আবহাওয়া ও জলবায়ু কাকে বলে

প্রকৃতি বৈচিত্র্যময়, আর অঞ্চলভেদে বিভিন্নতা আসে আবহাওয়ারও। কিন্তু কেমন হবে সেই আবহাওয়ার পরিবর্তন? কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের জলবায়ুর ধারনাটাই বা কি? কিভাবে বুঝবো আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যেকার পার্থক্য? এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
আবহাওয়া ও জলবায়ু কাকে বলে

ভূমিকা

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন।এটিকেএকুশ শতকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা হয়। দিন দিন জলবায়ুর পরিবর্তন মানব জীবনেএবং জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলায় তা আমাদের চিন্তার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনেকে মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তন মানেই মূলত উষ্ণ তাপমাত্রা। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধি গল্পের শুরু মাত্র।কারণ পৃথিবী একটি সিস্টেম, যেখানে সবকিছু সংযুক্ত, একটি ক্ষেত্রের পরিবর্তন অন্য সকলের পরিবর্তনকে প্রভাবিত করতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফলের মধ্যে রয়েছে, অন্যদের মধ্যে, তীব্র খরা, পানির অভাব, মারাত্মক দাবানল,সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বন্যা, মেরু বরফ গলে যাওয়া, বিপর্যয়কর ঝড় এবং ক্ষয়প্রাপ্ত জীববৈচিত্র্য।

আবহাওয়া কাকে বলে

কোনো নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি উপাদানের দৈনন্দিন অবস্থাকে আবহাওয়া বলে। আবহাওয়া হলো বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরের দৈনন্দিন অবস্থা।

স্থানভেদে আবহাওয়া সহজেই পরিবর্তিত হয়।কোনো স্থানের আবহাওয়া প্রতিদিন, এমনকি প্রতি ঘণ্টায় পরিবর্তিত হতে পারে ।আবহাওয়া কোনো জায়গার স্বল্প সময়ের অবস্থাকে প্রকাশ করে।

জলবায়ু কাকে বলে

কোনো নির্দিষ্ট স্থানের দীর্ঘ সময়ের, সাধারণত ৩০-৩৫ বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থাকে
জলবায়ু বলে। সাধারণত বৃহৎ এলাকাজুড়ে জলবায়ু নির্ণীত হয়ে থাকে।মানুষ বিভিন্ন উপায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন কাকে বলে

কোন জায়গার গড় জলবায়ুর দীর্ঘ মেয়াদী ও অর্থপূর্ণ পরিবর্তনকে ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ বলা হয়।

আবহাওয়া - জলবায়ুর উপাদান

১) সূর্যালোক (Sunshine) : সূর্যালোক আবহাওয়া-জলবায়ুর নিয়ন্ত্রনকারী অন্যতম প্রধান উপাদান। কোন স্থানের তাপমাত্রা সেখানকার দৈনিক সূর্যলোক প্রাপ্তির সময়ের উপর নির্ভরশীল। আর তাপমাত্রা আবহাওয়া-জলবায়ুর অন্যান্য বিষয়সমূহ নিয়ন্ত্রন করে।

সূর্যের আলোর উপর নির্ভর করে কোন স্থানের নির্দিষ্টি দিন বা সময়ের আবহাওয়াকে 'উজ্জ্বল রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়া' 'মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া' ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

২) তাপমাত্রা (Temperature) : তাপমাত্রা জলবায়ুর মূখ্য উপাদান। কোন স্থানের দৈনিক
তাপমাত্রা, দিবারাত্রির তাপমাত্রার পার্থক্য, বাৎসরিক ও ঋতুভিত্তিক তাপমাত্রা ইত্যাদীর উপর সে স্থানের আবহাওয়া-জলবায়ুর প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। মরুভূমি ও তুন্দ্রা কিংবা নিরক্ষীয় ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল ভিন্ন তাপমাত্রার বৈশিষ্ট্য জ্ঞাপক।
৩) বায়ুপ্রবাহ (Wind Movement): বায়ুপ্রবাহ কোন স্থানের আবহাওয়া-জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য নির্ধারনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। উষ্ণমন্ডলীয় স্থলজ বায়ুপ্রবাহ উষ্ণতা এবং মেরু প্রবাহ শৈত্য আনয়ন করে।

সমুদ্রভাগ হ'তে প্রবাহিত বায়ুতে ভারী বর্ষন সংঘটিত হয়। বাংলাদেশে মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের কারনে চরম আর্দ্র অবস্থা বিরাজ করে। সাংবাৎসরিক আয়নবায়ু প্রবাহিত অঞ্চলে শুষ্ক অথবা মরু জলবায়ু দৃশ্যমান হয়।

৪) বায়ুচাপ (Air Pressure) : কোন স্থানে উচ্চচাপ সৃষ্টি হ'লে বায়ু বর্হিঃগামী হয় এবং শৈত্য ও
শুষ্কতা বিরাজ করে। অপরদিকে নিম্নচাপ সৃষ্টি হ'লে বায়ু কেন্দ্রগামী হয় এবং ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টিপাত সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন কালবৈশাখী স্থলজ নিম্নচাপের ফল। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সার্বক্ষণিক নিম্নচাপ বিরাজ করায় প্রতিদিন বিকালে বজ্র-বিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়।

৫) আর্দ্রতা ও মেঘাচ্ছন্নতা (Humidity & Cloudiness): আর্দ্রতা হ'ল বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমান যা' উষ্ণতা ও বাষ্পীভবনের মাত্রা দ্বারা নির্ধারিত হয়। বায়ুতে জলীয়বাষ্প না থাকলে শুদ্ধ আবহাওয়া এবং থাকলে আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজ করে। আর্দ্রতার মাত্রা বৃদ্ধি পেলে মেঘাচ্ছন্ন অবস্থা বিরাজ করে।

৬) বারিপাত বা অধঃক্ষেপন (Precipitation): বারিপাত বলতে ঘণীভূত বাষ্পের পতনকে বুঝায় বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি, শিশির, তুহিন ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ জলীয়বাষ্প ঘণীভবনের পর যে কোন রূপে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হ'লে তা' বারিপাত বা অধঃক্ষেপন হিসেবে পরিগনিত।

বারিপাত বা অধঃক্ষেপন আবহাওয়া-জলবায়ুর উপাদান হিসেবে পরিগনিত। কোন স্থানের দৈনিক ও বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাত বা তুষারপাত ঐ স্থানের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য নির্দেশক।

আবহাওয়া-জলবায়ুর উপাদানসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক

তাপমাত্রা- বৃষ্টিপাত/বারিপাত: তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের সম্পর্ক সরাসরি। তাপমাত্রা বাড়লে বাষ্পীভবন বাড়ে এবং জলীয় বাষ্প সম্পৃক্ত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। আবার বৃষ্টিপাত কোন স্থানের তাপমাত্রাকে হ্রাস করে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাদিন প্রচন্ড উত্তাপে পানি বাষ্পীভূত হয়ে বিকালে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে আবহাওয়া শীতল করে।

বৃষ্টিপাত ছাড়াও যেকোন প্রকার বারিপাত (কুয়াশা, শিশির, তুহিন, তুষার ইত্যাদি) তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়- আবার তাপমাত্রা কমার ফলেই বিভিন্ন প্রকার বারিপাত (তুষার, শিশির) ঘটে থাকে। তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের সম্পর্কটি নিম্নোক্ত সমীকরনের সাহায্যে প্রকাশ করা যায:

Pá1/T, যখন P= বৃষ্টিপাত/বারিপাত T=তাপমাত্রা
তাপমাত্রা- আর্দ্রতা: তাপমাত্রা বাড়লে বায়ুর আর্দ্রতা ধারন ক্ষমতা বেড়ে যায়। আর্দ্র বায়ু ভূ-পৃষ্ঠ থেকে . তাপ বিকিরনে বাধা দেয়াতে ভ্যাপসা গরম অনুভুত হয়। তবে সার্বিকভাবে আর্দ্রতা তাপমাত্রা হ্রাস করে। মরু অঞ্চলের তাপমাত্রা এবং বনভূমির তাপমাত্রার পার্থক্যের মানদন্ড হ'ল আর্দ্রতা।

আর্দ্রতা-বৃষ্টিপাত/বারিপাত: আর্দ্রতার ফলেই বিভিন্ন প্রকার বারিপাত সংঘটিত হয়। বৃষ্টিপাত, কুয়াশা, শিশির, তুহিন ইত্যাদি আর্দ্রতারই বিভিন্ন রূপ। আর্দ্র বায়ু সম্পৃক্ত হয়েই বৃষ্টিপাত ঘটায়। আবার বৃষ্টি জলাশয় ভরাট করে পুন: বাষ্পীভবন এবং বায়ু আদ্রীকরনে ভূমিকা রাখে।

বৃষ্টিপাতের পরোক্ষ ফল হিসাবে সৃষ্ট উদ্ভিজ্জ ও অরণ্যের প্রস্বেদনও বায়ুর আর্দ্রতা আনয়ন ও বৃষ্টিপাত ঘটাতে সহায়তা করে।তাপমাত্রা ও বায়ুর চাপ তাপমাত্রা ও বায়ুর চাপ সরাসরি সম্পকযুক্ত। তাপমাত্রা বাড়লে বায়ুর নিম্নচাপ ও কমলে উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়। তাপমাত্রা ও বায়ুর চাপের সম্পর্কটি চার্লস ও বয়েলের সুত্রের সাহায্যে প্রকাশ করা যায়-

PV=RT এবং PáT
P =চাপ, T =তাপমাত্রা, V=আয়তন, R =ধ্রুব, অনুপাত চিহ্ন
বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ: বায়ুপ্রবাহ সর্বদাই বায়ুচাপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত- আবার বায়ুর চাপও অনেকক্ষেত্রে বায়ুপ্রবাহ দ্বারা প্রভাবিত। বায়ু উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। বিভিন্ন বায়ুপ্রবাহের সম্মিলন উচ্চচাপ কিংবা বায়ুর প্রতিসরন নিম্নচাপ সৃষ্টি করে।

নিরক্ষীয় ও মেরুবৃত্ত অঞ্চল থেকে আগমনকৃত বায়ুর কারণে ক্রান্তীয় অঞ্চলে উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টি হয়েছে।বায়ুর চাপ ও বৃষ্টিপাত : বায়ুর চাপ ও বৃষ্টিপাত নিবিড় সম্পর্কসূত্রে আবদ্ধ। কোন অঞ্চলে লঘুচাপ বা নিম্নচাপ সৃষ্টি হ'লে বাষ্পীভবনের মাত্রা বেড়ে যায় ও বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়।

বায়ুপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাত : বায়ুপ্রবাহের দিক এবং প্রবাহিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য কোন স্থান বা এলাকার বৃষ্টিপাতকে প্রভাবিত করে। সমুদ্রভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ুতে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকাতে তা'তে বৃষ্টিপাত ঘটে। কিন্তু স্থলভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ুতে সাধারনত: বৃষ্টি হয় না।

বায়ুপ্রবাহ ও তাপমাত্রা: বায়ুপ্রবাহের দিক এবং উৎস অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য কোন স্থান বা এলাকার তাপমাত্রার উপর প্রভাব বিস্তার করে। উষ্ণমন্ডল হ'তে প্রবাহিত বায়ুতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি হয় কিন্তু মেরু অঞ্চল অথবা উচ্চ পার্বত্যভূমি হ'তে বায়ু প্রবাহিত হলে তাপমাত্রা হ্রাসপ্রাপ্ত হয়।

আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান পরিমাপ ও পরিমাপকঃ আবহ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে হলে বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রের সাহায্য নিতে হয়। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

তাপমাত্রা পরিমাপঃ-
বায়ু চলাচলযুক্ত কাঠের বােেক্স থার্মোমিটার স্থাপন করে তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয় (সাধারণত; ১.৪ মিটার উচ্চতায় থার্মোমিটার স্থাপন করা হয়ে থাকে)। বৃষ্টিপাতের বৃষ্টিপাতের পরিমাপের জন্য বিভিন্ন যন্ত্র ও পদ্ধতি ব্যবহৃত করা হয়। তবে সর্বাধিক এবং সাধারণভাবে ব্যবহৃত যন্ত্রের মধ্যে রেইন গেজ উল্লেখ্য।
(১) নন রেকর্ডিং রেইন গেজঃ- এই যন্ত্রে সংগৃহীত বৃষ্টিকে স্কেলযুক্ত সিলিন্ডারে পরিমাপ করা হয়। এটি ইঞ্চি, সেন্টিমিটার বা মিলিমিটারে পরিমাপযোগ্য। সূত্রটি হল: সংগৃহীত মোট বৃষ্টিপাত বা বৃষ্টিপাতের গভীরতা সংগৃহীত বৃষ্টি (ঘন সে.মি./ইঞ্চি) /গেজের মুখের ক্ষেত্রফল (বর্গ সে.মি./ইঞ্চি)

(২) রেকর্ডিং গেজঃ রেকর্ডিং গেজে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় গ্রাফ পেপারে সময়ভিত্তিক বৃষ্টিপাতের রেকর্ড থাকে। বৃষ্টিপাতের পরিমাপকে মিলিমিটার, সেন্টিমিটার বা ইঞ্চিতে প্রকাশ করা হয়।

আর্দ্রতা পরিমাপঃ
আদ্রর্তা পরিমাপের জন্য সাইক্রোমিটার, হেয়ার হাইগ্রোমিটার ও ডিউপয়েন্ট হাইগ্রোমিটার ব্যবহার করা হয়। এ'ছাড়া আর্দ্র ও শুস্ক বাল্ব থার্মোমিটারের সাহায্যে আর্দ্রতা নির্ণয় করা হয়ে থাকে।

বায়ুচাপ পরিমাপঃ
বায়ুচাপ পরিমাপের জন্য পারদ ব্যারোমিটার অথবা অ্যানোরয়েড ব্যরোমিটার ব্যবহার করা হয়। এ'ছাড়া ফরটিন চাপমান যন্ত্রের সাহায্যেও আর্দ্রতা নির্ণয় করা হয়ে থাকে।বায়ুপ্রবাহ পরিমাপ (Management of wind movement); বায়ু প্রবাহের দিক নির্ণয়ের জন্য বায়ুমান যন্ত্র ও গতিবেগ পরিমাপ করার জন্য আনিমোমিটার ব্যবহৃত হয়।

মোট সূর্যালোকের পরিমানঃ
সূর্যালোকের পরিমান পারহেলিওমিটারের সাহায্যে নির্ণয় করা হয় (একটি ধাতব ফ্রেমের উপর ১০ সে.মি. ব্যাসার্ঘ্যের কাঁচের বল আটকানো থাকে। সূর্যরশ্মি কাঁচের বলের নীচে একটি কার্ডে পোড়া দাগ সৃষ্টি করে। দিনের শেষে কার্ডটি সরিয়ে নিয়ে পোড়া অংশ যোগ করে মোট সূর্যালোক সময় নির্ণয় করা হয়)।

বিউফোর্ট স্কেলঃ
বৃটিশ নৌবাহিনীর এডমিরাল স্যার কানসিস বিউফোর্ট তাঁর দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা হতে বায়ুর গতিবেগের ওপর অতি সাধারণ অথচ খুব কার্যকারী একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এ পদ্ধতি তার নামানুসারে বিউফোর্ট স্কেল (Beufort Scale) নামে পরিচিত। এ স্কেল পরবর্তীকালে জি.সি. সিম্পসন কর্তৃক সংশোধিত হয়।

আবহাওয়ার ও জলবায়ুর নিয়ামক

কোন স্থানের আবহাওয়ার ও জলবায়ু বিভিন্ন নৈসর্গিক প্রপঞ্চ দ্বারা প্রভাবিত। নিম্নলিখিত অবস্থাগুলি এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য:
১) অক্ষাংশ (latitude);
২) উচ্চতা (altitude);
৩) জল ও স্থলভাগের অবস্থান (location of land and sea);
৪) সমুদ্রস্রোত (oean current);
৫) অরণ্যের অবস্থান (forest cover);
৬) সমুদ্র থেকে দূরত (distance from sea);
৭) মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য (soil characteristics);
৮) বায়ুমন্ডলের গভীরতা (depth of atmosphere);
৯) বায়ুপ্রবাহের দিক (wind direction);
১০) অগ্নুৎপাত (volcanism);
১১) পর্বতের অবস্থান (location of mountain);
১২) ভূমির ঢাল (land slope);
১৩) সূর্যের অপসুর ও অনুসুর অবস্থান (apehelion and perehelic
১৪) সূর্যলোকের স্থায়ীত্ব (Solar Constant)
১৫) সূর্যের উত্তরায়ন ও দক্ষিণায়ন (summer solstice & winter so
১৬) শারদীয় ও মহাবিষুব (Autum & sprimg Equinoxes
১৭) সৌর কলঙ্ক চক্র (sunspot cycle)
১৮) পৃথিবীর অক্ষের পরিবর্তন (change in earth's orbit)
১৯) ভূমি ব্যবহার (land use)
২০) তুষার ও বরফের প্রভাব (influence of snow & ice)
(২১) বায়ুপুঞ্জ (Air mass)
(২২) বায়ুপ্রাচীর (Air Front)
২৩) জেট স্ট্রীম (Jet Stream)
২৪) এল-নিনো ও লা-নিনা (EL-Nina & LA- Lina)
২৫) গ্রীন হাউস গ্যাস (green house gas);

আবহাওয়ার ও জলবায়ুর নিয়ামক সমুহের বিশ্লেষন

(১)অক্ষাংশ (Latitude)ঃ পৃথিবীর জলবায়ুমন্ডলগুলি অক্ষাংশিক অবস্থান দ্বারা নির্ধারিত হয়। সৌরশক্তি বা সূর্যকিরন আবহাওয়া-জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য নির্ধারনে প্রধান নেপথ্য কারন। অক্ষাংশভেদে সূর্যরশ্মির প্রাপ্তিতে কম-বেশী কিংবা সূর্যকিরনের লম্ব বা তির্যক পতনের উপর জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য নির্ভরশীল।

(২) উচ্চতা (Altitude): উচ্চতার কারনে তাপমাত্রা, অধঃক্ষেপন এবং জলবায়ুর অন্যান্য উপাদানে
তারতম্য ঘটতে পারে। উচ্চতা আবহাওয়া-জলবায়ুকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে। সাধরনত: প্রতি ১০০০ উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে তাপমাত্রা ৩০ ফা.হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। 

(৩) জল ও স্থলভাগের অবস্থান (location of land and sea): স্থলভাগ অপেক্ষা জলভাগ উষ্ণ ও শীতল হয় ধীরগতিতে। এ কারনে শীতকালে স্থলভাগ অপেক্ষা জলভাগ উষ্ণতর এবং গ্রীষ্মকালেজলভাগ তুলনামূলক শীতল থাকে।

(৪) সমুদ্রস্রোত (ocean currents): উষ্ণ স্রোত প্রভাবিত হ'লে উপকূল বরফমুক্ত থাকে এবং ঐ
প্রোত প্রচুর জলীয়বাষ্প বহন করাতে বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। অপরদিকে শীতল স্রোতের প্রভাবে উপকুলে বরফ জমাট বাঁধে এবং তুষারপাত হয়।

(৪) সমুদ্রস্রোত (ocean currents): উষ্ণ স্রোত প্রভাবিত হ'লে উপকূল বরফমুক্ত থাকে এবং ঐ স্রোত প্রচুর জলীয়বাষ্প বহন করাতে বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। অপরদিকে শীতল স্রোতের প্রভাবে উপকুলে বরফ জমাট বাঁধে এবং তুষারপাত হয়।

৫) অরণ্যের অবস্থান (Location of forestঅরণ্য ও স্বাভাবিক উদ্ভিজ্জ দিনের বেলায় কার্বন-ডাই- অক্সাইড (CO2) শোষন করে অক্সিজেন (০₂) ত্যাগ করে। ফলে যেসব এলাকা অরণ্যাচ্ছাদিত এবং গাছপালার পরিমান যেখানে বেশী সেখানে তাপমাত্রা কম থাকে এবং তুলনামূলক শীতল আবহাওয়া বিরাজ করে।

অরণ্যের প্রস্বেদনে বায়ুমন্ডলে জলীয়বাষ্পের পরিমান বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে বায়ুমন্ডল শীতল থাকার পাশাপাশি হালকা মেঘের আস্তরন সৃষ্টি হয় এবং মাঝে মধ্যে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়। বিশ্বের বিস্তীর্ণ বণাঞ্চলসমূহে এ ধরনের অরণ্য বৃষ্টিপাত দৃশ্যমান হয়। এ'ছাড়া বিস্তীর্ণ অরণ্যাঞ্চল কোন অঞ্চলের গড় বৃষ্টি দিন ও বৃষ্টিপাতের পরিমানকে প্রভাবিত করে।

অরণ্য ও গাছপালা নিধন করলে বৃষ্টিপাত কমে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিস্তীর্ণ অরণ্যরাজি ও স্বাভাবিক উদ্ভিজ্জ কোন অঞ্চলের বৃষ্টিপাত ৪০% পর্যন্ত বাড়াতে পারে। ক্রান্তীয় অঞ্চলে অরণ্যের প্রস্বেদন ৫৬% পর্যন্ত বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি করতে পারে (Berkmuller, 1992)। আমাজান অববাহিকায় ৫০% বুষ্টিপাত নিরক্ষীয় বৃষ্টিজ অরণ্যের প্রস্বেদন থেকে সংঘটিত হয় (Salati & Voss, 1984)।

(৬) সমুদ্র থেকে দূরত্ব (Distance from sea): সমুদ্রের উপকূলভাগে স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর প্রভাবে জলবায়ু সমাভাবাপন্ন থাকে। এক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালে তুলনামূলক কম উষ্ণতা এবং শীতকালে তুলনামূলক কম শীত অনুভূত হয়।

(৭) মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য (soil charactiristics): উদ্ভিজ্জ আবরনযুক্ত মৃত্তিকা অপেক্ষা উন্মুক্ত নগ্ন
মৃত্তিকা তাপ শোষন করে বেশী এবং বিকীর্ণ উত্তাপে বায়ুমন্ডল অধিক উত্তপ্ত হয়। আবার হালকা রং এর মৃত্তিকা দ্বারা বায়ুমন্ডল অধিক উত্তপ্ত হয়।

(৮) বায়ুমন্ডলে গভীরতা (Depth of the Atmosphere) : সূর্যরশ্নি অধিক বায়ুস্তর ভেদ করে ভূ- পৃষ্ঠে আসলে উত্তাপ কম অনুভূত হয়। আবার হালকা বায়ুস্তর ভেদ করে সূর্যরশ্মি পতিত হ'লে উত্তাপ বেশী অনুভূত হয়। সকালে ও বিকালে বায়ুমন্ডলের গভীরতা বেশী থাকায় উত্তাপ কম থাকে কিন্তু দুপুরে বায়ুস্তর হালকা থাকায় উত্তাপ বেশী থাকে।

(১০) বায়ুপ্রবাহের দিক (wind Direction) : স্থলভাগ হ'তে প্রবাহিত বায়ু শুষ্ক হওয়াতে জলীয়বাষ্প থাকে না এবং এ বায়ু প্রবাহিত অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় না। কিন্তু সমুদ্রভাগ হ'তে প্রবাহিত বায়ুতে জলীয়বাষ্প থাকাতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে।

১১) অগ্নুৎপাত (Volcaism) : আগ্নেয়গিরি প্রভাবিত অঞ্চলে অগ্ন্যুৎপাত জলবায়ুকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রন করে থাকে। তা'ছাড়া বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্ন্যুৎপাত পরিবর্তক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে আবহাওয়া ও জলবায়ু নিম্নোক্তভাবে প্রভাবিত হ'তে পারে;

(i) অগ্ন্যুৎপাত উৎক্ষিপ্ত ভস্ম ও ধূলিকনা বায়ুমন্ডলে চাদর হিসেবে কাজ করে। ফলে সূর্যরশ্নি সরাসরি ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছতে না পারায় তাপমাত্রা কমে যায়। স্বল্প পরিসর স্থানে তাপমাত্রা পতনের পাশাপাশি ব্যাপক অগ্ন্যুৎপাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রারও পতন হ'তে পারে। অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন বরফযুগের আবির্ভাবের আগে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছিল।

(ii) অগ্ন্যুৎপাত অনেক সময় গ্রীন হাউস গ্যাসের কুপ্রভাব থেকে ভূ-পৃষ্ঠকে রক্ষা করে। গ্রীন হাউস গ্যাসের প্রভাবে বায়ুমন্ডলের অধিক উত্তাপন অগ্নুৎপাতে উৎক্ষিপ্ত ভস্মাদির স্তর দ্বারা নিবারিত হয়।

 ২০১০ সালে আইসল্যান্ডের আগ্নেয়গিরি থেকে উৎক্ষিপ্ত ব্যাপক ভস্মাদির কারনে পশ্চিম ইউরোপে বিমান চলাচল দীর্ঘসময়ব্যাপী বাধাগ্রস্থ হ'লেও অধিক উত্তাপনের কারনে গ্রীনল্যান্ড ও আর্কটিক অঞ্চলের বরফগলনের মাত্রা নিবারিত হবে।

iii) অগ্নুৎপাতে উৎক্ষিপ্ত পদার্থসমূহের ৬০%-৯০% জলীয় বাষ্প। এ কারনে অগ্নুৎপাতের পরপরই সন্নিহিত এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে। এ'ছাড়া সমুদ্রভাগে অগ্নুৎপাত ঘটলে উত্তপ্ত গ্যাসের প্রভাবে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।

iv) জলবায়ুর উপর অগ্নুৎপাতের ফলাফল উৎক্ষিপ্ত পদার্থের বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। ভস্মাদির স্থলে বিষাক্ত সালফার-ডাই-অক্সাইড (So₂) নির্গমনের মাত্রা বেশী হ'লে তা' ওজোন স্তরে গর্ত তৈরী করে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে স্থায়ী ভূমিকা রাখে।

উদাহরনস্বরূপ, ১৯৯১ সালে ফিলিপাইনের মাউন্ট পিনোটুবো আগ্নেয়গিরির অগ্নুপাতে বায়ুমন্ডলে ২০ মিলিয়ন সালফার-ডাই-অক্সাইডের মেঘ অনুপ্রবিষ্ট হয় (উৎস: শাহীদ, খাতুন ও জামান, ২০১১)।

(১২) পর্বতের অবস্থান (Location of mountain) :
পর্বতের প্রতিবাত ঢালে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। কিন্তু অনুবাত ঢালে কোন বৃষ্টিপাত না হওয়াতে সেখানে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল সৃষ্টি হয়। পর্বতের বাধা কোন অঞ্চলকে চরম উষ্ণতা এবং শৈত্যের কবল থেকে রক্ষা করে। এছাড়া উপকূলে পর্বতের অবস্থান অভ্যন্তরভাগকে সামুদ্রিক প্রভাবের কবল থেকে রক্ষা করে।

(১৩) ভূমির চাল (Slope of the Land): যে ঢালে সরাসরি সূর্যকিরন পতিত হয় তা' অধিক উত্তপ্ত এবং বিপরীত পার্শ্বে সূর্যকিরন সরাসরি না পড়াতে কম উত্তপ্ত হয়। এ ক্ষেত্রে ঢালের একপার্শ্বে উষ্ণ ও অন্যপার্শ্বে মৃদুভাবাপন্ন আবহাওয়া বিরাজ করে।

(১৪) অপসুর ও অনুসুর অবস্থা (Aphelion and Perehelion Position of earth): পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরতম অবস্থান অপসুর এবং নিকটতম অবস্থান অনুসুর অবস্থা বলে বিবেচিত। অপসুরের দিন (৪ জুলাই) পৃথিবী থেকে সূর্য ১৫.২৫ কোটি কিলোমিটার এবং অনুসুরের দিন (৩ • জানুয়ারী) ১৪.৭৫ কোটি কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করে। অপসুরের দিন অপেক্ষা অনুসুরের দিন পৃথিবী ৭% বেশী সৌরশক্তি পেয়ে থাকে।

(১৫) সূর্যলোকের স্থায়ীত্ব (Solar Constant): ক্রান্তীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে দিবস দীর্ঘস্থায়ী হয় বলে সূর্যলোক প্রাপ্তি ঘটে বেশী তাপমাত্রাও বেশী থাকে। অপরদিকে শীতকালে দিবসের স্থায়ীত্ব কম হওয়াতে তাপমাত্রাও কম থাকে। তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চলে দিবস ক্ষণস্থায়ী বলে তাপমাত্রাও থাকে অত্যন্ত কম।

(১৬) সূর্যের উত্তারায়ন ও দক্ষিণায়ন (Summes Solstice & Winter Solstice) : ২২ জুন সূর্য কর্কট ক্রান্তির (২৩.৫° উত্তর অক্ষাংশ) উপর লম্বভাবে অবস্থান করে। ঐ দিনটি সূর্যের উত্তরায়ন হিসেবে পরিচিত। ঐ দিন সূর্যরশ্নি ৬৬.৫° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত পৌছায় কিন্তু দক্ষিণ মেরু থেকে ২৩.৫০ সরে আসে।

ঐ দিন উত্তরে দিবাভাগের দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে এবং দক্ষিনে কমতে থাকে। কর্কট ক্রান্তি রেখায় ঐ দিনটি বৎসরের সর্ববৃহৎ হিসেবে পরিচিত এবং এরপর দিনের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে। ঐদিন সুমেরু বৃত্ত থেকে উত্তর মেরু পর্যন্ত অবিরাম দিন এবং কুমেরু বৃত্ত থেকে কুমেরু পর্যন্ত অবিরাম রাত থাকে।

সূর্যের দক্ষিণায়নের দিন হচ্ছে ২২ ডিসেম্বর। ঐ দিনটি কর্কট ক্রান্তীয় এলাকায় ক্ষুদ্রতম এবং মকর ক্রান্তীয় এলাকায় দীর্ঘতম দিন। দিনটিতে উত্তরায়নের বিপরীত ঘটনা অর্থাৎ কুমেরু বৃত্ত থেকে কুমেরু পর্যন্ত অবিরাম দিন এবং সুমেরু বৃত্ত থেকে কুমেরু পর্যন্ত অবিরাম রাত থাকে।

(১৭) শারদীয় ও মহাবিষুব (Autum and Spring Equinoxes) :২৩ শে সেপ্টেম্বর ও ২১ শে মার্চ সূর্য তার কর্কট ও মকরীয় লম্ব অবস্থান থেকে নিরক্ষীয় লম্ব অবস্থানে ফিরে আসে। ঐ দু'দিন বিশ্বের সর্বত্র দিন ও রাত্রি সমান।

২৩ শে সেপ্টম্বরকে জলবায়ুবিজ্ঞানীরা শারদীয় বা জলবিষুব এবং ২১ শে মার্চকে বাসন্তী বা মহাবিষুব নামে অভিহিত করেন। শারদীয় বিষুবের পর শীতের আগমন শুরু হয় এবং বাসন্তী বিষুবের পর শুরু হয় গ্রীষ্মের আগমক। দক্ষিণ গোলার্ধে এর বিপরীত অবস্থা ঘটে।

(১৮) সৌরকলঙ্কচক্র (Sunspot cycle) : সৌরকলঙ্ক হ'ল উজ্জ্বল সৌর পৃষ্ঠের বিপরীত দিকের
কালো দাগসমূহ। দাগগুলি চুম্বকীয় শক্তির এলাকা এবং চক্রাকারে আবির্ভূত হয়। জলবায়ুবিজ্ঞানীগন আবহাওয়া-জলবায়ুর উপর প্রভাব বিস্তারকারী তিন ধরনের সৌরকলঙ্কচক্রের সন্ধান পেয়েছেন-

i) এগারো বছরের সৌর কলঙ্ক চক্র
ii) দ্বৈত সৌরকলঙ্ক চক্র এবং
iii) ৮০ বছরের দীর্ঘযুগব্যাপী চক্র

চক্রক্রয়ের ফলাফল হিসেবে সৌর বিচ্ছুরনে তারতম্য ঘটে যা' জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। ইউরোপের ক্ষুদ্র বরফযুগের সময় (১৬৪৫-১৭১৫ সালে) সৌরকলঙ্কের কার্যকলাপ সর্বনিম্ন ছিল। আবার ১১০০- ১২৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে সৌরকলঙ্কের কার্যকলাপ সর্বাধিক ছিল বিধায় উত্তর গোলার্ধের উষ্ণতা তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেশী ছিল।

(১৯) পৃথিবীর অক্ষের পরিবর্তন (Change in earth's orbit): পৃথিবীর অক্ষের কৌণিক অবস্থান পরিবর্তন হ'লে আবহাওয়া-জলবায়ু সরাসরি প্রভাবিত হয়। কৌণিক অবস্থান সর্বাধিক হ'লে শীতের তীব্রতা এবং গ্রীষ্মের প্রখরতা চরমে পৌছায় আবার কৌণিক অবস্থান কম হ'লে শীত গ্রীষ্মের প্রখরতা কমে আসে।

(১৯) আলবিদোর পার্থক্য (difference in albedo): বিভিন্ন ভূমি আচ্ছাদনের আলবিদোর পার্থক্যের দরুন ভিন্নধর্মী ক্ষুদ্রায়তন ও স্থানীয় জলবায়ু সৃষ্টি হয়ে থাকে।

(২০) তুষার ও বরফের প্রভাব (Influence of Snow & ice): তুষার অথবা বরফের আবরন থাকলে হিমশীতল আবহাওয়া সৃষ্টির পাশাপাশি উচ্চচাপের সৃষ্টি হবে এবং পার্শ্ববর্তী নিম্নচাপ এলাকাগুলোতে হিমশীতল বায়ু প্রবাহিত হ'তে থাকবে।

(২১) বায়ুপুঞ্জ (Air mass): আধুনিক জলবায়ুবিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য নির্ধারনের ক্ষেত্রে বায়ুপুঞ্জকে মুখ্য নিয়ামক হিসাবে গণ্য করে থাকেন। উষ্ণ, শীতল, সামুদ্রিক কিংবা মহাদেশীয় বায়ুপুঞ্জের উপস্থিতিতে জলবায়ুর প্রকৃতিও ভিন্ন হয়ে থাকে।

(২২) বায়ুপ্রাচীর (Air Front) : দু'টি ভিন্নধর্মী বায়ুপুঞ্জের সীমানা হ'ল বাঁয়ুপ্রাচীর। বায়ুপ্রাচীর আবহাওয়া ও জলবায়ুর অন্যতম নিয়ামক। বায়ুপ্রাচীর বরাবর নিয়মিতভাবে বাড়-বৃষ্টি কিংবা কুয়াশা- কৃষ্ণটিকা সংঘটিত হয়ে থাকে।


(২৩) জেট স্ট্রীম (Jet Stream): জেট স্ট্রীম বিভিন্ন অক্ষাংশে উষ্ণতা ও শৈত্যের আদান-প্রদান করে। তা'ছাড়া বিশেষ বিশেষ জেট প্রবাহ আঞ্চলিক জলবায়ুর প্রকৃতি নির্ধারণে সহায়তা করে। দক্ষিণ এশিয়ার গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ু ঋতুভিত্তিক পূবালী জেটের ফল বলে আধুনিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

(২৪) এল-নিনা ও লা-নিনা (EL-Nina & LA- Nina) এল-নিনা ও লা-নিনা চক্রাকারে আবর্তিত হয় এবং এটা আবহাওয়া-জলবায়ুর অন্যতম নির্ধারক। বাংলাদেশে ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যা লা- নিনার ফল। আবার ২০১০ সালের চরম খরা এল-নিনো মোদকী বা ডেটলাইন এল-নিনোর ফল।

(২৫) গ্রীন হাউস গ্যাস (Green hose Gas): কোন কারনে বায়ুমন্ডলে গ্রীন হাউস গ্যাসসমূহের একটি বা একাধিক পরিমানে বেড়ে গেলে উত্তাপন বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে গড় তাপমাত্রাসহ বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন আসতে পারে এবং ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস বাড়ার সম্ভবনা থাকে।

বাংলাদেশে বর্তমানে জলবায়ুগত পরিবর্তন গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার ফল বলে বিজ্ঞানীরা ধারনা করেছেন (গ্রীন হাউস গ্যাস বলতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO₂), কার্বন মনোক্সাইড (CO), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O), মিথেন (CH4), ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (CFC) ইত্যাদি গ্যাসসমূহকে বুঝানো হয়ে থাকে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেল আবহাওয়া ও জলবায়ুর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে আবহাওয়া ও জলবায়ু কাকে বলে, এর উপাদান গুলো কি কি, এর নিয়ামক গুলো কি কি ও এর বিশ্লেষণ, এদের মধ্যে সম্পর্ক ইত্যাদি সম্পর্কে যাচাইকৃত তথ্য ও উপস্থাপন করা হয়েছে।

আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়েছেন।যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।

এছাড়াও আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো যেমন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য , বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী,বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।

আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url