জীবনানন্দ দাশের কবিতা

জীবনানন্দ দাশ হলেন বাংলার বিখ্যাত কবিদের একজন। বাঙালি হিসেবে তার সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত। চলুন জেনে নেয়া যাক জীবনানন্দ দাশের জন্ম ও জীবনি সম্পর্কে।
জীবনানন্দ দাশের কবিতা

ভুমিকা

"সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবি"- কবিত্বের এই অহংকারটুকু আশ্রয় করে যিনি রবীন্দ্র পরবর্তী বাংলা কাব্য সাহিত্যেকে নতুন পথ দেখিয়েছিলেন তিনি জীবনানন্দ দাশ। রবীন্দ্র অনুকরণ এবং রবীন্দ্র বিরোধিতার যুগে সরাসরি রবীন্দ্র বিরোধিতায় না গিয়ে তিনি রূপময় বঙ্গ- প্রকৃতির নিবিড়তার নিজেকে নিমগ্ন করেছিলেন। ফলস্বরূপ তিনি আধুনিক বাংলা কাব্য সাহিত্যকে উপহার দিয়েছিলেন রূপময় এই বঙ্গ-প্রকৃতির মাঝে মানুষ-প্রকৃতি-প্রেম-নৈরাশ্য এবং ইতিহাসের এক স্বতন্ত্র সমীকরণ।

জীবনানন্দ দাশ রচিত কাব্যগ্রন্থ

জীবনানন্দ দাশ রচিত কাব্যগ্রন্থ সমূহের অনেক কবিতা রয়েছে। চলন জেনে নেয়া যাক জীবনানন্দ দাশ কোন কোন কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন এবং সেই কাব্যগ্রন্থের কবিতা গুলো কি কি।
  • ঝরা পালক (১৯২৭)
  • ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬)
  • বনলতা সেন (১৯৪২)
  • মহাপৃথিবী (১৯৪৪)
  • সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮)
  • রূপসী বাংলা (১৯৫৭) মরনোত্তর প্রকাশিত
  • বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১) মরনোত্তর প্রকাশিত, কিন্তু পাণ্ডুলিপিটি জীবদ্দশায় প্রস্তুত করা হয়েছিল।
  • অমিষাশী তরবার (১৯৬৯)
  • সুদর্শনা (১৯৭৩)
  • মনোবিহঙ্গম (১৯৭৯)
  • আলো পৃথিবী (১৯৮১)
  • অপ্রকাশিত একান্ন (১৯৯৯)
  • জীবনানন্দ দাশ রচিত গল্পগ্রন্থ
  • জীবনানন্দ দাশের গল্প' (১৯৭২)
  • জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ গল্প' (১৯৮৯)

জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থর সংক্ষিপ্ত পরিচয়

'ঝরাপালক' (১৯২৭)

  • জীবনানন্দ দাশের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।
  • এই কাব্যগ্রন্থে মোট কবিতার সংখ্যা ৩৫টি।
  • কবিতাগুলি- 'প্রবাসী', 'বঙ্গবাণী', 'কল্লোল', 'কালিকলম', 'বিজলি' প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
  • কাব্যের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার নাম- 'আলেয়া', 'বিবেকানন্দ', 'ওগো দরদিয়া', 'পতিতা' ইত্যাদি।
  • এই কাব্যের প্রথম কবিতা 'আমি কবি -- সেই কবি'। --
  • শেষ কবিতা - 'সারাটা রাত্রি তারার সাথে' ....।
  • এই কাব্যের ভূমিকা কবি নিজেই লেখেন।

'ধূসর পান্ডুলিপি' (১৯৩৬)

  • জীবনানন্দ দাশের দ্বিতীয় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।
  • কাব্যে মোট কবিতা আছে ১৭টি।
  • কাব্যের কয়েকটি কবিতা হল- 'অনেক আকাশ', 'অবসরের গান', 'ক্যাম্পে', 'পাখিরা', 'মৃত্যুর আগে' ইত্যাদি।
  • কাব্যের কবিতাগুলি- ধূপছায়া, কল্লোল, প্রগতি পত্রিকায় প্রকাশিত।
  • কাব্যটি আধুনিক কবি বুদ্ধদেব বসুকে উৎসর্গ করা হয়।

বনলতা 'বসেন' (১৯৪২)

  • জীবনানন্দ দাশের তৃতীয় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।
  • কাব্যে মোট কবিতা আছে ৩০টি।
  • উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতা হল- 'বনলতা সেন', 'হায় চিল', 'শিকার', 'সুদর্শনা', 'শ্যামলী', 'সুচেতনা' ইত্যাদি ।
  • এই কাব্য প্রকাশের বছর কবির পিতা সত্যানন্দ দাশের মৃত্যু হয়।
  • কাব্যের প্রচ্ছদ করেন সত্যজিৎ রায়।
  • বনলতা সেন' কবিতাটি প্রথমে কবির 'মহাপৃথিবী' কাব্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। (এই কাব্যে কবিতাটি স্থান পায় ১৯৫২ সালে)।
  • 'বনলতা সেন' কবিতাটিকে প্রথম প্রকাশ করেছিলেন বুদ্ধদেব বসু তাঁর 'কবিতা' পত্রিকায়।

'মহাপৃথিবী' (১৯৪৪) :-

  • জীবনানন্দ দাশের চতুর্থ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।
  • এই কাব্যগ্রন্থে মোট ৩৫টি কবিতা রয়েছে।
  • উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতা হল 'সিন্ধুসারস', 'আদিম দেবতারা', 'ফিরে এসো', 'আট বছর আগের একদিন', 'ফুটপাথে', 'মনোবীজ' ইত্যাদি।
  • মহাপৃথিবী'র সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতা 'আট বছর আগের একদিন'। *এই কাব্যটি প্রেমেন্দ্র মিত্র ও সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে উৎসর্গ করা হয়।

'সাতটি তারার তিমির' (১৯৪৮)

  • জীবনানন্দ দাশের পঞ্চম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।
  • এই কাব্যগ্রন্থে মোট ৪০টি কবিতা রয়েছে।
  • উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতা হল:-'আকাশলীনা', 'ঘোড়া', 'তিমিরহননের গান', 'সূর্যতামসী', 'নাবিকী', 'সময়ের কাছে' ইত্যাদি।
  • এই কাব্যের - প্রথম কবিতা- 'আকাশ লীনা'; শেষ কবিতা- 'সূর্য প্রতীম'
  • এই কাব্যটি হুমায়ন কবীরকে উৎসর্গ করা হয়।

'রূপসী বাংলা' (১৯৫৭)

  • জীবনানন্দ দাশের ষষ্ঠ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।
  • জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর পর প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
  • জীবনানন্দ এই কাব্যের প্রচ্ছদ নাম ঠিক করেছিলেন 'বাংলার ত্রস্ত নীলিমা'।
  • কাব্যে মোট কবিতা আছে ৭৩টি।
  • এই কাব্যের কবিতাগুলির কোনো শিরোনাম নেই, পরিবর্তে আছে সংখ্যা।
  • বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি', 'আবার আসিব ফিরে', 'আকাশে সাতটি তারা', 'ঘাসের বুকের থেকে কবে আমি পেয়েছি যে আমার শরীর' ইত্যাদি এই কাব্যের কয়েকটি বিশিষ্ট কবিতা।
  • কাব্যটি 'আবহমান বাংলা বাঙালী' কে উৎসর্গ করা হয় ।
  • এই কাব্যটির শেষ ইংরাজি অনুবাদক বিট্রিশ কবি জো উইনন্টার।

'বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১)

  • জীবনানন্দ দাশের সপ্তম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।
  • জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর পর প্রকাশিত দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ।
  • কবির মৃত্যুর পর তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা অশোকানন্দ দাশ ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ) এ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেছিলেন।
  • এই কাব্যের প্রথম কবিতা 'মাঘ সংক্রান্তির রাতে'।
  • শেষ কবিতা - 'হে হৃদয়'।

জীবনানন্দ দাশ কত সালে জন্মগ্রহণ করেন

জীবনানন্দ দাশ অবিভক্ত পূর্ব বাংলার বরিশালের এক ব্রাক্ষ্মন পরিবারে জন্মগ্রহন করেছিলেন । বর্তমানে তা বাংলাদেশের অংশ মধ্যে পড়ে ।তিনি ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি জন্ম গ্রহন করেন।
পিতা সত্যানন্দ দাশ এবং মাতা কুসুমকুমারো দেবীর প্রথম সন্তান ছিলেন ।তারা মোট তিন ভাই বোন ছিলেন ।

জীবনানন্দ দাশের শিক্ষা জীবন

জীবনানন্দ দাশ সাহিত্য জগতের প্রথম পাঠ শেখেন তার মায়ের কাছ থেকে । তার মা কুসুমকুমারি দেবী নিজেও বাড়িতে সাহিত্য চর্চা করতেন। ” আমাদের দেশে হবে , সেই ছেলে কবে / কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে”এই কবিতাটি তার মায়ের রচনা।জীবনানন্দ দাশের পিতা পেশায় ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক, তবে তিনি শুধু শিক্ষকতাই করতেন না,

শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সমাজসেবার কাজও করতেন। এছাড়াও তিনি সমাজের বিভিন্ন ঘটনাকে তুলে ধরার জন্য ব্রহ্মবাদী নামের এক পত্রিকার ও প্রতিষ্ঠা করেন।জীবনানন্দ দাশ বরিশালে তার প্রথম শিক্ষার পাঠ শুরু করেন। ব্রজমোহন স্কুল থেকে তিনি মাধ্যমিক পাশ করেন ১৯১৫ সালে।

১৯১৭ সালে আইএ পাস করেন বিএম কলেজ থেকে এরপর তিনি চলে আসেন কলকাতায় । এখানে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরেজিতে অনার্সে ভর্তি হয় সালটা ছিল , ১৯১৯ এই একই কলেজ থেকে তিনি ইংরেজিতে এমএ পাস করেন ১৯২১ সালে ।পরবর্তীকালে তিনি আইন পড়ার জন্য কলেজে ভর্তি হন যদিও তিনি শেষ পর্যন্ত তা ছেড়ে দেন।

জীবনানন্দ দাসের কর্মজীবন

পেশায় তিনি ছিলেন অধ্যাপক। বিভিন্ন সময়ে তিনি কলকাতার বিভিন্ন কলেজে
অধ্যাপনা করেন। কর্মজীবনে প্রত্যাশা অনুযায়ী যে শান্তির পরিবেশ তিনি চেয়েছিলেন তা তিনি কোনোদিন পাননি। নানান অস্থিরতায় কেটেছে তাঁর কর্মজীবন। প্রবল আর্থিক সংকট বারবার তাঁর জীবন পথে বাধা হয়ে এসেছে।

আর্থিক স্বচ্ছলতা লোভনীয় জীবনযাপনের পরিবর্তে কাব্যচর্চাই ছিল তাঁর জীবনের মূল অভিপ্রায়। তাই শত বাধা বিপত্তির মাঝেও কাব্যচর্চা তিনি ছাড়তে পারেননি। বহুবার দুঃখ করেছেন, কর্মজীবনে স্থিরতা পেলে তিনি আরও অধিক কাব্যচর্চা করতে পারবেন, কিন্তু জীবন তাঁকে সেই শান্তি কোনদিন দেয়নি।

কাব্যিক ভাবধারার উন্মেশ

কাব্যিক ভাবধারার উন্মেশ শৈশব থেকেই কবি জীবনানন্দ দাশ কাব্যিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠেন। বিশেষত কুসুমকুমারী দেবীর সহচার্য ও শিক্ষা তাঁর মনে এক কাবিক ভাবাকাশ।তৈরি করে। এছাড়াও বরিশালের উন্মুক্ত গ্রাম্য প্রকৃতি, পথঘাট, সবুজ গাছপালা, নৈসর্গিক এক মায়াবীয় পরিবেশ তাঁর ভাবনার জগৎ তৈরি করে দেয়।

বঙ্গ-প্রকৃতির লীলাভূমিতে তিনি এতটাই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন যে এই রূপশী বাংলার রুপ ছেড়ে সুবিশাল পৃথিবীর মুখ তাঁর কাছে তুচ্ছ মনে হয়। রূপসী বাংলার অপরূপ রূপের প্রত্যেকটি উপাদান ঘাস, নদী, পুকুড়, পাখি সমস্ত কিছু নিয়েই শুরু হয় তাঁর কাব্যিক যাত্রাপথ। পরবর্তীকালে কলকাতা শহরের জীবন তাঁর কবিমনে বিরাট বদল নিয়ে আসে।

উন্মুক্ত গ্রাম্য প্রকৃতিকে ফেলে এসে নাগরিক জীবনের হাতছানি, বৈভবে পাল্লা দিতে না পেরে কবি জীবনানন্দ দাশ মনে প্রানে একরাশ হতাশা নৈরাশ্য আর অন্ধকারে নিমজ্জিত হন।

কবি প্রতিভার নানা দিক

জীবনের বিভিন্ন সময় তিনি ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেই সমস্ত অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর কবিতায়।

প্রকৃতি
রূপসী বাংলার অপরূপ রূপমাধুর্য, স্নিগ্ধ-শান্তি প্রাণ পেয়েছে তাঁর কবিতায়। প্রকৃতির মধ্যে যে নির্জনতা থাকে, মনোরম নৈসর্গিক আবেদন থাকে কবি জীবনানন্দ তাঁর কবিতায় সেই
আবেদন ফুটিয়ে তুলতে সার্থক হয়েছিলেন।

সমকাল
তৎকালীন যুগের রুক্ষ-কুটিল রূপটি জীবনানন্দের কবিতায় চিত্রকল্পের রীতিতে বারবার উদ্ভাসিত হয়েছে। অস্থির যুগে বিশ্বাস-এর পরিণাম শূন্যতা, এই শূন্যতার অনুভূতির বেদনা তাঁর সমগ্র কাব্যধারাতে চরম রূপ পেয়েছে। এই প্রসঙ্গে তার স্পষ্ট স্বীকারোক্তি-

“প্রেমের সাহস, স্বাদ সপ্ন ল’য়ে বেঁচে থেকে ব্যাথা পাই, ঘৃণা-মৃত্যু পাই।”

যুগপরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের মনে জমে ওঠা প্রত্যেকটি যন্ত্রনা , বিষাদগ্রস্ত মনস্তত্ত্ব, মৃত্যুচেতনা সব মিলিয়ে মানব মনের সীমাহীন অনুভূতির জগতের সমস্ত উপকরণ তাঁর কবিতায় বঞ্চিত হয়নি। তাঁর 'আট বছর আগের একদিন' তুলে ধরেছেন বিষাদগ্রস্ত মানুষের নির্ভেজাল মৃত্যুচেতনা-

প্রেমের অনুভূতি
কবি বাস্তব জীবনে নারী-পুরুষের সাবলীল সম্পর্কে প্রেমের অনুভূতি খুঁজতে গিয়ে পেয়েছিলেন তিক্ততা। সেই যন্ত্রণা নিয়েই তিনি তাঁর কবিতায় প্রেমকে নতুন ভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তাঁর কাছে প্রেম হয়ে উঠেছে যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আধার, অন্ধকার থেকে আলোর নিশান।

দিকভ্রষ্ট নাবিকের কাছে দারুচিনি দ্বীপ যেম ন বেঁচে থাকার আশ্রয়স্থল ঠিক তেমনই তার চোখে প্রেম হয়ে উঠেছে এই নৈরাশ্যের জগতে থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় । তাই 'বনলতা সেন' কবিতায় কবিতায় তাঁর তাঁর প্রেমের প্রেমের অনুভূতিকে অনুভূতিকে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন -

"হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর, তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে। "

উল্লেখযোগ্য পুরস্কার:-


নিখিল বঙ্গ রবীন্দ্র সাহিত্য সম্মেলন পুরস্কার (১৯৫২) সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার (১৯৫৫)

জীবনানন্দের ডাক নাম-

জীবনানন্দের ডাক নাম- মিলু।

জীবনানন্দ দাস মৃত্যুবরন করেন কবে

মৃত্যু- ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ২২ অক্টোবর।

জীবনানন্দ দাসের উপাধি সমূহ

উপাধি- ধূসরতার কবি, তিমির হননের কবি, নির্জনতার কবি এবং রূপসী বাংলার কবি।


জীবনানন্দ দাশ রচিত উপন্যাস  'পূর্ণিমা' (১৯৩১)

 কারুবাসনা' (১৯৩৩)
নিরুপম যাত্রা' (১৯৩৩)
জীবনপ্রণালী' (১৯৩৩)
প্রেতিনীর রূপকথা' (১৯৩৩)
বিভা' (১৯৩৩)৭. 'জলপাইহাটি' (১৯৪৮)
 বাসমতীর উপাখ্যান' (১৯৪৮)
মাল্যবান'
সুতীর্থ'
কল্যাণী' (১৯৯৯)
চারজন' (২০০৪)
সফলতা-নিষ্ফলতা”
জয়ন্তি

জীবনানন্দ দাশের উল্লেখযোগ্য উক্তি

আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তোমাকে দেখার মতো চোখ নেই–তবু,
গভীর বিস্ময়ে আমি টের পাই–তুমি
আজও এই পৃথিবীতে রয়ে গেছ।

বেতের ফলের মতো নীলাভ ব্যথিত তোমার দুই চোখ
খুঁজেছি নক্ষত্রে আমি- কুয়াশার পাখনায়।
চোখে তার যেন শত শতাব্দীর নীল অন্ধকার!

সকল কঠিন সমুদ্রে প্রবাল
লুটে তোমার চোখের বিষাদ ভৎসনা
প্রেম নিভিয়ে দিলাম, প্রিয়।

আশার ঠোঁটের মতো নিরাশার ভিজে চোখ চুমি
আমার বুকের’পরে মুখ রেখে ঘুমায়েছ তুমি!

জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি, বছরের পার-
তখন হঠাৎ যদি মেঠো পথে পাই আমি তোমারে আবার!

তোমার বুকের পরে আমাদের পৃথিবীর অমোঘ সকাল;
তোমার বুকের পরে আমাদের বিকেলের রক্তিল বিন্যাস;
তোমার বুকের পরে আমাদের পৃথিবীর রাত;
নদীর সাপিনী, লতা, বিলীন বিশ্বাস।

প্রেম ধীরে মুছে যায়,
নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়,
হয় নাকি?

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে , ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

 ওই দূর নক্ষত্রের কাছে আজ আর প্রশ্ন নাই,
– মাঝরাতে ঘুম লেগে আছে চক্ষে তার! এলোমেলো রয়েছে আকাশ!৪৭. ওই দূর নক্ষত্রের কাছে আজ আর প্রশ্ন নাই,– মাঝরাতে ঘুম লেগে আছে চক্ষে তার! এলোমেলো রয়েছে আকাশ!

অপরাজিতার মতো নীল হয়ে- আরো নীল- আরো নীল হয়ে
আমি যে দেখিতে চাই;- সে আকাশ… “
 
পৃথিবীর এই ক্লান্ত এ অশান্ত কিনারার দেশে
এখানে আশ্চর্য সব মানুষ রয়েছে।”

 আমি তার উপেক্ষার ভাষা
আমি তার ঘৃণার আক্রোশ
অবহেলা ক’রে গেছি ; যে নক্ষত্র – নক্ষত্রের দোষ
আমার প্রেমের পথে বার-বার দিয়ে গেছে বাধা
আমি তা ভুলিয়া গেছি ;
তবু এই ভালোবাসা – ধুলো আর কাদা – ।

 শরীর রয়েছে, তবু মরে গেছে আমাদের মন!
হেমন্ত আসেনি মাঠে ,- হলুদ পাতায় ভরে হৃদয়ের বন!

 যদি আজ পৃথিবীর ধুলো মাটি কাঁকরে হারাই
যদি আমি চলে যাই
নক্ষত্রের পারে,-
জানি আমি, তুমি আর আসিবে না খুঁজিতে আমারে!

শেষবার তার সাথে যখন হয়েছে দেখা মাঠের উপরে
বলিলাম: ‘একদিন এমন সময়
আবার আসিয়ো তুমি, আসিবার ইচ্ছা যদি হয়!–পঁচিশ বছর পরে!’

 অনেক কমলা রঙের রোদ ছিল;
অনেক কমলা রঙের রোদ;
আর তুমি ছিলে;
তোমার মুখের রূপ কত শত শতাব্দী আমি দেখি না,
খুঁজি না।

 স্থবিরতা, কবে তুমি আসিবে বলো তো।

‘আমাকে খোঁজো না তুমি বহুদিন – কতদিন আমিও তোমাকে
খুঁজি নাকো; – এক নক্ষত্রের নিচে তবু – একই আলো পৃথিবীর পারে
আমরা দুজনে আছি; পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,
প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়।

 মনে হয় শুধু আমি,- আর শুধু তুমি
আর ঐ আকাশের পউষ-নীরবতা
রাত্রির নির্জনযাত্রী তারকার কানে- কানে কত কাল
কহিয়াছি আধো- আধো কথা!

 থমথমে রাত,- আমার পাশে বসল অতিথি,-
বললে,- আমি অতীত ক্ষুধা,-তোমার অতীত স্মৃতি!

তবুও নদীর মানে স্নিগ্ধ শুশ্রূষার জল, সূর্য মানে আলো :
এখনো নারী মানে তুমি, কত রাধিকা ফুরালো।

যে জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা

তোমার মুখের দিকে তাকালে এখনো
আমি সেই পৃথিবীর সমুদ্রে নীল,
দুপুরের শূন্য সব বন্দরের ব্যথা,
বিকেলের উপকন্ঠে সাগরের চিল,
নক্ষত্র, রাত্রির জল, যুবাদের ক্রন্দন সব–
শ্যামলী, করেছি অনুভব।

 শেষবার তার সাথে যখন হয়েছে দেখা মাঠের উপরে-
বলিলাম- ‘একদিন এমন সময়
আবার আসিয়ো তুমি- আসিবার ইচ্ছা যদি হয়-
পঁচিশ বছর পরে।’

 আমি তারে পারি না এড়াতে,
সে আমার হাত রাখে হাতে;
সব কাজ তুচ্ছ হয়,-পণ্ড মনে হয়,
সব চিন্তা – প্রার্থনায় সকল সময়
শূন্য মনে হয়,শূন্য মনে হয়!

 তবু সেদিন
আমার এ পথে তুমি এসেছিলে,- বলেছিলে যত কথা,-
কারণ, তখন তুমি ছিলে বন্ধুহীন;

তবুও নদীর মানে স্নিগ্ধ শুশ্রূষার জল, সূর্য মানে আলো :
এখনো নারী মানে তুমি, কত রাধিকা ফুরালো।

 সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটিরই কথা হয়,
আমাদের মুখ সারা

 তবুও তোমার কাছে আমার হৃদয়। টি রাত্রি মাটির বুকের’পরে!

আজকে রাতে তোমায় আমার কাছে পেলে কথা
বলা যেত; চারিদিকে হিজল শিরীষ নক্ষত্র ঘাস হাওয়ার প্রান্তর।

 তুমিও দেখ নি ফিরে – তুমিও ডাক নি আর– আমিও খুঁজি নি অন্ধকারে

 সব ছেড়ে দিয়ে আমি তোমারে একাকী ভালোবেসে
তোমার ছায়ার মতো ফিরিয়াছি তোমার পিছনে!

 আমাকে খোঁজো না তুমি বহুদিন-কতদিন আমিও তোমাকে
খুঁজি নাকো;- এক নক্ষত্রের নিচে তবু-একই আলোপৃথিবীর পারে
আমরা দুজনে আছি;
 হয়তো এসেছে চাঁদ একরাশ পাতার পেছনে।
কুড়ি বছর পর, তখন তোমারে নাই মনে!

যে আমাকে চিরদিন ভালোবেসেছে
অথচ যার মুখ আমি কোনাদিন দেখিনি,
সেই নারীর মতো
ফাল্গুন আকাশে অন্ধকার নিবিড় হয়ে উঠেছে।

 আজো আমি মেয়েটিকে খুঁজি;
জলের অপার সিঁড়ি বেয়ে
কোথায় যে চলে গেছে মেয়ে।

 আমারে সে ভালোবাসিয়াছে,আসিয়াছে কাছে,
উপেক্ষা সে করেছে আমারে,
ঘৃণা ক’রে চ’লে গেছে—যখন ডেকেছি বারে-বারে
ভালোবেসে তারে;

 পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে;
পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে;
পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু’জনার মনে;
আকাশ ছড়ায়ে আছে শান্তি হয়ে আকাশে আকাশে।

 অর্থ নয়, র্কীতি নয়, সচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে
আমাদের ক্লান্ত করে;
ক্লান্ত ক্লান্ত করে

এই রাত!- বেড়ে যায়, তবু চোখাচোখি
হয় নাই দেখা
আমাদের দুজনার!- দুইজন,- একা!

 আমি চ’লে যাব,- তবু জীবন অগাধ
তোমারে রাখিবে ধ’রে সেই দিন পৃথিবীর’পরে;-
আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে

তোমার মুখের দিকে তাকালে এখনো
আমি সেই পৃথিবীর সমুদ্রে নীল,
দুপুরের শূন্য সব বন্দরের ব্যথা
বিকেলের উপকন্ঠে সাগরের চিল,
নক্ষত্র, রাত্রির জল, যুবাদের ক্রন্দন সব–
শ্যামলী, করেছি অনুভব।
 তোমার পাখনায় আমার পালক, আমার পাখনায় তোমার রক্তের স্পন্দন।

একদিন দিয়েছিলে যেই ভালোবাসা ,
ভুলে গেছ আজ তার ভাষা!জানি আমি,- তাই
আমিও ভুলিয়া যেতে চাই
একদিন পেয়েছি যে ভালোবাসা
তার স্মৃতি – আর তার ভাষা

কুড়ি বছরের পরে সেই কুয়াশায় পাই যদি হঠাৎ তোমারে!

 যে নদী হারায়ে যায় অন্ধকারে –রাতে – নিরুদ্দেশে,
তাহার চঞ্চল জল স্তব্ধ হয়ে কাঁপায় হৃদয়!

 পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন;
মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীরই কাছে।

জীবনানন্দ দাশ কবে মৃত্যুবরণ করেন

"আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়" ফিরে আসার এই আশ্বাসটুকু দিয়ে বড়ই অস্বাভাবিক ভাবে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর কবি জীবনানন্দ দাশ মৃত্যুবরণ করেন। পাওয়া, না-পাওয়ার দ্বন্দ্বে জমে থাকা জীবনের একরাশ অভিমান, নীরবতা রেখে দিয়ে যান কবিতার পাতায় বন্দি করে।

লেখকের মন্তব্য

একরাশ হতাশার মাঝে প্রেমের শান্তি, প্রকৃতির মাঝে বেঁচে থাকার আনন্দ বাংলা সাহিত্যে যতবার চর্চিত হবে জীবনানন্দ দাশ সেথায় অমর হয়ে থাকবেন। প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে বিখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাস এবং তার জীবনি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি পড়ে জীবনানন্দ দাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন।

যদি এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনার বন্ধুবান্ধব বা সহপাঠীদের সাথে শেয়ার করতে পারেন যাতে করে তারাও এই সম্পর্কে জানতে পারে। আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন মতামত প্রশ্ন কিংবা পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন।

আর আরো অন্যান্য মহান ব্যক্তি এবং বিখ্যাত কবিদের সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। এছাড়াও আমাদের ওয়েবসাইটটিতে জ্ঞানমূলক, বিজ্ঞান চিন্তা মূলক বা সামাজিক দিক নিয়েও নিয়মিত আর্টিকেল প্রকাশিত হয়। সুতরাং অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকের মত এখানে শেষ করছি।

পরিশেষে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url