মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম কত সালে

মাইকেল মধুসূদন দত্ত এমন একজন ব্যক্তি যিনি তার প্রতিভা দিয়ে লাখো বাঙালির মন জয় করেছিলেন। তার জীবন দর্শন ও রচনা সত্যিই প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়। তাই বাঙ্গালী হিসেবে মাইকেল মধুসূদন দত্তর জীবনী সম্পর্কে জানা উচিত। চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম কত সালে

ভূমিকা

মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন উনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি, নাট্যকার ও প্রহসন রচিতা। কাব্য সাহিত্য, নাট্য সাহিত্য তথাদফ ছন্দের ব্যবহারে তিনি বাংলা সাহিত্যে নতুন পথ দেখিয়েছিলেন। সাহিত্যে নব্য রীতি প্রবর্তনের কারণে মধুসূদনকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি বলা হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে 'মধুকবি' বলে অভিহিত করেন।

মধুসূদন দত্তকে বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই তাঁকে বঙ্গ-ভারতীর দামাল পুত্র মাইকেল মধুসূদন দত্ত বলা হয়।মধুসূদন দত্ত বাংলা কাব্য ধারাতে যে অভিনত্ব দান করেছেন তা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি এই পৃথিবীতে না থাকলেও বাঙ্গালীর হৃদয় মন্দিরে কবি মধুসূদন দত্তের নাম চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম কত সালে

মধুসূদন বাংলাদেশের যশোহর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ সালের ২৫-ই জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। মধুসূদন দত্তের পিতার নাম রাজনারায়ণ দত্ত ও মায়ের নাম জাহ্নবী দেবী। মধুসূদনের পিতা কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত উকিল ছিলেন, আর তাই বেশিরভাগ সময়-ই তিনি ব্যস্ত থাকতেন। পিতা ব্যস্ত থাকলেও মাতার তত্ত্বাবধানে মধুসূদনের শিক্ষারম্ভ হয়।
আরো পড়ুনঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবে মৃত্যুবরন করেন

মাইকেল মধুসূদন দত্তের শিক্ষাজীবন

মধুসূদন দত্ত প্রথমে সাগর দাঁড়ির পাঠশালায় পড়াশোনা করেন। সাত বছর বয়সে মধুসূদন দত্ত কলকাতা যান এবং সেখানে খিদিরপুর স্কুলে দুই বছর পড়ার পর ১৮ ৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। মধুসূদন দত্ত হিন্দু কলেজে বাংলা, সংস্কৃত ও ফরাসি ভাষা শেখেন।

হিন্দু কলেজে অধ্যায়নকালেই মধুসূদনের প্রতিভার বিকাশ ঘটে। কলেজের পরীক্ষায় তিনি বারবার বৃত্তি পেতেন। এই সময়' নারীশিক্ষা 'বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯ বছর বয়সে মধুসূদন ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি অসীম টানের কারণে, খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেন এবং সেই থেকেই তার নামের পূর্বে 'মাইকেল' শব্দটি যুক্ত হয়।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছদ্যনাম কি

টিমোথি পেনপোয়েম।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাহিত্যকর্ম

" হে বঙ্গ ভান্ডারে, তব বিবিধ রতন;- তা সবে (অবোধ আমি) অবহেলা করি, পর ধন লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমন” মাইকেল মধুসূদন দত্ত একজন নাট্যকার হিসেবেই সাহিত্যে পদার্পণ করেন। রত্নাবলী নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি বাংলা নাটকের অভাব বোধ করেন যা তাকে নাটক রচনায় উৎসাহ যোগায়।

এরপর একের পর এক রচনা করতে থাকেন 'শর্মিষ্ঠা', একেই কি বলে সভ্যতা', 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো', 'মেঘনাদবধ কাব্য। পদ্মাবতী', 'ব্রজাঙ্গনা' 'বীরাঙ্গনা' প্রভৃতি সাহিত্য কীর্তি।
অন্তীমজীবন"জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কথা কবে, চিরস্থির কবে নীর, হায় রে, জীবন-নদে"
চরম দারিদ্রতা ও অভাবের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছিল মধুসূদনের শেষ জীবন।

১৮৭৩ সালের ২৯ শে জুন বঙ্গ ভারতের দামাল পুত্র কবি মধুসূদন ভিক্ষুকের মতো নিঃস্ব অবস্থায় কলকাতার এক হাসপাতালে পরলোক গমন করেন।অযত্নে না অনাদরে, বঙ্গ কবিকুলেশ্বরে, ভিক্ষুকের বেশে, মাতা, দিয়াছ বিদায়!"

মাইকেল মধুসূদন দত্তের কর্মজীবন

খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করার কারণে পিতা ত্যাজ্যপুত্র করলে মাদ্রাজে গিয়ে স্থানীয় লোকেদের সহায়তায় মধুসূদন একটি ইংরেজি স্কুলে চাকরি পান। পাশাপাশি শুরু করেছিলেন মাদ্রাজ ক্রনিকল পত্রিকায় ছদ্মনামে লেখালেখি ২৫ বছর বয়সেই লিখতে শুরু করেন তার প্রথম কাব্য" ক্যাপটিভ লেডি" যা তাকে এনে দেয় কবি ও দক্ষ ইংরেজি লেখকের সুনাম।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১০ টি বিখ্যাত উক্তি

  • বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ দলে, কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?
  • নিশার স্বপন সুখে সুখী যে কী সুখ তার, জাগে সে কাদিতে।
  • জম্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে? চিরস্থির কবে নীর হায়রে জীবন নদে?
  • হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন।
  • দাঁড়াও, পথিক-বর, জন্ম যদি তব বঙ্গে!
  • গতি যার নীচ সহ নীচ সে দুর্মতি।
  • দিন দিন আয়ুহীন, হীনবল দিন দিন।
  • পালিলাম আজ্ঞা সুখে, পাইলাম কালে মাতৃ ভাষা রূপে খনি, পূর্ণ মণিজালে।
  • ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি, এ ভিখারী দশা তবে কেন তোর আজি? যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!

বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন দত্তের অবদান

বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের অনেক অবদান রয়েছে। গদ্য, কাব্য, সনেট এবং নাটক শাখা। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ

কাব্য সাহিত্যে অবদান

বাংলা সাহিত্যের সনেট তিনিই প্রথম রচনা করেন। ইতালীয় কাব্যকৃতির সঙ্গে বাংলা সাহিত্য পরিচিতি লাভ করল তাঁর হাত ধরে। পুরাণ কাহিনির গতানুগতিকতা ভঙ্গ করে মানুষের মাহাত্ম্য বর্ণনার মাধ্যমে তিনি মানবতার আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নতুন ধরণের আখ্যায়িকা কাব্য এবং ইউরোপীয় পদ্ধতিতে সার্থক মহাকাব্য রচনা করে তিনি নতুন রাজ্যের দ্বার খুলে দিলেন।

ক্লাসিক কল্পনা ও বাচনভঙ্গির সাথে ইউরোপীয় সাহিত্য সুলভ রোমান্টিক আকুতির সংমিশ্রণে প্রাচ্য পাশ্চাত্য সাহিত্যের মিলন ঘটিয়েছেন তিনি। তিনিই আত্মকেন্দ্রিক লিরিক কবিতার জন্মদাতা, তাঁর চতুর্দশপদী কবিতাবলীতে এর প্রথম সূত্রপাত ঘটালেন। পয়ার ত্রিপদীর বন্ধন থেকে মুক্ত করে তিনিই প্রথম মিলটনের "Blank verse" ছন্দের অনুকরণে অমিত্রাক্ষর ছন্দ সৃষ্টি করেন।

বাংলা সাহিত্যিক মহাকাব্য (মেঘনাদবধ কাব্য) রচনার বিজয় মুকুটটি তিনিই অর্জন করেছিলেন।
যুগের চাহিদা পূরণ করতে মাইকেল মধুসূদন প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মিলন ঘটালেন। গতিহীন পয়ারের বেড়ি ভেঙে অমিত্রাক্ষরের ছন্দ দিয়ে মধ্যযুগের মফস্বলীয় সাহিত্যে আধুনিকতার প্রবেশ ঘটিয়ে বাংলা সাহিত্যকে সাবলীল করেছেন।

এক কথায় আধুনিক বাংলা সাহিত্যাকাশে মধুসূদন ছিলেন একজন একজন ব্যতিক্রমী উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যগ্রন্থ সমূহ


তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য (১৮৬০)
  • কাব্যের মূল বিষয়- দৈত্য ভ্রাতৃদ্বয় সুন্দ ও উপসুন্দের পারষ্পরিক লড়াই ও মৃত্যু এবং স্বর্গরাজ্যের পুনরুদ্ধার।
  • মোট সর্গ সংখ্যা - ৪।
  • গ্রন্থাকারে প্রকাশের আগে কাব্যের প্রথম দুটি সর্গ রাজেন্দ্রলাল মিত্রের 'বিৰিধাৰ্থ সংগ্রহ' পত্রিকায় ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত।
  • উৎসর্গঃ কাব্যটি যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরকে উৎসর্গ করা হয়েছে ।
'মেঘনাদবধ কাব্য' (১৮৬১)
  • কাব্যটির অবলম্বন রামায়ণের বীরবাহু নিধন থেকে প্রমীলার চিতারোহণ পর্যন্ত ঘটনা।
  • মোট সর্গ সংখ্যা- ৯। যথাক্রমে - 'অভিষেক', 'অস্ত্রলাভ', 'সমাগম', 'অশোকবন', 'উদ্যোগ', 'বধ', 'শক্তিনির্ভেদ', 'প্রেতপুরী', 'সংস্ক্রিয়া' ।
  • কাব্যটির রস - বীর রস ও করুণ রস।
  • কেন্দ্রীয় চরিত্র - মেঘনাদ বা ইন্দ্রজিৎ, রাবণ, প্রমীলা ।
  • ষষ্ঠ সংস্করণ থেকে দুই খন্ড একত্রে সম্পূর্ণ 'মেঘনাদবধ কাব্য' প্রকাশিত হয় ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ শে জুলাই।
  • উৎসর্গঃ- কাব্যটি রাজা দিগম্বর মিত্রকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
  • এই কাব্যের কাহিনির ঘটনাকাল ৩ দিন এবং ২ রাত্রি।
  • মধুসূদনের জীবদ্দশায় এই কাব্যটির ছয়টি সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬১)
  • কাব্যের পূর্বনাম- 'রাধাবিরহ'।
  • মূল বিষয় - বিরহ শোকাতুরা রাধার মর্মব্যথা।
  • কাব্যে আছে বৈষ্ণব পদাবলীর প্রভাব।
  • মধুসূদনের জীবদ্দশায় এই কাব্যের দুটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
  • এই কাব্যগ্রন্থে সর্বমোট ১৮টি পদ রয়েছে।
  • পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দে কাব্যটি রচিত।
বীরাঙ্গনা কাব্য (১৮৬২)
বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম সার্থক পত্রকাব্য।
কাব্যে ওভিদের 'Heroides' এর আদর্শ অনুসৃত হয়েছে।
মধুসূদনের জীবদ্দশায় এই কাব্যের ৩টি সংস্করণ প্রকাশিত হয়
উৎসর্গ:- কাব্যটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
কাব্যটিতে মোট পত্রের সংখ্যা - ১১টি। যদিও কবির পরিকল্পনা ছিল ২১টি পত্রের।
পত্রগুলো হলো-
  • দুষ্মন্তের প্রতি শকুন্তলা,
  • সোমের প্রতি তারা,
  • দ্বারকনাথের প্রতি রুক্মিণী,
  • দশরথের প্রতি কেকয়ী
  • লক্ষ্মণের প্রতি সূপর্ণখা,
  • অর্জুনের প্রতি দ্রৌপদী,
  • দুর্যোধনের প্রতি ভানুমতী,
  • জয়দ্রথের প্রতি দুঃশলা,
  • শান্তনুর প্রতি জাহ্নবী,
  • পুরুরবার প্রতি উর্বশী,
  • নীলধ্বজের প্রতি জনা ।
চতুর্দশপদী কবিতাবলী (১৮৬৬)
  • এই গ্রন্থের কবিতাগুলি পেত্রার্কের আদর্শে রচিত।
  • গ্রন্থে মোট সনেট আছে- ১০২টি।
  • কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সনেট হল- 'বঙ্গভাষা' 'ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর', 'জয়দেব', 'কালিদাস' 'কবিগুরু দান্তে', 'রামায়ণ' ইত্যাদি।
'হেক্টরবধ কাব্য' (১৮৭১ / গদ্যকাব্য)
Vision of the past (১৮৪৯ খ্রি:)
The Capitive Ladie (১৮৪৯ খ্রি:)

বাংলাসাহিত্যের সনেট তিনিই প্রথম রচনা করেন। ইতালীয় কাব্যকৃতির সঙ্গে বাংলা সাহিত্য পরিচিতি লাভ করল তাঁর হাত ধরে। পুরাণ কাহিনির গতানুগতিকতা ভঙ্গ করে মানুষের মাহাত্ম্য বর্ণনার মাধ্যমে তিনি মানবতার আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নতুন ধরণের আখ্যায়িকা কাব্য এবং ইউরোপীয় পদ্ধতিতে সার্থক মহাকাব্য রচনা করে তিনি নতুন রাজ্যের দ্বার খুলে দিলেন।

ক্লাসিক কল্পনা ও বাচনভঙ্গির সাথে ইউরোপীয় সাহিত্য সুলভ রোমান্টিক আকুতির সংমিশ্রণে প্রাচ্য পাশ্চাত্য সাহিত্যের মিলন ঘটিয়েছেন তিনি । তিনিই আত্মকেন্দ্রিক লিরিক কবিতার জন্মদাতা, তাঁর চতুর্দশপদী কবিতাবলীতে এর প্রথম সূত্রপাত ঘটালেন।

পয়ার ত্রিপদীর বন্ধন থেকে মুক্ত করে তিনিই প্রথম মিলটনের "Blank verse" ছন্দের অনুকরণে অমিত্রাক্ষর ছন্দ সৃষ্টি করলেন।বাংলা সাহিত্যিক মহাকাব্য (মেঘনাদবধ কাব্য) রচনার বিজয় মুকুটটি তিনিই অর্জন করেছিলেন।

যুগের চাহিদা পূরণ করতে মাইকেল মধুসূদন প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মিলন ঘটালেন। গতিহীন পয়ারের বেড়ি ভেঙে অমিত্রাক্ষরের ছন্দ দিয়ে মধ্যযুগের মফস্বলীয় সাহিত্যে আধুনিকতার প্রবেশ ঘটিয়ে বাংলা সাহিত্যকে সাবলীল করেছেন। এক কথায় আধুনিক বাংলা সাহিত্যাকাশে মধুসূদন ছিলেন একজন একজন ব্যতিক্রমী উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক।

নাট্য সাহিত্যে অবদান

১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দের পাইক পাড়ার জমিদার সিংহদের বাড়িতে বেলগাছিয়া থিয়েটারে রামনারায়ণ তর্করত্নের 'রত্নাবলী' (১৮৫৮) নাটকের অভিনয় দেখে মধুসূদন দত্ত অবাক হয়ে যান। কবি আক্ষেপ করে বলেন --
“অলীক কুনাট্যরঙ্গে মজে লোক রাঢ়বঙ্গে নিরখিয়া প্রাণে নাহি সয়।

বাংলা নাটকের এই দৈন্যদশা দূর করতে তিনি নাট্য রচনায় মনোনিবেশ করেন।চলুন জেনে নেয়া যাক তিনি কি কি নাটক রচনা করেছেন।
'Rizia' (আনুমানিক ১৮৪৯)
  • মধুসূদনের প্রথম ইংরাজি ভাষায় রচিত নাটক -- 'Rizia'।
  • 'Rizia: The Empress of India'
  • এটি একটি ঐতিহাসিক নাটক।
  • অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত।
  • মাাদ্রাজে (চেন্নাই) থাকাকালীন কবি এই নাটকটি রচনা করেন।
  • নাটকটি 'ইউরেশিয়ান' (Eurasian) পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
'শর্মিষ্ঠা' (১৮৫৯)
  • মধুসূদনের প্রথম নাটক -- 'শর্মিষ্ঠা'।
  • পৌরানিক নাটক এটি।
  • এই নাটকের মূল উৎস - মহাভারতের আদি পর্ব।
  • মহাভারতের আদি পর্বের শমিষ্ঠা যযাতি দেবযানীর ত্রিভূজ প্রেমের কাহিনী, ঈর্ষা ও কামবৃত্তির কাহিনীই এই নাটকের আলোচ্য বিষয়।
  • এই নাটকের প্রধান চরিত্র- শর্মিষ্ঠা, যযাতি, দেবযানী, শুক্রাচার্য, বকাসুর।
'পদ্মাবতী' (১৮৬০)
  • মধূসূদনের দ্বিতীয় নাটক - 'পদ্মাবতী'।
  • পৌরানিক নাটক এটি।
  • নাটকটি কলির সংলাপে অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত।
  • গ্রীক পুরাণের 'Apple of Discord' অবলম্বনে রচিত।
  • এই নাটকের মূল ভিত্তি গ্রীক পুরাণের কাহিনী।
  • এই নাটকের কাহিনীতে হেরা, আথেনে এবং আফ্রেদিতে এই তিন দেবীর মধ্যে একটি সোনার আপেলের অধিকার নিয়ে বিরোধ এবং প্যারিসের মধ্যস্থতায় আফ্রেদিতে জয়লাভ করে। পরবর্তী স্তরে দেবী ত্রয়ের মধ্যে ঈর্ষা ও দ্বন্দ্বের জটিলতা দেখা যায়।
  • এই নাটকের প্রধান চরিত্র - পদ্মাবতী, রতিদেবী, ইন্দ্রনীল, শচীদেবী, নারদ।
'সুভদ্রা'
  • 'পদ্মাবতী' নাটক রচনা করার পর তিনি এই নাটক রচনা করেন।
  • নাটকটি মধুসূদন শেষ করতে পারেন নি।
  • মহাভারতের উপাখ্যান নিয়ে নাটকটি রচিত হয়েছিল।
'কৃষ্ণকুমারী' (১৮৬১)
  • বাংলা সাহিত্যের প্রথম ঐতিহাসিক নাটক।
  • এটি তাঁর সবশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নাটক।
  • এই নাটকের মূল উৎস -- কর্নেল টডের 'Annals and Antiquities of Rajasthan' ।
  • এই নাটকের প্রধান চরিত্র -- কৃষ্ণকুমারী, ভীমসিংহ, মানসিংহ, ধনদাস, মদনিকা।
  • 'কৃষ্ণকুমারী' বিষাদময়, বিয়োগান্তক নাটক।
  • এই নাটকে রাণা ভীমসিংহের অসাধারণ সুন্দরী কন্যা কৃষ্ণ অর্থাৎ কৃষ্ণকুমারী রাজ্যের কল্যাণে এবং পিতাকে দারুণ বিপদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করেন। মানসিংহ এবং জগৎসিংহ দুজনেই কৃষ্ণকুমারীকে বিয়ে করতে চান এবং ব্যর্থ হলে উভয়েই ভীমসিংহের সর্বনাশ করবেন বলে ভয় দেখান।
ভীম সিংহ কন্যা স্নেহ ও রাজ্যরক্ষার মধ্যে কোনটিকে বেছে নেবেন ঠিক করতে পারলেন না। এমত অবস্থায় আত্মহত্যা করে পদ্মাবতী পিতা এবং পিতৃরাজ্যকে নিশ্চিন্ত করে গেলেন। এ দুর্ঘটনায় ভীমসিংহ উন্মাদ হয়ে যান।
  • নাট্যকার মূল কাহিনীর সাথে ধনদাস, মদনিকা ও বিলাসবতীর কাহিনী সংযুক্ত করেছেন।
'একেই কি বলে সভ্যতা' (১৮৬০)
  • পাইক পাড়ার বিদ্যুৎসাহী জমিদার সিংহ ভ্রাতাদের অনুরোধে মধুসূদন এই নাটকটি রচনা করেন।
  • এটি একটি 'প্রহসন'।
  • এই প্রহসনটিতে ইংরাজি শিক্ষিত মদাসক্ত ভ্রস্টাচার ও তরুণ ইয়ংবেঙ্গল যুবকদের কদাচারকে শানিত রঙ্গব্যঙ্গের ভাষায় দারুণ কশাঘাত করা হয়েছে। নাগরিক কলকাতার তরুণ সমাজকে তীব্র ব্যঙ্গ করা হয়েছে।
  • এই নাটকের প্রধান চরিত্র - নবকুমার, কালিনাথ, মহেশ, বলাই, প্রসন্ন, হরকামিনী, কমলা।
'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ' (১৮৬০)
  • পাইক পাড়ার বিদ্যুৎসাহী জমিদার সিংহ ভ্রাতাদের অনুরোধে মধুসূদন এই নাটকটি রচনা করেন।
  • ২ অঙ্ক ও ৪ গর্ভাঙ্কে সমাপ্ত হয়েছে নাটকটি।
  • এটি একটি 'প্রহসন'।
  • এই নাটকের আগের নাম ছিল 'ভগ্ন শিবমন্দির'।
  • নাটকটির নামকরণ করেন রাজা ঈশ্বরচন্দ্র।
  • এই প্রহসনটিতে প্রাচীন ব্রাহ্মণ সমাজপতিদের কুচরিত্র ও লাম্পট্য খুব রসাল ভাষায় বর্নিত হয়েছে।
  • এই নাটকের প্রধান চরিত্র -- ভক্তপ্রসাদ, হানিফ ও হানিফের স্ত্রী ফতেমা।
'মায়াকানন' (১৮৭৪)
  • এটি কবির অসমাপ্ত নাটক।
  • এটি একটি রূপক নাটক।
  • মধুসূদনের মৃত্যুর পর এই নাটকটি ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
  • 'মায়াকানন' একটি দুঃখের কাহিনী। এতে অজয় ও ইন্দুমতির প্রেম নিতান্তই কল্পনাচারী। কেবল দর্শন ও শ্রবনেই এই প্রেমের উৎপত্তি ও অধিষ্ঠান। তাই তাদের বিলাপ ও ধেদোক্তি অনেকটা কৃত্রিম ও প্রাণহীন মনে হয়।
  • এই নাটকের প্রধান চরিত্র: ইন্দিরা, অজয়, ইন্দুমতি।
'বিষ না ধনুর্গুন'
  • এটি কবির অসমাপ্ত নাটক।
  • এটি একটি রূপক নাটক।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের মৃত্যু কত সালে

১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে জুন রবিবার বঙ্গ-ভারতীর দামাল পুত্র কবি মধুসূদন ভিক্ষুকের মতো নিঃস্ব অবস্থায় কলকাতার এক হাসপাতালে পরলোক গমন করেন।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আর্টিকেলটিতে বিখ্যাত কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পোস্টটি পড়ে উপকৃত হয়েছে। যদি পোস্টটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজন কিংবা সহপাঠীদের মাঝে সেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই মহান ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে পারে।

আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোনো প্রশ্ন মতামত কিংবা পরামর্শ থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। আরও এ ধরনের বিখ্যাত এবং মহান ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ভিজিট করতে পারেন।

এছাড়াও আমরা জ্ঞান মূলক, বিজ্ঞানমূলক এবং সামাজিক দিক নিয়েও নিয়মিত আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকে। অক্ত আর্টিকেলগুলো পড়ে আপনি আপনার জ্ঞান ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পারবেন। সুতরাং এগুলো পড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকের মতো এখানে শেষ করছি।

পরিশেষে আর্টিকেলটির সম্পূর্ণ পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url