বাংলাদেশ কি একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র
আমরা জানি বাংলাদেশের একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। কিন্তু আমরা কি এটা জানি যে বাংলাদেশ কি আসলে কি কল্যানমূলক রাষ্ট্র কিনা।চলুন জেনে নেওয়া যাক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি এবং সে হিসেবে বাংলাদেশ কোন ধরনের রাষ্ট্র।
প্রত্যেক নাগরিকের ন্যূনতম মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা প্রভৃতি কল্যাণকর সাংবিধানিক ধারাগুলো কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের মাপকাঠি বা মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়।বাংলাদেশ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র কি-না আধুনিক যুগের প্রতিটি রাষ্ট্রই নিজেকে কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে থাকে।
কেননা এ রাষ্ট্র যেসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী অথবা যেসব কার্যকলাপ এর আওতাধীন সেসবের প্রায় অধিকাংশই আধুনিক রাষ্ট্রসমূহের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশও এমন কতকগুলো বৈশিষ্ট্যকে লালন করে যা কল্যাণরাষ্ট্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানেও এমন কিছু নীতিমালা বিদ্যমান রয়েছে যেগুলোর প্রেক্ষিতে এদেশকে কল্যাণরাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া যায়।
১. সাংবিধানিক বিধি-বিধান: কল্যাণরাষ্ট্রের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সংবিধানে গৃহীত পদক্ষেপগুলো হলো:
প্রথমতঃজাতি-ধর্ম-শ্রেণি, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আইনের চোখে সবাই সমান এবং সবার সমভাবে ব্যক্তিস্বাধীনতা ভোগ ও মানবসত্তার মর্যাদাবোধ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য।
উল্লিখিত সাংবিধানিক স্বীকৃতির পাশাপাশি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রসদৃশ নানা দিক বাংলাদেশে চালু আছে। নিম্নে এ ধরনের কতিপয় উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরা হলো
২।মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচি: বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক কল্যাণের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণের সুব্যবস্থা করতে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
৩. কর্মের সুযোগ সৃষ্টি: শিক্ষিত ও যোগ্য নাগরিকদের কর্মসংস্থানের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময়ে ঋণ প্রদানসহ নানাবিধ প্রকল্প চালু করেছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, জনশক্তি ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, কর্মসংস্থান ব্যাংক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান বেকার জনগণেরকর্মের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
বিনিয়োগ, পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে জনসংখ্যা সীমিতকরণ, নিরক্ষরতা দূরীকরণের পদক্ষেপ, সবার জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কর্মসূচি বাংলাদেশের কল্যাণকর পদক্ষেপ।
৭. সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম: বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে জনস্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করেছে। দেশে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কল্যাণে নিরাপত্তামূলক আইন প্রণীত হয়েছে।
৮. জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি: সরকার এদেশের শহর ও গ্রাম সর্বক্ষেত্রে সমতাভিত্তিক উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিতে সচেষ্ট। এজন্য সরকার শহর এলাকায় ব্যাপক পরিসরে শিল্প-কলকারখানা স্থাপনে ঋণ প্রদানসহ গ্রামীণ উন্নয়নে কৃষিভিত্তিক ভর্তুকি প্রদান করছে। এছাড়া পরিবার কল্যাণ এবং মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার্থে বিশেষ কর্মসূচি চালু রয়েছে।
৯. সরকারি সমাজসেবা কার্যক্রম: সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এদেশে বহু সমাজসেবামূলক কার্যক্রম বা প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমের মধ্যে সরকারি এতিমখানা, মাতৃসদন, শিশুসদন, কিশোর সংশোধন ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
১০. শিক্ষার প্রসার: একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র যুগোপযোগী শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকে। শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারও সবার জন্য শিক্ষা, খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা, বিনামূল্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের বই বিতরণ, বয়স্ক শিক্ষা, অবৈতনিক নারী শিক্ষা ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
১১. খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন: খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলে এ লক্ষ্যার্জনের জন্য খাল খনন, বাঁধ নির্মাণ, গভীর ও অগভীর নলকূপ খনন, সুলভ মূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ, কৃষিঋণ প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
১২. শিল্প-বাণিজ্য প্রসার: বাংলাদেশ সরকার সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি ও বেকার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। তাছাড়া রাষ্ট্রকে দ্রুতগতিতে শিল্পায়িত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠানে সরকারের কর্তৃত্বে শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।
উপসংহারঃউপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কল্যাণরাষ্ট্র তার বৈশিষ্ট্যে স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বাংলাদেশ অতি প্রাচীনকাল কিংবা আধুনিককালের শুরু থেকে না হলেও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশে যেসব কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সেগুলো কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যকেই ধারণ করছে।
আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে তার সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়েছেন।যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।
এছাড়াও আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো যেমন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী,বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।
কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
ভূমিকা
যে রাষ্ট্র ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণ সাধনের জন্য উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে তাকে কল্যাণরাষ্ট্র বলে। বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনায় যেসব মূলনীতির উল্লেখ রয়েছে তার মধ্যে কল্যাণরাষ্ট্রের প্রতিফলন সুস্পষ্টভাবে ঘটেছে। অর্থাৎ সংবিধানে জনকল্যাণ সাধনই রাষ্ট্রের প্রধান ও প্রথম লক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।প্রত্যেক নাগরিকের ন্যূনতম মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা প্রভৃতি কল্যাণকর সাংবিধানিক ধারাগুলো কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের মাপকাঠি বা মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়।বাংলাদেশ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র কি-না আধুনিক যুগের প্রতিটি রাষ্ট্রই নিজেকে কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে থাকে।
কেননা এ রাষ্ট্র যেসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী অথবা যেসব কার্যকলাপ এর আওতাধীন সেসবের প্রায় অধিকাংশই আধুনিক রাষ্ট্রসমূহের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশও এমন কতকগুলো বৈশিষ্ট্যকে লালন করে যা কল্যাণরাষ্ট্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানেও এমন কিছু নীতিমালা বিদ্যমান রয়েছে যেগুলোর প্রেক্ষিতে এদেশকে কল্যাণরাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া যায়।
বাংলাদেশ কি একটি কল্যাণ মূলক রাষ্ট্র
বাংলাদেশের সংবিধানে গৃহীত একটি কল্যাণরাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ দিকগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো:১. সাংবিধানিক বিধি-বিধান: কল্যাণরাষ্ট্রের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সংবিধানে গৃহীত পদক্ষেপগুলো হলো:
প্রথমতঃজাতি-ধর্ম-শ্রেণি, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আইনের চোখে সবাই সমান এবং সবার সমভাবে ব্যক্তিস্বাধীনতা ভোগ ও মানবসত্তার মর্যাদাবোধ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য।
দ্বিতীয়তঃরাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকই সামাজিক নিরাপত্তা, আশ্রয় ও আইনানুগ আচরণ লাভের সুযোগ পাবে।
চতুর্থতঃ যোগ্যতা ও দক্ষতানুযায়ী সকলের চাকরি লাভের কিংবা বৈধ কোনো কাজ করে জীবিকার্জনের সুযোগ রয়েছে।
পঞ্চমতঃ সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার অর্থাৎ বেকারত্ব, অন্ধত্ব, বধিরতা বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিতে জনগণ সরকারি সাহায্য ভোগ করতে পারবে।
ষষ্ঠতঃ প্রয়োজনের সাথে খাপ খাইয়ে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সপ্তমত, শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা তথা সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র ভূমিকা পালন করবে।
অষ্টমতঃপ্রত্যেক নাগরিকেরই গ্রেফতার বা আটক হওয়ার বিরুদ্ধে আইনি রক্ষাকবচ রয়েছে। গ্রেফতারের কারণ উল্লেখসহ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিকটতর আদালতে উপস্থিত করার এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের বিধান রয়েছে।
তৃতীয়তঃ রাষ্ট্রের সকল নাগরিকই প্রয়োজন অনুযায়ী সভা-সমিতি ও সংঘ গড়ে তুলতে পারবে। দেশের অভ্যন্তরভাগে অবাধে চলাফেরাসহ বাসস্থান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোনো নাগরিকের বাধা থাকবে না।
চতুর্থতঃ যোগ্যতা ও দক্ষতানুযায়ী সকলের চাকরি লাভের কিংবা বৈধ কোনো কাজ করে জীবিকার্জনের সুযোগ রয়েছে।
পঞ্চমতঃ সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার অর্থাৎ বেকারত্ব, অন্ধত্ব, বধিরতা বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিতে জনগণ সরকারি সাহায্য ভোগ করতে পারবে।
ষষ্ঠতঃ প্রয়োজনের সাথে খাপ খাইয়ে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সপ্তমত, শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা তথা সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র ভূমিকা পালন করবে।
অষ্টমতঃপ্রত্যেক নাগরিকেরই গ্রেফতার বা আটক হওয়ার বিরুদ্ধে আইনি রক্ষাকবচ রয়েছে। গ্রেফতারের কারণ উল্লেখসহ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিকটতর আদালতে উপস্থিত করার এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের বিধান রয়েছে।
নবমতঃপ্রত্যেক নাগরিকই বিধিসম্মতভাবে সম্পত্তি অর্জন, ভোগ ও হস্তান্তর করতে পারবে।
দশমত, সর্বোপরি রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সবার জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করার কথাও বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত।
দশমত, সর্বোপরি রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সবার জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করার কথাও বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত।
উল্লিখিত সাংবিধানিক স্বীকৃতির পাশাপাশি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রসদৃশ নানা দিক বাংলাদেশে চালু আছে। নিম্নে এ ধরনের কতিপয় উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরা হলো
২।মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচি: বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক কল্যাণের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণের সুব্যবস্থা করতে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
যেমন-দুস্থ মহিলাদের জন্য মাসিক খাদ্য সাহায্য কার্যক্রম, গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্প, সবার জন্য শিক্ষা এবং বিনামূল্যে বই বিতরণ কর্মসূচি, বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা ইত্যাদি কর্মসূচি এদেশে চালু রয়েছে। ফলে অসহায় দরিদ্র জনগণ রাষ্ট্র প্রদত্ত এসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে।
৩. কর্মের সুযোগ সৃষ্টি: শিক্ষিত ও যোগ্য নাগরিকদের কর্মসংস্থানের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময়ে ঋণ প্রদানসহ নানাবিধ প্রকল্প চালু করেছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, জনশক্তি ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, কর্মসংস্থান ব্যাংক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান বেকার জনগণেরকর্মের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
ফলে জনগণ বিশেষত বেকার যুবকরা স্বাবলম্বিতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
৪. নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ: বাংলাদেশ সংবিধানে নাগরিক অধিকারগুলো পূরণের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। কেউ উক্ত অধিকারে হস্তক্ষেপ করলে যেকোনো নাগরিক আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে। যেমন-ভোট প্রদানের অধিকার, নির্বাচন করার অধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার ইত্যাদি।
বিনিয়োগ, পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে জনসংখ্যা সীমিতকরণ, নিরক্ষরতা দূরীকরণের পদক্ষেপ, সবার জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কর্মসূচি বাংলাদেশের কল্যাণকর পদক্ষেপ।
৬. চিত্তবিনোদন: বাংলাদেশ সরকার নাগরিকদের চিত্তবিনোদনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য সরকার উদ্যান ও চিড়িয়াখানা নির্মাণ এবং রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র প্রকাশনা ও উন্নয়ন সংস্থা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তাছাড়া এর জন্য বেসরকারি অনেক সংস্থাকে অনুমোদন দিয়েছে।
৭. সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম: বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে জনস্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করেছে। দেশে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কল্যাণে নিরাপত্তামূলক আইন প্রণীত হয়েছে।
এসব আইনের বদৌলতেই বয়স্ক ভাতা, বিমা কার্যক্রম, পেনশনসহ শ্রমকল্যাণমূলক বিবিধ কর্মসূচি চালু হয়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে সমাজের জনগণ নিরাপত্তার সুযোগ লাভ করছে।
৮. জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি: সরকার এদেশের শহর ও গ্রাম সর্বক্ষেত্রে সমতাভিত্তিক উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিতে সচেষ্ট। এজন্য সরকার শহর এলাকায় ব্যাপক পরিসরে শিল্প-কলকারখানা স্থাপনে ঋণ প্রদানসহ গ্রামীণ উন্নয়নে কৃষিভিত্তিক ভর্তুকি প্রদান করছে। এছাড়া পরিবার কল্যাণ এবং মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার্থে বিশেষ কর্মসূচি চালু রয়েছে।
৯. সরকারি সমাজসেবা কার্যক্রম: সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এদেশে বহু সমাজসেবামূলক কার্যক্রম বা প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমের মধ্যে সরকারি এতিমখানা, মাতৃসদন, শিশুসদন, কিশোর সংশোধন ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এসব কর্মসূচি ছাড়াও এদেশে বৃদ্ধনিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ও মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের মতো সেবামূলক কার্যক্রম চালু আছে।
১০. শিক্ষার প্রসার: একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র যুগোপযোগী শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকে। শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারও সবার জন্য শিক্ষা, খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা, বিনামূল্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের বই বিতরণ, বয়স্ক শিক্ষা, অবৈতনিক নারী শিক্ষা ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
তাছাড়া সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক, সময়োপযোগী ও সর্বজনীন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কারিগরি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্বারোপ করেছে।
১১. খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন: খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলে এ লক্ষ্যার্জনের জন্য খাল খনন, বাঁধ নির্মাণ, গভীর ও অগভীর নলকূপ খনন, সুলভ মূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ, কৃষিঋণ প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
আর এ প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে।
১২. শিল্প-বাণিজ্য প্রসার: বাংলাদেশ সরকার সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি ও বেকার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। তাছাড়া রাষ্ট্রকে দ্রুতগতিতে শিল্পায়িত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠানে সরকারের কর্তৃত্বে শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।
উপসংহারঃউপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কল্যাণরাষ্ট্র তার বৈশিষ্ট্যে স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বাংলাদেশ অতি প্রাচীনকাল কিংবা আধুনিককালের শুরু থেকে না হলেও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশে যেসব কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সেগুলো কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যকেই ধারণ করছে।
আবার যেহেতু কল্যাণমূলক কাজের ক্ষেত্রে অব্যাহত সফলতার স্বাক্ষর রাখতে সমর্থ হয়েছে তাই বাংলাদেশকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলা যায়। একথা স্পষ্ট যে, কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশও জনগণের সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে বাংলাদেশের গুণগত মান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আদৌ কি বাংলাদেশ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র? দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই রাষ্ট্রর সম্পর্কে জানা উচিত। সেইদিক বিবেচনা করেই যাচাইকৃত তথ্য দ্বারা এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে।আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে তার সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়েছেন।যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।
এছাড়াও আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো যেমন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী,বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।
কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url