বঙ্গবন্ধু কত সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদান সম্পর্কে জানেনা এমন বাঙালি হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে অনেকে হয়তো বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও সরকার গঠন সম্পর্কে জানেন না। চলুন জেনে নেয়া যাক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরে বঙ্গবন্ধুর গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে।
বঙ্গবন্ধু কত সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন

ভূমিকা

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়। পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতি সে আনন্দকে কিছুটা হলেও ম্লান করে দেয়। কারণ তিনি তখনো পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে অস্থায়ী মুজিব নগর সরকার গঠিত হয়।

ফলে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু কারাগারে বন্দি থাকার ফলে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে দেশ শাসন করা সম্ভব হয়নি। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রকৃত শাসনকাল শুরু হয় ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাকাণ্ডে সপরিবারে নিহত হওয়ার মাধ্যমে তাঁর শাসনামলের অবসান ঘটে। এ হিসাবে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের স্থায়িত্ব ছিল ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন। বঙ্গবন্ধুর সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি, দেশ বিরোধী শক্তির উপস্থিতি,

প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর উত্থান, শরণার্থী সমস্যা, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মোকাবিলা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তাঁর সরকারকে রাষ্ট্রপরিচালনা করতে হয়েছে। এ অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল
(১৯৭২-১৯৭৫)-এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও সরকার গঠন, সংবিধান প্রণয়ন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন এবং বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যা ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু কত সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।
আরো পড়ুনঃ ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল কত সময় ছিল

বঙ্গবন্ধুর শাসনাকাল হল ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরেই মূলত তার শাসনকাল শুরু হয়েছিল।
আরো পড়ুনঃ ভাষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও সরকার গঠন

১৯৭১ সালের মার্চে যুদ্ধ শুরুর সাথে সাথে অর্থাৎ ২৬ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হন। পুরো যুদ্ধকালীন সময় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি,

সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি (বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন) এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে বাংলাদেশের একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। এ সরকার মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। এ সরকারের নেতৃত্বে একটি সফল মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
আরো পড়ুনঃ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কবে এবং কেন পালন করা হয়
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুজিব নগর সরকার ১০ জন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগের ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ছিলেন চিফ সেক্রেটারি রুহুল কুদ্দুস এবং পুলিশের আইজি আব্দুল খালেক। ১৭ ডিসেম্বর ১৯ জেলায় ডেপুটি কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৮ ডিসেম্বর কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ঢাকায় এসে কার্যভার গ্রহণ করেন।

১৯ ডিসেম্বর রোববার সরকারি বন্ধের দিন স্বাধীন বাংলাদেশের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী কাজে যোগদান করেন। ২২ ডিসেম্বর অস্থায়ী মুজিব নগর সরকারের মন্ত্রিবর্গ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ২৩ ডিসেম্বর ঢাকায় মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২৫ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ ও রদবদল করা হয়।

নতুন মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান শেখ আবদুল আজিজ, ফণীভূষন মজুমদার, অধ্যাপক ইউসুফ আলী, আবদুস সামাদ আজাদ এবং জহুর আহমেদ চৌধুরী। খন্দকার মোশতাকের স্থলে আবদুস সামাদ আজাদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। খন্দকার মোশতাককে দেওয়া হয় আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

২৭ ডিসেম্বর নতুন মন্ত্রিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নবগঠিত মন্ত্রিসভা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পূর্ব পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে দেশ পরিচালনা করে।কা নিতে চাইত এদিকে ২০ ডিসেম্বর জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ক্ষমতা গ্রহণ করার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির ব্যাপারে তার

ওপর জাতীয় আর্ন্তজাতিক চাপ বাড়তে থাকে। বাংলাদেশেও এসময় বঙ্গবন্ধুর মুক্তির ব্যাপারে জোর দাবি ওঠে। নিউইয়র্ক টাইমস ২১ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর মুক্তির ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারের ঘোষণা প্রকাশ করে। ২৩ তারিখে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনার জন্য রাওয়ালপিন্ডি আনা হয়। 

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায় ২৭ ও ২৯ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ভুট্টোর দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ভুট্টোর জীবনীকার রবার্ট পেইনের ভাষ্য থেকে জানা যায়, এসব বৈঠকে ভুট্টো বঙ্গবন্ধু থেকেকোনো সুবিধা আদায় করতে পারেনি। অবশেষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা

করতে না পেরে ১৯৭২ সালের ২ জানুয়ারি করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান সরকারের একনীতিনির্ধারণী বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে পাঠাবার ব্যবস্থা করা হয়। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এয়ার মার্শাল জাফর চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে হিথ্রো বিমান বন্দর হয়ে লন্ডনে যান।

সেখানে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, বিরোধী দলের নেতা হ্যারল্ড উইলসনসহ
মন্ত্রিবর্গ ও ব্রিটিশ সাংবাদিকদের সাথে মিলিত হন এবং মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা,নারীনির্যাতন, ধ্বংসযজ্ঞ তুলে ধরে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও সহায়তা প্রদানের আহবান জানান।

লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময় ১০ জানুয়ারি তিনি দিল্লিতে এক সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতিকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলিত হন এবং একটি জনসভায় ভাষণ দেন। ১০ জানুয়ারি দুপুর ১.৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে নিয়েব্রিটিশ রয়াল এয়ার ফোর্সের কমেট জেট বিমানটি ঢাকা তেজগাঁও বিমান বন্দরে অবতরণ করে।

সেদিন অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে প্রায় ৫কিলোমিটার এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এভাবে প্রায় দীর্ঘ ১০ মাস পর ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে আসেন ।১১ জানুয়ারি, ১৯৭২ রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের অস্থায়ী
সংবিধান (Provisional Constitution Order) আদেশ জারি করেন।

এ আদেশে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিসভা থাকবে (অনুঃ ৫)। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী তার সমস্ত কার্যসম্পাদন করবেন (অনুঃ ৬)। রাষ্ট্রপতি গণপরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন একজন সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবে (অনুঃ ৭)।

নতুন সংবিধান প্রবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের একজন নাগরিককে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করবে (অনুঃ ৮)। মূলত এই আদেশবলে দেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও ঢাকা

হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। একইদিন বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ গ্রহণ করেন। আবু সাদাত মোঃ সায়েমকে প্রধান বিচারপতি করা হয়। এইসময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১২ সদস্যবিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। মন্ত্রিসভার দপ্তর নিম্নরূপ বণ্টন করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃতবাধীন মন্ত্রিসভা গঠন-১৯৭২ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১৩ জানুয়ারি। মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় সংগীত ও রণসংগীত নির্ধারণসহ কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ১৩ এপ্রিল মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট করা হয়।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় লাভের পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৬ মার্চ পূর্বের মন্ত্রিসভার সামান্য রদবদল করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়।

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে 'বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ' (বাকশাল) নামে একটি মাত্র বৈধ জাতীয় রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করা হয় এবং সংসদীয় ব্যবস্থার স্থলে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তিত হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত হন।

 ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের সময় পর্যন্ত তিনি সে পদেই বহাল ছিলেন।

ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী-চুক্তি কত সালে স্বাক্ষরিত হয়

ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি ১৯৭২ সালে স্বাক্ষরিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত বাংলাদেশকে সরাসরি সাহায্য করে। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানকে তাই অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ভারত-বাংলাদেশের সম্মিলিত আক্রমণের কাছেই শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান বাহিনী পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করে।

ভারতীয় সৈন্যবাহিনীকে ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ বাংলাদেশ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত পাঠানো হয়। সর্বশেষ দলটি ১৭ মার্চ ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ ত্যাগ করে। এটি বঙ্গবন্ধু সরকারের বড় কৃতিত্ব ছিল। এরপর ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধি বাংলাদেশ সফরে আসেন।

এই সফরের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদি মৈত্রী, সহযোগিতা ও শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে 'বন্ধুত্ব রক্ত ও আত্মদানের' মধ্য দিয়ে স্বদেশের গড়ে ওঠা সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই চুক্তিতে১০টি মৌলিক উদ্দেশ্য ও ১২টি অনুচ্ছেদ ছিল।

চুক্তির ভিত্তি ছিল উভয় দেশের সাধারণ আদর্শ যথা: শান্তি, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ। চুক্তির প্রস্ত াবনায় 'সম্ভাব্য সকল রকমের পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে' উভয় দেশের সীমান্ত কে চিরন্তন শান্তি ও বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। চুক্তির শর্তগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো
১. উভয় দেশ নিজ নিজ স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রেখে একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকবে।

২. উভয় পক্ষ সারা বিশ্বের উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্যবাদ বিরোধী ও জাতীয় মুক্তির জন্য সংগ্রামরত জনসমষ্টির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে তাদের সর্বতোভাবে সমর্থন প্রদান করবে। সাত

৩. উভয় পক্ষ তাদের জোট নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ সহা-অবস্থানের নীতিতে অটল থাকবে।

৪. যে কোনো আন্তর্জাতিক সমস্যায় উভয়পক্ষের স্বার্থে তারা পরস্পরের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও মতবিনিময় করবেন।

৫. উভয়পক্ষ প্রধান প্রধান অর্থনীতি, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি ক্ষেত্রে এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য পরিবহণ ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে এবং পরস্পরের স্বার্থ রক্ষা করবে।

৬. বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী সমতল উন্নয়ন, জলবিদ্যুৎ ও সেচ ব্যবস্থা উন্নয়নে উভয় দেশ যৌথ সমীক্ষা চালাবে।

৭. উভয়পক্ষ শিল্পকলা, সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও স্বাস্থ্য বিষয়ে অব্যাহতভাবে ভালো সম্পর্ক রেখে চলবে।

৮. কোনো এক পক্ষ অপরপক্ষের সাথে বিবদমান কোনো শক্তির সাথে সামরিক মৈত্রী স্থাপন থেকে বিরত থাকবেন, একে অপরের উপর কোনো আগ্রাসনমূলক তৎপরতা পরিচালনা করবে না এবং নিজ ভূখণ্ডে এমন কোনো সামরিক আয়োজনে ব্যস্ত থাকবে না যা অপর পক্ষের জন্য সামরিক ক্ষতি বা নিরাপত্তার উপর হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

৯. উভয় পক্ষ অপর পক্ষের সাথে সশস্ত্র সংগ্রামে যে কোনো তৃতীয় পক্ষকে সহযোগিতাদানে বিরত থাকবে। কোনো কারণে এক পক্ষ অন্য আর এক পক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হলে বা আক্রান্ত হবার হুমকির সম্মুখীন হলে উভয় পক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে পারস্পরিক মতবিনিময়ের জন্য আলোচনায় বসে তাদের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সেই আক্রমণ বা হুমকি নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

১০. কোনো পক্ষ এই চুক্তির পরিপন্থি হয় এমন কোনো বিষয়ে কোনো এক বা একাধিক দেশের সাথে প্রকাশ্যে বা গোপনে যে কোনো রকমের প্রতিশ্রুতি প্রদান থেকে বিরত থাকবেন।

সুতরাং মৈত্রী চুক্তির ধারাগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন কিন্তু অনেকেই এই চুক্তিকে 'গোলামির চুক্তি' বলে সমালোচনা করেন কিন্তু চুক্তির ধারাগুলো থেকেই বোঝা যায়, বঙ্গবন্ধু এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের মর্যাদাকে সামান্যতম কমাননি।

চুক্তিটি 'গোলামির' হয়ে থাকলে ১৯৭৫-১৯৯৬ সময়কালে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা তা বাতিল করতে পারতেন। সুতরাং বঙ্গবন্ধু সরকার সম্পর্কে বিরোধীপক্ষ যে সকল বিষয় নিয়ে বড় বড় কথা বলেন, সমালোচনা করেন, সেই বিষয়গুলোর কোনোটিই সমালোচনার মতো নয়।

বঙ্গবন্ধুকে কত সালে সপরিবারে হত্যা করা হয়

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির পিতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একটিমাত্র বৈধ রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন।

এর ফলে দেশের সামগ্রিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অভাবনীয় উন্নতি হয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য দ্রুত কমাতে থাকে, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দেয়। ঠিকই এমনি সময় সংঘটিত হয় ১৫ আগস্টের নির্মম, নৃশংস হত্যাকাণ্ড।

 বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের উপস্থিত সকল সদস্য এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে নিজ বাসভবন ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়িতে কতিপয় আদর্শচ্যুত সেনা কর্মকর্তার যোগসাজশে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

সে রাতে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা, জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, মেজো পুত্র শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি ও কৃষি মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার কন্যা বেবী সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ, দৌহিত্র সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু,

ভ্রাতুষ্পুত্র শহীদ সেরনিয়াবাত, বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি এবং ১৪ বছরের কিশোর রিন্টুসহ ১৬ জনকে ঘাতকরা হত্যা করে। বিদেশে অবস্থান করার কারণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

ঘাতকরা নির্মম হত্যাকাণ্ড শেষে কঠোর সামরিক নিরাপত্তার মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এবং অন্যদেরকে বনানী কবরস্থানে দাফন করে। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে ঘাতকদের আশীর্বাদপুষ্ট সরকার ক্ষমতায় আসীন হয়। এর পরপরই দেশে সামরিক শাসন জারি হয়।

যদিও সেনাবাহিনীতে চাকুরিরত ও বিভিন্ন সময় চাকুরিচ্যুত কিছু সেনা সদস্য কর্তৃক এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় তবু এর সাথে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত দেশি বিদেশি শক্তি ও এদের প্রতিক্রিয়াশীল সহযোগী গোষ্ঠীর যে সংশ্লিষ্টতা ছিল, তা এখন বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়। মূলত এটি ছিল একটি ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।

ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধু কর্তৃক একটিমাত্র বৈধ রাজনৈতিক দল গঠনকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত সাময়িক বিভ্রান্তিকর রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নেয়। এই হত্যাকাণ্ড কেবল একজন বা কয়েকজন ব্যক্তিকেই হত্যা করা ছিল না, এই হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল একটি আদর্শকে হত্যা করা।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শুধু সংবিধান থেকে নয়, বাঙালি মন থেকে মুছে ফেলা। স্বভাবতই হত্যাকাণ্ডটি ছিল সুপরিকল্পিত। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সুদূরপ্রসারি নেতিবাচক প্রভাব আজো বিদ্যমান। রাজনীতিতে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির উত্থান ঘটে এই হত্যাকাণ্ডের পর। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ও অপব্যবহার বৃদ্ধি পায়।

ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প এই সময়ে রাজনীতির বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সুকৌশলে ভূলুণ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়। এই সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর নানাভাবে আঘাত হানার চেষ্টা করা হয়। সামরিক শাসকরা ক্ষমতা দখল করে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা গণতন্ত্র ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়।

এইভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে একটি আদর্শকে চিরতরে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরাজিত ও ঘাতক শক্তি কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে চিরতরে মুছে দিতে পারেনি। কারণ বাঙালির রক্তের সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মিশে আছে।

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

১. বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল উল্লেখ কর। উত্তর: ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত।

২. বঙ্গবন্ধুকে কত তারিখে গ্রেফতার করা হয়? উত্তর: ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে প্রথম প্রহরে।

৩. বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন কে ও কখন?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ '৭১ রাতের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

৪. বঙ্গবন্ধুকে পশ্চিম পাকিস্তানের কোনো কারাগারে আটক রাখা হয়?
উত্তর: পশ্চিম পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি নামক কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে আটক রাখা হয়।

৫. পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুকে কত তারিখে মুক্তি দেওয়া হয়?
উত্তর: ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি।

৬. বঙ্গবন্ধু স্বদেশে ফিরে আসেন কবে? উত্তর: ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি।

৭. ১০ জানুয়ারি কী দিবস হিসেবে পালিত হয়? উত্তর: বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।

৮. মুক্তিযুদ্ধে কত লক্ষ লোক শহিদ হন? উত্তর: ৩০ লক্ষ লোক শহিদ হন।

৯. যুদ্ধের সময় ভারতে কত লোক আশ্রয় নিয়েছিল? উত্তর: প্রায় ১ কোটি লোক ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল।

১০. নতুন সরকারের (বঙ্গবন্ধু সরকার) তিনটি সমস্যা (চ্যালেঞ্জ) লেখ। উত্তর: পুনর্বাসন সমস্যা, অর্থনৈতিক সমস্যা ও আইনশৃঙ্খলা সমস্যা।

১১. সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধু সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন কোনোটিকে?
উত্তর: সংবিধান প্রণয়ন।

১২. কত তারিখে বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করা হয়?
উত্তর: ১১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে।

১৩. কত তারিখে 'গণপরিষদ আদেশ' জারি করা হয়?
উত্তর: ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ।

১৪. গণপরিষদের সদস্য ছিলেন কাঁরা?
উত্তর: ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে বাংলাদেশের অংশ থেকে নির্বাচিত সদস্যগণ গণপরিষদের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হন।

১৫. গণপরিষদে মোট সদস্য ছিল কত জন? উত্তর: ৪০৩ জন।

১৬. গণ পরিষদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার ছিলেন কে?
উত্তর: স্পিকার ছিলেন শাহ আবদুল হামিদ এবং ডেপুটি স্পিকার ছিলেন মোহাম্মদউল্লাহ।

১৭. গণ পরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে কত তারিখে?
উত্তর: ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল।

১৮. খসড়া সংবিধান কমিটির প্রধান ছিলেন কে?
উত্তর: আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন।

১৯. খসড়া সংবিধান কমিটির মোট সদস্য ছিল কতজন? উত্তর: ৩৪ জন।

২০. খসড়া সংবিধান কমিটির একমাত্র মহিলা সদস্যের নাম কি ছিল?
উত্তর;বেগম রাজিয়া বানু

২১. এই কমিটিতে স্থান পাওয়া একমাত্র বিরোধী দলের সদস্য কে ছিলেন?
উত্তর: সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ন্যাপ (মোজাফফর)।

২২. খসড়া সংবিধান কমিটি মোট কতটি বৈঠকে মিলিত হয়?
উত্তর: ৭৪টি বৈঠকে মিলিত হয়।

২৩. খসড়া সংবিধান কমিটির প্রথম বৈঠক হয় কত তারিখে?
উত্তর: ১৯৭২ সালের ১৭ এপ্রিল।

২৪. খসড়া সংবিধান কমিটি কোন কোন দেশ সফর করে তথ্যসংগ্রহ করেন?
উত্তর: ভারত ও যুক্তরাজ্য।

২৫. খসড়া সংবিধান কমিটি বিভিন্ন মহল থেকে কতটি সুপারিশ পায়?
উত্তর: ৯৮টি সুপারিশ।

২৬. গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশন বসে কত তারিখে?
উত্তর: ১৯৭২ সালে ১২ অক্টোবর।

২৭. খসড়া সংবিধান বিল কোন অধিবেশনে উত্থাপন করা হয়?
উত্তর: ড. কামাল হোসেন গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে সংবিধানের খসড়া বিল উত্থাপন করেন।

২৮. গণপরিষদে কত তারিখে সর্বসম্মতিক্রমে খসড়া বিল গৃহীত হয়?
উত্তর: ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সর্বসম্মতিক্রমে গণপরিষদে সংবিধানের খসড়া বিল গৃহীত হয়।

২৯. গণপরিষদের সদস্যগণ কত তারিখে খসড়া সংবিধানে স্বাক্ষর করেন?
উত্তর: ১৯৭২ সালের ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর।

৩০. কত তারিখ থেকে সংবিধান কার্যকর হয়?
উত্তর: বিজয় অর্জনের ১ বছর পর অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ থেকে বাংলাদেশে সংবিধান কার্যকর হয়।

৩১. সংবিধানে কতটি ভাগ, অনুচ্ছেদ, প্রস্তাবনা ও তফসিল আছে?
উত্তর: ১১টি ভাগ, ১৫৩টি অনুচ্ছেদ, ১টি প্রস্তাবনা ও ৪টি তফসিল আছে।

৩২. সংবিধানের রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি কয়টি ও কি কি?
উত্তর: ৪টি। ১. বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ২. গণতন্ত্র, ৩. সমাজতন্ত্র ও ৪. ধর্মনিরপেক্ষতা।

৩৩. সংবিধানের কোনভাগে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতির কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: দ্বিতীয় ভাগে।

৩৪. সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে ন্যায়পালের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ৭৭ নং অনুচ্ছেদে।

৩৫. বাংলাদেশের সংবিধান কোনো ধরনের?
উত্তর: লিখিত দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান।

৩৬. বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে সংবিধান কতবার সংশোধন করা হয়?
উত্তর: ৪ বার (প্রথম থেকে চতুর্থ সংশোধনী)

৩৭. চতুর্থ সংশোধনীর মূল বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর পরিবর্তন। অর্থাৎ সংসদীয় শাসনব্যবস্থা থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন।

৩৮. বাকশাল গঠিত হয় কোনো সংশোধনীর মাধ্যমে?
উত্তর: চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে।

৩৯. বাকশালের (BAKSAL) এর পূর্ণরূপ কী?
উত্তর: বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ।

৪০. চতুর্থ সংশোধনী সংসদে কত তারিখে পাস হয়।
উত্তর: ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি।

৪১. স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় কত সালে?
উত্তর: ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ।

৪২. ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কতটি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে?
উত্তর: ২৯৩টি।

৪৩. জাসদ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর।

৪৪. 'সাত-দলীয় সংগ্রাম জোট' কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে।

৪৫. বাংলাদেশ কার আমলে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে।

৪৬. সর্বপ্রথম জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দেন কে?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

৪৭. ভারতীয় সৈন্যবাহিনী কত সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করে?
উত্তর: ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ।

৪৮. ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর সর্বশেষ দলটি কখন বাংলাদেশ ত্যাগ করে।
উত্তর: ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ।

৪৯. বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন কোনোটি?
উত্তর: ড. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন।

৫০. ড. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন কে গঠন করেন?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

৫১. বাকশাল গঠিত হয় কত সালে? উত্তর: ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি।

৫২. বাকশালের গঠনতন্ত্র ঘোষণা করা হয় কত তারিখে?
উত্তর: ১৯৭৫ সালের ৭ জন।

৫৩. বাকশালের চেয়ারম্যান কে ছিলেন?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

৫৪. 'বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা' কাদের নিয়ে গঠিত হয়?
উত্তর: জাসদের অনুসারী সেনাসদস্যদের নিয়ে।

৫৫. বাকশালের কার্যনির্বাহী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা কত?
উত্তর: কার্যনির্বাহী ১৫ জন এবং কেন্দ্রীয় কমিটি ১১৫ জন।

৫৬. কত তারিখে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়?
উত্তর: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।

৫৭. জাতীয় শোক দিবস কোনটি?
উত্তর: ১৫ই আগস্ট।

৫৮. বঙ্গবন্ধু সরকারের তিনটি সাফল্য উল্লেখ কর।
উত্তর: সংবিধান প্রণয়ন, শিক্ষা সংস্কার, শরণার্থী পুনর্বাসন।

৫৯. কত সাল থেকে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কার্যকর হয়?
উত্তর: ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই।

৬০. প্রথম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনার মেয়াদ কত ছিল?
উত্তর: ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮ সাল।

৬১. বঙ্গবন্ধু কত বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন?
উত্তর: ২৫ বিঘা পর্যন্ত।

৬২. 'পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড' গঠন করেন কে?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

লেখকের মন্তব্যঃ

প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে স্বদেশবঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন ও শাসনামল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা সবাই জানি বাংলায় বঙ্গবন্ধুর অবদান সম্পর্কে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন।

যদি আর্টিকেলটি পরে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনার বন্ধু বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন যাতে করে তারাও বঙ্গবন্ধুর যুদ্ধ- পরবর্তী অবদান সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে। আর এ আর্টিকেল সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন, মতামত কিংবা কোন পরামর্শ দেওয়ার থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন।

যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আপনি যদি এ ধরনের সাধারণ জ্ঞানমূলক, বিজ্ঞানভিত্তিক, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কিত আর্টিকেল পড়তে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটিতে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। কারণে এ ধরনের আর্টিকেল আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।

আর অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url