ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার
বর্তমান সময়ে আমরা ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অনেকটাই দেখছি। শিশু বৃদ্ধ এবং মাঝ
বয়সি সকলের ক্ষেত্রে আসলে ডেঙ্গুর প্রভাবে লক্ষনীয়। সে ক্ষেত্রে অনেক সময়
আমরা জানি না যে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও তার প্রতিকার কিভাবে করতে হবে।
ভূমিকাঃ
রাজধানীসহ দেশের ৫০টির বেশি জেলায় এই রোগ অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ২০১৯ সালে দেশে
সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ
অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ২০১৯ সালকেও ছাড়িয়ে যাবে। গত পাঁচ বছরের
মধ্যে এবার ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার ঘনত্ব এবং সম্ভাব্য প্রজননস্থলের
সংখ্যা সর্বোচ্চ।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিই ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে
রয়েছে। ২০১৯ সালে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ড ছিল ২১টি। মারাত্নক জীবাণুবাহী
এডিস মশার কামড়ে, মানব দেহে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশের প্রায় ২৫০
কোটি মানুষ ডেঙ্গু ঝুঁকির মুখে। ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা, বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু
রোগের বিস্তার এবং ডেঙ্গু রোগ কেন মারাত্নক প্রাণঘাতী, সে সম্পর্কে বিস্তারিত
আলোচনা করা হবে ।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষন গুলো কি কি
এরিস মশার কামড়ে ভাইরাস সংক্রমণে তিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ বা লক্ষণগুলো দেখা দেয়।২০০৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেঙ্গু রোগের কিছু লক্ষণ প্রকাশ করেছিল। লক্ষণগুলো হলঃ
- তীব্র পেট ব্যথা
- মাত্রাতিরিক্ত বমি হওয়া
- শরীরে পানি জমে যাওয়া
- মুখে ও চোখে রক্তের ছাপ
- প্রচন্ড ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা
- লিভার সামান্য বড় হয়ে যাওয়া
- রক্ত পরীক্ষায় প্লাটিলেট কমে যাওয়া।
- হঠাৎ ১০১-১০৪ ডিগ্রি জ্বর, সাথে মাথাব্যথা হওয়া।
- মাংস পেশী ও হাড়ের সংযোগস্থলে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া।
- মাঝে মাঝে ঘাম দিয়ে জ্বর থেমে যাওয়া আবার বেড়ে যাওয়া।
- চোখের পিছনে ব্যথা ও আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা হওয়া।
- শরীরের চামড়ায় লালচে ছোপ বা র্যাশ ওঠা।
- পেটে ব্যথা, বমিভাব, বমি হওয়া খাওয়ার অরুচি হওয়া।
- হাঁচি কাশি থাকবে।
- নাক দিয়ে পানি পড়তে পারে।
- গলা ব্যথা থাকতে পারে।
- শরীরে টানা জ্বর এবং জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পর আবার জ্বর আসা।
- গায়ের প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে।
- মাথা ব্যথা হতে পারে।
- পাতলা পায়খানা হতে পারে।
- পেট ব্যাথা হতে পারে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়
- মশা তাড়ানোর ঔষধ, কয়েল ব্যবহার করুন বা অ্যারোসল স্প্রে ব্যবহার করুন।
- জমে থাকা পানি থেকে এডিস মশা জন্মে। কোন অবস্থাতেই পানি যেন না জমে সেদিকে খেয়াল রাখুন ,প্রয়োজনে তাতে লবণ ছিটিয়ে দিন। কারণ লবণ পানিতে এডিস মশা জন্মাতে পারেনা।
- জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এডিস মশার প্রকোপ ব্যাপকহারে থাকে। এই সময় যদি বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন পড়ে সে ক্ষেত্রে ফুলপ্যান্ট এবং ফুল শার্ট পরে বাইরে বের হতে হবে এর সাথে জুতো পরিধান করতে হবে
- দিনে ও রাতে মশার টাঙিয়ে ঘুমান।
- ছাদ বা বারান্দায় বাগান থাকলে বেশি সতর্ক থাকুন ।
- আশেপাশে নির্মাণাধীন ভবন বা ডোবা থাকলে বাড়তি সতর্ক থাকতেই হবে।
- ফুলের টব, এসি, ফ্রিজের নিচের, অথবা যেকোনো আবদ্ধ পানি পরিষ্কার করুন।
- পরিত্যক্ত গাড়ির টায়ার, নারকেলের মালা বা ডাবের খোসা ইত্যাদি যেন যেখানে সেখানে পড়ে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
- ঘরের আনাচে কানাচে, পর্দার পিছনে অন্ধকার জায়গায় নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় স্প্রে ব্যবহার করুন।
- দিনের বেলা মশার কামড় থেকে বাঁচতে ফুলহাতা জামা, প্যান্ট পায়জামা পরিধান করুন।
- দিনের বেলায় বাইরে বের হওয়ার সময় বিশেষত বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর আগে মশা নিরোধক ক্রিম (mosquito repellents) ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। কিছু বিধি নিষেধ মেনে চললে এক
সাপ্তাহের মধ্যেই সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর নিজে থেকে ভালো হয়ে যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের কারণ কি?
এডিস মশার(Aedes aegypti) কামড়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগ ছড়ায়। এরিস মশার কামড়ের তিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ হলো দেখা যায় এবং এর ফলে ডেঙ্গু জ্বর হয়।ডেঙ্গু সংক্রমনের সময়কাল
সাধারণত বর্ষাকাল এবং বর্ষার পরপরই ডেঙ্গু জ্বর বেশি হয়। জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। আর যেহেতু এই সময়ে ডেঙ্গু ভাইরাস বাহিত এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যায় তাই এই সময়কে ডেঙ্গু সংক্রমনের সময়কাল বলা হয়।এডিস মশা কখন কামড়ায়?
একসময় বলা হতো ডেঙ্গু মশা শুধুমাত্র দিনেই কামড়ায়। কিন্তু সম্প্রতিক এডিস মশার চরিত্র বদলেছে। এখন দিনে রাতে সব বেলাতেই কামড়াতে পারে এই এডিস মশা। সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার দিকে কামড়ায়। বিশেষ করে রাতে যদি ঘর আলোকিত থাকে তাহলে মশা কামড়ানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে।ডেঙ্গু হলে করণীয়
- সর্বপ্রথম ডেঙ্গু রোগের লক্ষণসমূহ প্রকাশ পাওয়ার পরে যদি কোন ভাবে বোঝা যায় যে আপনি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত সে ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু বিধি-নিষেধ মেনে চললে কিছুদিন বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ডেঙ্গু রোগ ঠিক হয়ে যায়।
- জ্বর দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তার নিশ্চিত করা।
- স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি রোগীকে প্রচুর তরল খাবার যেমন ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন খেতে হবে।
- রোগীকে সবসময় মশারের ভেতরে বিশ্রামে রাখতে হবে। যাতে তার মাধ্যমে অন্যদের ডেঙ্গু না ছড়ায়।
- জ্বরে প্রয়োজনের শুধুমাত্র প্যারাসিটামল খাওয়ানো যেতে পারে।
- অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যাসপিরিন/ NSAID বা কোন ব্যথা নাশক ওষুধ সেবন না করা।
- গিটের ব্যাথার ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানির সেক বা হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে।
ডেঙ্গু কি প্রতিকার করা যায়?
একটি সুখবর হচ্ছে ২০১৫ সাল থেকে (Dengivaxia)নামক ডেঙ্গু টিকা বিশ্বের কিছু দেশে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে এটি ডেঙ্গু প্রতিরোধে ১০০% কার্যকর নয়। তবে টিকাটি নিয়ে যদি ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করা যায় তাহলে অবশ্যই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যায়।ডেঙ্গু ভাইরাস কয় ধরনের হয়ে থাকে
ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪ রকম সেরোটাইপ পাওয়া যায়। আর তাই ডেঙ্গু ভাইরাস ৪ ধরনের হয়ে থাকে। ভাইরাস গুলো হলোঃ- DENV-1
- DENV-2
- DENV-3
- DENV-4
এরপর থেকে সেই সাধারণ মশার কামড়েও ডেঙ্গু রোগ ছড়াতে পারে।একজন মানুষ তার সারা
জীবনে ৪ বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে। অর্থাৎ একবার এক ধরনের ভাইরাসে
আক্রান্ত হওয়ার পর তা সেরে গেলে, আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি
হয় তা সারা জীবনের জন্য কাজ করে।
এরপর যদি ওই একই আক্রান্ত ব্যক্তি আবারো ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তাহলে
সেটি হবে ডেঙ্গুভাইরাসের আরেকটি ধরন। অধ্যাপকডঃ সাবেরা গুলনাহার বলেন,যতদিন
রক্তে ভাইরাস থাকবে ততদিন রোগীর শরীরে জ্বর থাকবে। কেবলমাত্র রক্ত জীবন মুক্ত
হলেই ডেঙ্গু জ্বর সেরে যাবে।
এডিস মশা কামড়ানোর কত দিন পর জ্বর আসে ?
ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহনকারী মশার নাম এডিস(Aedes aegypti)।তবে আমাদের দেশে এটি ডেঙ্গু মশা নামেই বেশি পরিচিত। এডিস মশা কামড়ানোর কারণে ডেঙ্গু জ্বর হয়। যদিও এই মশা কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জ্বর হয় না।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান
অধ্যাপক ডঃ সাবেরা গুলনাহার বলেন, রোগে আক্রান্ত হবার পর থেকে লক্ষণ দেখা দিতে
পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগে।
এই সময় কে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিওড। সাধারণত এরিস মশার কামড়ানোর ৫ থেকে ৭
দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর আসে। আর এই জ্বর থাকে ৫ থেকে ৭ দিন
পর্যন্ত।
এডিস মশা কত দিন বাঁচে?
কীট তত্ত্ববিদ অধ্যাপক ডক্টর কবিরুল বাশার বলছেন, একটি পূর্ণবয়স্ক ইডিস মশা গড়ে ১৫ থেকে ৪০ দিন বাঁচে।মূলত তাপমাত্রার উপর এডিস মশার আয়নির্ভর করে। যেমন শীতকালে এডিস মশা বেশি বাঁচে আবার গরম কালে এডিস মশার বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার দ্রুত হয় বলে এ সময়ে কম বাঁচে।ডেঙ্গু কি ছোঁয়াচে রোগ?
আসলে ডেঙ্গু কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটি কেবলমাত্র মশার মাধ্যমে ছড়ায়। মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে কখনোই ছড়ায় না। অর্থাৎ ডেঙ্গু রোগীকে স্পর্শ করলে কিংবা একই বিছানায় ঘুমালে কিংবা তার ব্যবহৃত কিছু ব্যবহার করলে অন্য কারো এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ও সুযোগ নেই। এডিস মশার ব্যতীত অন্য কোনভাবে ডেঙ্গু ছড়ানোর উপায় নেই। এমনকি অন্য প্রজাতির মশার কামড়েও ডেঙ্গু রোগ সৃষ্টি হয় না বা ছড়ায় না।ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে
জ্বরের সঙ্গে গোসলের কোন সম্পর্ক নেই। যে কোন জ্বরের মতো ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও জ্বর হলে গোসল করা যাবে। তবে অনেক বেশি জ্বর হলে অনেকে ঠান্ডা লাগে এক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করা কিংবা গোসলের পর দ্রুত চুল শুকিয়ে ফেলার বিষয়গুলতে নজর দিতে হবে। এছাড়াও শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকলে সেটি কমাতে গা মোছা অথবা মাথা ধুয়ে দেওয়া যেতে পারে।ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কিভাবে ঘটে ?
ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বাহী কোন মশা কোন ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি চার থেকে সাত দিনের মধ্যে ডেঙ্গুজরে আক্রান্ত হয়। এখন এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোন জীবাণুবিহীন এডিস মশা কিংবা সাধারণ মশাও যদি কামড়ায় তাহলেও সেই মশা ডেঙ্গু জীবাণু বহনকারী মশা হিসেবে পরিণত হয়। আরে মশা যখন অন্য কোন ব্যক্তিকে কামরায় তখন সেই ব্যক্তি ও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। ডেঙ্গু রোগের বিস্তার আসলে এভাবেই পর্যায়ক্রমিকভাবে ঘটে থাকে।ডেঙ্গু হলে কিকি পরীক্ষা করাতে হবে ?
- ডেঙ্গু এনএস ১
- আইজিএম পরীক্ষা
- আইজিজি বা IgG (Immunoglobulin G)
ডেঙ্গু এনএস ১ পরীক্ষা কি এবং কেন করব
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধকেন্দ্রর (সিডিসি) চিকিৎসকগণ বলছেন ডেঙ্গু এনএসওয়ান হলো এমন একটি পরীক্ষা যে পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়। একজন ব্যক্তি তার সাধারণ লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার বা জানার পরে ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষা করাতে হবে।
এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাবে যে ওই ব্যাক্তি আসলে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত কিনা।
যদি ns পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসে তাহলে ধরে নেওয়া যায় তিনি ডেঙ্গুতে
আক্রান্ত। আবার জোরে পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে তাহলে বুঝতে হবে তিনি ডেঙ্গু
ভাইরাস আক্রান্ত নন।
কিন্তু সতর্কতার বিষয় হলো যে জ্বর হওয়ার প্রথম দিনই যদি এই ns1 পরীক্ষাটা
করানো যায় সে ক্ষেত্রে ডেঙ্গু নির্ণয়ের জন্য এটি সুবিধা জনক। কারণ জ্বর
হওয়ার দুই তিন দিন পরে যদি এই পরীক্ষা করানো হয় সেক্ষেত্রে অনেক সময় ফলাফল
নেগেটিভ আসতে পারে।
সুতরাং চেষ্টা করবেন জ্বর হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী
ডেগু এনএস-১ পরীক্ষা করানোর।
আইজিএম পরীক্ষা কি এবং কখন করব
ডেঙ্গু আইজিএম পরীক্ষা হচ্ছে এমন একটি পরীক্ষা যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি আদৌ ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তার সঠিক এবং বিশ্বাসযোগ্য ফলাফল নির্দেশিত হয়।বর্তমানে ডেঙ্গু মশার বৈশিষ্ট্যের কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আর এই পরিবর্তনের ফলে ডেঙ্গুভাইরাসের প্রকোপটাও বাড়ছে।
সাধারণত ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর পাঁচ দিনের মধ্যে রোগী যদি কোন
প্রকার পরীক্ষা না করিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ডেঙ্গু আইজিএম পরীক্ষা করানো হয়। আর
এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় যে কোন রোগী ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা সাধারণত ডেঙ্গু আইজিএম পরীক্ষা জ্বর হওয়ার ৫ দিন পর করতে হয়। যদি কোন ব্যক্তির আইজিএম পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসে তাহলে বুঝতে হবে ওই ব্যক্তি ডেঙ্গু ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে।
আইজিজি পরীক্ষা কি এবং কেন করব
আইজিজি বা IgG (Immunoglobulin G) হল একটি প্রোটিন যা মানুষের রক্তে থাকে । এই পরীক্ষার মাধ্যমে মানব শরীরে ইউনিয়ন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক কতটুকু আছে সেটা নির্ণয় করা হয়।
আইজিজি মূলত রক্ত এবং অন্যান্য শরীরের অসংখ্য ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, এবং
অন্যান্য প্রকারের অপরিচিত অণুবর্গের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেহকে সুস্থ রাখার
জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে।এন্টি বডি গুলো হলো প্রোটিন যা ইমিউন সিস্টেম তৈরি
করে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য জীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য।
ডেঙ্গু এনএস-১ এবং ডেঙ্গু এনএস-২ ভাইরাসের প্রতিশেধক হিসাবে আইজিজি প্রদান করা
হয়। এই পরীক্ষাটি ডেঙ্গু রোগের উত্তম প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের ডেঙ্গু
রোগের প্রতিরোধ শক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়।আইজিজি
পরীক্ষার ফলাফল যদি স্বাভাবিক এর থেকে কম হয় তাহলে বুঝতে হবে শরীর যথেষ্ট
পরিমান এন্টিবডি তৈরি করতে অক্ষম।
এক্ষেত্রে সংক্রমণে অসুস্থ হওয়ার সম্ভবনা
বেশি থাকে। আইজিজি পরীক্ষার পর যদি রক্তে আইজিজি পজিটিভ প্রমানিত হয় তাহলে
বুঝতে হবে যে রোগী এর আগেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল, এখন সে দ্বিতীয়বারের মত
আক্রান্ত হয়েছে। যদি এরকমটা হয় তাহলে অবশ্যই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
কারন দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হওয়া মানে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
ডেঙ্গু হলে কি কি খাবার খেতে হয়?
- ডেঙ্গু হলে রোগীকে সব ধরনের স্বাভাবিক নরম খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
- ডেঙ্গু হলে রোগীর শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা যায়, তাই এই সময় তরল জাতীয় খাবার বেশি খাওয়াতে হয়। এক্ষেত্রে বাড়িতে ফলমূল থেকে বের করা জুস, স্যুপ, ওর স্যালাইন বা অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। এগুলো শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
- ভিটামিন সমৃদ্ধ ফলমূল যেমন মালটা, ডাবের পানি, কমলা লেবু, পেয়ারা, কিউই, স্ট্রবেরি, পেঁপে আনার বা ডালিম ইত্যাদি খেতে হবে।
- সবুজ শাকসবজি যেমন গাজর, টমেটো, ,শসা বেশি বেশি খেতে হবে কেননা এতে জলীয় অংশ বেশি।
- অতিরিক্ত মসলা ও চর্বি তেল যুক্ত খাবার না খেয়ে স্বাভাবিক পরিমিত খাবার খেতে হবে।
- দুধ, ডিম,মাছ ও মুরগি খেতে হবে।
- ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে।
- পেঁপের কচি পাতা গুলোকে থেঁতো করে রস তৈরি করে এক চামচ করে দিনে দুইবার খেতে পারেন। কারণ পেঁপের কচি পাতাগুলো রক্তের অনুচক্রিকা বাড়াতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে।
ডেঙ্গু হলে কি এন্টিবায়োটিক খাওয়া যায়?
ডেঙ্গু হলো এক ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ, এর সাথে অ্যান্টিবায়োটিক এর কোন যোগসূত্র বা সম্পর্ক নেই। সুতরাং ডেঙ্গু হলে কোনভাবেই এন্টিবায়োটিক অ্যাসপিরিন কিংবা ব্যথার ওষুধ খাওয়া যাবেনা। তবে জ্বর কমার জন্য প্যারাসিটামলই যথেষ্ট।ডেঙ্গু জ্বর কত দিনে ভালো হয়
ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রাথমিকভাবে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে অধিকাংশ রোগে সুস্থতার দিকে এগিয়ে আসে।তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন যখন কোন রোগের জ্বর ভালো হয়ে যায় তখন রোগীর রক্তের প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যেতে পারে এবং রক্তক্ষরণসহ অন্যান্য জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।সুতরাং আপনারা যদি ডেঙ্গু রোগী হয়ে থাকেন
তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
ডেঙ্গু রোগের উৎপত্তি কোথায় এবং কিভাবে হয়েছে?
ধারণা করা হয় ডেঙ্গু শব্দটি এসেছে “কা-ডিংগা পেপো” শব্দ থেকে যার অর্থ খারাপ আত্মা বাহিত রোগ। ১৮ শতকের শেষের দিকে এ রোগের আরেকটি নামকরণ করা হয় “ব্রেক বোন ফিভার” যার অর্থ হাড় ভাঙ্গা জ্বর। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের কষ্টের তীব্রতা থেকে এ ধরনের নামকরণ করা হয়। ]১৭৭৯ ও ৮০ সালে এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকায় সর্বপ্রথম ডেঙ্গু মহামারী দেখা যায়। পরবর্তীতে ১৯০৬ সালে প্রথম আবিষ্কার করা হয় এডিস ইজিপটি নামক এক ধরনের মশা যা ডেঙ্গু রোগের জীবাণু বহন করে।
এই
এডিস মশা ইয়োলো ফিভার, জিকা ভাইরাস ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাসেরও বাহক।পৃথিবীর
প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রজাতির মশার মধ্যে এডিস ইজিপটি অন্যতম ভয়ংকর
ধরনের মশা। এ জাতের স্ত্রী মশা ডেঙ্গু নামের এক ধরনের ভাইরাস বহন করে মানব
শরীরে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে দেয়।
লেখক এর মন্তব্যঃ
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে আমি চেষ্টা করেছি ডেঙ্গু সম্পর্কে জানানোর।
উপলক্ষে পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়
ডেঙ্গু রোগ হলে কি কি পরীক্ষা করতে হবে ইত্যাদি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বর্তমান সময়ে ডেঙ্গুর যে প্রকোপ তাতে আমাদের প্রত্যেকেরই এই সম্পর্কে পরিষ্কার
এবং স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে যাতে করে আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে পারি। সুতরাং
আশা করি পোস্টটি পড়ে ডেঙ্গু সম্পর্কে আপনার ধারণা হয়েছে।
যদি পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু প্রয়োজন
কিংবা আত্মীয় স্বজনের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন যাতে করে তারাও ডেঙ্গু
রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। সেই সাথে এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন মতামত কিংবা
পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন।
এবং এরকম আরো অন্যান্য রোগ সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে নিয়মিত ভিজিট
করতে পারেন। পরিশেষে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url