টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার
টাইফয়েড জ্বর বাংলাদেশে অধিক পরিচিত একটি রোগ। প্রতিবছর অনেকেই টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হয়। সেজন্য প্রত্যেকের উচিত এই রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া। আর তাই সবাইকে টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে হবে
টাইফয়েড এখন অনেকেরই হতে দেখা যাচ্ছে তার কারণ হতে পারে আবহাওয়া পরিস্থিতি বা কিছুটা খাদ্যাভাসের উপর নির্ভর করে এবং সেই সাথে জীবনধারনের ওপরও নির্ভর করে। তাই টাইফয়েড থেকে বাঁচার জন্য খাবারগুলো খেতে হবে সেগুলো হলো-এ অবস্থায় প্রথমত প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে।
বাচ্চাদের পরিষ্কার বা ফুটানো জল পান করাতে হবে।
বাচ্চাদের কিছু খাওয়ানোর আগে ভালো করে হাত পরিষ্কার করতে হবে।
রাস্তাঘাটে খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।
বাচ্চাদের বাইরের খাওয়াবেন না।
একজন ডাক্তার বাচ্চার পরিস্থিতি ও ওজন অনুযায়ী এ সকল ওষুধের মাত্রা কমবেশি করতে পারে।
ভুমিকাঃ
সালমোনেলা টাইফি এবং সালমোনেলা প্যারাটাইফি নামক দু'টি জীবানুর সংক্রমনে এই জ্বর হয়ে থাকে। সে কোন বয়েসের মানুষই টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত অপরিস্কার পানি ও দূষিত খাবার গ্রহণের ফলে এ রোগের জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। টাইফয়েড জ্বর কি, প্যারাটাইফয়েড জ্বর কি, কেন হয় এবং এর জটিলতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ আলী মনসুর শরীফ।টাইফয়েডের লক্ষণগুলো কি কি?
প্রথমে আপনাদের জানিয়ে রাখি যে টাইফয়েড এবং প্যারাটাইফয়েড এর লক্ষণ অনেকাংশেই একই ধরনের হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেয়া যাক লক্ষণ টাইফয়েডের গুলো কি কি-- অনেক বেশি জ্বর থাকবে
- ডায়রিয়া বা বমি হতে পারে
- অস্বস্তি বোধ হতে পারে
- মাথা ব্যথা করতে পারে
- প্লীহা বড় হয়ে যাবে
- কাঁধে বা ঘাড়ে চ্যাপ্টা গোলাপি রঙের ফুসকুড়ি বা র্যাশ হতে পারে
- শরীর ব্যথা করতে পারে
- শরীরে ঝিমঝিম অনুভূত হতে পারে
- কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে
- খাবারের উপর রুচি হারিয়ে যেতে পারে বা অরুচি দেখা যেতে পারে
- অনেক সময় পেটে ব্যথা হতে পারে
- প্রচন্ড দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে
- রোগী অনেক সময় প্রলাপ বকতে পারে ইত্যাদি।
সুতরাং উপরে লক্ষণ সমূহ যদি কোন ব্যক্তির মাঝে প্রকাশ পায় তাহলে এটাকে এড়িয়ে না গিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এবং চিকিৎসা পরামর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করতে হবে। যাতে করে এই রোগ থেকে যথাসম্ভব মুক্তি পাওয়া যায়।
টাইফয়েড কি?
টাইফয়েড বা টাইফয়েড জ্বর হল এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ যা সালমোনেলা টাইফি (Salmonella typhi) নামক ব্যাকটেরিয়ার কারনে হয়। Mary Mallon নামে একজন মহিলা আমেরিকার নিউইয়র্কে বসবাস করতেন এবং তিনিই ছিলেন প্রথম টাইফয়েড এর বাহক। তিনি সকলের কাছে "Typhoid Mary" নামেই পরিচিত ছিলেন।কত দিনে টাইফয়েড রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়
এই রোগের লক্ষণ সাধারণত সংক্রমনের এক থেকে তিন সপ্তাহ পরে প্রকাশিত হয়।টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত
টাইফয়েড হলে অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন যে এই সময়ে আমাদের কি খাওয়া উচিত এবং কি খাওয়া উচিত নয়। সুতরাং টাইফয়েড হলে কোন কোন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত এবং কোন খাবারগুলোকে খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হবে। ডাক্তার মম ভট্টাচার্য এ সম্পর্কে বলেন যে-টাইফয়েড এখন অনেকেরই হতে দেখা যাচ্ছে তার কারণ হতে পারে আবহাওয়া পরিস্থিতি বা কিছুটা খাদ্যাভাসের উপর নির্ভর করে এবং সেই সাথে জীবনধারনের ওপরও নির্ভর করে। তাই টাইফয়েড থেকে বাঁচার জন্য খাবারগুলো খেতে হবে সেগুলো হলো-এ অবস্থায় প্রথমত প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে।
সেটা হতে পারে ঠান্ডা জল, ডাবের জল তবে অবশ্যই সেটি পরিষ্কার হতে হবে।সিজনাল রসালো ফল খেতে পারেন।এই ধরনের ভিটামিনযুক্ত ফল গুলো খেলে খাবার রুচি আসে।যেহেতু এই সমস্যাটি মূলত পেতে সুতরাং প্রথমে অনেক সময় খাবার খেতে ইচ্ছা করবে না কিংবা খাবার দেখলে বমি বমি ভাব আসবে।
তবে এই খারাপ লাগাকে ত্যাগ করে যেটা ভালো লাগবে ওই ধরনের খাবার খেতে হবে।যেমন যদি সারাদিন আপনার ফল খেতে ইচ্ছা করে তাহলে আপনি ফল খেতে পারেন এবং তার সাথে শক্ত যে খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে ভাত খেতে পারেন। তবে অবশ্যই ভাবতে একটু বেশি সেদ্ধ করা হতে হবে যাতে তাড়াতাড়ি হজম হতে পারে।
এ সময় মাছ-মাংস খেতে পারেন। তবে যদি মাছ মাংস খেতে ইচ্ছে না করে সেক্ষেত্রে আপনি ডাল, টক দই, হালকা বয়েল করা ডিম ও সবজি তরকারির ঝোল খেতে পারেন।তবে আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। আসলে টাইফয়েড রোগের ধরাবাধা কোন খাদ্য তালিকা নেই।
আপনি আপনার ইচ্ছা মতো ও পছন্দমত খাবার খেতে পারবে তবে অবশ্যই তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে যাতে পেটে গিয়ে সমস্যা না করে।
টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে কোন ব্যক্তি যদি টাইফয়েড আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকলেও সে এক থেকে দুই সপ্তার বেশি অসুস্থ থাকতে পারে। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই দ্রুতই সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।টাইফয়েড জ্বর হলে কি গোসল করা যায়
অনেকের ধারণা জ্বর হলে গোসল করা নিষেধ। তাতে জ্বর আরো বাড়বে। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে জ্বর হলো গোসল করা একেবারেই নিষেধ নয়। কারণ গোসল না করলে এমনিতেই অস্বস্তি বোধ হয়। উপরন্ত জ্বরের কারণে খারাপ লাগার অনুভূতি কাজ করে। জ্বর ছাড়ার সময় শরীর ঘামে এবং গোসল না করলে আরো বেশি অস্বস্তি বোধ হয়।অনেক সময় জ্বরে আক্রান্ত রোগী ঠান্ডা বোধ করে বা শীত লাগে।আর এ সময় ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে অবস্থার অবনতি হতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন রোগীর শরীরে তাপমাত্রার সাথে যেন পানির তাপমাত্রার ভারসাম্য থাকে।
এর জন্য গোসলের পানির সাথে একটু ঠান্ডা কিংবা কুসুম গরম পানি যোগ করা যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় অসম গরম পানি দিয়ে রোগীর শরীরে মুছে দেওয়া যায়।তবে অবশ্যই গোসল করানোর আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
টাইফয়েড হওয়ার কারন কি
সালমোনেলা টাইফি (Salmonella typhi) দ্বারা দূষিত খাবার, পানি এবং দুধ গ্রহন করলে টাইফয়েড হতে পারে। কারন এই দূষিত খাবার ও পানি গ্রহনের মাধ্যমে Salmonella typhi আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং বহু গুনিতক আকারে বেড়ে গিয়ে রক্তস্রোতে মিশে যায়। আর তখনই দেহে জ্বর সহ নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।প্যারাটাইফয়েড কি?
প্যারাটাইফয়েড বা প্যারাটাইফয়েড জ্বর হল এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ যা সালমোনেলা পেরাটাইফি (Salmonella paratyphi) নামক ব্যাকটেরিয়ার কারনে হয়ে থাকে।কতদিনের মধ্যে প্যারাটাইফয়েড জ্বর প্রকাশ পায়?
এই রোগের লক্ষন সংক্রমনের ৩-৬০ দিনের মধ্যে প্রকাশিত হয়। তবে সাধারনত ১-১০ দিন পরেই এর লক্ষ্যণ প্রকাশিত হতে থাকে। সালমোনেলা পেরাটাইফি (Salmonella peratyphi) দ্বারা দূষিত খাবার, পানি এবং দুধ গ্রহন করলে প্যারাটাইফয়েড হতে পারে।কি কারনে প্যারাটাইফয়েড হতে পারে?
সালমোনেলা পেরাটাইফি (Salmonella peratyphi) দ্বারা দূষিত খাবার, পানি এবং দুধ গ্রহন করলে প্যারাটাইফয়েড হতে পারে। কারন এই দূষিত খাবার গ্রহনের মাধ্যমে Salmonella peratyphi আমাদের অন্ত্রে প্রবেশ করে এবং বহু গুনিতক আকারে বেড়ে গিয়ে রক্তস্রোতে মিশে যায়। আর তখনই দেহে জ্বর সহ নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।টাইফয়েড কিভাবে ছড়ায়?
টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি ও পেরাটাইফয়েড জীবাণু বহনকারী উভয় ধরনের ব্যক্তির মল ত্যাগের মাধ্যমে সালমোনেলা পেরাটাইফির বিস্তার ঘটে থাকে।পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা যথাযথ না হলে টাইফয়েড রোগীর মলত্যাগের পর এই ব্যাকটেরিয়া পানির সংস্পর্শে আসলে এবং পরবর্তীতে সেই দূষিত পানি খাবার হিসেবে ব্যাবহার করার মাধ্যমে টাইফয়েড ছড়াতে পারে।টাইফয়েড জ্বরের ব্যাকটেরিয়া বহনকারী ব্যক্তির হাতের স্পর্শে বা হাতে বানানো খাবার গ্রহণের মাধ্যমেও টাইফয়েড জ্বর সংক্রমিত হতে পারে।
টাইফয়েডের বাহক কারা
প্যারাটাইফয়েডের একমাত্র বাহক মানুষ।কোন অঞ্চলে টাইফয়েড এর প্রকোপ বেশি?
এশিয়া, মধ্য প্রাচ্য, দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ ইউরোপ ও আফ্রিকায় প্যারাটাইফয়েড এর প্রকোপ বেশি। এছাড়াও ঘনবসতি পূর্ণ এলাকাও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।প্যারাটাইফয়েড কয় ধরনের হয়?
প্যারাটাইফয়েড সাধারণত ৩ ধরনের হয় -- Parathyphoid A : Salmonella peratyphi A দ্বারা এই রোগ হয়।
- Parathyphoid B : Salmonella peratyphi B দ্বারা এই রোগ হয়।
- Parathyphoid C: Salmonella peratyphi C দ্বারা এই রোগ হয়।
টাইফয়েড শনাক্ত করার উপায়
প্যারাটাইফাইড এর জীবন ও শনাক্ত করার জন্য আমরা কিছু পরীক্ষা করতে পারি। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি উপায়ে প্যারাটাইফয়েড সনাক্ত করা যায়? তা হল-- ব্লাড কালচার (blood culture)
- Stool (মল বা পায়খানা) culture
- Widal Test
- ELISA পরীক্ষা
প্যারাটাইফয়েড এর চিকিৎসা কি?
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক এর মাধ্যমে প্যারাটাইফয়েড জ্বর নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়।এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ আছে। যেমন-- Ciprofloxacin
- Ceftriaxone / cefotaxime
- Azithromycin ইত্যাদি।
প্যারাটাইফয়েডের কি কোন ভ্যাক্সিন আছে?
এর নির্দিষ্ট কোন ভ্যাক্সিন নেই। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী টাইফয়েডের ভ্যাক্সিন প্যারাটাইফয়েড প্রতিরোধে কাজে লাগানো যেতে পারে।সুতরাং ভয় নয় সচেতনতাই পারে আমাদের রোগ থেকে রক্ষা করতে।
টাইফয়েড এ কি কি জটিলতা হতে পারে?
টাইফয়েড জ্বরের জটিলতাও প্যারাটাইফয়েড জ্বরের মত। টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে নিচের জটিলতা গুলো দেখা দিতে পারে-- অন্ত্রে ছিদ্র বা রক্তক্ষরণ
- হৃদপিণ্ডের মাংস পেশিতে প্রদাহ
- অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ
- পিক্তথলিতে সংক্রমন
- মেরুদণ্ডে সংক্রমণ
- মস্তিষ্কে সংক্রমণ
- নিউমোনিয়া
- এমনকি কিডনিতেও বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
টাইফয়েড রোগ প্রতিরোধের উপায় কি?
টাইফয়েড রোগ প্রতিরোধের উপায় গুলো হলো-- নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে
- মল ত্যাগের পর সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালভাবে হাত ধুতে হবে।
- খাবার গ্রহনের আগে সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
- কাঁচা ও অপরিষ্কার শাক-সবজি ও ফলমূল গ্রহন করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং গ্রহনের পূর্বে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে।
- খাবার গরম করে খেতে হবে।
- বাইরের খাবার খেলে সব সময় সচেতন থাকতে হবে।
- স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যাবহার করতে হবে।
- ঘরের জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে
- এবং আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস আলাদা করে রাখতে হবে।
- প্যারাটাইফয়েড ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভ্রমণকালে ঐ এলাকার দূষিত খাবার ও পানি গ্রহন করা থেকে থাকতে হবে এবং ফুটানো অথবা বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
শিশুদের টাইফয়েড জ্বর কেন হয়
শিশুর টাইফয়েট জ্বর সাধারণত স্যালমোনেলা জীবাণু দিয়ে হয়ে থাকে। সাধারণত দূষিত পানি এবং খাবারের মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলেও এ রোগ হতে পারে। এই রোগের কারণে অনেক জ্বর আসতে পারে এবং জ্বরের সাথে মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।শিশু সংক্রমিত হওয়ার ১০ থেকে ১৪ দিন পর জ্বরসহ এ রোগের অন্য লক্ষণগুলো দেখা দেয়। শিশুদের টাইফয়েড হলে অনেক দূর্বল হয়ে পরে যায়।
শিশুদের টাইফয়েড জ্বর হলে করনীয়
বাচ্চাদের টাইফয়েড জ্বর হলে যেসব সাবধানতার দিকে খেয়াল দিতে হবে সেগুলো হলো:-বাচ্চাদের পরিষ্কার বা ফুটানো জল পান করাতে হবে।
বাচ্চাদের কিছু খাওয়ানোর আগে ভালো করে হাত পরিষ্কার করতে হবে।
রাস্তাঘাটে খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।
বাচ্চাদের বাইরের খাওয়াবেন না।
অর্ধ পাকা বা কাঁচা ফল খাওয়াবেন না।
বাচ্চাদের টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আপনার ঘরের কোনো ব্যক্তির যদি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় তাহলে আপনার বাচ্চাকে তার কাছে দেবেন না।
টয়লেট থেকে আসার পরে শিশুর হাত ভালো করে পরিষ্কার করুন। তাদের চোখ, নাক, কান স্পর্শ করতে দেবেন না যতক্ষণ না তাদের হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়।
বাচ্চাদের টাইফয়েড জ্বর হলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে তাই তাদের তরল জাতীয় খাবার খাওবেন যেমন:- জল, ফলের রস, আখের রস, ডাবের জল এবং ORS জলে মিশিয়ে দিন ১ লিটার জলে এক প্যাকেট ORS মেলাতে হবে)।
যদি আপনার শিশু বুকের দুধ পান করে তাহলে তাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ান। যখন, যতোবার চাবে তাকে বুকের দুধ পান করাবেন।
এইসব সাবধানতার দিকে আপনাকে একটু খেয়াল রাখতে হবে তাহলে আপনার বাচ্চা অনেকটা সুস্থ থাকবে।
বাচ্চাদের টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আপনার ঘরের কোনো ব্যক্তির যদি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় তাহলে আপনার বাচ্চাকে তার কাছে দেবেন না।
টয়লেট থেকে আসার পরে শিশুর হাত ভালো করে পরিষ্কার করুন। তাদের চোখ, নাক, কান স্পর্শ করতে দেবেন না যতক্ষণ না তাদের হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়।
বাচ্চাদের টাইফয়েড জ্বর হলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে তাই তাদের তরল জাতীয় খাবার খাওবেন যেমন:- জল, ফলের রস, আখের রস, ডাবের জল এবং ORS জলে মিশিয়ে দিন ১ লিটার জলে এক প্যাকেট ORS মেলাতে হবে)।
যদি আপনার শিশু বুকের দুধ পান করে তাহলে তাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ান। যখন, যতোবার চাবে তাকে বুকের দুধ পান করাবেন।
এইসব সাবধানতার দিকে আপনাকে একটু খেয়াল রাখতে হবে তাহলে আপনার বাচ্চা অনেকটা সুস্থ থাকবে।
শিশুদের টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা
সাধারণত শিশুদের টাইফয়েড হলে নিম্নলিখিত ওষুধগুলো দেওয়া হয়। আপনাদের জানার সুবিধার্থে উল্লেখ করা হলোঃ
জ্বরের জন্য:
- -Paracetamol-Syrup/Tablet's. (প্যারাসিটামল-ট্যাবলেট/সিরাপ):-দিতে হবে।
- যাদের বয়স ১ থেকে ২.৫ বছর তাদের প্যারাসি টামল (Paracetamol-250mp-Syrup), ২৫০ মিগ্রা সিরাপ ২.৫ ml করে দিনে তিন বার দিতে হবে।
- যাদের বয়স ৫ থেকে ৮ বছর তাদের প্যারাসিটামল (Paracetamol-250mp-Syrup) ২৫০ মিগ্রা সিরাপ ৭.৫ ml করে দিনে তিন বার দিতে হবে।
এন্টিবায়োটিক ঔষধ:-
- এ্যাজিথ্রোমাইসিন সিরাপ (Azithromycin-Syrup):-
- যাদের বয়স ১ থেকে ২.৫ বছর তাদের ১০০ মিগ্রা সিরাপ। ২.৫ ml করে খাবার আগে দিনে ১ বার দিত হবে।
- যাদের বয়স ২.৫ থেকে ৮ বছর তাদের ২০০ মিগ্রা সিরাপ। ৫ ml করে খাবার আগে দিনে ১ বার দিতে হবে।
- যাদের বয়স ৮ থেকে ১২ বছর তাদের ১২৫ মিগ্রা ট্যাবলেট। খাবার আগে দিনে ২ বার দিতে হবে।
ইঞ্জেকশন:-
- সেফট্রিয়াক্সোন & সালব্যাকটাম-ইঞ্জেকশন, (Ceftriaxone & Sulbactam-Injection) :-
- যাদের বয়স ১ থেকে ৩ বছর তাদের Monocef SB 250 mg, ইঞ্জেকশন শিরাপথে দিনে ১ বার ধিরে ধিরে লাগাতে হবে।
- যাদের বয়স ৩ থেকে ৮ বছর তাদের Monocef SB 500 mg, ইঞ্জেকশন শিরাপথে দিনে ১ বার ধিরে ধিরে লাগাতে হবে।
- এই ওষুধ পাঁচ (৫), দিন নিতে হবে।
- এ্যাজিথ্রোমাইসিন ও সেফট্রিয়াক্সোন ৫ দিনই দিতে হবে।তারপরে দিতে হবে।
- যাদের বয়স ১ থেকে ৩ বছর তাদের ৫০ মিগ্রা, সিরাপ ২.৫ ml করে খাবার পরে দিনে ২ বার দিতে হবে।
- যাদের বয়স ৩ থেকে ৮ বছর তাদের ১০০ মিগ্রা, সিরাপ ৫ ml করে খাবার পরে দিনে ২ বার দিতে হবে।
ভিটামিনের জন্য:-
Aristo_Kid-Syrup, (Multivitamin & Multimineral) খাবার পরে দিনে দুই বার। বাচ্চার ওজনের তিন (9 কিলো হলে 3ml) ভাগের এক ভাগ দিতে হবে।একজন ডাক্তার বাচ্চার পরিস্থিতি ও ওজন অনুযায়ী এ সকল ওষুধের মাত্রা কমবেশি করতে পারে।
আপনাকে একটা কথা মনে রাখতে হবে, যে আপনার বাচ্চার যদি টাইফয়েড জ্বরের সময় পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হয়। তাহলে তাকে এই সব ঔষধ দেবেন না তাকে অবশ্যই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
সম্মানিত পাঠক নিচে যে শিশুদের টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসার ওষুধগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলো একজন রেজিস্টার চিকিৎসকের পরামর্শে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কখনোই আপনারা শিশুদের টাইফয়েড যারা লক্ষণ দেখা দিলে এ ধরনের ওষুধ প্রথমে শিশুদের খাওয়াবেন না।
তখন আপনার উচিত হবে আপনার শিশুকে প্রথমত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া। কারণ এগুলো শুধু আপনার জানার উদ্দেশ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং অনুরোধ থাকবে কোন সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এইসব ওষুধের খেতে দেবেন না।
লেখকের মন্তব্যঃ
প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটিতে টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।এখানে টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড কি, এই রোগ কেন হয়, এর লক্ষণ গুলো কি কি, কিভাবে এর প্রতিকার করব, আরো নানাবিধ সমস্যার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে আলোচনা করা হয়েছে শিশুদের টাইফয়েড রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড অনেকাংশে একই হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে উপরে সেগুলোই উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি। তাতে যদিও মরণব্যাধি রোগ নয় তবে একে অবহেলাও করা যাবে না।উপরোক্ত প্রতিকার সমূহ লক্ষ রেখে এবং সে সাথে যদি চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা হয় তাহলে অবশ্যই এর রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সুতরাং আশা করি আপনার কাজে দেবে। যদি পোস্টটি পড়ে উপকৃত হন তারা আপনার বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন কিংবা পরিচিতদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন যাতে করে তারাও এই রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। আর যদি পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন মতামত প্রশ্ন কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে তা অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন।
যাতে করে আপনার পরামর্শ দেখে অনেকে উপকৃত হতে পারেন। আর এরকমই নানা রকম রোগ,রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক হন তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইট থেকে নিয়মিত করতে পারেন।পরিশেষে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url