মেয়েদের মাসিক কেন হয়

প্রতি চন্দ্রমাস পরপর হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রকে এক ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই পরিবর্তনের ফলে রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে। আর এটি মাসিক বা পিরিয়ড নামে পরিচিত। এখন অনেকে মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে মাসিক কেন হয়? নিম্নের বিস্তারিত......
মেয়েদের মাসিক কেন হয়

ভুমিকাঃ

মেয়েদের বয়সন্ধিকালে পা দেওয়ার প্রথম বৈশিষ্ট্য হল মাসিক বা ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড। নারী কিন্তু সুস্থ ও গর্ভধারণের সক্ষম করতে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট তারিখে থেকে স্বাভাবিক নিয়মে কয়েক দিন ধরে পিরিয়ড হয়। পিরিয়ড নিয়ে কথা বলতে লজ্জার যেন শেষ নেই। তাছাড়া এই নিয়ে আমাদের সমাজে রয়েছে নানান ধরনের কুসংস্কার।

লজ্জা আর কুসংস্কারবশত এই পিরিয়ড বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয় না। এটি বর্তমানে আমাদের কাছে যেন একটি চুপিচুপি ব্যাপার। এটি আসলেই দুঃখজনক কারণ মেয়েদের পিরিয়ড বা মাসিক একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এবং ঠিকমতো পিরিয়ড হচ্ছে কিনা তার থেকে অনেক সময় একজন মেয়ের স্বাস্থ্যের বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়।

লজ্জায় এবং কুসংস্কারের কারণে আমরা পিরিয়ড নিয়ে আলোচনা না করাই আবার চিকিৎসকের পরামর্শ না নেওয়ার ফলে আমাদের শরীরের বড় ধরনের ক্ষতি করে ফেলি। আশ্চর্যের বিষয় এটি শুধু অশিক্ষিত পরিবার বরং অনেক শিক্ষিত পরিবারেও এই সমস্যার লক্ষ্য করা যায়। যার ফলে পিরিয়ড সংক্রান্ত নানা ধরনের সমস্যায় পড়ে মেয়েরা।

যেমন অনিয়মিত মাসিক, সময়ে ঋতুস্রাব না হওয়া, ঋতুস্রাবের পরিমাণ বেশি বা কম হওয়া,তলপেটে স্বাভাবিক ব্যথা এসব সমস্যা সাধারণত বেশি দেখা যায়। তাই আর লজ্জা নয় পিরিয়ড সম্পর্কে অনেক ধরনের বিষয় জানা অত্যন্ত জরুরি।

আর তাই নিম্নে পিরিয়ড সংক্রান্ত প্রাথমিক ধারণা এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো যে বিষয়গুলো একজন মেয়ের অবশ্যই জানা উচিত।

মেয়েদের মাসিক কেন হয়

কিশোরী বয়সী মেয়েদের সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন হয় তা হল কিশোরীদের পিরিয়ড বা মাসিক শুরু হওয়া। অর্থাৎ মাসের একজনের যৌনাঙ্গ থেকে রক্তপাত হতে পারে। এই রক্ত দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটি একটি স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক ঘটনা। পৃথিবীর প্রত্যেকটা মেয়েরই এই শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সংঘটিত হয় অর্থাৎ মাসিক হয়।

কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই অনেক সময় মেয়েদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে মাসিক বা পিরিয়ড কেন হয়? মেয়েদের পিরিয়ড আসলে তাদেরকে সন্তান জন্মদানের জন্য প্রস্তুত করে। কিশোর বয়স থেকেই মেয়েদের শরীর এই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। সহজ ভাবে বলতে গেলে মেয়েদের দেহে অনেকগুলো ডিম্বাণু থাকে।
প্রতিমাসে এর মধ্য থেকে একটি করে ডিম্বাণু মেয়েদের শরীরের ভেতরে একটি জায়গায় এসে শুক্রাণুরঅপেক্ষা করে থাকে। কিন্ত ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোন শুক্রাণুর সাথে মিলতে না পারলে তখন মেয়েদের শরীর বুঝতে পারে এই ডিম্বাণুটি রেখে দিয়ে কোন লাভ নেই। আর তখন শরীর নিচে থেকেই সেই ডিম্বাণুটি নষ্ট করে ফেলে।

তখন জরায়ুর ভেতর কিছু রক্তনালীতে জমা রক্ত এবং নষ্ট ডিম্বাণুট মেয়েদের শরীর দিয়ে বেরিয়ে যায়। আর এ রক্তটাই মাসিকের মাধ্যমে দেখা যায়। এভাবে মেয়েদের দেহে প্রত্যেক মাসে একটা করে ডিম্বাণু বাচ্চা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় ।আর সেটি কাজে না লাগলে ডিম্বাটি নষ্ট হয়ে রক্তের সাথে বের হয়ে যায়।

 এই প্রক্রিয়া প্রত্যেক মাসে একবার করে হয় বলে একে মাসিক বলে। আবার জরায়ু চক্র প্রথম দুই সপ্তাহ ধরে জরায়ুকে নিষিক্ত ডিম্বাণু ধারণের জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করে। এই সময় জরায়ুর দেয়ালের আবরণ ঝিল্লি এন্ডোমেট্রিয়ামের দেয়াল মোটা হয়ে রক্তবাহী নালিকায় পরিণত হয়।

নিষিক্ত ডিম্বাণুটি ওভারি থেকে ফেলোপিয়ান টিউব হয়ে জরায়ুতে এসে নিপতিত হয়। ভ্রুণ স্থাপনের জন্য এন্ডোমেট্রিয়াম সাধারণত সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করে। ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলনে ভ্রুণ তৈরি হয়। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো সঠিকভাবে নিষিক্ত ভ্রুণ স্থাপিত হলে জরায়ুতেই মানব শিশু বড় হতে শুরু করে।

কিন্তু মেয়েদের ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে শুরু হয় মাসিক বা ঋতুস্রাব। অ-নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়ামের রক্তবাহী নালিকার যে আবরণ সেটির সাথে ভেঙ্গে পড়ে এবং রক্তের সাথে কয়েকদিন ধরে নারীর যোনি পথে বের হয়ে যায়।

কত বছর বয়সে মেয়েদের মাসিক শুরু হয়

সাধারণত একটি মেয়ে প্রথম ঋতুবতী হয় ১০-১৫ বছর বয়সে। তবে ১০ বছরের আগেও আজকাল মেয়েদের পিরিয়ড হয়।সাধারণত আবহাওয়া, লাইফস্টাইল, খাদ্যাভ্যাস, ওজন প্রভৃতি কারণে ১০ বছরের আগেও মেয়েরা ঋতুবতী হয়।

৪০-৫০ বছর বয়স পর্যন্ত পিরিয়ড স্থায়ী হয়।পিরিয়ডের সময়কাল ৩-৭ দিন পর্যন্ত হতে পারে।প্রতি পিরিয়ডে একটি মেয়ের শরীর থেকে ৩০-৯০ মি.লি রক্ত প্রবাহিত হয়। তবে শরীর ভেদে কম বেশি হতে পারে।

যদিও ১২ বছরের আগে পিরিয়ড শুরু হওয়া উচিত নয় কিন্তু অনেক সময় ১০-১১ বছর বয়সেই পিরিয়ড শুরু হয়ে যায়। সাধারণভাবে ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে পিরিয়ড শুরু হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়।বর্তমান সময়ে অনেকের ৯ বছর বয়স থেকেও পিরিয়ড শুরু হতে দেখা যায়।

 মাসিক কয় ধরনের হয়ে থাকে

  • স্বচ্ছ পরিষ্কারঃ এটি একটি স্বাভাবিক প্রকারের পিরিয়ড বা ঋতুস্রাবের ধরন যা মাসিক চক্রের বিভিন্ন আলাদা পর্যায়ে ঘটতে পারে। এটি গর্ভাবস্থায় বা যৌন উত্তেজনার সময়ও থাকতে পারে।
  • সাদা এবং ঘনঃ এটিও একটি সাধারন প্রকারের যোনিতরল যা দেখতে সাধারণত এবং দুধের মত সাদা।
  • হলুদ বা সবুজ স্রাবঃএই ধরনের যোনিস্রাব সাধারণত কোন সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যেমন ব্যাকটেরিয়াল এবং ট্রাইকোমনিয়াসিস।
  • বাদামী বা রক্তাক্ত স্রাবঃ এই ধরনের যোনিতরল সাধারণত মাসিকের সময় দেখতে পাওয়া যায়। তবে এটি কোন সংক্রমণ বা অস্বাভাবিক রক্তপাতের লক্ষণ হতে পারে।
  • শ্লেষ্মা-সদৃশ স্রাবঃ এই ধরনের স্রাব ডিম্বস্ফটন বা গর্ভাবস্থায় ঘটতে পারে। দেখতে সাধারণত পরিষ্কার এবং পিচ্ছিল অনেকটা ডিমের সাদা অংশের মতো।

নিয়মিত পিরিয়ড কি?

আপনার পিরিয়ড সঠিক নিয়মে হচ্ছে কিনা তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণত ২১ থেকে ৩৫ দিনের সার্কেলে পিরিয়ড হলে তা রেগুলার পিরিয়ড। অর্থাৎ প্রতি মাসে এই সার্কেলে পিরিয়ড হলে তা রেগুলার পিরিয়ড বা নিয়মিত পিরিয়ড।

অনিয়মিত পিরিয়ড কি?

যদি কোন মেয়ের মাসিক ২১ দিনের আগে বা ৩৫ দিনের পরে হয় এবং তা যদি ৩ দিনের কম বা ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয় তবে তাকে অনিয়মিত বা ইরেগুলার পিরিয়ড। মাঝে মধ্যে এটি হতে পারে। তবে এটি স্থায়ী হলে একজন বিশেষজ্ঞ গাইনী চিকিৎসকেরশরণাপন্ন হওয়া উচিত।

অনিয়মিত পিরিয়ড বা মাসিক হয় কেন


পূর্বে আপনারা জেনেছেন যে অনিয়মিত পিরিয়ড কি। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে যে এই অনিয়মিত পিরিয়ড কেন হয় বা এর কারণটা কি। চলুন জেনে নেওয়া যাক অনিয়মিত পিরিয়ড বা পাশে কেন হয়?
  • শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া বা হঠাৎ কমে যাওয়া।
  • অত্যাধিক মানসিক চাপ।
  • অতিরিক্ত শরীরচর্চা।
  • জরায়ুর টিউমার, এন্ডোমেট্রিওসিস, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম।
  • শিশুকে বুকের দুধ পান।
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন।
  • কপার টি ব্যবহার।
  • কিশোর বয়সে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের তারতম্যের কারণে।

অনিয়মিত পিরিয়ড হলে করণীয়

নারীদের স্বাস্থ্যজনিত যেসব সমস্যা হয় তার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো অনিয়মিত পিরিয়ড। এই অনিয়মিত পিরিয়ড আসলে কী? কেনই বা এটি হয়ে থাকে? অনিয়মিত পিরিয়ড হলে যেসব খাবার খেলে সুফল মিলবে, আজ জানবো সে সম্পর্কে।

কোনো নারীর মাসিক চক্র তার স্বাভাবিক চক্রের অনেক বেশি আগে বা পরে শুরু হলে তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড হিসেবে ধরা হয়। এটি সাধারণত ভারসাম্যহীন ইস্ট্রোজেনের মাত্রা এবং পেলভিক এরিয়ায় রক্ত প্রবাহের কারণে হয়ে থাকে।

মাসিক চক্র অনিয়মিত হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ দায়ী হতে পারে। মানসিক চাপ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, থাইরয়েড, বয়স ইত্যাদি ছাড়াও আরেকটি বড় কারণ হতে পারে জীবনযাপনের ধরন। কেমন খাবার খাচ্ছেন, শারীরিক পরিশ্রম এবং ঘুমের অভ্যাস পিরিয়ড নিয়মিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পিরিয়ড অনিয়মিত হলে আপনার খাদ্যাভাসে কিছুটা পরিবর্তন আনুন। এক্ষেত্রে খাবারের তালিকা নির্বাচন করতে হবে বুঝেশুনে।

পিরিয়ডের লক্ষণ গুলো কি কি

মাসিক ঋতুচক্রের আগে কমবেশি সব মেয়েরই নানান ধরনের সমস্যা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে সেটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে এবং দৈনন্দিন জীবনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। কিন্তু সবার ক্ষেত্রেই যে এটি প্রযোজ্য হবে সেটা কিন্তু নয়।

অনেকের ঝামেলা হতে দেখা যায় যেমন সময়ের আগে অথবা সময়ের পরে পিরিয়ড হওয়া। কেউ কেউ হয়তোবা মনে রাখতে পারছেন না তার পিরিয়ডের তারিখ। অথবা কি কি লক্ষণ দেখলে নিজে আগে থেকে সচেতন হতে পারবে বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে সেটাও জানে না।
  • স্তন বৃত্তে ব্যথা
  • মাথা ব্যথা
  • মাথা ঘোরা
  • তলপেটে ব্যথা
  • ক্ষুধামন্দা
  • বমি বমি ভাব
  • স্তন ফোলা
  • ক্লান্তি বোধ
  • ঘুমের সমস্যা
  • মুড স্যুইং

মাসিক দেরিতে হওয়ার কারণ

গর্ভাবস্থাঃমাসির বা পিরিয়ড দেরিতে হলে প্রথমে নিশ্চিত করুন আপনি গর্ভবতী কিনা। কারণ অনেক সময় গর্ভবতী থাকলে মাসিক দেরিতে হওয়া সম্ভবনা থাকে।
বয়সন্ধিকালঃ বয়সন্ধির শুরুতে সাধারণত ১২ থেকে ২০ বছর বয়সে অনেকের শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্ট্রেরন হরমোনের অভাব থাকে তবে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে।
আর্লি প্রেগনেন্সি লসঃ একজন নারী গর্ভবতী হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু তা জানতেন না, এরপর নিজে থেকেই তার মিসক্যারিজ বা গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে। এই ঘটনায় সাধারণ পিরিয়ডের তুলনায় কিছুদিন পর ভারী রক্তপাত হতে পারে, যাকে অনেকে লেফট বলে ধারণা করেন।
ফাইব্রয়েডসঃ জরায়ুতে টিউমার ধরনের এক ধরনের বৃদ্ধি হল ফাইব্রয়েডস। এগুলো পিরিয়ডের স্বাভাবিক চক্র কে বাধা দিতে পারে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়াঃ বিবাহিত নারীদের পিরিয়ড বিলম্বিত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো অতিরিক্ত জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া।
থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতাঃ থাইরয়েড গ্যান্ড যা আমাদের গলার নিচে অবস্থিত। এটি শরীরে মেটবলিজম নিয়ন্ত্রণ রাখার পাশাপাশি দেহের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েড গ্রন্থের যেকোন সমস্যার কারণে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।
মানসিক চাপঃ কোন মেয়ে যদি লম্বা সময় মানসিক চাপে থাকে তাহলে অনেক সময় পিরিয়ড দেরি করে হয়।
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমঃ এটি একটি হরমোন জনিত রোগ। শরীরের জরুরি তিনটি হরমোন অ্যাস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন এবং টেস্টোস্টেরন উৎপাদনের মাত্রা কমে যায় পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হলে। আর যার কারণে পিরিয়ড দেরিতে হয়ে থাকে।
অতিরিক্ত ভ্রমণঃ আপনি যদি নিয়মিতভাবে ভ্রমণ করেন তবে মাসিক দেরি হতে পারে। এটি তেমন কোন বিষয় নয় বরং নতুন পরিবেশ এবং সময়ের কারণে এটি হয়ে থাকে। আপনার শরীরে নতুন পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে আবার মাসিক চক্র নিয়মিত হয়ে যাবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ অনিয়মিত মাসিক এর আরেকটি প্রধান কারণ হলো অসুস্থতা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, যার কারণে পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে যায়।
অতিরিক্ত ভারী ব্যায়ামঃ অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে পিরিয়ড ইরেগুলার বা অনিয়মিত হতে পার। যারা রেসার, হেভি ওয়েট লিফটিং করেন বা অন্যান্য কারণে নিয়মিতভাবে কঠিন পরিশ্রম করেন তারা এই সমস্যায় ভুগতে পারেন। কারণ অতিরিক্ত এক্সারসাইজ ইস্ট্রোজেন লেভেল কমিয়ে দেয়। যার ফলে পিরিয়ড দেরিতে হতে পারে।
দৈনিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তনঃ ভ্রমণ, কাজের সময়ের পরিবর্তন ইত্যাদির মাধ্যমে যদি দৈহিক জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটে তাহলেও পিরিয়ড দেরি বা মিস হতে পারে। তবে এটি স্বল্পস্থায়ী ব্যাপার যাতে কোন ক্ষতি হয় না। এছাড়া নতুন কোনো ঔষধ খেতে শুরু করলেও পিরিয়ড দেরী বা মিস হয়ে যেতে পারে।
স্তন্যপান করানোঃ সদ্যজাত শিশুকে স্তন্যপান করানোর সময় প্রোল্যাক্টিন হরমোনের প্রভাবে পিরিয়ড বন্ধ থাকে। কিন্তু এই ঘটনা এমনিতেই অনেকের ক্ষেত্রে হতে পারে এবং তার ফলে পিরিয়ড দেরি বা মিস হয়। যদি প্রোল্যাক্টিন হরমোনের প্রভাবে পিরিয়ডের সমস্যা হয় তবে স্তন থেকে দুধের মত পদার্থ নির্গত হবে।
কম ওজনঃ ওজন কম হলে সময়মতো পিরিয়ড নাও হতে পারে অথবা কিছুদিন বন্ধ থাকতে পারে।
মেনোপজঃমেনোপজ হবার আগে অনেকের পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে যায়। যদিও মেনোপজ মোটামুটি 40 বছরের পরেই হয়, কিছু মহিলার মেনোপজ তার আগেই হতে পারে। কাজেই এটাও পিরিয়ড দেরি বা মিস হবার একটি কারণ।
হরমনের ভারসাম্যহীনতাঃঅনিয়মিত মাসিকের অন্যতম কারণ হলো হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।

মাসিক পিরিয়ড নিয়মিত রাখতে চাইলে করণীয়

  • প্রথমত পিরিয়ড নিয়মিত রাখতে চাইলে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হবে। খাদ্য অভ্যাস ভালো রাখুন।
  • প্রসেসড খাবার থেকে দূরে থাকুন।
  • রাতে নিয়মিত ৮ ঘণ্টা ঘুমান।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  • নিজেকে মানসিক চাপ থেকে সবসময় দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
  • যেসব নারী মেনপজের বয়স হয়ে এসেছে তাদের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন আরও বেশি জরুরি। কারণ ম্যানুফজের পর পরই অনেক রোগের প্রকাশ পাড়তে পারে।
একবার পিরিয়ড লেট হলে চিন্তিত হবার কিছু নেই। তবে পিরিয়ডের দিকে খেয়াল রাখুন। টানা তিন মাস পিরিয়ড না হলে, বছরে ৯ বারের কম পিরিয়ড হলে বা প্রতিবার পিরিয়ড হওয়ার মাঝে ৩৫ দিনের বেশি ব্যবধান থাকলে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয়

ইমারজেন্সি বা ফেমিকন পিল খাওয়ার পর মাসিক না হওয়ার কারণ কি হতে পারে সেটা ভেবে অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন। জেনে রাখা ভালো যে ইমার্জেন্সি পিল একটি হরমোনাল ওষুধ, যা ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণ; অর্থাৎ ওভুলেশনের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেয় অথবা নিষিক্ত ডিম্বাণুকে জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত হতে বাধা দেয়।

যাঁদের ইতিমধ্যে ওভুলেশন হয়ে গেছে অথবা নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত হয়ে গেছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ কোনো কাজ করে না।অপরিকল্পিত ও অনিরাপদ সহবাসের তিন দিনের মধ্যে ওষুধটি খেতে হবে। তবে যত তাড়াতাড়ি খাওয়া যায়, তত ভালো কাজ করে।

একটি পিল একটি ঋতুস্রাব চক্রে একবারই খাওয়া যাবে। কিন্তু এটি নিয়মিত ব্যবহার করা একদমই উচিত নয়। সম্প্রতি গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে নিয়মিত ইমারজেন্সি পিল সেবনে জরায়ুর ক্যান্সার এর সৃষ্টি হয়। সুতরাং জরুরি জন্মনিরোধক পিল ব্যবহারে সচেতন থাকুন।

মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় কেন?

এই ভিডিওতে, আমরা মাসিকের সময় ভারী রক্তপাত নিয়ে আলোচনা করব। একটি স্বাভাবিক মাসিক চক্রে, ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের মধ্যে একটি ভারসাম্য জরায়ুর আস্তরণের (এন্ডোমেট্রিয়াম) গঠনকে নিয়ন্ত্রণ করে, যা মাসিকের সময় নির্গত হয়।

হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিলে, এন্ডোমেট্রিয়াম অতিরিক্তভাবে বিকশিত হয় এবং অবশেষে ভারী মাসিক রক্তপাতের মাধ্যমে ঝরে যায়।

রোগ নির্ণয়:স্পেকুলাম পরীক্ষা, হিস্টেরোস্কোপি রোগ নির্ণয় এবং নিরাময়ের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিছু ক্ষেত্রে হিস্টেরেক্টমি সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।অল্পবয়সী রোগী এবং ফাইব্রয়েড আক্রান্ত বন্ধ্যা রোগীদের ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপিক মায়োমেকটমির প্রয়োজন হতে পারে।

ফাইব্রয়েড জরায়ুর সাথে অতিরিক্ত রক্তপাতের জন্য কখনও কখনও ল্যাপারোস্কোপিক হিস্টেরেক্টমির প্রয়োজন হয়। মেনোপজ-পরবর্তী রোগীদের ভারী রক্তস্রাব কখনও কখনও সার্ভিকাল কার্সিনোমা এবং এন্ডোমেট্রিয়াল কার্সিনোমা হিসাবে নির্ণয় করা হয়।

তারা তাদের প্যাথলজি পাওয়া অনুযায়ী চিকিৎসা বেশির ভাগ রোগীরই বেশি রক্তপাত হয় সৌম্য প্যাথলজি হিসেবে।কিছু সময় ওষুধের মাধ্যমে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা নিরাময় হবে
হাইপোথাইরয়েড সাধারণ অন্তঃস্রাবী ব্যাধিগুলির মধ্যে একটি প্রজনন বয়সের সময় ভারী রক্তপাত ঘটায়।

কিন্তু বয়ঃসন্ধিকালীন মেয়েদের মধ্যে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সবচেয়ে সাধারণ কারণ কিন্তু হেমাটোলজিকাল ডিসঅর্ডার বাতিল করা উচিত।

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায় ?

৯০% মহিলার লক্ষণ প্রকাশ পেতে 8 মাস সময় লেগে যায়। তবে মাসিক মিস হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে স্ট্রিপ দিয়ে পরীক্ষা করলে প্রেগনেন্সি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল মূত্র পরীক্ষা করার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া। স্ট্রিপ দিয়ে পরীক্ষা করলে অনেক সময় ভুল ফলাফল আসে যদিও সেটার সংখ্যা খুবই কম।

মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়?

অনেকের মদ্ধেই একটা প্রশ্ন কাজ করে যে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়। সাধারণত মাসিক মিস হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে ৯০ শতাংশ মহিলাদের গর্ভধারণের লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে। অনেকের হয়তো এর আগেও বোঝা যেতে পারে।

কিন্তু প্রেগনেন্সির সম্পূর্ণ লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তবে পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ রয়েছে।মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হিসেবে ধরা হয় মর্নিং সিকনেস। তবে এটা রাতেও দেখা দিতে পারে। এতে করে নারীরা শরীরে প্রচন্ড দুর্বলতা অনুভব করে। সেই প্রচন্ড পরিমাণে মাথা ঘুরায়। মর্নিং সিকনেস দেখা যায় সাধারণত গর্ভধারণের এক মাস পর থেকে।

৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর নারী দেহে অ্যাস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনোর মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে সবসময় গা গুলাতে থাকে। এতে যেকোন সময় বমি হতে পারে। প্রায় ৮০ শতাংশ নারীই গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বমির সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে।

পাশাপাশি স্তন নরম হয়ে যাওয়া, স্তনে হাল্কা ব্যাথা অনুভুত হওয়া কিংবা স্তন ভারী অনুভুত হতে পারে। অনেক সময় শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

গর্ভধারণের ফলে মুড সুইং হয়ে থাকে। হঠাৎ করে রেগে যাওয়া, আনন্দে আপ্লুত হয়ে পড়া, উত্তেজিত হয়ে যাওয়া, মাঝে মাঝে মাথা ঘুরানো ইত্যাদি দেখা দিলে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করে নিন।

তাছাড়া ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ এবং অনিয়মিত ব্লিডিং দেখা দিতে পারে। প্রিরিয়ডের তারিখ ছাড়াই যদি হঠাৎ ব্লিডিং দেখা দেয় তাহলেও প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করিয়ে নিন।

খাবারের অভ্যাসেও পরিবর্তন দেখা দেয়। ক্ষুধা বেড়ে যাবার পাশাপাশি অপছন্দের খাবার গুলো পছন্দনীয় হয়ে পড়ে। তাছাড়া দিনে বা রাতের যেকোন সময় ক্ষুধা লাগে।

অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়াও গর্ভধারণের আরেকটি লক্ষণ। ওভ্যুলেশান এর ফলে গর্ভধারণ হলে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। এই সময় কিডনি অতরিক্ত পরিমাণে তরল নিঃসরণ করে। এই তরল প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীরের বাহিরে বের হয়ে আসে।

মাসিক না হলে কি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে

না। গর্ভবতী না হয়েও মাসিক বন্ধ হতে পারে। তবে সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাসিক বন্ধ হয় গর্ভবতী হবার কারণেই। মাসিক বন্ধ হলে বাড়িতে টেস্ট করতে পারেন বা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। প্রাথমিকভাবে স্ট্রিপ দিয়ে পরীক্ষা করলে যদি পজিটিভ ফলাফল আসে তাহলে অবশ্যই আপনার নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মাসিকের কতটুকু রক্ত যায়

সাধারণত প্রত্যেক মাসিদের সময় তিন থেকে পাঁচ দিন ব্লেডিং হয়( রক্তক্ষরণ)। প্রত্যেক মাসিকেরসময় ২০মিলি থেকে ৮০ মিলি রক্তক্ষরন হয় এবং গড়ে তা ৩৫মিলি। মোট রক্তক্ষরণের প্রায় ৭০% রক্ত মাসিকের প্রথম দুই দিনেই বের হয়ে যায়।

অর্থাৎ মাসিক শুরুর প্রথম দিন ও দ্বিতীয় দিন রক্তক্ষরণ বেশি হবে। আর দ্বিতীয় দিন থেকে তা পর্যায়ক্রমে কমতে থাকবে। এটি হচ্ছে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

মাসিকের সময় কম রক্ত যাওয়ার কারন, চিকিৎসা ও প্রতিকার


অনেকেই জানতে চেয়েছেন তার মাসিক ২ দিন থাকে এবং ব্লাডের পরিমাণ অল্প থাকে, তো এই লক্ষল গুলো কি স্বাভাবিক? বা এই সমস্যা থাকলে বাচ্চা নিতে কি কোন সমস্যা হবে? এই আর্টিকেল টিতে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো - প্রত্যেক মাসিকের সময় কতটুকু ব্লাড যাবে, কখন এটিকে কম বলবো।

কোন কোন কারনে মাসিকের সময় ব্লাড কম যায় - ঘরে বসে কিভাবে সেটি ঠিক করবেন কখন যাবেন ডাক্তারের নিকট। চলুন শুরু করা যাক-

এই সমস্যার কারণ জানতে হলে প্রথমেই আপনাদের জানতে হবে সাধারণ মাসিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে যা ওপরে সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করা আছে।

এখন মাসিকের সময় প্রথম দুই তিন দিন যদি কম রক্তক্ষরণ হয় এবং তা যদি ২০ মিলির কম হয় তখন তাকে বলা হয় হাইপোমেনোরিয়া( Hypomenorrhea) যা একটি অস্বাভাবিক অবস্থা। আর এমন হলে বুঝবেন সাধারণত ব্লাড কম যাচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে সেটি পরিমাপ করবেন? ২০ মিলি মানে হচ্ছে ৪ চামুচ পরিমাণ। মাসিকের সময় ব্যবহৃত আপনার সেনেটারি প্যাড যদি একটিও ভালো হবে না ভিজে তাহলে বুঝতে হবে আপনার ব্লিডিং বা রক্তক্ষরণ কম হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন মাসিকের সময় রক্ত কম যায়? এ কারণগুলোকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায় যার একটি হচ্ছে ১। General causeবা সাধারণ কারণ এবং ২।pathological cause রোগ জনিত কারণ।

সাধারণ কারণ বা General cause

প্রথমে আলোচনা করব সাধারণ কারণগুলো নিয়ে যার কারণে রক্তক্ষরণ কম হয়। কারণগুলো হলো-
১। বয়স সম্পর্কিত কারনঃমাসিকের বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ আমাদের দেশে ১৩-১৫ বছর বয়সে মাসিক শুরু হয়।

সাধারণত এই সময়টাকে বলা হয় বয়ঃসন্ধিকাল। অর্থাৎমাসিক শুরু হওয়ার এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত তাদের মাসিকের সময় ব্লাড কম যেতে পারে।

২। মেনোপজ (Menopause)ঃএবং যখন মেয়েদের বয়স ৪৫-৫০ বছর হয় তখন প্রাকৃতিক ভাবেই মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মেনোপজ।আর সাধারণত মেনোপজের এক থেকে দুই বছর আগে মাসিকের সময় ব্লাড কম যেতে পারে।তবে এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

৩। পুষ্টিহীনতাঃ স্বাভাবিক মাসিকের জন্য মেয়েদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি দরকার। অতএব কারো যদি প্রোটিন,ভিটামিন, মিনারেল এবং বিশেষ করে আইরনের ঘাটতি থাকে তাহলে মাসিকের সময় কম ব্লাড যেতে পারে। সুতরাং আপনার খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল,প্রোটিন এবং আয়রন সমৃদ্ধ সবুজ খাবার রাখতে হবে।

৪। হঠাৎ ওজন হ্রাস বৃদ্ধিঃ হঠাৎ করেই যদি আপনার ওজন কমতে থাকে অথবা হঠাৎ করেই যদি আপনার ওজন বেড়ে যায় তাহলেও মাসিকের সময় ব্লাড কম যেতে পারে। কারণ হঠাৎ করে ওজন কমে গেলে বা বেড়ে গেলে শরীরে হরমোনাল লেভেলেও তারতম্য ঘটে যার কারণে মাসিকের সময় কম ব্লাড যেতে পারে। আর তাই স্বাভাবিক মাসিকের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

৫। জন্মনিয়ন্ত্রণ খাবার বড়িঃ অনেকেই জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অনেক সময় খাবার বড়ি বা হরমোনাল পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকে। এগুলোর কারনে আপনার মাসিকের সময় অল্প পরিমাণের ব্লাড যেতে পারে। এমন হলে চিন্তার কারণ নেই, কারণ এসব জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলোর কারণে শরীরে হরমোনের মাত্রা কম বেশি হয়।

পিল খাওয়া বন্ধ করলে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে পিরিয়ড স্বাভাবিক হতে পারে। আবার পিল খাওয়া বন্ধ করার তিন থেকে চার মাসের মধ্যেও যদি মাসিক স্বাভাবিক না হয় তাহলে অবশ্যই একজন গাইনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৬। মানসিক স্বাস্থ্যঃ অনেক সময় মানসিক চাপ এবং অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস থেকে অস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্ট্রোজেন রিলিজ হয় যার কারণে মাসিকের সময় কম ব্লাড যেতে পারে।

আর এই সমস্যা থেকে মুক্ত হতে চাইলে অবশ্যই প্রত্যেক দিন সর্বনিম্ন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকলে আপনার পিরিওডটি কিন্তু স্বাভাবিক হতে পারে।

৭। গর্ভাবস্থাঃ যদি এরকম হয় যে পিরিয়ডের সময় আপনার অনেক কম ব্লাড যাচ্ছে তাহলে হতে পারে আপনি গর্ভবতী। সাধারনত গর্ব অবস্থায় মাসিক বন্ধ থাকে, তবে কখনো কখনো খুব অল্প পরিমাণ বা এক থেকে দুই ফোঁটা ব্লাড যেতে পারে। এটাকে একটোপিক গর্ভাবস্থা বলে। এটি একটি মারাত্মক গর্ভধারণ যদি এরকমটা হয় তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ গাইনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৮।শরীর চর্চাঃ যারা নিয়মিত এবং পরিমিত শরীর চর্চা করেন তাদের হরমোনের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু যারা নিয়মিত শরীর চর্চা করেন না বা অতিরিক্ত শরীরচর্চা করেন তাদের মাসিকের সময় কম ব্লাড যেতে পারে ইত্যাদি।

 রোগ জনিত কারণ 

এবার আসি প্যাথলজিক্যাল বা রোগজনিত কারণ
  • থাইরয়েডের সমস্যাঃ মাসিক মূলত পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় আমার মনের মাধ্যমে। এখন কারো যদি থাইরয়েডর হরমোন কম বা বেশি হয় তখন পিরিয়ডটিও অনিয়মিত এবং অস্বাভাবিক হয়।
  • PCOS(poly cystic ovarian syndrome)ঃসাধারণত মেয়েদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন কম থাকে এবং ছেলেদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বেশি থাকে। কোন কারনে যদি মেয়েদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তখন মাসিকের সময় ব্লাড কম যেতে পারে।
  • জরায়ু অস্ত্রোপাচারঃ জরায়ুতে কোন অস্ত্রপাচার হলে যেমন সিজারিয়ান সেকশন বা ডিম্বাশয়ের অপারেশন হলে পিরিয়ডের সময় কম ব্লাড যেতে পারে।
এখন প্যাথলজিক্যাল কারণ গুলো থাকলে অবশ্যই আপনাকে একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মাসিকের সময় কম ব্লাড গেলে ঘরোয়া চিকিৎসা

চলুন জেনে নেওয়া যাক মাসিকের সময় কম ব্লাড গেলে ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে আপনারা কিভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
  • প্রতিদিন পরিমিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা ।
  • প্রতিদিন পরিমাণ মতো ঘুমানো।
  • প্রত্যেকদিন সঠিক উপায়ে শরীর চর্চা করা।
  • নিজের ওজনে ভারসাম্য বজায় রাখা।
উপরোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে ঠিকমতো প্রয়োগ করলে আপনার মাসিকের সময় কম ব্লাড যাওয়ার সমস্যাটির সমাধান হতে পারে।

লেখকের মন্তব্যঃ

প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে আমি চেষ্টা করেছি মাসিক সম্পর্কে যথাযথ তথ্য উপস্থাপন করার জন্য। যাতে করে মেয়েরা তাদের সাধারণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারে এবং এ সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। আশা করি উপরোক্ত তথ্যগুলো আপনাদের সাহায্য করবে আপনাদের দৈনন্দিন জীবন আরো সুন্দর করার জন্য। 

যদি এই পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে তা আপনি আপনার বন্ধু বান্ধবীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন যাতে করে তারাও। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে এবং সচেতন ভাবে জীবন যাপন করতে পারে। আর এই বিষয়ে যদি কোন মতামত বা পরামর্শ থাকে তাহলে তো কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। আপনি যদি আর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে চান যে হল আপনার  জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ভিজিট করতে পারেন। কারণ এরকমই আরো অনেক সচেতনতা মূলক আর্টিকেল প্রকাশ করা হয় আমাদের ওয়েবসাইট থেকে।

 সর্বোপরি সম্পূর্ণ  পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ💚।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url