এরিস্টটল কত সালে জন্মগ্রহন করেন
ইতিহাসে যেসব দার্শনিকের নাম চিরস্মরণীয় তাদের মধ্যে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল অন্যতম। তার অবদান অনস্বীকার্য। চলুন জেনে নেয়া যাক তার জন্ম ও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ সম্পর্কে।
এরিস্টটলের সরকার ব্যবস্থাঃএরিস্টটল এর নিকট রাষ্ট্র ও সরকার এর ধারণা দুটি পৃথক ও পরিষ্কার। রাষ্ট্র বলতে তিনি সকল নাগরিকের সমষ্টি এবং সরকার বলতে রাষ্ট্রের শাসন ও নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে গঠিত সার্বভৌম সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়েছেন।
সরকারের শ্রেণীবিভাগ: Aristotle সরকারের শ্রেণীবিভাগ করতে গিয়ে দুটি মাপকাঠির ব্যবহার করেছেন। যথা: (১) শাসকের সংখ্যানীতি এবং (২) সংবিধানের উদ্দেশ্যনীতি। সংবিধানের উদ্দেশ্যনীতির ভিত্তিতে Aristotle সরকারকে দু'ভাগে ভাগ করেছেন যথা- (১) স্বভাবিক সরকার (২) বিকৃত সরকার। স্বভাবিক সরকারের আবার তিনটি রূপ রয়েছে।
এরিস্টটলের মতে, জনতাতন্ত্র ছিল নিকৃষ্টতম সরকার এবং আদর্শ রাজতন্ত্র ছিল সর্বোৎকৃষ্ট সরকার। এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণীবিন্যাস নানা সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে ঠিকই; কিন্তু এটা নিশ্চিত তিনি বিজ্ঞানসম্মত সরকারের শ্রেণীবিভাগের সূত্রপাত করেছেন।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, এরিস্টটল তাঁর নাগরিকতা বিষয়ক ধারণার অত্যন্ত গোঁড়ামির 'পরিচয় দিয়েছেন। কেননা তিনি শুধু ধনিক শ্রেণীর মধ্যে নাগরিকতাকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। নগর রাষ্ট্রকে সামনে রেখে প্রকাশিত এ মতবাদটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সম্পূর্ণরূপে প্রযোজ্য না হলেও অনেক ক্ষেত্রে এখনও প্রযোজ্য।
তাঁর কাছে সংবিধান হচ্ছে, সংবিধান কেবল রাষ্ট্রের অংশ নয়। এটি শুধু রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আইনগত ভিত্তি নয়। এটি নিজেই রাষ্ট্র ও সমগ্র জাতীয় জীবনকে প্রকাশ করে। সংবিধান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, সংবিধান হল একটি জীবন পদ্ধতি যা রাষ্ট্র নিজের জন্য বেছে নিয়েছে।
বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।
আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
ভূমিকা
রাষ্ট্রচিন্তায় এরিস্টটল এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি প্রাচীন যুগে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর দর্শন আধুনিক যুগেও বিশেষ প্রভাব রয়েছে। বস্তুত রাষ্ট্রচিন্তা, রাষ্ট্র ও সরকারের প্রসঙ্গত রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় বাস্তবভিত্তিক ও যৌক্তিক বিশ্লেষণ তাঁকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মর্যাদা দিয়েছে।তাঁর রাষ্ট্রদর্শনের অন্যান্য দিক যেমন- বিপ্লব তত্ত্ব, আইনের শাসন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে স্বতন্ত্র বিষয়ের মর্যাদা, শিক্ষা সম্পর্কিত ধারণা, আদর্শ রাষ্ট্র ইত্যাদি গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করা যায়।
এরিস্টটলের অবদানের মূল্যায়ন করতে গিয়ে অধ্যাপক বার্কার তাঁর 'The Politics of Aristotle' গ্রন্থে বলেছেন, "Aristotle was too rich in adaptability, too poor in original fancy, to shine as a star of first magnitude among the creators of new ideas।
এরিস্টটল কত সালে জন্মগ্রহন করেন
খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪ অব্দে মেসিডোনিয়ার নিকটবর্তী স্ট্যাগিরা নগরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন রাজ দরবারের একজন চিকিৎসক। এ সুযোগে তিনি রাজকীয় পরিবেশে বেড়ে উঠেছিলেন। তাই এরিস্টটলের মতবাদের মধ্যে অভিজাততান্ত্রিক চিন্তাচেতনা পরিলক্ষিত হয়। এরিস্টটল তাঁর পিতার সাথে রাজকীয় পরিবেশে থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে জ্ঞান লাভ করেন।আরো পড়ুনঃ প্লেটো কত সালে জন্মগ্রহণ করেন
তার বয়স যখন ১৮ বছর, তখন তাঁর পিতার মৃত্যু হলে তিনি এথেন্সে গিয়ে প্লেটোর একাডেমির ছাত্র হন। প্লেটোর ন্যায় যোগ্য শিক্ষকের ছাত্র হওয়ার সুযোগ লাভ করেন। প্লেটো একাডেমি পরিত্যাগের পর বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ করেন এবং শেষে ৩৩৫ খ্রিঃপূর্বাব্দে এথেন্স শহরে প্রত্যাবর্তন করে দর্শনচর্চার একটি কেন্দ্র স্থাপন করেন যার আইসিয়াম (Lyceum) নামে খ্যাত।
তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পরিচালনায় ছিলেন। এরিস্টটল ৩২৩ খ্রিঃ পূর্বাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলির মধ্যে দি পলিটিক্স (The Politics), দি কনস্টিটিউশন, (The Constitution), দি লজিক (The Logic), দি রেটোরিক (The Rhetoric), দি কনসটিটিউশন অব এথেন্স (The Constition of Athens)।
দাসপ্রথা সম্পর্কে এরিস্টটলের মতবাদ
দাসপ্রথার প্রকৃতি (Nature of slavery): এরিস্টটল তাঁর 'পলিটিকস' গ্রন্থের প্রথম ভাগে দাসপ্রথা সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছেন। দাসের প্রকৃতি কি এবং কি কর্ম সম্পাদনের জন্য সে নির্দিষ্ট হয়েছে? এসব প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে এরিস্টটল বলেন, "যে মানুষ প্রকৃতিগতভাবে নিজের প্রভু নয়, অপরে যার প্রভু অর্থাৎ অপরের মধ্যে যার অস্তিত্ব নিহিত, সে মানুষ প্রকৃতগত ভাবেই একজন দাস এবং একজন মানুষ যখন অপর একজন মানুষের অস্তিত্বে নিহিত তখন সে গৃহের দ্রব্যসামগ্রীরই অন্তর্গত। অন্য কথায় সে একটি যন্ত্র কিংবা হাতিয়ার। হাতিয়ারটির অস্তিত্ব আছে একথা ঠিক। কিন্তু সে অস্তিত্ব জীবনধারণার উপায় হিসেবে মাত্র।
'দাস' কে? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে এরিস্টটল রাষ্ট্রের উপাদানের কথা বলেছেন। তাঁর মতে, রাষ্ট্র হচ্ছে সর্বোচ্চ মানবিক সংস্থা। রাষ্ট্রের উপাদান হচ্ছে গ্রাম, গ্রামের উপাদান হচ্ছে পরিবার। পরিবার দুটি অংশে বিভক্ত। একটি অংশ স্বাধীন সদস্য এবং অপরটি হচ্ছে পরাধীন সদস্য। এরিস্টটল পরাধীন সদস্যকেই দাস বলে অভিহিত করেছেন।
এ প্রেক্ষিতে প্রাচীন গ্রিসের সমকালীন আইনে যুদ্ধ বন্দিদেরকে দাসত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করা হতো। আবার এরিস্টটল সমাজকে দুটি অংশে বিভক্ত করেছেন। যথা: নাগরিক এবং অনাগরিক। তাঁর মতে, দাসরা অনাগরিকের অন্তর্ভুক্ত।
দাসপ্রথার সমর্থনে এরিস্টটলের যুক্তি
দাসপ্রথার সপক্ষে এরিস্টটল যেসব যুক্তির অবতারণা করেছেন সেগুলো নিম্নরূপ:- স্বাভাবিক ও নৈতিক যুক্তি (Natural and moral arguments): এরিস্টটল দাসগ্রণাকে স্বাভাবিক ও নৈতিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। দাসদের সাহায্য ও সহযোগিতা ব্যতীত ব্যক্তি এবং শাসকদের পক্ষে উত্তম ও নৈতিক জীবনযাপন করা সম্ভব নয়।
- এক্ষেত্রে তিনি দাসদেরকে বাদ্যযন্ত্রের সাথে তুলনা করেছেন। বাদ্যযন্ত্র ব্যতীত যেমন সংগীত রচনা করা যাায় না, ঠিক তেমনি মানুষের পক্ষে দাস ব্যতীত উত্তম নৈতিক জীবনযাপন করা সম্ভব নয়।
- প্রকৃতিগত যুক্তি (Natural argument):এরিস্টটল এর মতে, দাসপ্রথা প্রকৃতির বিধান। কেননা প্রকৃতি বা জন্মগতভাবেই কেউ কেউ প্রভুত্ব করার ক্ষমতা নিয়ে আসে, আবার কেউ কেউ দাসত্ব করার ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে কে প্রভু, আর কে দাস তা প্রকৃতিই নির্ধারণ করে দেয়।
- শাসন ও অধীনতা নীতি (Principle of rule and subordination): এরিস্টটলের মতে দাসপ্রথা শাসনও অধীনতা নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এ নীতি অনুসারে উত্তম অধমকে শাসন করবে এবং অধম উত্তমের আদেশ পালন করবে। আর এটি প্রকৃতির বিধান।
- প্রভুর জন্য যুক্তিযুক্ত (Reasonable for masters): এরিস্টটলের মতে, প্রজ্ঞাবান প্রভুরা রাষ্ট্রপরিচালনা করবেন। দৈহিক পরিশ্রমের কাজগুলো দাসদের উপর ন্যস্ত করলে তারা সেগুলো সুচারুরূপে সম্পন্ন করবে। এতে প্রভুরা শাসন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো মনোযোগ সহকারে সমাধান করতে অধিক সময় পাবে। ফলশ্রুতিতে প্রভুর সময় ও শ্রমের অপচয় রোধ হবে।
- দাসদের জন্য যুক্তিযুক্ত (Reasonable for salves): এরিস্টটল দাসপ্রথাকে দাসদের দৃষ্টিকোণ থেকেও সমর্থন করেছেন। তাঁর মতে যে ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তা কম, যুক্তি-জ্ঞান কম কিন্তু শারীরিক শক্তি বেশি আছে সে যে কোন প্রভুর অধীনে থেকে পরোক্ষভাবে যুক্তি বুদ্ধি, জ্ঞান ও নৈতিকতা লাভ করতে পারে। সুতরাং বলা যায় দাসদের মঙ্গলের জন্যই দাসপ্রথার সৃষ্টি হয়েছে।
- বাস্তবতার যুক্তি (Argument of reality): এরিস্টটল দাসপ্রথাকে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবভিত্তিক বলে অভিহিত > করেছেন। কারণ বাস্তবে দেখা যায় যে, মানুষের মধ্যে একশ্রেণি অধিক প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের অধিকারী এবং অন্যশ্রেণি অধিকতর দৈহিক শক্তির অধিকারী। মানব প্রকৃতির এ বিভিন্নতা সমাজ, তথা রাষ্ট্রে প্রভু ও দাস শ্রেণির অস্তিত্বের যথার্থতা প্রমাণ করে।
সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে এরিস্টটলের মতবাদ
গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'The Politics' এ সরকারের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে যে আলোচনা করেছেন তা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরিস্টটল সরকারের যে শ্রেণীবিভাগ করেছিরেন তার উৎকর্ষতা শাসকদের সংখ্যার ভিত্তিতে নয় বরং নৈতিকতার ভিত্তিতে।এরিস্টটলের সরকার ব্যবস্থাঃএরিস্টটল এর নিকট রাষ্ট্র ও সরকার এর ধারণা দুটি পৃথক ও পরিষ্কার। রাষ্ট্র বলতে তিনি সকল নাগরিকের সমষ্টি এবং সরকার বলতে রাষ্ট্রের শাসন ও নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে গঠিত সার্বভৌম সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়েছেন।
সরকারের শ্রেণীবিভাগ: Aristotle সরকারের শ্রেণীবিভাগ করতে গিয়ে দুটি মাপকাঠির ব্যবহার করেছেন। যথা: (১) শাসকের সংখ্যানীতি এবং (২) সংবিধানের উদ্দেশ্যনীতি। সংবিধানের উদ্দেশ্যনীতির ভিত্তিতে Aristotle সরকারকে দু'ভাগে ভাগ করেছেন যথা- (১) স্বভাবিক সরকার (২) বিকৃত সরকার। স্বভাবিক সরকারের আবার তিনটি রূপ রয়েছে।
যথা: (১) রাজতন্ত্র, (২) অভিজাততন্ত্র, (৩) ন্যায়তন্ত্র। বিকৃত সরকারেরও তিনটি রূপ দিয়েছেন। যথা: (১) স্বৈরতন্ত্র, (২) কতিপয়তন্ত্র ও (৩) জনতাতন্ত্র। শাসকের সংখ্যা অনুসারে সরকারের রূপ তিনটি। যথা: (১) একজনের শাসন, (২) কতিপয়ের শাসন ও (৩) বহুজনের শাসন।
এরিস্টটলের মতে, জনতাতন্ত্র ছিল নিকৃষ্টতম সরকার এবং আদর্শ রাজতন্ত্র ছিল সর্বোৎকৃষ্ট সরকার। এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণীবিন্যাস নানা সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে ঠিকই; কিন্তু এটা নিশ্চিত তিনি বিজ্ঞানসম্মত সরকারের শ্রেণীবিভাগের সূত্রপাত করেছেন।
আধুনিককালে তাঁর এ চিন্তাধারা অচল হলেও তার এ সরকার ব্যবস্থা তৎকালীন সময়োপযোগী ছিল নিঃসন্দেহে। এক্ষেত্রে তার যথেষ্ট দক্ষতাও পলিক্ষিত হয়।
নাগরিকতা সম্পর্কে এরিস্টটলের মতবাদ
পূর্বে আমাদের জানা দরকার নাগরিকতা কি? এরিস্টটল এর মতে, "নগর রাষ্ট্রের তৎকালীন গ্রিকের বিচার এবং শাসন সংস্থার সভ্য হিসেবে আইনবিষয়ক কাজ এবং রাষ্ট্র সভার আলোচনায় অংশগ্রহণ করে যে ব্যক্তি সে নাগরিক।"অর্থাৎ, নাগরিক হচ্ছে তারাই, যাদের ন্যায়বিচার প্রশাসনে অংশীদারিত্ব আছে এবং যে কোন সময়ের জন্য সরকারি অফিসের দায়িত্ব গ্রহণের অধিকার রাখে। এরিস্টটল এর ভাষায়, "Any one who has a share in the administration of justice and the right to hold office for any period is a citizen." এরিস্টটল এর মতে, “একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাস করলেই নাগরিক হওয়া যায় না।
যদি তাই হতো তাহলে বিদেশী ও দাসরাও নাগরিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে।" অনুরূপ যারা শিশু এখনও যুবক হয় নি তারাও নাগরিক নয়। যদি কখনও দেখা যায় যে, এরিস্টটল এর মতে, বাবা নাগরিক কিন্তু মা নাগরিক নয়। অনুরূপ মা নাগরিক বাবা নাগরিক নয় এরূপ ক্ষেত্রে কেউই নাগরিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে না।
নাগরিকের কি কি গুণাবলি থাকা উচিৎ
- উত্তম ব্যক্তি ও উত্তম নাগরিকের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। একজন উত্তম নাগরিকের গুণাবলি রাষ্ট্রে তথা শাসনব্যবস্থার নিরাপত্তা বিধানের যোগ্যতার মধ্যে নিহিত।
- একজন নাগরিক তার সম্প্রদায়কে রক্ষা করে।
- কিভাবে শাসন করতে হয় যেমন জানবে, তেমনি জানবে কিভাবে শাসিত হতে হয়।
নাগরিকের যোগ্যতা
- যারা রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিধান পরিষদ, বিচারালয়ের কাঠামো সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা রাখে তারাই নাগরিক হওয়ার যোগ্য বলে গণ্য হবে।
- এ মানদণ্ডে কৃষক, চর্মকার, কর্মকার, দাস প্রভৃতি শ্রেণী নাগরিক হওয়ার যোগ্য নয়। কেননা এদের এ ধরনের যোগ্যতা নেই।
- জীবিকার জন্য যাদেরকে দৈহিক পরিশ্রম করতে হয়, তারা যেহেতু অন্যের উপর নির্ভরশীল, তাই তারা নাগরিক হতে পারে না।
এরিস্টটল এর মতে, “কিছু লোক কিছু সময়ের জন্য শাসন করতে আর অন্যরা হবে শাসিত।” সময়ের বিবর্তন প্রক্রিয়ায় শাসক ও শাসিতের মাঝে পরিবর্তন সাধিত হয়। অর্থাৎ, বিপ্লব ঘটে থাকে।এরিস্টটল শাসক ও শাসিতের উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছেন, নাগরিকরা হলো বংশ তৈরিকারী আর শাসকরা হলো বংশীবাদকের মত।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, এরিস্টটল তাঁর নাগরিকতা বিষয়ক ধারণার অত্যন্ত গোঁড়ামির 'পরিচয় দিয়েছেন। কেননা তিনি শুধু ধনিক শ্রেণীর মধ্যে নাগরিকতাকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। নগর রাষ্ট্রকে সামনে রেখে প্রকাশিত এ মতবাদটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সম্পূর্ণরূপে প্রযোজ্য না হলেও অনেক ক্ষেত্রে এখনও প্রযোজ্য।
বর্তমান কালেও রাষ্ট্রের সকলেই নাগরিক অধিকার লাভ করে না। যেমন- অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং মস্তিষ্কবিকৃত লোকদের ভোটদানের অধিকার নেই। বিদেশীদেরকেও নাগরিক বলা যায় না। তাই পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক নাগরিকত্বের ধারণার সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসঙ্গতি থাকলেও প্রাচীন নগর রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এ মতবাদটি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
সংবিধান সম্পর্কে এরিস্টটলের ধারণা
বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল তাঁর সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ 'The Politics"এর ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে সংবিধান বা সরকারের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ বর্ণনা করেছেন। তাঁর এ বর্ণনার মূল লক্ষ্য, উত্তম সংবিধান কোনটি তা নির্ণয় করা।কিন্তু এরিস্টটলের মতে, উত্তম সংবিধান কোনটি তা আলোচনার পূর্বে সংবিধান সম্পর্কে সাধারণভাবে তাঁর ধারণা কি এবং তিনি কিভাবে সংবিধানের শ্রেণীবিন্যাস করেছেন সে সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন।এরিস্টটল সরকার বা শাসনব্যবস্থার শ্রেণীবিভাগ করতে গিয়ে সংবিধানের একটি গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দিয়েছেন।
তাঁর মতে, সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদ বা দপ্তরের বণ্টন, সার্বভৌম ক্ষমতার অবস্থান এবং রাজনৈতিক সংঘের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করার এক বিন্যাস ব্যবস্থা। (Constitation is an arrangement of the offices of a state, determining their distribution, the residence of soverignty and the end of political association.)
তাঁর কাছে সংবিধান হচ্ছে, সংবিধান কেবল রাষ্ট্রের অংশ নয়। এটি শুধু রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আইনগত ভিত্তি নয়। এটি নিজেই রাষ্ট্র ও সমগ্র জাতীয় জীবনকে প্রকাশ করে। সংবিধান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, সংবিধান হল একটি জীবন পদ্ধতি যা রাষ্ট্র নিজের জন্য বেছে নিয়েছে।
এরিস্টটলের মতে, সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনার দলিল বিশেষ। তিনি সংবিধানের উপর ভিত্তি করেই তিনি সরকারের বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ করেছেন। তাঁর মতে সংবিধানের প্রাধান্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিভিন্ন দিক প্রকাশিত হয় যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রর হাতিয়ার হিসেবে প্রচলিত হয়।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, এরিস্টটলের চিন্তাধারা যুগে যুগে বিভিন্ন দার্শনিককে অনুপ্রাণিত করেছে। তেরো শতকের চিন্তাধারা তাঁরই প্রভাবে অভূতপূর্বভাবে আন্দোলিত হয়। চার্চ প্রথমে এরিস্টটলকে অবিশ্বাস করলেও পরবর্তী পর্যায়ে জ্ঞানীদের শিক্ষক বলে চিহ্নিত করেন। তাঁর সুচিন্তিত ও পরীক্ষামূলক অভিমতসমূহ বিশ্ব জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধি করেছে।এরিস্টটলের মতবাদকে বাদ দিলে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই এরিস্টটলকে নিঃসন্দেহে আমরা একজন রাষ্ট্রচিন্তানায়ক হিসেবে গণ্য করতে পারি। উপর্যুক্ত কারণেই তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়েছে।
যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। এছাড়াও আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো যেমন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য , বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী,
বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।
আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url