ব্ল্যাকহোল কাকে বলে

মহাকাশ নিয়ে মানুষের কৌতুহল সেই আদিম কাল থেকে। কিন্তু আপনি কি জানেন? আমাদের মহাকাশে কি কি আছে? চলুন জেনে নেওয়া যাক মহাবিশ্বের এক বিস্ময়কর বিষয় ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে।
ব্ল্যাকহোল কাকে বলে

ভুমিকা

রাতের তারাভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছেন নিশ্চয়ই। হয়তো কখনো আপনার মনেও প্রশ্ন জেগেছে এই অন্তহীন মহাবিশ্বের উতপত্তি কোথায় আর এর শেষটাই বা হয়েছে কোথায়! হয়তো সেইসাথে আরো অসংখ্য প্রশ্ন ভীর জমিয়েছে আপনার মনে।

হাজার হাজার বছর ধরেই মানুষের মনে এই প্রশ্নগুলো জেগেছে। অবাক বিস্ময়ে মানুষ খুঁজে ফিরেছে এই সব প্রশ্নের উত্তর। আর বিজ্ঞানের অগ্রগতির কল্যানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানুষ জানতে পেরেছে এমন অনেক অধরা প্রশ্নেরই উত্তর।

বিশেষ করে বিগত ৫০ বছরে মহাবিশ্ব সম্পর্কে যুগান্তকারী সব আবিষ্কার পাল্টে দিয়েছে আমাদের চিন্তার জগত। মানুষের চাঁদে পদার্পণ থেকে শুরু করে দুটি গ্যালাক্সির সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ সনাক্ত করা, আমরা জানতে পেরেছি অনেক কিছুই।

কিন্তু এই জানা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে যেন দেখিয়ে দিয়েছে অন্তহীন এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান কতটা ক্ষুদ্র। কোন পরিস্থিতিতে ঘটেছিলো বিগব্যাং কিংবা এই মহাবিশ্বে মানুষের মতো আরো বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব আছে কি না, এমন আরো বহু রহস্যই এখনো রয়ে গেছে ব্যাখ্যাতীত।

এ যেন, একটা প্রশ্নের উত্তর পেতে না পেতেই আরো হাজারটা প্রশ্ন হাজির হওয়া। তবে এই অজানাই মানুষকে ধাবিত করছে নতুন নতুন সত্য উদঘাটনে।শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রে ছিল উর্ধ্বআকাশ বা মহাকাশ৷ প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা নিরন্তর গবেষনা যেন শেষ হবার নয়৷

আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ এখন সৌরজগতের বাহিরে বাকি সৃষ্টিকে অবজারভ করতে শুরু করেছে৷একটা সময় পৃথিবীকে এই মহাবিশ্বের কেন্দ্র মনে করা হলেও বর্তমান আমরা জানতে পেরেছি পৃথিবী হচ্ছে এই মহাবিশ্বের অতি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রাকার একটি বস্তু৷

ব্ল্যাকহোল কাকে বলে

ব্ল্যাক হোল মহাকাশের এক বিস্ময়কর উপাদান। বাংলায় একে বলা হয় কৃষ্ণগহ্বর বা কৃষ্ণ বিবর। ব্ল্যাকহোল মহাকাশের এমন এক অঞ্চল যেখানে মহাকর্ষ বল অত্যন্ত প্রবল।

ব্ল্যাক হোল কি খালি চোখে দেখা যায়

আমরা জানি যে এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম সত্তা হলো আলো। সেই আলো পর্যন্ত ব্ল্যাকহোলের বল ছিন্ন করতে পারে না। এর ফলে ব্ল্যাক হোল থেকে কোন আলো আমাদের চোখে এসে পৌঁছানো সম্ভব না। আর তাই ব্ল্যাকহোল কখনো দেখাও সম্ভব না। তবে ব্ল্যাকহোলের নামে যা দেখা যেতে পারে তা হলো এর বাহ্যিক সীমানা।

ব্ল্যাক হলে সীমানাকে বলা হয় ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনা দিগন্ত। কোন বস্তু এর সীমানাও অতিক্রম করার সাথে সাথে তা ব্ল্যাক হোলের অতল গহবড়ে হারিয়ে যায়। ঘটনা দিগন্তের মধ্যবর্তী স্থান থেকে কোন বস্তু কখনো ফিরে আসতে পারে না।

ব্ল্যাক হোলের ধারনা

বিংশ শতক পর্যন্ত ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে মানুষের তেমন কোন ধারনাই ছিল না। ১৯১৬ সালে জার্মান পদার্থবিদ কার্ল শোয়ার্জফিল্ড বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত ব্যবহার করে হিসেব করেন যে কোন ভর ব্ল্যাকহলে পরিণত হতে পারে যদি তাকে যথেষ্ট সংকুচিত করা যায়।

এই তত্ত্বের মাধ্যমে মূলত ব্ল্যাক হোলের ধারণা মানুষের সামনে আসে।দীর্ঘদিন এই আলোচনা শুধুমাত্র তত্ত্বের পর্যায়েই ছিল। ১৯৭১ সালে এই তত্ত্বের বাস্তব উদাহরণ আমাদের সামনে হাজির হয়। তৎকালীন জ্যোতির্বিদেরা constellation cygnusবা বক মন্ডল পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে প্রথম ব্ল্যাকহল আবিষ্কার করেন।

মহাবিশ্বে এত বিপুল পরিমাণ ব্ল্যাক হোল ছড়িয়ে আছে যা বিজ্ঞানীদের ধারণার বাইরে।

ব্ল্যাক হোল কয় ধরনের হয়ে থাকে

বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেষণার পরে কয়েক ধরনের ব্ল্যাকহল এর কথা উল্লেখ করেছেন। স্টেলার ব্ল্যাক হোল ও সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

স্টেলার ব্ল্যাক হোল কি

যখন অতি বৃহৎ তারকার মৃত্যু ঘটে তখন স্টেলার ব্ল্যাকহোলের সৃষ্টি হয়। এরা সাধারণত আমাদের সূর্যের চেয়ে ১০থেকে২০ গুণ বড় হতে পারে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এরকম বহু কৃষ্ণ বিবর বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে। শুধুমাত্র মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশ গঙ্গা ছায়াপথেই ১০ লক্ষের বেশি স্টেলার ব্ল্যাক হোল রয়েছে।

সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল

এরপরে রয়েছে সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল।এর নাম থেকেই প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। এরা আকারে অতিবৃহৎ হয়ে থাকে। এক একটি সুপার মেসেজ ব্যাক হোল আমাদের সূর্যের থেকে বড় হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা এদের সম্পর্কে শুধুমাত্র ধারণাই করতে পারে। এদের সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান মানুষের নেই।

 তবে প্রত্যেকটি ছায়াপথের কেন্দ্রেই অন্তত একটি সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক ব্ল্যাক হোল রয়েছে।এমনকি আমরা যে ছায়াপথের বাসিন্দা এই আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্রেও সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব রয়েছে। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের নাম স্যাজিটেরিয়াস এ(sagittarius A)।

ধারণা করা হয় এই কৃষ্ণ গহব্বরের ভর আমাদের সূর্যের চেয়ে ৪০ লক্ষ গুন বেশি এবং এর ব্যাস আমাদের পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের সমান।ব্ল্যাক হোলের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো এগুলো সম্পূর্ণ অদৃশ্য। এখন পর্যন্ত ব্ল্যাক হোলের যে ছবিগুলো আমরা দেখতে পাই প্রায় তার সবগুলোই বিজ্ঞানীদের অনুমান এবং শিল্পীদের দক্ষতার জন্য।

অতিকায় এই মহাজাগতিক বস্তু চোখে দেখা না গেলেও এর অস্তিত্ব অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কারণ ব্ল্যাকহলের পার্শ্ববর্তী মহাজাগতিক বস্তু থেকে এর অস্তিত্বের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। কৃষ্ণ বিবরের প্রতিবেশী কোন মহাজাগতিক বস্তুর ওপর তাদের প্রভাব পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে গবেষণা করার জন্য উপাত্ত সংগ্রহ করে।

এমনই একটি আলামত হলো অ্যাক্রিশন ডিস্ক(Accretion Disk)। অ্যাক্রিশন ডিস্ক হল বিভিন্ন ধরনের নক্ষত্রের ধ্বংসাবশেষ ঘুরতে যা ব্ল্যাক হলে চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে এক ধরনের বলয় তৈরি করে। এরা হলো সেইসব গ্যাস ও মহাজাগতিক বর্জ্য যা অল্পের জন্য ব্ল্যাক হোল গ্রাস করে নিতে পারেনি।

এরা মূলত ব্ল্যাক হোলের ভেতরেও যায়নি এবং এর টান অস্বীকারও করতে পারেনি। সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের আরেকটি শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হলো কোয়াসার (Quasar)।কোয়াসার কে আপা তো নক্ষত্র বলা যায়। এরা অতি উজ্জ্বল তড়িৎ চৌম্বকীয় শক্তি। এদের উজ্জ্বলতা আকাশগঙ্গা ছায়াপথের সমান কয়েক হাজার ছায়াপথের উজ্জ্বলতার চেয়েও অনেক বেশি।

১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্ল্যাকহোল নিয়ে গবেষণা করা হলেও এর প্রকৃত কোন ছবি বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল না। ২০১৯ সালের ১০এপ্রিল মহাকাশ গবেষণার এক অবিস্মরণীয় দিন কারণ এই দিনে প্রথমবারের মতো কোন কৃষ্ণ-কোহলের ছবি তোলা সম্ভব হয়েছিল।

ব্ল্যাকহোলের প্রথম ছবি


এই সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলটি অতি বৃহৎ ছায়াপথ মেসিয়ার ৮৭ (Messier 87) এর কেন্দ্রে অবস্থিত।এর অতি উজ্জ্বল অংশের আলো আমাদের দিকে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে এবং এর অন্ধকার অংশ আমাদের থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। এই আলোক উজ্জ্বল অংশে রয়েছে বিশেষ ধরনের আয়নিক গ্যাস যাকে বলে প্লাজমা।প্লাজমাকে কে বলা হয় পদার্থের চতুর্থ অবস্থা।

এই সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল অত্যন্ত সক্রিয়। এ ব্ল্যাক হোল টি তার অ্যাক্রিশন ডিস্ক অঞ্চল থেকে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন মহাজাগত বস্তু গ্রাস করে নিচ্ছে। এর কোয়েসার কমপক্ষে প্রায় ৫০০০ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ব্ল্যাকহোলের একটা পা সরাসরি আমাদের দিকে তাক করে আছে।সেজন্য আমরা এর আলোর গতিপথ দেখতে পাচ্ছি না।

প্রায় ২০০ জন বিজ্ঞানীর ২০ বছরে নিরলস পরিশ্রমের ফল এই ছবি। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে এত চেষ্টার পরেও ব্ল্যাকহোলের ছবি অস্পষ্ট কেন? এর প্রধান কারণ হলো অতি বৃহৎ এ ব্ল্যাক হোল আমাদের থেকে বহু দূরে অবস্থিত। এর ভর আমাদের সূর্যের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন গুণ বেশি।

এবং ব্ল্যাকহোলের অন্ধকার অংশ আমাদের সম্পূর্ণ সৌরজগতের সমান।ব্ল্যাক হোলটি এত বড় আকৃতির বস্তু হলেও এর অবস্থান আমাদের থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। আর সে কারণেই কৃষ্ণ বিবরের প্রথম এই ছবিতে একে এত ছোট এবং অস্পষ্ট দেখাচ্ছে।


এমনকি এই অস্পষ্ট ছবি দেখার জন্যও আমাদের পৃথিবীর সমান একটি টেলিস্কোপের দরকার ছিল। মানুষের পক্ষে যেহেতু পৃথিবীর সমান পেলেসকোপ বানানো সম্ভব নয় তাই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে থাকা আটটি টেলিস্কোপের সাহায্যে পৃথিবীর সমান এই টেলিস্কোপের ছদ্মবেশ ধারণ করা হয়েছে।

 এই টেলিস্কোপের নাম দেওয়া হয়েছে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (Event Horizon telescope collaboration)। এই টেলিস্কোপ গুলো তাদের প্রতিনিয়ত সংগৃহীত তথ্য জোড়া দিয়ে এই ছবি তুলতে সক্ষম হয়।ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপের সাহায্যে মেসিয়ার ৮৭ ব্ল্যাকহোল ছাড়াও আমাদের নিজেদের ছায়াপথের ব্ল্যাকহোল পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।

কিন্তু নানান জটিলতার কারণে আমাদের নিজস্ব ছায়াপথের ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা এখনো পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। সেজন্য বিজ্ঞানীদের অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছু সময়।

মহাবিশ্ব সম্পর্কে কুরআন কি বলে

অবশ্যই এ কুরআন জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ। (আশ-শু‘আরা ২৬: ১৯২)
ইয়াসিন। বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ। (ইয়াসিন ৩৬:১-২) সপ্তম শতাব্দিতে কুরআন নাযিল হয়। ঐ সময় সামাজিক অবস্থা থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিক সব কিছু ছিল নাজুক অবস্থায়।

মানুষ তখন প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে কুসংস্কার ও প্রাচীন উপকথায় বিশ্বাসী ছিল। কুসংস্কারে আচ্ছন্ন যুগেই নাযিল হয়েছিল আল-কোর’আন। যাতে এক হাজারেরও বেশী আয়াতে বিজ্ঞানের মূল বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেছে। অথচ সেই কোর’আনে ১টি আয়াতও আজ পর্যন্ত মিথ্যা প্রমাণিত হয় নি আর হবেও না।

আমরা সকলে জানি যে, বিজ্ঞান সিদ্বান্ত পরিবর্তন করতে পারে। খুঁজলে এই রকম দৃষ্টান্ত অনেক পাওয়া যাবে। আমরা এখানে শুধু মহাবিশ্ব সর্ম্পকিত বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত সত্য নিয়ে আলোচনা করবো, কল্পনা বা ধারণার (Theory) উপর নির্ভরশীল কোনো তত্ত্ব নয়, যা প্রমাণিত হয়নি। তবে আমরা এখানে বিস্তারিত আলোচনা করবো না।

কয়েকটি বিষয়ে সাধারণ প্রমাণ উপস্থাপন করে আলোচনার ইতি টানবো, যাতে সকলের বুঝতে সহজ হয় আর আলোচনাও দীর্ঘ না হয়।

বিগ ব্যাং থিওরি ও বিশ্ব সৃষ্টি

আমরা জানি যে, বিগ ব্যাং থিওরি অনুযায়ী মহাবিশ্ব ছিল প্রথমে একটি বিশাল নীহারিকা। পরে ২য় পর্যায়ে তাতে এক বিরাট বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে ছায়া পথ তৈরী হয়। এগুলো পরে তারকা, গ্রহ, সূর্য ও চন্দ্র ইত্যাদিতে রুপান্তরিত হয়।

পবিত্র কোর’আন মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে নিম্নোক্ত আয়াতে বলেছে,


অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে, আকাশ আর যমীন এক সঙ্গে সংযুক্ত ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে আলাদা করে দিলাম, আর প্রাণসম্পন্ন সব কিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। তবুও কি তারা ঈমান আনবে না? (আল-আম্বিয়া ২১: ৩০)

আবার বিগ ব্যাং থিওরীর একটা অনুসিদ্ধান্ত হল অনবরত দূরে সরে যাওয়া গ্রহ নক্ষত্রগুলো একসময় আবার কাছাকাছি আসা শুরু করবে কেন্দ্রবিমুখী বল শুন্য হয়ে যাওয়ার ফলে এবং সময়ের ব্যাবধানে সব গ্রহ নক্ষত্র আবার একত্রে মিলিত হয়ে একটা পিন্ডে পরিণত হবে।

অথচ দেড় হাজার বছর আগের আল কোর’আনে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেব যেমনভাবে (লিখিত) কাগজ-দলীল গুটিয়ে রাখা হয়। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে আবার সৃষ্টি করব। ওয়া‘দা আমি করেছি, তা আমি পূর্ণ করবই। (আল-আম্বিয়া ২১: ১০৪)

মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল 

মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল এটা কিছুদিন আগেই প্রমাণিত হয়েছে। প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ স্টিফেন হকিং তার A Brief History of time বইতে লিখেছেন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ সম্পর্কিত আবিষ্কার বিংশ শতাব্দীর মহান বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব।

১৯২৫ সালে বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ এডউইন হাবেল পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণের সাহায্যে বলেছেন, প্রতিটি ছায়াপথ অন্য ছায়াপথ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। এর অপর অর্থ হল, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ এখন বৈজ্ঞানিক সত্য। কোর’আন মহাবিশ্বের প্রকৃতি সম্পর্কে একই কথা বলেছে। 
আল্লাহ বলেন,আমি নিজ হাত দ্বারা আসমান সৃষ্টি করেছি আর আমি অবশ্যই মহা প্রশস্তকারী। (আয-যারিয়াত ৫১: ৪৭)মানুষ কর্তৃক টেলিষ্কোপ আবিষ্কারের পূর্বেই কোর’আন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের কথা জানিয়েছে।অনেকেই বলতে পারেন যে, আরবরা যেহেতু জ্যোতির্বিদ্যায় অগ্রসর ছিল,

সেহেতু কুরআনে জ্যোতিবিজ্ঞান সম্পর্কিত সত্যের বিবরণ আশ্চর্যের বিষয় নয়। কিন্তু আমরা দেখি যে, জ্যোতির্বিদ্যায় আরবদের অগ্রসরতার কয়েক শতাব্দী পূর্বে কোরআন নাযিল হয়েছিল। এমনকি আরবরা তাদের বৈজ্ঞানিক শৌর্যবীর্যের যুগেও বিগ ব্যাং থিওরি সম্পর্কে কিছুই জানত না।

পৃথিবী  আগে দেখতে কেমন ছিল

প্রথম যুগের মানুষরা বিশ্বাস করত যে, পৃথিবী চেপ্টা ছিল। স্যার ফ্রনকিস ড্র্যাক প্রথম প্রমাণ করেন যে, পৃথিবী গোলাকার। তিনি ১৫৯৭ সনে পৃথিবীর চারপাশে নৌভ্রমণ করেন। আমরা দিবা রাত্রির আবর্তন সর্ম্পকিত কোর’আনের নিন্মোক্ত আয়াতটি নিয়ে চিন্তা করলে বুঝতে পারবো যে কোর’আনও ঠিক একই কথা বলছে,

তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিনে এবং দিনকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়ন্ত্রণ করেন, প্রত্যেকেই বিচরণ করছে নির্দিষ্টকৃত সময় অনুযায়ী, তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবহিত। (লুকমান ৩১: ২৯)

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক এ আর্টিকেলটিতে মূলত মহাকাশ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে আলোচনা করা হয়েছে মহাকাশ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন অর্থাৎ মহাকাশ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে। এখানে মহাকাশ আন্তর্জাতিক ষ্টেশন, মহাকাশে অবস্থানরত ব্ল্যাক হোল এবং এর প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। যদি এই আর্টিকেলটি পরে আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব বাতিল শোনান বা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন যাতে করে তারাও এ বিষয়ে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারে।

এই ধরনের বিষয়ে বলি থেকে অনেক সময় বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা কিংবা ভর্তি পরীক্ষাতেও প্রশ্ন এসে থাকে।আর এ ধরনের বিজ্ঞান চিন্তা মুলক বা জ্ঞানমূলক অথবা স্বাস্থ্য বিষয়ক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।

আর এ পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন মতামত প্রশ্ন কিংবা পরামর্শ থাকে তাহলে তা অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। পরবর্তী আর্টিকেল পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানেই শেষ করছি, ভালো থাকবেন। পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ💚।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url