এ জুন পৃথিবী এমন এক জায়গায় আসে যে তখন সূর্যের
রশ্মি ভূপৃষ্ঠের ২৩.৫° উত্তর অক্ষাংশে অর্থাৎ কর্কটক্রান্তির উপর লম্বভাবে পড়ে
। এ সময় উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকে থাকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধ
সূর্য থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে থাকে।
সে কারণে এই সময় উত্তর গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য ও তাপমাত্রাও বেশি হয়ে
থাকে।উত্তর গোলার্ধে ২১এ জুন দীর্ঘতম দিন ও ক্ষুদ্রতম রাত হয়। ২১এ জুন সূর্য
উত্তরায়ণের শেষ সীমায় পৌঁছায়, একে কর্কটসংক্রান্তি বলে।২৩ এ সেপ্টেম্বর পুনরায়
২১এ মার্চের মতো' সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। সেদিন সর্বত্র
দিবারাত্রি সমান থাকে।
২৩এ সেপ্টেম্বর থেকে আবার সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে কিরণ বেশি দিতে থাকে।
২২এ ডিসেম্বর এমনভাবে কোণ করে থাকে তাতে দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন এবং
উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে ছোট দিন হয়। ২২এ ডিসেম্বর সূর্য দক্ষিণায়নের শেষ সীমায়
পৌঁছায়, একে মকরসংক্রান্তি বলে।
এ সময় সূর্যের রশ্মি ২৩.৫° দক্ষিণ অক্ষাংশ অর্থাৎ মকরক্রান্তির উপর
লম্বভাবে পতিত হয়।
২১এ মার্চ এবং ২৩এ সেপ্টেম্বর নিরক্ষরেখার উপর সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয়। এই
দুদিন পৃথিবীর সর্বত্র দিবারাত্রি সমান হয়। সেদিনকে বিষুব (Equinox) বলে।
২১এ মার্চ উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল তাই একে বাসন্ত বিষুব (Vernal equinox) বলে।
২৩এ সেপ্টেম্বর উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল। তাই ঐ দিনকে শারদ বিষুব (Autumnal
equinox) বলে।
লিপ ইয়ার কাকে বলে?
একবার সূর্যকে পূর্ণ পরিক্রমণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। একে সৌরবছর বলে। কিন্তু আমরা ৩৬৫ দিনকে এক বছর ধরি। এতে প্রতি বছর প্রায় ৬ ঘণ্টা অতিরিক্ত থেকে যায়। এ অতিরিক্ত সময়ের সামঞ্জস্য আনার জন্য প্রতি ৪ বছর অন্তর ফেব্রুয়ারি মাসে ২৪ ঘণ্টা বা ১ দিন বাড়িয়ে সময়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখা হয়।
এভাবে যে বছর ফেব্রুয়ারি মাসকে ১ দিন বাড়িয়ে ২৯ দিন করা হয় এবং ঐ বছরটিকে ৩৬৬ দিন ধরা হয়। সেই বছরকে লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ বলে। সাধারণত কোনো বছরকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে যদি ভাগশেষ না থাকে তবে ঐসব বছরকে অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ার (Leap Year) ধরা হয়।
বার্ষিক গতির প্রমাণ
১। রাতের আকাশে নক্ষত্রদের স্থান পরিবর্তন, অন্তর্ধান ও পুনরাগমন বিভিন্ন সময়ে রাতের আকাশে পূর্ব থেকে পশ্চিমে নক্ষত্রগুলোর অবস্থান পরিবর্তন করতে দেখা যায়।
মেঘমুক্ত আকাশে কয়েকদিন পর পর লক্ষ করলে নক্ষত্রের পূর্ব থেকে পশ্চিম আকাশে সরে
যাওয়া বোঝা যায়। এরপর একদিন এরা অদৃশ্য হয়ে যায়। ঠিক এক বছর পর এরা আদি স্থানে
ফিরে আসে। এ থেকে পৃথিবীর যে বার্ষিক গতি আছে তা বোঝা যায়।
২। আকাশে সূর্যের পরিবর্তিত অবস্থান: বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্যকে বিভিন্ন অবস্থানে দেখা যায়। সূর্য প্রতিদিন পূর্ব আকাশে একই জায়গা থেকে ওঠে না এবং পশ্চিম আকাশে একই জায়গায় অস্ত যায় না। বছরের ছয় মাস সূর্য একটু একটু করে দক্ষিণ দিকে সরে গিয়ে পূর্ব আকাশে উদিত হয়।
২। আকাশে সূর্যের পরিবর্তিত অবস্থান: বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্যকে বিভিন্ন অবস্থানে দেখা যায়। সূর্য প্রতিদিন পূর্ব আকাশে একই জায়গা থেকে ওঠে না এবং পশ্চিম আকাশে একই জায়গায় অস্ত যায় না। বছরের ছয় মাস সূর্য একটু একটু করে দক্ষিণ দিকে সরে গিয়ে পূর্ব আকাশে উদিত হয়।
বাকি ছয় মাস সূর্য একটু একটু করে উত্তর দিকে সরে গিয়ে পূর্ব আকাশে উদিত হয়।
পৃথিবী একই জায়গায় স্থির থেকে ঘুরলে প্রতিদিনই সূর্য একই জায়গায় উদিত হতো।
পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে এ ঘটনা ঘটে।
৩। বিভিন্ন গ্রহের পরিক্রমণ গতি: দূরবিনের সাহায্যে পৃথিবী থেকে দেখা গেছে সকল গ্রহ সূর্যকে পরিক্রমণ করছে। পৃথিবীও একটি গ্রহ সুতরাং এরও পরিক্রমণ গতি বা বার্ষিক গতি রয়েছে।
৩। বিভিন্ন গ্রহের পরিক্রমণ গতি: দূরবিনের সাহায্যে পৃথিবী থেকে দেখা গেছে সকল গ্রহ সূর্যকে পরিক্রমণ করছে। পৃথিবীও একটি গ্রহ সুতরাং এরও পরিক্রমণ গতি বা বার্ষিক গতি রয়েছে।
৪। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা: আধুনিক যুগের মহাশূন্যচারীগণ মহাশূন্যযান থেকে পৃথিবীর
পরিক্রমণ গতি দেখেছেন।
৫। মহাকর্ষ সূত্র: সূর্যের তুলনায় পৃথিবী খুবই ক্ষুদ্র, সূর্য পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ১৩ লক্ষ গুণ বড়। তাই স্বাভাবিক কারণে, সূর্যের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে।
৫। মহাকর্ষ সূত্র: সূর্যের তুলনায় পৃথিবী খুবই ক্ষুদ্র, সূর্য পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ১৩ লক্ষ গুণ বড়। তাই স্বাভাবিক কারণে, সূর্যের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে।
লেখকের মন্তব্যঃ
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে আমরা সৌরজগৎ, সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ সমূহ সহ
পৃথিবীর বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেছি। আশা করি উপরোক্ত তথ্যগুলো আপনার জ্ঞান
ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করবে। যদি এই পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত এবং জ্ঞান আহরণ করে
থাকেন তাহলে অবশ্যই এটি আপনার বন্ধু পরিজনদের মাঝে শেয়ার করবেন।
যাতে করে তারাও আমাদের এই সৌরজগৎ ও পৃথিবী সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা লাভ করতে
পারে। এবং এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন মতামত বা প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই
কমেন্টের মাধ্যমে তা জানিয়ে যাবেন। এরকমই শিক্ষনীয় এবং আরো অন্যান্য তথ্য
সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।
পরিশেষে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।💚
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url