হেপাটাইটিস বি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
বর্তমানে হেপাটাইটিস বি মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এটি বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অনেক দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। আর তাই আমাদের প্রত্যেকেরই হেপাটাইটিস বি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত।
ভূমিকাঃ
হেপাটাইটিস একটি ভাইরাসজনিত রোগ এটি মূলত লিভারের সংক্রমণ এবং প্রদাহ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্কার হিসেবে 2019 সালে হেপাটাইটিসের মারাত্মক সংক্রমণ লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে ১১ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী “বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ওসি ভাইরাসের প্রায় এক কোটি মানুষ আক্রান্ত”। বেসরকারি হিসেবে বাংলাদেশে হেপাটাইটিস এ প্রত্যেক বছর ২২ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যু হচ্ছে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে “ অতি সম্প্রতি ৩৪ টি দেশে শিশুদের মধ্যে হঠাৎ করে এবং ব্যাখ্যাহীন এক ধরনের হেপাটাইটিস সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে”।
হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণগুলো কি কি
হেপাটাইটিস এ তে আক্রান্ত হলে যেসব লক্ষণগুলো দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-- মাংসপেশী এবং হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা
- ভারী মাত্রায় জ্বর থাকা
- সবসময় অস্বাভাবিক ক্লান্তি বোধ করা
- ক্ষুদা মন্দা অর্থাৎ অনেক সময় খাওয়ার ইচ্ছা না থাকা বা রুচি না থাকা
- পেটের উপরের অংশে ব্যথা
- মূত্রের রঙ গাঢ় হয়ে যাওয়া
- মলের রঙ ধূসর হয়ে যাওয়া
- ত্বকে চুলকানি হওয়া
- চোখ এবং ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া
হেপাটাইটিস বি কেন হয়
সারা বিশ্বে প্রায় ২৯ কোটি ৬ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস বি তে ভুগছে। এখন অনেকে মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে এত পরিমাণে হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ কি। চলুন জেনে নেয়া যাক কারণগুলো-- শরীরের বিভিন্ন তরল যেমন রক্ত, লালা, যোনী তরল ও বীর্যের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- আমাদের দেশে ইনজেকশনের মাধ্যমে বেশি ছড়ায়।
- বাবা মায়ের থাকলে বাচ্চার হেপাটাইটিস বি হতে পারে।
- অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দানের মাধ্যমে হতে পারে।
- শরীরে ট্যাটু বা সেভ করার মাধ্যমে হতে পারে।
- যৌন মিলনের ফলেও সংক্রমিত হতে পারে।
- রক্ত নেয়ার সময় পরীক্ষা না করে রক্ত নিলে
- একই সিরিঞ্জের মাধ্যমে অনেকে মাদক কিংবা ওষুধ নেওয়ার কারণেও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
- হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীর জন্ম দেয়া শিশুরও হেপাটাইটিস বি হয়।
হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা
একিউট হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের প্রয়োজন হয় না।ক্রনিক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের প্রয়োজন হয়। ইনজেকশন ও মুখে খাওয়া ২ ধরনের ওষুধই বাজারে সহজলভ্য।মুখে খাওয়ার ওষুধ সাধারণত সারাজীবনই খেয়ে যেতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মুখে খাওয়ার ওষুধ কখনো হঠাৎ বন্ধ করতে নেই। এতে লিভার আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ওষুধের কোনোটিই হেপাটাইটিস বি ভাইরাসকে একেবারে নির্মূল করতে পারে না, নিয়ন্ত্রণ করতে পারে মাত্র। এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই সামান্য।
হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে করনীয়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী “ হেপাটাইটিসের আক্রান্ত হওয়ার পর অনেক সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রভাবে অনেকে নিজে থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন।তবে অনেকদিন আক্রান্ত থাকলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এছাড়াও কিছু ব্যক্তিগত সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।যেমন-
হেপাটাইটিস বি রোগের প্রতিরোধে নিম্নোক্ত খাবার খাওয়া উচিত:
- হেপাটাইটিস বি এর প্রতিরোধক টিকা রয়েছে । এটি প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো এবং সহজ উপায়। তাই সময় মত প্রতিরোধক টিকা গ্রহণ করা।
- একই সিরিঞ্জ বার বার ব্যবহার না করা
- অন্যের ব্যবহার করা সই পুনরায় ব্যবহার না করা
- পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বা অচেনা উৎস থেকে রক্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকা
- যেকোনো সরঞ্জাম ব্যবহার করার পূর্বে ভালোভাবে জীবাণু মুক্ত করে নেওয়া
- বছরে কমপক্ষে দুইবার রক্তের পরীক্ষা করানো। যাতে আক্রান্ত হলে শুরুতে চিকিৎসা করে রোগ মুক্ত হওয়া যায়।
- এই রোগে আক্রান্ত হলে পরিবারের সদস্যদের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলা।
- শিশুর জন্মের চার সপ্তাহ থেকে এক বছরের মধ্যে হেপাটাইটিস বি এর টিকা গুলো দেওয়া হলে পরবর্তীতে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
- বড়দের ক্ষেত্রে এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে অরক্ষিত যৌন মিলন পরিহার করতে হবে। এছাড়াও রেজার, টুথব্রাশ ও সুই একই সাথে অনেকে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- হেপাটাইটিস বি একটি প্রাণঘাতী ভাইরাস হলেও একে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। পূর্ণবয়স্ক মানুষও চাইলে যেকোনো বয়সে এই ভাইরাসের টিকা নিতে পারবেন। ০, ১ ও ৬ মাস অন্তর মোট ৩ ডোজ টিকা নিলেই এই রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়।
- টিকা দেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। এসব পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয়, আগে কখনো এই ভাইরাস আক্রমণ করেছে কি না এবং শরীরে এরইমধ্যে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে আছে কি না। একবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেলে আর টিকা নেওয়ার সুযোগ নেই।
- রাস্তায় বিক্রি হওয়া আখের রস, দূষিত কেনা পানি, অনাবৃত ও দূষিত ফলের রস, জুস বা কাঁচা ফল, ফুচকা, চটপটি, আচার, কেটে রাখা শশা, আমড়া ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
- শৌচাগার ব্যবহারের পর সঠিকভাবে হাত না ধোয়া এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্তের অন্যতম কারণ। তাই বাথরুমের পরে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করতে হবে।
হেপাটাইটিস বি হলে কি কি খাওয়া যাবে
যারা হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত হয়েছেন, তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা অনেক সময় চিন্তিত থাকেন যে এই সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কি খাওয়ানো উচিত। হেপাটাইটিস বি রোগের সময় কিছু খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে যা এই রোগে প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে এবং লিভারের স্বাস্থ্য বজায় রাখে।হেপাটাইটিস বি রোগের প্রতিরোধে নিম্নোক্ত খাবার খাওয়া উচিত:
- প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন মাছ, ডিম, দুধ, দই ইত্যাদি।
- তরল পদার্থ যেমন পানি, রসালো ফলের জুস ইত্যাদি।
- তরলতা বাড়ানোর জন্য সহায়ক তরল পদার্থ যেমন নিরামিষ সুপ, স্যালাদ ইত্যাদি।
- ফল ও সবজির খাওয়া যেমন কমলা, আম, পেঁপে, শসা ইত্যাদি।
- ডাবের জল, নিরামিষ খাবার ইত্যাদি।
হেপাটাইটিস বি এর সংক্রমণ কিভাবে হয়
অত্যন্ত স্থানীয় এলাকায়, হেপাটাইটিস বি সাধারণত মা থেকে শিশুর জন্মের সময় (পেরিন্যাটাল ট্রান্সমিশন) বা অনুভূমিক সংক্রমণ (সংক্রমিত রক্তের সংস্পর্শ) এর মাধ্যমে, বিশেষ করে জীবনের প্রথম 5 বছরে একটি সংক্রামিত শিশু থেকে একটি অসংক্রমিত শিশুতে ছড়িয়ে পড়ে।দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের বিকাশ তাদের মা থেকে সংক্রামিত শিশুদের মধ্যে বা 5 বছর বয়সের আগে সাধারণ হয়ে থাকে।হেপাটাইটিস বি সূঁচের আঘাত, ট্যাটু করা, ছিদ্র করা এবং সংক্রামিত রক্ত এবং শরীরের তরল যেমন লালা এবং মাসিক, যোনি এবং সেমিনাল তরলগুলির সংস্পর্শে আসে।
দূষিত সূঁচ এবং সিরিঞ্জ বা ধারালো বস্তুর পুনঃব্যবহারের মাধ্যমেও ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে স্বাস্থ্যসেবা সেটিংসে, সম্প্রদায়ে বা যারা ওষুধ ইনজেকশন দেয় তাদের মধ্যে। একাধিক যৌন সঙ্গীর সাথে টিকাবিহীন ব্যক্তিদের মধ্যে যৌন সংক্রমণ বেশি হয়।
যৌবনে অর্জিত হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ 5% এরও কম ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিসের দিকে পরিচালিত করে, যেখানে শৈশব এবং শৈশবকালে সংক্রমণ প্রায় 95% ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিসের দিকে পরিচালিত করে। এটি শিশু এবং শৈশব টিকাকে শক্তিশালীকরণ এবং অগ্রাধিকার দেওয়ার ভিত্তি।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস শরীরের বাইরে অন্তত ৭ দিন বেঁচে থাকতে পারে। এই সময়ের মধ্যে, ভাইরাসটি এখনও সংক্রমণ ঘটাতে পারে যদি এটি কোনও ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে যেটি ভ্যাকসিন দ্বারা সুরক্ষিত নয়। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের ইনকিউবেশন সময়কাল 30 থেকে 180 দিন পর্যন্ত।
ভাইরাসটি সংক্রমণের 30 থেকে 60 দিনের মধ্যে সনাক্ত করা যেতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বিতে পরিণত হতে পারে, বিশেষ করে যখন শৈশব বা শৈশবে সংক্রমণ হয়।
সাধারণত হেপাটাইটিস ৫ ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-
হেপাটাইটিস বি তে কারা বেশি আক্রান্ত হয়
প্রাপ্তবয়স্করাই বেশিরভাগ সময়ে হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে তারা আক্রান্ত হলেও কয়েক মাসের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু যারা শিশু থাকা অবস্থায় হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত হয় তারা দীর্ঘ সময়ে ক্রনিক হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত হতে পারে। এর কারণে লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সার হতে পারে।হেপাটাইটিস কত প্রকার ও কি কি?
দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে এই হেপাটাইটিস রোগটি। এখনএই হেপাটাইটিস কত ধরনের হতে পারে, কোন হেপাটাইটিসে কি লক্ষণ আর শরীরে কোনটা কিভাবে ক্ষতি করে তার বিস্তারিত আলোচনা করা হবে নিম্নে।সাধারণত হেপাটাইটিস ৫ ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-
- হেপাটাইটিস এ
- হেপাটাইটিস বি
- হেপাটাইটিস সি
- হেপাটাইটিস ডি এবং
- হেপাটাইটিস ই
হেপাটাইটিস এ কেন হয়
সাধারণত খাবার এবং দূষিত পানির মাধ্যমে ছড়ায় যেসব দেশে নিরাপদ খাবার পানির সংকট এবং পয় নিষ্কাশনের ব্যবস্থা খারাপ সেসব দেশে হেপাটাইটিস এ এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।এছাড়া হেপাটাইটিস এ আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসলে দূষিত পানি পান করলে কিংবা, এই রোগের জীবাণু রয়েছে এমন পানি ব্যবহার করে প্রস্তুত করা খাবার খেলেও হেপাটাইটিস এ হতে পারে। তবে হেপাটাইটিস এ এবং ই কেমন মারাত্মক বা প্রাণঘাতী নয়।
হেপাটাইটিস এ এর চিকিৎসা
হেপাটাইটিস এ এর টিকা রয়েছে। তবে সাধারণত কিছুদিন বিশ্রাম নিলে হেপাটাইটিস এ ঠিক হয়ে যায়। এর জন্য আলাদাভাবে কোন চিকিৎসা নেই তবে ব্যথা, বমি এবং চুলকানি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।হেপাটাইটিস সি কেন হয়
সাধারণত রক্ত আদান-প্রদানের মাধ্যমে এবং মেডিকেল সরঞ্জাম সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না করার কারণে সেগুলোর মাধ্যমে হেপাটাইটিস সি ছড়াতে পারে। এছাড়াও মাদক গ্রহণ, সমকামিতা, অরক্ষিত যৌন মিলন এবং শরীরে অনিরাপদ ভাবে ট্যাটু আঁকার কারণেও অনেক সময় হেপাটাইটিস সি রোগটি ছড়াতে পারে। বর্তমানে প্রায় ৫৮লাখ মানুষ হেপাটাইটিস সি রোগে আক্রান্ত। বর্তমান বিশ্বে এখন মদ্যপানের জনিত কারনের পরেই হেপাটাইসিস সি ভাইরাসের করনে লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশি ঘটছে।হেপাটাইটিস ডি কেন হয়
হেপাটাইটিস ডি ভাইরাসের মাধ্যমে হেপাটাইটিস ডি রোগটি ছড়ায়। এই রোগে ওই রোগীরাই আক্রান্ত হয় যারা এরই মধ্যে হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত। কারণ এই ভাইরাসটিকে টিকে থাকতে হলে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের দরকার হয়। এই ভাইরাসটি সাধারণত রক্ত পরিসঞ্চালন কিংবা অরক্ষিত যৌন মিলনের কারণে ছড়িয়ে পড়ে।ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। দীর্ঘ দিন ধরে হেপাটাইটিস বি এবং ডি এর সংক্রমণে ভূগলে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সার দেখা দিতে পারে।
হেপাটাইটিস ডি এর চিকিৎসা
হেপাটাইটিস ডি এর কোনো নির্দিষ্ট টিকা নেই।তবে হেপাটাইটিস বি এর টিকা নিলেই সেটি এই রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে।হেপাটাইটিস ই কেন হয়
হেপাটাইটিস ই ভাইরাসের আক্রমণেই মূলত হেপাটাইটিস ই রোগের সৃষ্টি হয় এবং এ রোগের মানুষজন আক্রান্ত হয়। সাধারণত এর তেমন কোন উপসর্গ বা লক্ষণ থাকে না এবং দ্রুত সেরেও যাই। সাধারণত এই রোগটি প্রাণঘাতী নয়।তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম, কোন অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, গর্ভবতী কিংবা এরি মধ্যে লিভার সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছে তাদের জন্য অনেক সময় এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। এই রোগটি সাধারণত দূষিত প্রাণী এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কমপক্ষে দুই সপ্তাহ অন্যদের জন্য খাবার প্রস্তুত করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
হেপাটাইটিস ই এর চিকিৎসা
হেপাটাইটিস ই এর কোন টিকা নেই। দূষিত প্রাণী এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে বিরত থাকলে হেপাটাইটিস ই এর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস কি
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ (NHAS)এর তথ্য অনুযায়ী বহু বছর ধরে মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মদ্যপান করলে এই হেপাটাইটিস হতে পারে। যুক্তরাজ্যে এটি একটি সাধারণ রোগ এবং বেশিরভাগ মানুষই এই রোগ সম্পর্কে সচেতন নয়।এর তেমন কোন উপসর্গও থাকে না।তবে অনেক সময় এর কারণে জন্ডিস এবং লিভার অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। অ্যালকোহল পান বন্ধ করলে ধীরে ধীরে লিভার সেরে উঠতে থাকে। কিন্তু মারাত্মক মদ্যপান অব্যাহত রাখলে এর থেকে লিভার সিরোসিস এবং লিভার অকার্যকর হওয়ার মত রোগ হতে পারে এমনকি ক্যান্সার হতে পারে।
অটোইমিউন হেপাটাইটিস কি
এটা এমন এক ধরনের হেপাটাইটিস যেখানে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা রোগ না সারিয়ে উল্টো লিভারকে আক্রমণ করে বসে। এটি ধীরে ধীরে এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে সেটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অটোইমিউন হেপাটাইটিস কেন হয় এখনো পরিষ্কারভাবে কিছু জানা যায়নি।হিপেটাইটিস বি হলে কি কি খাওয়া যাবে না
হিপ্যাটাইটিস বি রোগে কিছু খাবার ও পদার্থ নিরাপদভাবে খাওয়া উচিত নয় যেমন:- তৈলীয় খাবার: তেল, মাখন, ঘী, চর্বি ইত্যাদি এই রোগে বেশি খাওয়া উচিত নয়।
- অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার: রোগজীবানুকে শক্তিশালী করে ফেলতে পারে মিষ্টি, চিনি, মিষ্টি ব্যাণ, বর্ফি, চকলেট, ইত্যাদি ধরনের খাবার ও মিষ্টির নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
- অতিরিক্ত শক্তিশালী বা তীক্ষ্ণ খাবার: তেল, মসলা, চিলি, লাল মরিচ,জাতীয় অতিরিক্ত তীক্ষ্ণ খাবার পরিহার করা উচিত।
- অতিরিক্ত শাঁকসবজি: ত্বকের সমস্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক শাঁকসবজি রয়েছে যেগুলো খেলে এই রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকতে পারে। এই ধরনের খাবার থেকে বিরত থাকা।
হেপাটাইটিস বি কি ভাল হয়
অনেকের মনে এরকম প্রশ্ন থাকে যে হেপাটাইটিস বি কি আসলেই ভালো হয় বা হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত হলে কি পুরোপুরি সুস্থ হওয়া যায় ? হ্যাঁ, হেপাটাইটিস বি রোগের বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা এবং উপযুক্ত প্রতিরোধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করলে এটি ভাল হতে পারে।সঠিক পরিচর্যা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আসে এবং ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যায়। সাধারণত এই রোগ হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভাল হয়ে যায়। যারা হেপাটাইটিস বি রোগীদের যত্ন নেন তারা যদি হেপাটাইটিস বি এর ভ্যাকসিন গ্রহণ করে থাকেন তাহলে তারা সুস্থ থাকবেন।
এছাড়াও উত্তম প্রতিরোধের জন্য হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন এখন বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ হিসেবে প্রদান করা হয়।
হেপাটাইটিস এবং জন্ডিস কি একই নাকি ভিন্ন
হেপাটাইটিস এর কারণে জন্ডিস হয়, মানে হাতের তালু, চোখ হলুদ হয়ে যায়; প্রস্রাবের রং হলুদ হয়। প্রচণ্ড অরুচি, পেট ব্যথা, বমি, বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, হালকা হলুদ রঙের মলত্যাগ, জ্বর, চুলকানি, শরীরে ব্যথা-এসবই মূলত এ রোগের লক্ষণ।হেপাটাইটিস বি রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা
অন্যান্য ভাইরাল এজেন্ট দ্বারা সৃষ্ট হেপাটাইটিস থেকে হেপাটাইটিস বিকে ক্লিনিকাল ভিত্তিতে আলাদা করা সম্ভব নয়, তাই রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাগার নিশ্চিতকরণ অপরিহার্য। হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নির্ণয় ও নিরীক্ষণের জন্য বেশ কিছু রক্ত পরীক্ষা পাওয়া যায়।এগুলি তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের পার্থক্য করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। ডাব্লুএইচও সুপারিশ করে যে রক্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং দুর্ঘটনাজনিত সংক্রমণ এড়াতে হেপাটাইটিস বি-এর জন্য সমস্ত রক্তদান পরীক্ষা করা হয়।
লেখক এর মন্তব্যঃ
প্রিয় পাঠক আর্টিকেলটিতে চেষ্টা করেছে হেপাটাইটি বি সহ অন্যান্য যে হেপাটাইটিসের ধরন গুলো রয়েছে সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার। হেপাটাইটিস হলে কিভাবে বুঝব বা কোন লক্ষণ গুলো দেখে বুঝবো হেপাটাইটিস হয়েছে সেগুলো নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।সেই সাথে এই রোগ কেন হয়, কিভাবে সংক্রামিত হয়, এ সময়ে কি খাওয়া উচিত, কি খাওয়া উচিত নয়, হেপাটাইটিস কত প্রকার ও কি কি এবং আরো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে একদম শুরু থেকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যাতে করে আপনারা এই রোগ সম্পর্কে সম্পূর্ণ জানতে পারেন এবং সতর্ক হয়ে রোগ মুক্ত থাকতে পারে।
আশা করি পোস্টটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। সেই সাথে পোস্ট টি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব কিংবা প্রতিবেশীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই ভয়াবহ রোগ সম্পর্কে জানতে পারে এবং নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখতে পারে।
আর যদি এই পোস্ট সম্পর্কে কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আপনার মূল্যবান বক্তব্যটি দিয়ে যাবেন। পরিশেষে পোস্টটি সম্পন্ন পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url