মহাসাগর কয়টি ও কি কি

আমরা জানি পৃথিবীর তিন ভাগ জল ও একভাগ স্থল। আর এই জলভাগের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে সাগর-মহাসাগর গুলো। এখন অনেকে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে পৃথিবীতে মহাসাগর কয়টি ও কি কি, নিম্নে বিস্তারিত
মহাসাগর কয়টি ও কি কি


ভুমিকাঃ

সমুদ্র আপনার ধারনার চেয়েও বেশী গভীর, আপনি হয়তো অনেক উচু উচু পাহার দেখেছেন? বা অনেক উচু বিল্ডিং এ চরেছেন, উচু পাহার বা বিল্ডিং এর আনুমানিক উচ্চতা কত হতে পারে সে সম্পর্কে একটা ধারনা আপনি হয়তো সহজেই করতে পারেন। কিন্তু একটা সমুদ্র দেখে এর গভিরতা কত হতে পারে তা কি আপনি আন্দাজ করতে পারেন?

উচ্চতা সম্পর্কতে হয়তো আপনার ধারনা আছে কিন্তু গভীরতা সম্পর্কে আপনার ধারনা কতটুকু? তবে জেনে রাখুন আপনার ধারনা থেকেও অনেক বেশী গভীর হয় একটি সমুদ্র। পৃথিবীতে যত পাহার-পর্বত উচু ভবন সমতল ভূমি ও দ্বীপ কুঞ্জ রয়েছে, সব গুলো দিয়ে যদি সমুদ্রকে ভরাট করার চেষ্টা করা হয় তবুও তার একভাগও সম্ভব হবে না।

বরং পুরো পৃথিবী দুই মাইল পর্যন্ত সমুদ্রের গভীরে তলিয়ে যাবে, এতটাই গভীর হয় সমুদ্র । কি লুকিয়ে আছে এই অপার রহস্যে গেরা জলরাশির ভিতরে ? চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক পৃথিবীর সব মহাসাগর সম্পর্কে।

মহাসাগর কয়টি ও কি কি

মহাসাগর বা মহাসমুদ্র, মহাসিন্ধু অতি প্রকাণ্ড ও লবণযুক্ত বিপুল জলরাশি যা পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে তাকে মহাসাগর বলে । স্বীকৃত ৫ টি মহাসাগর হলো
  • প্রশান্ত মহাসাগর
  • আটলান্টিক মহাসাগর
  • ভারতীয় মহাসাগর
  • আর্টিক মহাসাগর
  • দক্ষিণ মহাসাগর
মহাসাগরগুলি একত্রে পৃথিবীর মোট আয়তনের (৩.৬১×১০১৪ বর্গ মিটার) প্রায় ৭০.৯% স্থান দখল করে আছে। সেই সাথে পৃথিবীর মোট আয়তনের প্রায় ৭০.৯% জল দ্বারা বেষ্টিত। যা পাচটি মহাসাগরে বিভক্ত। এবং এ মহাসাগর গুলোতে পৃথিবীর ৯৭% জল রয়েছে। তবে সাগরের এ লবনাক্ত পানি পান করার উপযুক্ত নয়।

কেননা এর গড় লবণাক্ততা প্রায় ৩ থেকে ৩.৫% হয়ে থাকে। সাধারনত মহাসাগরের গড় গভীরতা প্রায় ১০ হাজার ফুটেরও বেশি। তবে এর সবচেয়ে গভীরতম স্থানটি হলো মারিয়ানা ট্রেঞ্চ, যার গভীরতা ৩৬ হাজার ফুট। এছাড়াও হাজারো প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রানীদের আবাসস্থল এটি। অবস্থানের ভিত্তিতে পৃথিবীতে মোট পাঁচটি মহাসাগর রয়েছে।

যেগুলো হল: প্রশান্ত, আটলান্টিক, ভারত, উত্তর এবং দক্ষিণ মহাসাগর। তো আজকে আমরা জানব, পৃথিবীর ৫টি মহাসাগর সম্পর্কে।

প্রশান্ত মহাসাগর এর গভীরতা কত?

প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবীর মহাসাগর গুলোর মধ্যে একটি। প্রশান্ত মহাসাগরের আয়তন ১৬,৫২,৫০,০০বর্গকিলোমিটার। প্রশান্ত মহাসাগর টি উত্তরে উত্তর মহাসাগর সুমেরু মহাসাগর থেকে দক্ষিণ মহাসাগর অ্যান্টার্কটিকা পযর্ন্ত বিস্তৃত। এর পশ্চিম সিমান্তে রয়েছে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া এবং পূর্ব সীমান্তে রয়েছে আমেরিকা।

প্রশান্ত মহাসাগর

বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামরিক শক্তির এক গুরুত্বপূর্ন স্থান প্রশান্ত মহাসাগর। বিশ্বের ৫ টি মহাদেশ এই মহাসাগরের তীরে অবস্থিত। প্রশান্ত মহাসাগরের আয়তন সমগ্র বিশ্বের ৩ ভাগের ১ ভাগ। পৃথিবীর গভীরতম এই মহাসাগরে ছড়িয়ে আছে বহু রহস্যময় বৈচিত্র।

প্রশান্ত মহাসাগর তীরে আমেরিকা, চীন ও উত্তর কোরিয়ার মত দেশ গুলো অবস্থিত হওয়ায়, এই সমুদ্রসীমায় সবচেয়ে বেশি সামরিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরের যৌথ আয়তনের প্রায় সমান প্রশান্ত মহাসাগরের একক আয়তন। পৃথিবীর মহাসাগরগুলির ৫০% এরও অধিক পানি এই মাহাসাগর ধারন করে।
এর গড় গভীরতা ৪৮২০ মিটার বা ১৪০৪০ ফুট এবং আয়তন ১৭৯,৬৭০,০০ বর্গ কিলোমিটার বা ৬,৯৩,৭০,০০০ বর্গ মাইল। জলভাগের পরিমান ৭২৪৩৩০ কিউবিক মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। প্রশান্ত মহাসাগরের উকূলভাগ কিছুটা সরল ও অভগ্ন এবং বিভিন্ন শ্রেণীর দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্চের সংখ্যা বেশী। ছোট-বড় মিলে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপের সংখ্যা বিশ হাজারেরও বেশী।

জাপান, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপপুঞ্জ প্রশান্ত মহাসাগরের বৃহৎ দ্বীপাঞ্চল। এ ছাড়া উত্তরে এলিউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ চীনের দক্ষিনে তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া সংলগ্ন পাপুয়া নিউগিনি, ফিজি ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জসহ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) পলিনেশীয়,

মেলানেশীয় ও মাইক্রোনেশীয় আগ্নেয় দ্বীপমালা প্রশান্ত মহাসাগরকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করে তুলেছে। তলদেশের অসংখ্য আগ্নেয়গিরি সমুদ্র সমতল ভেদ করে ক্ষুদ্র দ্বীপাঞ্চল সৃষ্টি করেছে যা' প্রশান্ত মহাসাগরকে জালের ন্যায় ঘিরে রেখেছে। ঐ দ্বীপমালা প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা (Firy ring of pacific) বলে আখ্যায়িত।

মহাসাগরের পশ্চিম-দক্ষিণ উপকূলে বৃহৎ প্রবাল প্রাচীর (আস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকুলে) ও নিউজিল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ বিশেষ উল্লেখ্য। প্রশান্ত মহাসাগরের সমুদ্র খাতগুলিও অত্যান্ত গভীর। তন্মধ্যে ম্যারিয়ানা খাত (১১০৩৩ মিটার) পৃথিবীর গভীরতম। প্রশান্ত মহাসাগরের সার্বিক বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে বর্ণিত হ'লঃ

আকার-আয়তন:

প্রশান্ত মহাসাগর ও তার সংলগ্ন সাগর- উপসাগর পৃথিবীর মোট আয়তনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ। বেরিং প্রণালী থেকে দক্ষিনে এডেয়ার অন্তরীপ (এন্টার্কটিকা) পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য ১৪৮৮০ কিলোমিটার। নিরক্ষরেখা বরাবর এর বিস্তার সর্বাধিক (১৬০০০ কিলোমিটার)।

গড় গভীরতা (Average depth) : গড়ে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতা ৪৮২০ মিটার (প্রাগুক্ত)। ৭% এলাকার গভীরতা ১০০০ মিটারের কম। অন্যান্য মহাসাগর অপেক্ষা এর গড় গভীরতা অনেক বেশী।

দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ:

 প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে। জাপান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং উত্তরের এলিউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ ছাড়া
প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় দ্বীপমালাকে নিম্নোক্ত তিনটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়।
  • মেলানেশিয়া : সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, ফিজি, নিউ হেব্রাইডিজ, নিউ ক্যালিডোনিয়া, চেষ্টারফিল্ড দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি।
  • মাইক্রোনেশিয়া : ক্যারোলিন, মার্শাল, গিলবার্ট, অ্যালিস্ট, কিারবাতি, নাউরু প্রভৃতি।
  • পলিনেশিয়া : ফনিক্স দ্বীপপুঞ্জ, তাহিতি, সামোয়া, টোঙ্গা, লাইন দ্বীপপুঞ্জ, কুক ও ওয়াশিংটন দ্বীপ তোয়ামোতু ও নুকুহিতা দ্বীপ প্রভৃতি পলিনেশীয় দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্ভূক্ত।
উপরোক্ত তিনটি প্রধান দ্বীপবলয় ছাড়াও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, গুয়াম ও ম্যারিয়ানা প্রশান্ত মহাসাগরের সুপ্রসিদ্ধ আগ্নেয় দ্বীপাঞ্চল।

সাগর উপসাগর:

পশ্চিম উপকূলে সাগর- উপসাগরের সংখ্যা বেশী। জাপান সাগর, ওখটস্ক সাগর, বেরিং সাগর, পীত সাগর, উত্তর ও দক্ষিন চীন সাগর, ফিলিপাইন সাগর, সুলু সাগর, সেলিবিস সাগর, শ্যাম উপসাগর, টাংকিং উপসাগর প্রভৃতি এই উপকূলের উল্লেখযোগ্য সাগর (Sea) ও উপসাগর।

এ'ছাড়া আস্ট্রেলিয়া উপকূলে তাসমান সাগর,কোরাল সাগর, কার্পেন্টেরিয়া উপসাগর, পূর্ব উপকূলে আলাস্কা উপসাগর, ক্যালিফের্নিয়া উপসাগর প্রভৃতি উল্লেখ করার মত।

মহীসোপান :

 পূর্ব উপকূলের তুলনায় পশ্চিম উপকুলে মহীসোপান অনেক প্রশস্ত। পূর্ব উপকুল বরাবর রকি-আন্দিজ পর্বতমালার অবস্থানের কারনে মহীসোপান সংকীর্ণ। পূর্ব উপকূলে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত মহীসোপানের বিস্তার থাকলেও পশ্চিম উপকুলে ১৫০-১৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মহীসোপানের বিস্তৃতি আছে। পীত সাগর, জাপান সাগর প্রভৃতি মহীসোপানের উপরই সৃষ্ট।

অন্তঃসাগরীয় শৈলশিরা:

প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বভাগ পশ্চিমভাগ অপেক্ষা পূর্বভাগে শৈলশিরার পরিমাণ বেশী। এর মধ্যে অলব্রাটস মালভূমি, প্যাসফিক- এন্টার্কটিক শৈলশিরা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

মহাসাগর পর্যঙ্ক:

 মহাসাগরীয় পর্যঙ্কগুলির মধ্যে এলিউশিয়ান পর্যঙ্ক বা বেসিন, ক্যারোলিনা বেসিন, ফিজি বেসিন, দক্ষিণ-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় বেসিন প্রভৃতি উল্লেখ্য।

মহাসাগরীয় খাত:

প্রশান্ত মহাসাগরে পৃথিবীর গভীরতম খাতগুলি অবস্থিত। গভীরতম খাত ম্যারিয়ানা (১,১০,৩৩ মিটার) ছাড়াও মিন্দানাও বা ফিলিপাইন খাত (১০৪৭৫ মিটার), এলড্রিচ খাত (১০,৮৮২ মিটার), কিউরাইল খাত (১০৪৯৮) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরতা কত

সাগর বা মহাসাগর অতি প্রকাণ্ড ও লবণযুক্ত বিপুল জলরাশি, যা পৃথিবীতে বেষ্টন করে আছে। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ওশান যার উৎপত্তি প্রাচীন গ্রিক শব্দ থেকে। এই সব প্রকান্ড জলধারার মধ্যে অন্যতম আটলান্টিক মহাসাগর। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহতম এই মহাসাগরটি আমেরিকাকে ইউরেশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে বিভক্ত করেছে। যার মোট আয়তন পুরো পৃথিবীর পাঁচ ভাগের এক ভাগ।

বিজ্ঞানীদের মত অনুসারে পুরাতন পৃথিবী ভেঙে নতুন পৃথিবী সৃষ্টির পেছনে রয়েছে এই মহাসাগরের হাত।বিজ্ঞানীদের কাছে আটলান্টিক রহস্যের মহাপ্রাচীর। যে মহাসাগর মানুষের কাছে আবিষ্কারের পর থেকে কৌতুহলের মূল কেন্দ্র বিন্দু হয়ে রয়েছে। যে কৌতুহলের প্রয়াসেই মানুষ বার বার পাড়ি জমিয়েছে এই মহাসাগরে।

চারটি মহাদেশ জুড়ে বিস্তৃত আটলান্টিক মহাসাগর বিশ্ব বানিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের ৫টি মহাদেশ ও শতাধিক দেশ আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত। আটলান্টিক মহাসাগরের রহস্যময় বৈচিত্রতা বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছে এখনো এক বিষ্ময়।

আটলান্টিক তীরে ইউরোপ, আমেরিকার মত বিশ্বপরাশক্তিদের অবস্থান হওয়ায়, এ সাগরের রাজনৈতিক অর্থনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। আটলান্টিক মহাসাগরের গড় গভীরতা ৩,৬৪৬ মিটার(১১,৯৬২ ফুট) এবং সর্বাধিক গভীরতা পুয়ের্তো রিকো খাতের মিলওয়াকি গহ্বর ৮,৩৭৬ মিটার(২৭,৪৮০ ফুট)।

আটলান্টিক মহাসাগর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাধার (Water mass)। এর মধ্যবর্তী শৈলশিরা 'S' এর ন্যায়। এর উপকূলভাগের আকারও তদ্রুপ। আটলান্টিক মহাসাগরের মহীসোপানগুলি যেমন সৃবিস্তৃত তেমনি এর দ্বীপাঞ্চলগুলির বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এর গভীরতা প্রশান্ত মহাসাগরের তুলনায় কম। প্রশান্ত মহাসাগরের সার্বিক বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ

আকার-আয়তনঃ

 আটলান্টিক মহাসাগর পৃথিবীর এক ষষ্ঠাংশ এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে যা' প্রশান্ত মহাসাগরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক। এর আয়তন প্রায় ৮২ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। ৩৫° দক্ষিন অক্ষাংশ বরাবর এর বিস্তার সর্বাধিক (৬০০০ কি. মি)। এর দক্ষিনাংশ আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং উত্তরাংশ (নিরক্ষরেখার উত্তরে) ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা দ্বারা বেষ্ঠিত। 

দ্বীপ-দ্বীপপুঞ্জঃ

বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও আয়ারল্যান্ড মহীসোপানের উপর সৃষ্ট। গ্রীনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড টেলিগ্রাফ মালভূমির উপর এবং পশ্চিম ভারতীয় (West Indies) দ্বীপপুঞ্জ বা ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ উত্তর ও দক্ষিন আমেরিকার মধ্যবর্তী স্থানে সৃষ্ট। আইসল্যান্ড ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের অধিকাংশ আগ্নেয়জাত।

এ'ছাড়া মরক্কোর নিকট ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জ, আফ্রিকার অদূরবর্তী সেল্টহেলেনা, অসেনসিওন, এলবা, দক্ষিন আটলান্টিকের ফকল্যান্ড, উইডেল, দক্ষিন জর্জিয়া, স্যান্ডউইচ, উত্তর আটলান্টিকের বারমুদা, মদিরা, রোমানসে , ফোরো দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি উল্লেখ করার মত।

প্রান্তদেশীয় সাগর-উপসাগরঃ

মহাসাগরের দক্ষিনাংশে সাগর-উপসাগরের সংখ্যা কম বা প্রায় শুন্য। আর্জেন্টিনা উপকুলে সান জর্জ উপসাগর ও সান মাটিয়াস উপসাগর ছাড়া উল্লেখ করার মত তেমন কিছু নেই। উত্তর আটলান্টিকে যথেষ্ট সাগর- উপসাগর রয়েছে। তন্মধ্যে উত্তর সাগর, বাল্টিক সাগর অগভীর মহীসোপানে অবস্থিত। এদের সর্বোচ্চ গভীরতা ২০০ মিটার।

ডেনমার্কের নিকট সর্বোচ্চ মাত্র ২০ মিটারের মত গভীরতা পরিমাপকৃত হয়েছে। বাল্টিক সাগর সংলগ্ন বোথনিয়া উপসাগর (Gulf of Bothnia), ফিনল্যান্ড উপসাগর (Gulf of Finland), বৃটেন ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যবর্তী আইরিস সাগর, স্পেন ও ফ্রান্সের উপকূলবর্তী বিস্কে উপসাগর প্রভৃতি ইউরোপের উল্লেখযোগ্য সাগর-উপসাগর।

ইউরোপ ও অফ্রিকার মধ্যবর্তী ভূ-মধ্যসাগর জিব্রাল্টর প্রণালী দ্বারা আটলান্টিকের সাথে সংযুক্ত। ঐ স্থানে এর গভীরতা ৪০০ মিটারের মত হলেও গ্রীসের ক্রীট দ্বীপের নিকট এর গভীরতা ৫০৬৬ মিটার রেকর্ডকৃত হয়েছে। ভূমধ্যসাগর থেকে আরও অভ্যন্তরে তুরষ্ক, বাল্টিক প্রজাতন্ত্র ও ইউক্রেনের অভ্যন্তরে কৃষ্ণ সাগরের (Black sea) অবস্থান।

এটা দার্দেনেলিস প্রণালী, মর্মর সাগর ও বসফরাস প্রণালী দ্বারা ভূমধ্যসাগরের সাথে যুক্ত। এ'ছাড়া ভূমধ্যসাগর সংলগ্ন ইউরোপে এজিয়ান সাগর, অ্যাড্রিয়াটিক উপসাগর, আইওনিয়ান সাগর, টীরেনিয়ান সাগর, নিয় উপসাগর, জেনোয়া উপসাগর প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। তবে তারা প্রকৃতপক্ষে ভূমধ্যসাগরেরই অংশ।

আফ্রিকা উপকূলে উত্তর আটলান্টিকে গিনি উপসাগর ছাড়া তেমন উল্লেখযোগ্য সাগর-উপসাগর নেই। আমেরিকান উপকূলে ক্যারিবিয়ান সাগর, ল্যাব্রাডর সাগর, গ্রীনল্যান্ড সাগর, হাডসন উপসাগর, বেফিন উপসাগর, মেক্সিকো উপসাগর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য সাগর-উপসাগর।

এদের গড় গভীরতা ২০০ মিটারের মত হলেও মেক্সিকো উপসাগর ও ক্যারিবিয়ান সাগরের সর্বোচ্চ গভীরতা কার্যক্রমে ৪১৬০ মিটার এবং ৭৯০৭ মিটার।

মহীসোপানঃ

 উত্তর আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকুল এবং উত্তর পশ্চিম ইউরোপের উপকূল বরাবর বিশ্বের প্রশস্ততম মহীসোপানগুলির অবস্থান। গড় প্রশস্ততা ঐসব স্থানে ২৫০-৪০০ কিলোমিটারের মত। এদের গভীরতা সর্বোচ্চ ২০০ মিটারের মধ্যে। তবে ইউরোপীয় উপকূলের কিছু কিছু অগভীর সাগর ১৫-২০ মিটারের মত মাত্র গভীর।

মহাসাগরীয় শৈলশিরাঃ

মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা S এর মত উত্তর দক্ষিনে প্রলম্বিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ৩০০০ মিটার। এর উত্তরাংশ বিস্তৃত হয়ে টেলিগ্রাফ মালভূমি গঠন করেছে। টেলিগ্রাফ মালভূমির অবস্থান গ্রীনল্যান্ডের দক্ষিনে আফ্রিকা থেকে আমেরিকান উপকুল পর্যন্ত।

টেলিগ্রাফ মালভূমির উত্তরাংশ উইভিল-থমসন শৈলশিরা নামে পরিচিত যার অবস্থান স্কটল্যান্ড ও আইসল্যান্ডের মধ্যবর্তী অংশে। দক্ষিন আটলান্টিকে এর নাম চ্যালেঞ্জার শৈলশিরা এবং টেলিগ্রাফের দক্ষিন অংশের নাম ডলফিন শৈলশিরা।

দক্ষিনাংশের তুস্তান-দা-কুনহা দ্বীপের নিকট থেকে উত্তর পূর্বদিকে প্রলম্বিত চ্যালেঞ্জারের শাখা ওয়ালভিস শৈলশিরা এবং পশ্চিম দিকের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ রিওগ্রান্ড শৈলশিরা নামে পরিচিত।

পর্যঙ্ক খাত

উত্তর আটলান্টিকের ল্যাব্রাডর বেসিন, কেপ ভার্দি,সিয়েরা লিওন ও গিনি বেসিন, মধ্য ও দক্ষিনাংশের ব্রাজিল, আগুলহাস, আর্জেন্টেনিয়ান, রোমানসে বেসিন প্রভৃতি পর্যঙ্ক আবিষ্কৃত হয়েছে। আটলান্টিকে গভীর খাতের সংখ্যা খুব কম এবং গভীরতাও প্রশান্ত মহাসাগরের মত নয়।

পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে পুয়েটরিকো ও কেম্যান খাত, নিরক্ষরেখর উপর রোমানসে খাত, হর্ণ অন্তরীপের পূর্বে স্যান্ডউইচ খাত প্রভৃতি উল্লেখ করার মত আর্টলান্টিক মহাসাগরীয় সমুদ্রখাত।

আটলান্টিক মহাসাগরের সবচেয়ে গভীরতম স্থানের নাম কি

পুয়ের্তো রিকো খাতটি ক্যারিবিয়ান সাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যবর্তী সীমানায় অবস্থিত। আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরতম এই খাতটি ৮০০ কিলোমিটার (৪৯৭ মাইল) দীর্ঘ এবং এর সর্বোচ্চ গভীরতা ৮,৩৭৬ মিটার (২৭,৪৮০ফুট)।

ভারত মহাসাগর

ভারত মহাসাগর তৃতীয় বৃহত্তম জলাধার। এটির উত্তরাংশ মূলতঃ আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর, আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন ক্ষুদ্র প্র-উপসাগরগুলি দ্বারা আচ্ছাদিত। আফ্রিকার পূর্ব উপকূল থেকে নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিনে নিরক্ষরেখার উত্তরে মাত্র ৭০ অক্ষাংশ পর্যন্ত মূল ভারত মহাসাগরের অবস্থান। এর অধিকাংশই দক্ষিন গোলার্ধে অবস্থিত।

ভারত মহাসাগরের বৈশিষ্টাবলী নিম্নে বিবৃত করা হ'লঃ

অবস্থান

পশ্চিম হতে পূর্বে আফ্রিকা আস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত এবং উত্তরে এশিয়ার দক্ষিন- পশ্চিম ও দক্ষিন উপকুল পর্যন্ত এর বিস্তার। দক্ষিনাংশ প্রশান্ত ও আটলান্টিকের সাথে মিলিত হয়েছে।

আকার- আয়তন

ভারত মহাসাগরের উত্তরাংশ স্থল বেষ্ঠিত ও সংকীর্ণ এবং দক্ষিনাংশ ক্রমশঃ প্রসারিত ও উন্মুক্ত। এর আয়তন ৭৪৯৩০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এবং জলভাগের পরিমাপ ২৯২৩১০০০০ কিউবিক কিলোমিটার। জলভাগের মোট ২০% জুড়ে ভারত মহাসাগরের অবস্থান।

গভীরতা

ভারত মহাসাগরের ৬০% অঞ্চলের গভীরতা ৪০০০-৬০০০ মিটারের মধ্যে। গড় গভীরতা ৩৯৬০' মিটার।

দ্বীপ ও দীপপুঞ্জঃ

ভারত মহাসাগরে মাদাগাস্কার, শ্রীলঙ্কা, সুমাত্রা ও জাভার মধ্যমাকৃতির দ্বীপ রয়েছে। প্রশান্ত ও আটলান্টিকের মত দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জের সমাবেশ এখানে নেই। ক্ষুদ্র দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সাকোত্রা, চ্যাগোস, বাহরিন, জিঞ্জিরার, কমরো, দিয়াগো গার্সিয়া, মরিশাস দ্বীপপুঞ্জ, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, মালদ্বীপ, লাক্ষাদ্বীপ, সেচিলিস প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য।

প্রান্তদেশীয় সাগর-উপসাগর

ভারত মহাসাগরে সাগর- উপসাগরের সংখ্যা খুব কম। দক্ষিনাংশ উন্মুক্ত এবং স্থলভাগ না থাকায় সাগর- উপসাগর সৃষ্টি হয়নি। উত্তরাংশে বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর ও আন্দামান সাগর ব্যতীত অন্যান্য সাগর- উপসাগর অতি ক্ষুদ্র। তন্মধ্যে লোহিত সাগর, পারস্য উপসাগর, এডেন উপসাগর, ওমান উপসাগর, কচ্ছ উপসাগর, মান্নার উপসাগর, কাম্বে উপসাগর ও মাত্তাবান উপসাগরের নাম উল্লেখযোগ্য।

মহীসোপান

বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের মহীসোপান ৬০০ কি.মি. পর্যন্ত প্রশস্ত। তবে ইন্দোনেশিয়া আস্ট্রেলিয়া ও এন্টার্কটিকার কাছে মহীসোপান সংকীর্ণ। আফ্রিকার উপকূলে মহীসোপান ততটা প্রশস্ত না হলেও খুব বেশী সংকীর্ণ ও নয়।

শৈলশিয়া

মধ্য ভারত মহাসাগরে ভারতের লাক্ষাদ্বীপের নিকট থেকে এন্টার্কটিকা পর্যন্ত সুবিস্তৃত মধ্য ভারত মহাসাগরীয় শৈলশিরা ভারত মহাসাগরকে দু'ভাগে ভাগ করেছে। এর উত্তরাংশ চ্যাগোস-লাক্ষা মধ্যাংশ সেন্টপল এবং দক্ষিনাংশ আমষ্টারডাম সেন্টাপল শৈলশিরা নামে পরিচিত। ভারত মহাসাগরের অন্যান্য শৈলশিরাও তাদের অবস্থানসমূহ হলঃ
  • সাকোত্রা-চ্যাগোস শৈলশিরাঃ সোমালিয়ার গুরার্দাফুই অন্তরীপের পূর্বদিকে হতে দক্ষিন-পূর্বের চ্যাগোস দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত;
  • সেচিলিস শৈলশিরাঃ সাকোত্রা চ্যাগোস শৈলশিরার সাথে সমান্তরালভাবে অবস্থিত;
  • প্রিন্স এডওয়ার্ড ক্রোজেট শৈলশিরাঃ মাদাগাস্কার দ্বীপের দক্ষিন থেকে দক্ষিন দিক পর্যন্ত বিস্তৃত।

পর্যঙ্ক ও খাত

ভারত মহাসাগরের নাটাল, মাদাগাস্কার, কোকো-কিলিং, ওমান, আরব, সোমালী ও আন্দামান পর্যঙ্ক বা বেসিন বিশেষভাবে উল্লেখ্য। বেসিনগুলি উল্লেখিত অঞ্চলগুলির উপকুল বরাবর অবস্থান করছে। ভারত মহাসাগরে গভীর সমুদ্রখাত নেই বললেই চলে। জাভা দ্বীপের নিকট জাভা খাত (৭১২৫ মিটার) মহাসাগরের গভীরতম অংশ।

আর্কটিক মহাসাগরের আয়তন কত

উত্তর মেরু অঞ্চলে বৃত্তাকার স্থল বেষ্ঠিত সবচে' ক্ষুদ্র মহাসাগরের নাম আর্কটিক বা উত্তর মহাসাগর। মহসাগরীয় জলরাশির মাত্র ৪% জুড়ে এর অবস্থান। মহাসাগরের বৈশিষ্ট্যাদি নিম্নরূপঃ

অবস্থান ও আয়তন

এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার উত্তরাংশের মধ্যে বৃত্তাকারে অবস্থান করছে এই মহাসাগর। আয়তনে এটি প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় ১/১২ অংশের সমান। এর আয়তন ১৪০৯০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এর জলরাশির পরিমান ১৭১০০,০০০ কিউবিক বর্গ কিলোমিটার। এর উপর প্রায় সর্বদা ৫ মিটার পুরু বরফাচ্ছাদন থাকে।

গভীরতা

এর গড় গভীরতা ১২০৫ মিটার। গভীরতম অংশ ৬১৫২ মিটার গভীর।

দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ

উত্তর মহাসাগরের দ্বীপগুলোর মধ্যে নেভা জেম্বালা, সের্ভানয়া জেম্বালা, স্পিটস বার্জেন, কানাডার সর্ব উত্তরের দ্বীপমালা, স্ক্যান্ডিনেভীয়া ও সাইবেরিয়ার উত্তরের ক্ষুদ্র দ্বীপাঞ্চলগুলি অন্তর্ভূক্ত।

প্রান্তদেশীয় সাগর-উপসাগর

আলাস্কা সংলগ্ন বিউফোর্ট সাগর, সাইবেরিয়া সংলগ্ন পূর্ব সাইরেরিয়ান সাগর, স্ক্যান্ডিনেভিয়া সংলগ্ন কারা সাগর, উত্তর রাশিয়ার শ্বেত সাগর প্রভৃতি উত্তর মহাসাগরের প্রান্তদেশীয় সাগর। এ'ছাড়া ওয়াডেল সাগর, বার্নেট সাগর, লাপটেভ সাগর, নরওয়ে সাগর, লিংকন সাগর প্রভৃতির নামও উল্লেখযোগ্য।

মহীসোপান

উত্তর মহাসাগরের মহীসোপান পৃথিবীর প্রশস্ততম। মহীসোপানের সর্বাধিক বিস্তার এখানে ১২০০ কিলোমিটার (বোর্নেট সাগরে) এবং গভীরতা ২০০- ৪০০ মিটার। হৈমবাহিক ক্রিয়ার মহীসোপানে অনেক ইউ আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি হয়েছে।

আন্তঃ সাগরীয় শৈলশিরা

উত্তর ইউরোপের ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জের নিকট থেকে ফ্যারো-আইসল্যান্ড এবং নরওয়ের স্পির্টস বার্জেনের নিকট থেকে স্পিটসবার্জৈন নামে দু'টি শৈলশিরা উত্তর মহাসাগরে প্রবেশ করেছে।

পর্যঙ্ক

উত্তর মহাসাগরে হিমাচ্ছাদন থাকায় এর পর্যঙ্ক সম্পর্কে তেমন বিস্তৃত গবেষনা হয়নি। এর গভীরতম অংশ হচ্ছে ইউরেশিয়া বেসিন বা পর্যঙ্ক (৫৪৫০ মিটার)। অন্যান্য পর্যঙ্কগুলির মধ্যে গ্রীনল্যান্ড বেসিন, ও জন মেইন বেসিনের নাম উল্লেখ করা মত।

এদের গভীরতা ২০০০-৪০০০ মিটারের মধ্যে। উত্তর মেরু বিন্দুকে বেষ্ঠন করে আছে উত্তর মেরু পর্যঙ্ক (North pole basin)। এই বেসিন বা পর্যঙ্ক বিভিন্ন স্থানে ১৮০০-৩৬০০ মিটার গভীর। এর বর্ধিতাংশ কানাডার আলাস্কা সন্নিহিত বিউফোর্ট সাগরে দিকে বিস্তৃত।

এন্টার্কটিক বা দক্ষিণ মহাসাগর

২০০০ সালে 'International Hydrographic organization' কর্তৃক দক্ষিন মহাসাগরের অস্তি ত্ব অস্বীকার করে তাকে প্রশান্ত আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরের মধ্যে বন্টন করা হয় (Hossain 2007)। দক্ষিণ বা এন্টার্কটিক মহাসাগর বলতে ৬০° দক্ষিন অক্ষাংশ পরবর্তী দক্ষিন গোলার্ধর সমুদয় জলরাশিকে বুঝানো হত।

'Antaractic polar Frontal zone' বলে একটি অঞ্চল উত্তরে উষ্ণ পানির সাথে দক্ষিনের বরফময় পানির পার্থক্য নির্দেশ করে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে এন্টার্কটিক মহাসাগরের অস্তিত্ব অস্বীকার করা যুক্তিযুক্ত নয়।

এন্টার্কটিক বা দক্ষিন মহাসাগরের (কুমেরু মহাসাগর) অবস্থান প্রশান্ত, আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরের দক্ষিনে এবং এর দক্ষিনাংশে বৃত্তাকারে অবস্থান করছে চির তুষারবৃত বিশাল এন্টার্কটিকা মহাদেশ। মহাসাগরের আয়তন ৭৮,৪৮,৩০০ লক্ষ বর্গমাইল বা ২০.৩২৭ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার।

কুমেরু মহাসাগরের উপকূলভাগ অভগ্ন হওয়াতে মহীসোপান সংকীর্ণ এবং সাগর উপসাগরও তেমন সৃষ্টি হয়নি। উল্লেখযোগ্য সাগরগুলির মধ্যে রস সাগর, স্কসিয়া সাগর, ওয়াডেল সাগর, ডেভিস সাগর, প্রমুন্ডসেন সাগর ও প্রিডন উপসাগর অন্যতম। মহাসাগরের গড় গভীরতা ৪০০-৫০০ মিটার বা ১৩১০০ - ১৬,৪০০ ফুট। মহাসাগরে তেমন গভীর কোন খাত নেই।

দক্ষিন স্যান্ড উইচ খাতের দক্ষিনাংশ মহাসাগরের গভীরতম স্থান (৭২৩৫ মিটার)। দক্ষিন বা কুমেরু মহাসাগরের একটি উন্নত ও বিস্তৃত শৈলশিরা ভারত মহাসাগরের বিপরীত থেকে বিস্তৃত হয়ে অমষ্টারডাম সেন্টপল মালভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এ'ছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরের প্যাসিফিক-এন্টার্কটিক শৈলশিরা কুমেরু মহাসাগর হয়ে এন্টার্কটিকার সাথে যুক্ত হয়েছে।

দক্ষিন আমেরিকার দক্ষিনে এন্টার্কটিকার গ্রাহামল্যান্ডের একটি প্রসারিত অংশ রয়েছে। এর আশেপাশে সেটল্যান্ড, আর্কনী, এলিফ্যান্ট ও জর্জ দ্বীপের অবস্থান। এ'ছাড়া আটলান্টিকের দক্ষিনে এন্টার্কটিকার পালমারল্যান্ড উপকূলে আলেকজান্ডার দ্বীপ, গ্রাহামল্যান্ড উপকূলে এন্ডার্সচাক দীপপুঞ্জ, সামিথ দ্বীপ,

 প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিনে রস সাগর মধ্যস্থ রুজভেল্ট, ফ্রাঙ্কলিন, কোলম্যান ও পজেশন দ্বীপ প্রভৃতি সুমেরু মহাসাগরের উল্লেখযোগ্য দ্বীপভূমি।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে সমগ্র পৃথিবীতে মহাসাগর কয়টি ও কি কি এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিষয়টিতে মহাসাগর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি তথ্যগুলো আপনার জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করবে। পাশাপাশি এই ধরনের বিষয়বলি থেকে বিভিন্ন ধরনের ভর্তি পরীক্ষা ও চাকরি পরীক্ষাতেও প্রশ্ন এসে থাকে।

এই আর্টিকেল সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন, মতামত কিংবা পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। এতে করে অন্যরাও উপকৃত হবে। আর যদি পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন কিংবা সহপাঠীদের শেয়ার করতে পারেন যাতে করে তারাও মহাসাগর গুলো সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য জানতে পারে।

আর এই ধরনের জ্ঞানমূলক, বিজ্ঞানমূলক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। আমরা এই ধরনের পোস্ট জনস্বার্থে প্রতিনিয়ত প্রকাশ করে থাকি। তাই আরো অন্য কোন জ্ঞানমূলক আর্টিকেল পড়ার অনুরোধ জানিয়ে এই পোস্টটি সমাপ্ত করছি।

পরিশেষে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url