প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কত শুরু সালে হয়
বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হল বিশ্বযুদ্ধ। এখন পর্যন্ত যে দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।চলুন জেনে নেওয়া যাক এই যুদ্ধ কবে শুরু হয়েছিল এবং এর কারন ও ইতিহাস সম্পর্কে।
ভূমিকা
মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় যে যুদ্ধ সেটি হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যার প্রভাব সারা বিশ্বে পড়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যেহেতু ভারত ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল তাই ভারতের ইতিহাসেও এর গুরুত্ব অনেক বেশি। আনুমানিক প্রায় দুই কোটি মানুষ এই যুদ্ধে সরাসরি প্রাণ হারিয়েছিল।আমেরিকা থেকে শুরু করে জাপান সব শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তবে যুদ্ধে সব দেশে ডমিনো প্রভাব কাজ করেছিল অর্থাৎ একজনকে ধাক্কা দিতেই পরপর সবাই এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তবে যুদ্ধের কারণ কিন্তু খুব একটা বড় ছিল না যা হয়তো কথাবার্তার মাধ্যমেই ঠিকঠাক করে নেয়া যেত বা সমাধান করা যেত।
কিন্তু আসলে ঘটেছিল এর উল্টোটা। সবকিছু সমাধান করার বদলে সারা বিশ্বে যুদ্ধের দাঙ্গা বেধে যায়। চলুন জেনে নেয়া যাক প্রথম এই বিশ্বযুদ্ধের বিধ্বংসী কারণ কি ছিল? এবং কি হয়েছিল এই যুদ্ধের শেষ পরিণতি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কত সালে হয়
২৮ শে জুলায় ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল।প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কত সালে শেষ হয়
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১১ নভেম্বর ১৯১৮ সালে শেষ হয়। এই যুদ্ধ প্রায় ৪ বছর ধরে চলেছিল।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারন ও ইতিহাস
বিংশ শতকের শুরু থেকে ইউরোপীয় দেশগুলো যেমন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স , জার্মানি সারা বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন দেশ দখল করতে থাকে। এই ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের উপনিবেশ করা দেশগুলো থেকে অর্থ ও ক্ষণিক সম্পদ নিজেদের দেশে নিয়ে আসতে শুরু করে। এর ফলে তাদের দেশ দ্রুত উন্নত হতে থাকে। ঠিক যেমনটা ব্রিটিশরা ভারতের সাথে করেছিল।এতে এই ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে নিজেদের মধ্যেই রেষারেষি শুরু হয়ে যায়। কে কত উপনিবেশ দখল করতে পারবে আর নিজেদের শক্তিশালী করতে পারবে। আর এতে তাদের নজর থাকত অন্য দেশের অধিকৃত জমির উপরে কি করে তারা নিজেরা দখল করবে। এই কারণে দেশগুলো নিজেদের রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের চুক্তি করতে থাকে।
বেশিরভাগ চুক্তি হতো গোপনীয়, যার বিষয়ে অন্য কোন দেশ জানতো না। যেমন ফ্রান্স এবং ব্রিটেন ১৯০৪ সালে একটি সন্ধি করে যাতে এই দুই দেশের উপর যে কোন একটি দেশে আক্রমণ কর মানে দুই দেশের উপরেই হামলা করা, আর তখন এই দুই দেশ মিলে শত্রু পক্ষের উপর হামলা করবে। ব্রিটিশ আর ফ্রান্সের এই সন্ধির নাম ছিল এন্তেতে কার্ডিয়াল।
রাশিয়া তখনও কারো সাথে তেমন একটা সন্ধি করেনি। ফলে রাশিয়া নিজেদের সুরক্ষার জন্য ব্রিটেন আর ফ্রান্সের সাথে সন্ধি করে ১৯০৭ সালে। তখন এই নতুন সন্ধির নাম হয় ট্রিপল এন্তেতে। ওদিকে ব্রিটিশ আর জার্মানির মধ্যে ছিল সাপ আর বেজির মতো সম্পর্ক আর তাদের দুজনের মধ্যে তখন চলছিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল যুদ্ধ।
এর মানে হলো কোন দেশ বেশি পরিমাণে কল কারখানা নির্মাণ করতে পারে এবং নিজেদের প্রোডাকশন বাড়াতে পারে। জার্মানি ও সন্ধি করেছিল অস্ট্রিয়ার সাথে পরে এই সন্ধিতে যুক্ত হয়েছিল ইতালি। কথা হয়েছিল এই দেশগুলোর মধ্যে যেকোনো একটিতে হামলা হলে তারা সবাই মিলে শত্রুপক্ষের উপর হামলা করবে।
এই সন্ধির নাম ছিল ট্রিপল অ্যালায়েন্স। ব্যাপারটা হয়েছিল এমন যে যদি কেউ অস্ট্রিয়ার উপরে হামলা করে তাহলে জার্মানি তার সাথে যুদ্ধ করবে। আবার জার্মানিকে আটকাতে রাশিয়া জার্মানির উপর আক্রমণ করবে, এদিকে রাশিয়াকে আটকাতে ইতালি রাশিয়ার উপর আক্রমণ করবে। এভাবে ফ্রান্স ,ব্রিটেন সবাই একে একে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।
বিশ্বযুদ্ধের পারদের ব্যাগ এই সন্ধির ফলে প্রথম থেকেই তৈরি হয়েছিল। এটি বিস্ফোরিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল শুধু একটু আগুনের যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করবে। এইভাবে ছয়টি শক্তিশালী দেশ ভাগ হয়ে যায় এরপর শুরু হয় নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা বৃদ্ধি। এই দেশগুলো তখন নতুন নতুন অস্ত্রশস্ত্র আবিষ্কার করতে শুরু করে।
যেমন মেশিনগান, ট্যাংক , যুদ্ধজাহাজ , সাবমেরিন আরও অনেক কিছু যেগুলো যুদ্ধে জেতার জন্য সহায়তা করবে। আর এই শক্তিশালী দেশগুলোর ধারণা ছিল যেহেতু অনেক উন্নত মানের অস্ত্রশস্ত্র তৈরি হয়ে গেছে তাই যুদ্ধ একবার শুরু হলে তা খুব বেশি হলে দুই থেকে তিন মাস চলবে।
আর এসব কারণের ফলে ১৯১০ সাল আসতে আসতে ইউরোপের আবহাওয়া বেশ গরম হয়ে ওঠে। কিন্তু এবার সমস্যা দাঁড়ায় বিভিন্ন দেশের নেতা-মন্ত্রীরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেও সাধারণ মানুষকে যুদ্ধের জন্য কিভাবে আগ্রহী করে তোলা যাবে। কারণ সাধারণ মানুষের যুদ্ধে আগ্রহ না থাকলে যুদ্ধে জয়ী হওয়া কখনোই সম্ভব নয়।
নইলে দেশের ভিতরে সমস্যার সৃষ্টি হবে। আর এই কাজটাই করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং লেখকেরা। তারা মানুষের মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে যুদ্ধের মাহাত্ম্য প্রচার করতে শুরু করে। যেমন যুদ্ধ হলো সম্মানের বিষয়, যুদ্ধ করে অন্যের জায়গা দখল করাই হলো বীরত্তের লক্ষণ এবং দেশকে ভালবাসলে যুদ্ধ চাই।
এমন মনোভাব দেশের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে দেশের রাজা মন্ত্রী ও নেতারা দেশের সাধারণ নাগরিকদের কাছে সহায়তা পেতে থাকে যুদ্ধের জন্য। রাশিয়া তখন পশ্চিম দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ করত ব্ল্যাক সি এর কাছে থাকা স্টেট অফ ডর্ডলন্সের মাধ্যমে। এই ছোট্ট প্যাসেজটা রাশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
কারণ তা নাহলে পশ্চিমে দেশগুলোর সাথে ব্যবসা করতে হলে রাশিয়ার জাহাজকে পুরো প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর পার করে আসতে হবে। ফলে রাশিয়া সুযোগ খুঁজছিল যে করেই হোক সার্বিয়াকে নিজের দখলে আনতে হবে অথবা সার্বিয়ার সাথে ভালো বন্ধুত্ব রাখতে হবে। কারণ এই অংশে সার্বিয়ার প্রভাব ছিল খুব বেশি।
এভাবে ১৯১৪ সাল চলে আসে। অস্ট্রিয়ার অধীনে থাকা বশনিয়া একটি ছোট্ট আলাদা দেশের জন্য অনেক দিন ধরে দাবি করছিল এবং বশনিয়ার সাথে সার্বিয়া যেটা আসলে একটি আলাদা দেশ ছিল তাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। ২৮শে জুন ১৯১৪ সালে সেসময় অস্ট্রিয়ার যুবরাজ ফার্দিনান্দ যিনি পরবর্তী রাজা হিসেবে দাবিদার ছিলেন।
তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে বশনিয়াতে ঘুরতে আসেন। সেখানে গাবরিয়েল নামে এক ব্যক্তি ফার্দিনান্দকে গুলি করে হত্যা করেন। আর এই হত্যাকারী বশনিয়ার মুক্তিযুদ্ধের সাথে যুক্ত ছিল। যুবরাজের হত্যার ফলে অস্ট্রিয়া খুব রেগে যায়। তারা সরাসরি এ হত্যার জন্য সার্বিয়াকে দায়ী করে।
কারণ সার্বিয়া বশনিয়াকে সাহায্য করছিল তাদের স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য। অস্ট্রিয়া তখন সার্বিয়াকে একটি হুমকিমূলক চিঠি পাঠায়। যাতে লেখা ছিল যে বিনা যুদ্ধে যেন সার্বিয়া অস্ট্রিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং এখন থেকে সার্বিয়া দেশটি অস্ট্রিয়ার অধীনে। স্বাভাবিকভাবে সার্বিয়া এই চুক্তি অস্বীকার করে।
তখন অস্ট্রিয়া যুদ্ধের হুমকি দেয় সার্বিয়াকে। সার্বিয়া তখন নিজেদের রক্ষার জন্য রাশিয়ার কাছে সাহায্য চাইতে যায়। আর রাশিয়াও ঠিক এই সুযোগের জন্যই অপেক্ষায় ছিল। এদিকে অস্ট্রিয়াও জার্মানের সাথে চুক্তি করেছিল ফলে জার্মানীয় পুরো দমে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে।
জার্মানির সাহায্য পেতেই যুবরাজ ফার্দিনান্দের মৃত্যুর এক মাসের মাথায় ২৮ জুলাই ১৯১৪ সালে অস্ট্রিয়া সার্বিয়ার উপর আক্রমণ করে দেয়। আর এর ফলে শুরু হয়ে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডমিনো প্রভাব। সার্বিয়াকে বাঁচাতে রাশিয়াও অস্ট্রিয়ার উপর আক্রমণ করে। তখন জার্মানি তাদের চুক্তি মোতাবেক রাশিয়াকে আক্রমণ করে।
এবার রাশিয়ার সাথে চুক্তি করেছিল ফ্রান্স আর এর ফলে ফ্রান্স ও এবার সরাসরি জার্মানির উপর আক্রমণ করে। তবে ইতালি জার্মানির সাথে চুক্তি করলেও এই যুদ্ধে ইতালি জার্মানিকে সাহায্য করেনি। কারণ চুক্তি হয়েছিল কোন দেশ তাদের উপর হামলা করলে তবেই তারা তাদেরকে হামলা করবে। কিন্তু অস্ট্রিয়া আগে থেকেই সার্বিয়াকে হামলা করেছিল।
ইতালি এমন সন্ধির অজুহাত দিয়ে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকে। পরে যদিও ইতালি ফ্রান্সকে সাহায্য করেছিল। জার্মানের শূন্য সরাসরি ফ্রান্সকে আক্রমণ না করে বেলজিয়ামের রাস্তায় ফ্রান্সকে আক্রমণ করতে যায়। তারা বেলজিয়াম আক্রমণ করে এবং ধীরে ধীরে জার্মান সৈন্য ফ্রান্সের অনেক এলাকা দখল করে নেয়।
তারা প্যারিসে পৌঁছানোর আগেই সেখানে চলে আসে ব্রিটিশ সৈন্য। তখন ব্রিটিশরা বলে বেলজিয়ামের সাথে তাদের একটা চুক্তি হয়েছিল ৭০ বছর আগে। এই চুক্তির দোহাই দিয়ে ব্রিটেন জড়িয়ে পড়ে যুদ্ধে। ব্রিটিশ সৈন্য চলে আসার পরে জার্মান সৈন্য ফ্রান্সের দিকে আর এগোতে পারে না।
এখানে দুই দল বড় বড় ট্রেঞ্চ তৈরি করে নিজেদের দখলকৃত অংশ রক্ষা করতে থাকে। এদিকে ততদিনে এই যুদ্ধে অটোম্যান সাম্রাজ্য ঢুকে পড়ে। তারা ব্ল্যাক সি পার করে রাশিয়ার বেশ কয়েকটি বন্ধ আক্রমণ করে। তবে অটোম্যানদের প্রধান লক্ষ্য ছিল মিশরের কাছে থাকা সুয়েচ ক্যানেল দখল করা।
কারণ এতে বৃটেনের সাথে ভারতের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে ভারত থেকে সৈন্য ও খাদ্য না এলে ব্রিটিশদের হার নিশ্চিত ছিল। তখন ভারত থেকে প্রায় ১৩ লক্ষ সৈন্য মিশর এবং ইউরোপের অন্যান্য এলাকায় বৃটেনের হয়ে যুদ্ধ করছিল। ফলে অটোম্যানদের এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। এদিকে জাপানের বহুদিন থেকে নজর ছিল চীনের উপরে।
যুদ্ধের সুযোগ দেখে তারা ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের সাথে হাত মিলিয়ে নেয়। আর চিনে জার্মানির দখলে থাকা এলাকায় জাপান আক্রমণ করে। ব্রিটেন আর ফ্রান্স মিলে আফ্রিকায় থাকা জার্মান উপনিবেশগুলোকে আক্রমণ করতে শুরু করে। তবে এই যুদ্ধে আমেরিকা তখনও অংশগ্রহণ করেনি। চালাক আমেরিকা দুইপক্ষকে হাতিয়ার, খাদ্য ও যুদ্ধ সামগ্রিক বিক্রি করতে থাকে।
এর ফলে প্রচুর মুনাফা হয় আমেরিকার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে আমেরিকার অর্থনৈতিক মানদণ্ড অনেক শক্তিশালী হতে থাকে। যুদ্ধের শুরুতে জার্মানি খুব সফল হয়। জার্মানের সেনারা পূর্বদিকে রাশিয়ার ওপর ভয়ানক আক্রমণ করে। যাতে রাশিয়ার প্রায় তিন লক্ষ সৈন্য মারা যায়। ওদিকে ফ্রান্সের অনেকটা এলাকা তাদের দখলে চলে এসেছিল।
কিন্তু ধীরে ধীরে ব্রিটেন আর ফ্রান্স এবং ইতালি মিলে তাদের শক্তি বাড়ায়। এরপর যুদ্ধ ঠিক হচ্ছিল কিন্তু কোন লাভ হচ্ছিল না। কারণ সবাই ট্রেঞ্জ তৈরি করে বসে যায়। সৈন্যরা ট্রেঞ্জ ছেড়ে বাইরে বের হয়ে এলে তাদের উপর মেশিনগানদের গুলি করা হতো। এর ফলে জমি দখল করার জন্য বেশি ক্ষতি হয়ে যাচ্ছিল। এই যুদ্ধে ব্রিটেন প্রথম ট্যাংকের ব্যবহার করে।
ট্যাংকের সুবিধা ছিল এগুলো কাঁটাতার পেরিয়ে এগিয়ে যেতে পারতো। আর ভেতরে থাকা সৈন্যরা শত্রুপক্ষের গুলি থেকে বেঁচে যেত। আর এদিকে জার্মানির সর্বপ্রথম এই যুদ্ধে সাবমেরিন এর ব্যবহার করে। তাদের সাবমেরিনগুলো ইউ-বোটস নামে পরিচিত ছিল।
শুরুতে তারা এই সাম্মেরেন্ট দিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে ব্রিটেন আর ফ্রান্সের যুদ্ধ জাহাজে আক্রমণ করত। কিন্তু ধীরে ধীরে তারা সাধারণ নাগরিকের জাহাজেও আক্রমণ করতে শুরু করে। এভাবে তারা ১৯১৭ সালে লুসিরটনিয়া নামে একটি যাত্রীবাহী জাহাজে আক্রমণ করে যাতে প্রায় ১২০০ জন সাধারণ জনগণ ছিল।
যাদের যুদ্ধের সাথে কোন প্রকার সম্পর্ক ছিল না। আর এই নাগরিকরা ছিল আমেরিকার। ব্যাস এবার আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উইড্রো উইলসন পার্লামেন্টে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য বিশেষ ভোটিং করেন। ততদিনে জার্মানি বুঝে গিয়েছিল আমেরিকা আজ বা কাল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেই এবং তারা বৃটেনের পক্ষেই যুদ্ধ করবে।
তখন জার্মানি গোপনে চিঠি পাঠায় আমেরিকার প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকোতে। সেখানে তারা মেক্সিকোকে জানাই আমেরিকার উপর হামলা করতে। আর এই চিঠির কথা ফাঁস হয়ে যায় আমেরিকার কাছে। আর কি বাকি থাকে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য? আমেরিকা প্রত্যেকদিন ১০০০ করে সৈন্য পাঠাতে থাকে ফ্রান্স এবং ব্রিটেনে। জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য।
তবে এই যুদ্ধ চলাকালীন রাশিয়ায় বিপ্লব শুরু হয়। সেখানে থাকা রাশিয়ান রাজা জারকে হাটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন লেনিন।তিনি ক্ষমতায় এসে জার্মানি্তে যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি করেন। ফলে জার্মানি তখন শুধুমাত্র পশ্চিম দিকে যুদ্ধ করেছিল। তবে ক্রমাগত এতগুলো দেশের সাথে যুদ্ধ করতে করতে জার্মানির অবস্থা নাজেহাল হয়ে যায়।
তার ওপর আমেরিকা থেকে আসা রোজ রোজ নতুন সৈন্য। এবার পেছাতে থাকে জার্মানি। শেষে চার বছর যুদ্ধ হওয়ার পরে ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর সকাল। ১১টায় জার্মানি আত্মসমর্পণ করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা
চার বছর ধরে চলা যুদ্ধে প্রথমবার কেমিক্যাল হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়েছিল এছাড়া প্রাণ হারিয়েছিল দুই কোটি মানুষ এবং আহত হয়েছিল আরো ৪ কোটি মানুষ। এ যুদ্ধের ভয়াবহতা যে কত সৈন্যকে মানসিক রোগীতে পরিণত করেছিল তা গুনে শেষ করা যাবে না। ভারতে ১৩ লক্ষ সৈন্যের মধ্যে ৫০ হাজার সৈন্য এই যুদ্ধে মারা যান।ইউরোপে এই যুদ্ধের ফলে পুরুষের সংখ্যা কমে যায়। এরপরে মহিলারা ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে শুরু করে। যুদ্ধ শেষে সাত মাস পরে ২৮শে জুন ১৯১৯ সালে ভারসাল টিটি স্বাক্ষরিত হয় যেখানে যুদ্ধের সমস্ত দায় জার্মানিকে দেওয়া হয়। যদিও সব দেশি এই যুদ্ধের সমান ভাবে ভাগে ভাগিদার ছিল। এরপরে জার্মানিকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে মোটা টাকা জরিমানা করা হয়।
সেই টাকার পরিমাণ এতটাই বেশি ছিল যে এর শেষ কিস্তি ২০১০সালে জার্মানি মেটাই। জার্মানির সমস্ত উপনিবেশ ব্রিটেন এবং ফ্রান্স নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। এক কথায় এই চুক্তি জার্মানিকে পঙ্গু করে দিয়েছিল। আর এই যুক্তির ফলে জার্মানি আবার একটা বিশ্বযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। যুদ্ধের শেষে অনেক নতুন দেশের সৃষ্টি হয়।
যেমন অটোম্যান সাম্রাজ্য ভেঙ্গে তুর্কি বেশ গঠন হয়। যুদ্ধের শেষে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে মনে করা হয়েছিল সব যুদ্ধে অবসান করার যুদ্ধ কিন্তু এই যুদ্ধই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ পুতেছিল।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আর্টিকেলটিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ভবিষ্যতের যুদ্ধ এড়াতে আমাদের অবশ্যই প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে জানা উচিত। এই আর্টিকেলটিতে শুধুমাত্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ইতিহাস পরের আর্টিকেলে করা হয়েছে।আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে আপনি কিছুটা হলেও ধারণা লাভ করেছেন। শান্তিতে থাকবে যুদ্ধ এড়ানোর বিকল্প নেই। তাই আপনি আপনার আত্মীয় স্বজন কিংবা সহপাঠীদের সচেতন করতে শেয়ার করতে পারেন যাতে করে তারাও এই বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।
আর্টিকেল এর বিষয়ে কোনো প্রশ্ন মতামত কিংবা যদি কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন যাতে করে আপনার মাধ্যমে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আপনি যদি বিজ্ঞানভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক, সামাজিক বিষয়াবলী, বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক এবং বিখ্যাত সব ব্যক্তিদের জীবনী সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন।
তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন, কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত প্রকাশ করা হয়ে থাকে। আর অন্যান্য আর্টিকেল পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানেই শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url