নেপোলিয়ন বোনাপার্ট কত সালে জন্মগ্রহন করেন
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ছিলেন একজন বিখ্যাত ফরাসি রাজা। চলুন জেনে নেয়া যাক তোর জন্ম মৃত্যু ও কর্মজীবন সম্পর্কে।
(ক) প্রশাসনিক সংস্কারের ফলে সারা দেশে প্রশাসনিক ঐক্য ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় হলেও প্রিফেক্টগণ জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেদের খুব কমই নিয়োজিত করতে পারতেন। নেপোলিয়নের নিরন্তর যুদ্ধের রসদ সরবরাহ ও প্রশাসনযন্ত্রের ক্রীড়নক হয়ে তাদের ব্যস্ত থাকতে হতো।
দ্বিতীয়ত: রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের পাঠ্যসূচিকে এমনভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছিল, যাতে তার শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে ছাত্রদের মনে প্রশ্নের সৃষ্টি না হয়।
তৃতীয়ত: সৃজনশীল চিন্তাধারা, মৌলিক সৃষ্টি ও গবেষণাকে উৎসাহ না দেওয়ায় ফ্রান্সে শুধু অধিকসংখ্যক ডাক্তার, প্রকৌশলী, আমলা ও সেনাপতি তৈরি হয়, কবি, সাহিত্যিক বা বুদ্ধিজীবী তদ্রূপ সৃষ্টি হয়নি। সুস্থ সংস্কৃতি ফরাসি জীবনধারা থেকে নির্বাসিত হয়।
এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তার সংস্কারগুলো ফ্রান্সের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়ের সূচনা করে; যা সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতীয় জীবনে শান্তি, স্থিতি ও সমৃদ্ধি এনে দেয়- বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
(গ) নেপোলিয়নের শিক্ষা সংস্কারও শত্রুমুক্ত ছিল না। যেমন:
প্রথমত: তার শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষের মুক্তচিন্তা ও চেতনার কোনো স্থান ছিল না।
নেপোলিয়নের অনমনীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষা: নেপোলিয়নের আকাঙ্ক্ষা ছিল, তিনি ইউরোপের ভাগ্যবিধাতারূপে এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলবেন। কিন্তু এটি যে একটি অলীক স্বপ্ন, তা তার মতো বিচক্ষণ, দূরদর্শী রাজনীতিবিদ কেন বুঝতে পারেননি, তা সাধারণ বুদ্ধিতে ব্যাখ্যা করা কঠিন।
আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে তার সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়েছেন।যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।
এছাড়াও আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো যেমন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী,বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।
পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
ভমিকা
মানব সভ্যতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ইতিহাসের সাহায্যে আমরা যতটা জ্ঞান আর্জন করতে পেরেছি তার বেশিরভাগ পাতাতেই রয়েছে যুদ্ধ, জয় পরাজয় ও হাঙ্গামার কথা। আর এই কৃতিত্ব নিয়ে অমর হয়ে আছেন জে সকল যোদ্ধা তাদের মধ্যে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট অন্যতম একজন ব্যক্তিত্ব।তার জন্ম থেকে মৃত্যু পুরোটাই রোমাঞ্ছকর এক ইতিহাস।”তোমঅরা আমাকে একটা শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব” উক্তিটি এই মহান ব্যক্তির।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট কত সালে জন্মগ্রহন করেন
১৭৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগস্ট পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমরনেতা, রাজনীতিবিদ ও সমাজ সংস্কারক নেপোলিয়ন ইতালির কর্সিকা দ্বীপে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। নেপোলিয়নের পরিচয় যেসব ব্যক্তি স্বীয় কর্ম ও প্রতিভা দ্বারা ইতিহাসের গতি পরিবর্তন করতে সমর্থ হয়েছিলেন, নেপোলিয়ন তাদের অন্যতম।তিনি নিজেই বলেন, "আমার দেশ যখন মরণাপন্ন তখন আমার জন্ম হয়।" জন্মের কিছুদিন পরই কর্সিকায় ফ্রান্সের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ফ্রান্সের সাথে তার ভাগ্য জড়িয়ে যায়। তার পিতার নাম ছিল কার্লো বোনাপার্ট এবং মাতার নাম ছিল লেটিজিয়া বোনাপার্ট। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন নির্ভীক, অনমনীয় ও অধ্যবসায়ী।
আরো পড়ুনঃ নেপোলিয়ন বোনাপার্ট কত সালে মৃত্যুবরণ করেন।
অল্প বয়সে সামরিক শিক্ষা লাভ করে ১৭৯১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লেফটেন্যান্ট হন। বিপ্লবী জেকোবিন দলে যোগদান করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। ১৭৯১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি টুলো বন্দর থেকে ইংরেজ বাহিনীকে বিতাড়নে নেতৃত্ব দিয়ে ফ্রান্সের নিরাপত্তা রক্ষা করেছিলেন।
বিজয়ের পুরস্কারস্বরূপ তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি পান। এর কিছুদিন পরেই রাজতন্ত্রীদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে জাতীয় সম্মেলনকে রক্ষা করলে তিনি ফরাসিদের শ্রদ্ধা ও আস্থাভাজন নেতায় পরিণত হন।
নেপোলিয়ন বোনাপার্টের বিখ্যাত উক্তি
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট আজ পৃথিবীতে নেই কিন্তু তার রেখে যাওয়া বিখ্যাত উক্তিগুলো আজও মানুষের মনে অনুপ্রেরণা জাগায়। চলুন জেনে নিয়ে যাক তার কিছু বিখ্যাত উক্তিগুলো- "তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব"
- "আমার অভিধানে অসম্ভব বলে কোন শব্দ নেই"।
- "ভালোবাসায় আমাকে প্রকৃত আনন্দ এনে দেয়। সমস্ত কিছুই দূর হয়ে যায়।"
- "তুমি যদি চাও কোন কিছু ভালোভাবে হোক তবে তা নিজে কর।"
- "যে যেই বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে সে সেই বিষয়ে শিক্ষিত, কাজেই সবাই শিক্ষিত।"
- "মৃত্যুর কারই মানুষকে শহীদ বানায়, মৃত্যু নয়।"
- "ধর্মই গরিবদেরকে বিরত রাখে ধনীদের হত্যা করা থেকে।"
- "সর্বদা গরিব থাকার নিশ্চিত উপায় হচ্ছে সৎ থাকা।"
- "সত্তিকারের মানুষ কাউকে ঘৃণা করে না।"
- "আমি তিনটি খবরের কাগজকে এক লক্ষ বেয়নেট অপেক্ষা বেশি ভয় করি।"
- "তোমাকে না ভালোবাসতে পেরে মারা যাওয়া, তোমাকে না জানতে পেরে মারা যাওয়া নরক যন্ত্রণার সমান। যেন চূড়ান্ত শূন্যতার জীবন্ত প্রতিবিম্ব।"
- "আমি ষাটটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি, কিন্তু আমি এমন কিছু শিখিনি যা আমি শুরুতে জানতাম না।"
- “বিশ্বে দুটি শক্তি রয়েছে এগুলো হচ্ছে অসি ও মন। কিন্তু পরিনামে এই দুইয়ের দ্বন্দ্বে মনের কাছে ওসি শেষ পরিণত পর্যদুস্ত হয়।”
- “ কল্পনাশক্তি পৃথিবী কে শাসন করে।"
- “ আপনার শত্রু যখন ভুল করে তখন তাকে বাধা দেবেন না।"
- “ যখন তুমি কাউকে ভালবাসো তখনও তার একই মনে হয়।"
- “ বিজয় গভীর অধ্যবসায়ের একটি চূড়ান্ত ফল।"
ডাইরেক্টরি শাসন ও নেপোলিয়নের উত্থান
ফরাসি বিপ্লবোত্তর ফ্রান্সে ডাইরেক্টরি শাসন ছিল ১৭৯৫-৯৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। হোবার্ট, দাঁতন ও রোবস্পিয়ারের নেতৃত্বে যে সন্ত্রাসের রাজত্ব (১৭৯৩-৯৪ খ্রিষ্টাব্দে) ফ্রান্সে চালু হয়েছিল তার অবসানের পর ডাইরেক্টরি শাসন শুরু হয়।১৭৯৫ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় সম্মেলন (National Assembly) বিপ্লবের যে তৃতীয় সংবিধান প্রণয়ন করে, তাতে শাসনভার পাঁচজন ডাইরেক্টর বা পরিচালকের হাতে ন্যস্ত হওয়ায় একে ডাইরেক্টরি শাসন বলে। ডাইরেক্টরি শাসনামলে নেপোলিয়ন অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে ইতালীয় অভিযানের নেতৃত্ব দিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ইতালীয় অভিযানে তার সমর কৌশল ও ক্ষিপ্রতা এবং দৃঢ় সংকল্প তাকে একজন 'ক্ষুদ্র সেনাপতিতে' পরিণত করে। ১৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দে অস্ট্রিয়া পরাজিত হলে ইতালিতে ফ্রান্সের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। নির্ভীক সেনাপতি বিজয়ের পর দেশে ফিরলে তাকে বীরোচিত সংবর্ধনা দেওয়া হয়। দেশপ্রেমিক সেনাপতি চিরশত্রু ইংল্যান্ডকে অত্যন্ত ঘৃণা করতেন।
ভারতবর্ষে ইংল্যান্ডের যোগাযোগ বন্ধ ও তাদের আর্থিক শক্তিকে দুর্বল করার জন্য তিনি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা (১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দ) করেন। যুদ্ধক্ষেত্র ছিল মিশর। ভূমধ্যসাগরে ইংরেজ নৌ সেনাপতি নেলসনের দৃষ্টি এড়িয়ে তিনি মাল্টা দখল করে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় উপস্থিত হন। অতঃপর তিনি কায়রো দখল করেন।
কিন্তু নৌশক্তিতে ইংল্যান্ড শক্তিশালী হওয়ায় নীলনদের যুদ্ধে (১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দ) তিনি পর্যুদস্ত হন। মিশর অভিযানে তার ব্যর্থতা তিনি বুঝতে পারেন। ফরাসি বাহিনীকে মিশরে তাদের ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে তিনি ফ্রান্সে পালিয়ে আসেন। দেশে এসে তিনি এক দুর্নীতিগ্রস্ত ও হতাশাগ্রস্ত ফ্রান্স দেখেন। জনগণ ডাইরেক্টরির অপশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল।
এ সময় ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের নেতৃত্বের দ্বিতীয় শক্তিজোট গঠিত হয়। তারা জোটবদ্ধ হয়ে ফ্রান্সকে আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। এ রকম ক্রান্তিলগ্নে তিনি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ডাইরেক্টরি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই নভেম্বর 'কনসুলেটর' শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
কনসুলেট আমলে কার্যত ফ্রান্সের নির্বাহী ক্ষমতা নেপোলিয়নের হাতে চলে যায়। ক্ষমতা গ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমি ফ্রান্সের রাজমুকুটকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখি, আমি তরবারির সাহায্যে তা মাথায় তুলে নিই।"
কনসুলেটর হিসেবে নেপোলিয়ন
ডাইরেক্টরি শাসনের পতন হলে ফরাসি বিপ্লবের 'চতুর্থ সংবিধান' প্রণয়ন করা হয়। নতুন শাসনতন্ত্র অনুযায়ী ক্ষমতা তিনজন 'কনসুল' দ্বারা গঠিত একটি কনসুলেটের উপর অর্পিত হয়। সিয়েস, ডোকাস ও নেপোলিয়নকে নিয়ে গঠিত এ সরকারকে কনসুলেট শাসনব্যবস্থা বলা হতো। নেপোলিয়ন হন এক নম্বর কনসুল এবং অতিরিক্ত ক্ষমতার অধিকারী।কার্যত প্রশাসনিক সকল ক্ষমতা নেপোলিয়নের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়। কনসুলেট ব্যবস্থা জনসাধারণের নিকট পেশ করা হলে তা বিপুল ভোটাধিক্যে পাস হয়। ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই ডিসেম্বর তিনি দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করলেন যে, "বিপ্লবের মূলনীতি জয়যুক্ত হয়েছে এবং বিপ্লবের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।"
তার সংস্কারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল
১। জাতির ক্ষত উপশম করা;
২। একটি সুষ্ঠু ও সুদৃঢ় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা;
৩। আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য ও অনাচার দূর করা।
৪। খ্যাতির মোহ, গৌরবের আকাঙ্ক্ষা এবং মানুষের মন জয় করার ঐকান্তিক বাসনা। এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নেপোলিয়ন নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।
নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সংস্কার
কনসুলেটর হিসেবে নেপোলিয়ন পাঁচ বছর (১৭৯৯-১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দ) ক্ষমতায় ছিলেন। এ সময় তিনি ফরাসি জাতির উন্নয়নের জন্য অভ্যন্তরীণ সংস্কারসাধনে আত্মনিয়োগ করেন। তার সংস্কারগুলোতে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শসমূহ প্রতিফলিত হয়। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে তিনি যে সংস্কার ও উন্নতি সাধন করেন তার জন্যই পৃথিবীর ইতিহাসে তার নাম অমর হয়ে আছে।তার সংস্কারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল
১। জাতির ক্ষত উপশম করা;
২। একটি সুষ্ঠু ও সুদৃঢ় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা;
৩। আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য ও অনাচার দূর করা।
৪। খ্যাতির মোহ, গৌরবের আকাঙ্ক্ষা এবং মানুষের মন জয় করার ঐকান্তিক বাসনা। এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নেপোলিয়ন নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।
ক. শাসনতান্ত্রিক সংস্কারঃ
নেপোলিয়ন সর্বপ্রথম ফ্রান্সে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশ থেকে রাজনৈতিক দলাদলি উচ্ছেদ করেন। সমগ্র ফ্রান্সকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আনার জন্য ফ্রান্সের প্রদেশগুলোতে একই শাসননীতি ও আইনকানুন প্রবর্তন করলেন।
বিপ্লবের যুগে ফ্রান্সকে ৮৩টি প্রদেশে ও ৫৪৭টি জেলায় ভাগ করা হয়েছিল, তিনি তা অব্যাহত রাখেন। পূর্বে সরকারি কর্মচারীরা জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত হতেন। তিনি এ পদ্ধতি উঠিয়ে দিয়ে প্রথম কনসুলেট কর্তৃক মনোনয়নব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। প্রাদেশিক শাসকরা প্রথমে কনসুল ও পরে সম্রাট পদের সৃষ্টি হলে সম্রাট কর্তৃক নিযুক্তির ব্যবস্থা চালু করেন।
স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা অনেকাংশে কমিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনাধীনে আনেন। এভাবে নেপোলিয়ন কেন্দ্রীয় আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি প্রবর্তন করে শাসনব্যবস্থাকে সুষ্ঠু, ন্যায়সংগত ও কার্যকর করলেন।
খ. অর্থনৈতিক সংস্কারঃ
অর্থনৈতিক সংস্কার তার শাসনামলে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ডেভিড টমসনের মতে, পূর্বতম শাসনব্যবস্থার ক্যান্সার ছিল অর্থব্যবস্থা ও করপ্রথা। অর্থনৈতিক সমস্যাই ফরাসি বিপ্লবের জন্য মূলত দায়ী ছিল। সুতরাং এই দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে ফ্রান্স যত শিগগির আরোগ্য লাভ করে সেদিকে নেপোলিয়ন বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি ফ্রান্সের অর্থনৈতিক কাঠামোকে সুদৃঢ় কাঠামোর উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য Bank of France নামে একটি জাতীয় ব্যাংক ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা যাতে সহজে ব্যাংক থেকে অর্থ সাহায্য পান তার ব্যবস্থা করেন। তিনি দেশে মুদ্রানীতির আধুনিক নীতিসম্মত সংস্কার সাধন করেন।
নেপোলিয়ন কর প্রদানে ফরাসিদের স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে দিলেন এবং কর আদায় প্রথার সংস্কার সাধন করলেন। নেপোলিয়ন কৃষকদের দুর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যে তাদের করের হার হ্রাস করেন। রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের ব্যাপারে যাতে কোনো প্রকার অমিতব্যয়িতা বা দুর্নীতির অবকাশ না থাকে সেদিকে তিনি কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করেন।
এছাড়া যাতায়াতের সুবিধার জন্য তিনি নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণ ও পুরনো রাস্তার সংস্কার সাধন করেন। তার এ সমস্ত সংস্কারের ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রচুর উন্নতি সাধিত হলো। এতে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো দীর্ঘকাল পর সুবিন্যস্ত হলো।
গ. আইন সংস্কারঃ
ফ্রান্সের কনসুলেটর হিসেবে নেপোলিয়নের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো তার আইন সংস্কার। ইতিপূর্বে ফ্রান্সে কোনো সুসংবদ্ধ আইন প্রচলিত ছিল না। যে চারশটি বিভিন্ন রকমের আইন প্রচলিত ছিল তাতে যথেষ্ট বৈষম্য ছিল। নেপোলিয়ন অনেক কষ্ট স্বীকার করে প্রাচীনকাল থেকে ফ্রান্সে প্রচলিত সমস্ত আইন সংগ্রহ করে এগুলোর সংস্কার সাধন করেন।
পাঁচজন বিচক্ষণ আইনবিদের সমন্বয়ে ও তার তত্ত্বাবধানে একটি আইন কমিশন গঠন করে 'আইন-বিধি' প্রণয়ন করেন, যাকে Code Napoleon বলা হয়। এতে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা, আইনের চোখে মানুষের সমতা, কৃষকদের ভূমি মালিকানা স্বত্ব প্রভৃতি বিপ্লবের আদর্শ স্বীকৃতি লাভ করে। ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ভ্রাম্যমাণ বিচারক ব্যবস্থা সৃষ্টি তার অন্যতম একটি কীর্তি।
জুরি প্রথা পূর্বের মতো বহাল রাখা হয়। তার প্রবর্তিত দেওয়ানি আইন ও কার্যবিধি, ফৌজদারি আইন ও কার্যবিধি এবং বাণিজ্য আইন ছিল জটিলতামুক্ত ও সুবিন্যস্ত। রোমান আইনের মূল আদর্শের উপর ভিত্তি করে এগুলো রচিত বলে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও তা গৃহীত হয়।
তিনি নিজেই এ আইন-বিধির গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, "চল্লিশটি যুদ্ধে জয়লাভ করা আমার সত্যিকারের গৌরব নয়, যা কখনো মুছে ফেলা যাবে না এবং যা চিরস্থায়ী হবে তা হলো আইন-বিধি। "২৪ তার আইন-বিধির জন্য তাকে দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান বলা হয়। ঘ. ধর্মীয় সংস্কার: ধর্মনীতি পুনর্গঠনের ব্যাপারেও তিনি মনোনিবেশ করেছিলেন।
ধর্মীয় সংস্কারের ব্যাপারে তিনি উদার নীতি গ্রহণ করেন। তার ধর্মীয় সংস্কারের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় ব্যাপারে ঐক্য ও শান্তি স্থাপন করা। নেপোলিয়ন তার বিখ্যাত 'Concordate of 1801' বা ধর্ম মীমাংসা নীতি দ্বারা পোপ ও ফরাসি চার্চের পারস্পরিক বিরোধ দূর করেন। এ মীমাংসার ফলে স্থির হয় যে, রোমান ক্যাথলিক ধর্মই ফরাসিদের ধর্ম।
আরও স্থির হয় যে, যাজক সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মচারী সম্রাট কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং পোপ কর্তৃক এসব নিয়োগ অনুমোদিত হবে। নিম্নস্তরের কর্মচারী বিশপ কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং এ নিয়োগ সম্রাট কর্তৃক অনুমোদিত হবে। এভাবে ফরাসি চার্চের উপর তার প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। মূলত ফরাসি চার্চ রাষ্ট্রের একটি বিভাগে পরিণত হলো।
প্রকৃতপক্ষে নেপোলিয়নের ধর্ম সংস্কার তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচায়ক। নেপোলিয়নের ধর্ম সংস্কার সম্পর্কে ঐতিহাসিক কোব্যান বলেন, "The Concordate was a great victory for Bonaparte and a master stroke of Policy. The Emperor was able hence Forth to use the clergy as an instrument of ২৫ government।
৬. অন্যান্য সংস্কারঃ
শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারসাধন ও উন্নয়ন তার উল্লেখযোগ্য অবদান। দেশের শিক্ষার উন্নতির প্রতি তার সজাগ দৃষ্টি ছিল। তার আমলে ফরাসি ভাষার প্রসার ও সমৃদ্ধি ঘটে। তিনি জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের পক্ষপাতী ছিলেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি সরকারি ব্যয়ে বহু প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। বহু কারিগরি বিদ্যালয়ও স্থাপন করেন।
তারই চেষ্টায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় ১৮০৮ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সে 'University of France' প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি জাতি-ধর্ম ও রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে সকল শ্রেণির নাগরিককে সমান সুযোগ দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও সামাজিক সমতা প্রদান করেন।
প্রকৃত গুণীদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার জন্য ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দে নেপোলিয়ন 'Legion of Honour' নামে একটি সম্মানসূচক খেতাব সৃষ্টি করেন। এ সম্মানপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বংশগত মর্যাদার পরিবর্তে প্রকৃত গুণের ও স্বীয় কর্মের ভিত্তিতে নির্বাচিত হতেন। এভাবে তিনি তার অনুগত একটি অভিজাত সম্প্রদায় সৃষ্টি করেন।
নেপোলিয়নের সংস্কার ফ্রান্সের জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণস্পন্দনের সঞ্চার করেছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ফরাসি বিপ্লবের দুর্বার গতিধারায় যে সংঘাত দেশ ও জনগণের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল, এসব সংস্কারের ফলে সেগুলোর অবসান হয়। তার একনায়কতন্ত্র বিপ্লবের ধ্বংসাত্মক শক্তিকে বাধা প্রদান করেছিল।
তবে একথা সত্য যে, বিপ্লবপ্রসূত সাম্যনীতি, জনকল্যাণমূলক শাসনব্যবস্থা স্থাপন করে বিপ্লব ও স্বৈরাচারী শাসনের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। তার সংস্কারে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ যেমন প্রতিফলিত হয়, আবার ধর্মীয় ক্ষেত্রে আপস করে যাজকদের প্রাধান্য,
ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ প্রভৃতি স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড ছিল বিপ্লবের আদর্শের পরিপন্থী। তবে তার সংস্কারগুলোর লক্ষ্য ছিল ফ্রান্সকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়া, যাতে তিনি অনেকাংশেই সফল। ঐতিহাসিক ফিশার বলেন, "তার সামরিক বিজয়গুলো ক্ষণস্থায়ী হলেও ফ্রান্সে তার বেসামরিক কার্যাবলি গ্রানাইটের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত ছিল।
নেপোলিয়নের সংস্কারসমূহের সীমাবদ্ধতা
নেপোলিয়নের সংস্কারসমূহের সীমাবদ্ধতাও ছিল। যেমন-(ক) প্রশাসনিক সংস্কারের ফলে সারা দেশে প্রশাসনিক ঐক্য ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় হলেও প্রিফেক্টগণ জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেদের খুব কমই নিয়োজিত করতে পারতেন। নেপোলিয়নের নিরন্তর যুদ্ধের রসদ সরবরাহ ও প্রশাসনযন্ত্রের ক্রীড়নক হয়ে তাদের ব্যস্ত থাকতে হতো।
ফলে প্রশাসন কেন্দ্রীকরণ নীতি তার জন্য শেষ পর্যন্ত কোনো শুভ ফল বয়ে আনেনি। প্রিফেক্টদের স্থানীয় ভিত মজবুত না থাকায় তারা নেপোলিয়নের দুর্দিনে কোনো সাহায্য করতে পারেননি।
(খ) নেপোলিয়নের আইন সংস্কারও শত্রুমুক্ত ছিল না। যেমন
প্রথমত: ফ্রান্সের নারীসমাজের বন্ধনমুক্তি ও সমান অধিকার লাভের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল কোড নেপোলিয়ন দ্বারা তা দূরীভূত হয়। নারীদের সম্পত্তির অধিকার সংকুচিত করা হয়।
দ্বিতীয়ত: পুরুষ ও নারীর অধিকারের সমতাকে কোড নেপোলিয়নে অস্বীকার করা হয়।
তৃতীয়ত: পিতাকে পরিবারের উপর সামন্ততান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানের ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করা হয়।
চতুর্থত: তার আইন-বিধিতে শ্রমিকদের অধিকারের কোনো কথা ছিল না। তাদের নিম্নতম মজুরি ও ধর্মঘটের অধিকার স্বীকার করা হয়নি, বরং বুর্জোয়াদের স্বার্থের অনুকূলে ছিল।
(গ) নেপোলিয়নের শিক্ষা সংস্কারও শত্রুমুক্ত ছিল না। যেমন:
প্রথমত: তার শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষের মুক্তচিন্তা ও চেতনার কোনো স্থান ছিল না।
প্রথমত: তার শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষের মুক্তচিন্তা ও চেতনার কোনো স্থান ছিল না।
দ্বিতীয়ত: রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের পাঠ্যসূচিকে এমনভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছিল, যাতে তার শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে ছাত্রদের মনে প্রশ্নের সৃষ্টি না হয়।
তৃতীয়ত: সৃজনশীল চিন্তাধারা, মৌলিক সৃষ্টি ও গবেষণাকে উৎসাহ না দেওয়ায় ফ্রান্সে শুধু অধিকসংখ্যক ডাক্তার, প্রকৌশলী, আমলা ও সেনাপতি তৈরি হয়, কবি, সাহিত্যিক বা বুদ্ধিজীবী তদ্রূপ সৃষ্টি হয়নি। সুস্থ সংস্কৃতি ফরাসি জীবনধারা থেকে নির্বাসিত হয়।
এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তার সংস্কারগুলো ফ্রান্সের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়ের সূচনা করে; যা সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতীয় জীবনে শান্তি, স্থিতি ও সমৃদ্ধি এনে দেয়- বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
(গ) নেপোলিয়নের শিক্ষা সংস্কারও শত্রুমুক্ত ছিল না। যেমন:
প্রথমত: তার শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষের মুক্তচিন্তা ও চেতনার কোনো স্থান ছিল না।
দ্বিতীয়ত: রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের পাঠ্যসূচিকে এমনভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছিল, যাতে তার শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে ছাত্রদের মনে প্রশ্নের সৃষ্টি না হয়।
তৃতীয়ত: সৃজনশীল চিন্তাধারা, মৌলিক সৃষ্টি ও গবেষণাকে উৎসাহ না দেওয়ায় ফ্রান্সে শুধু অধিকসংখ্যক ডাক্তার, প্রকৌশলী, আমলা ও সেনাপতি তৈরি হয়, কবি, সাহিত্যিক বা বুদ্ধিজীবী অদ্রূপ সৃষ্টি হয়নি। সুস্থ সংস্কৃতি ফরাসি জীবনধারা থেকে নির্বাসিত হয়।
এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তার সংস্কারগুলো ফ্রান্সের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়ের সূচনা করে; যা সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতীয় জীবনে শান্তি, স্থিতি ও সমৃদ্ধি এনে দেয়- বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
ফরাসি বিপ্লব সম্পর্কে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের দৃষ্টিভঙ্গি
ফরাসি বিপ্লব সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি ও সম্পর্ক কিরূপ ছিল তা তার দুটি উক্তি থেকে সহজেই বোঝা যায়। তিনি ছিলেন একাধারে বিপ্লবের উত্তর-সাধক (Child the Revolution), আবার এর বিনাশক (Destroyer)। একদিকে তিনি বিপ্লবকে রক্ষা করেছিলেন, অবার অন্যদিকে তিনি একে ধ্বংস করেছিলেন।তাই একসময় তিনি বলেছিলেন, 'আমিই বিপ্লব' (I am the Revolution)। পরবর্তীকালে কোনো একসময় তিনি বলেছিলেন, "আমি বিপ্লবকে ধ্বংস করেছি। "২৭ তার পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে সত্যতা নিহিত আছে। ফরাসি বিপ্লবের ফলে জনসাধারণের মধ্যে যে সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন তিনি নিজেই।
সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও সম্রাট পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন কৌলীন্যের জোরে নয়, প্রতিভার বদৌলতে। তার প্রবর্তিত সংস্কারগুলোর সাথে বিপ্লবের ভাবাদর্শের কোনো মৌলিক বিরোধ ছিল না। আইনের চোখে সকলেই সমান- এ নীতিকে স্থায়িত্ব দান করে তিনি বিশ্বের সামনে বিপ্লবের একটি আদর্শ স্থাপন করেছিলেন।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের আক্রমণ থেকে ফ্রান্সকে রক্ষা করে বিপ্লবকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। এছাড়া তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোতে ফ্রান্সের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে বিপ্লবের প্রভাব ও আদর্শ ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। এসব বিবেচনায় তিনি যে নিজেই বিপ্লব ও বিপ্লবের রক্ষাকারী তা স্বীকার করে নিতে হয়।
আবার ঘন ঘন শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্থলে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফরাসি বিপ্লবের অমোঘ বাণী 'সাম্য ও শান্তি'তে তার বিশ্বাস ছিল, বিপ্লবীদের স্বাধীনতায় তার আস্থা ছিল না। তাই তিনি মন্তব্য করেন, "ফরাসি জাতির কাম্য সমতা, স্বাধীনতা নয়।" তার কতিপয় সংস্কার ও গৃহীত পদক্ষেপ বিপ্লববিরোধী ছিল।
আবার ঘন ঘন শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্থলে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফরাসি বিপ্লবের অমোঘ বাণী 'সাম্য ও শান্তি'তে তার বিশ্বাস ছিল, বিপ্লবীদের স্বাধীনতায় তার আস্থা ছিল না। তাই তিনি মন্তব্য করেন, "ফরাসি জাতির কাম্য সমতা, স্বাধীনতা নয়।" তার কতিপয় সংস্কার ও গৃহীত পদক্ষেপ বিপ্লববিরোধী ছিল।
এ বিবেচনায় তাকে বিপ্লবের বিনাশক বলা চলে। তবে, বিপ্লবী আদর্শের প্রতি তার পূর্ণ আস্থা না থাকলেও তার কার্যক্রমগুলো ছিল ক্ষিপ্রগতির; এজন্য 'আমিই বিপ্লব'- এ উক্তিটি তার নামের সাথে অত্যন্ত মানানসই।
নেপোলিয়নের পতনের কারণসমূহ
বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমরনায়ক নেপোলিয়ন বোনাপার্টের পতন ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ফরাসি বিপ্লব তরঙ্গের চূড়ায় আরোহণ করে তিনি ফ্রান্সের সিংহাসনে উপনীত হন। ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮০৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তিনি রাজ্যবিস্তার, শাসন সংস্কার, সামরিক বিজয় প্রভৃতি ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্যের পরিচয় দেন।কিন্তু এর পর থেকে তার ভাগ্যরবি ধীরে ধীরে অস্তমিত হতে শুরু করে। ১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে ওয়াটারলু যুদ্ধে পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবনের চির অবসান ঘটে। নিচে তার পতনের কারণগুলো আলোচনা করা হলো:
নেপোলিয়নের অনমনীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষা: নেপোলিয়নের আকাঙ্ক্ষা ছিল, তিনি ইউরোপের ভাগ্যবিধাতারূপে এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলবেন। কিন্তু এটি যে একটি অলীক স্বপ্ন, তা তার মতো বিচক্ষণ, দূরদর্শী রাজনীতিবিদ কেন বুঝতে পারেননি, তা সাধারণ বুদ্ধিতে ব্যাখ্যা করা কঠিন।
গভীর আত্মপ্রত্যয় ও অহমিকার কারণে তিনি তার জীবনের কতকগুলো শ্রেষ্ঠ সুযোগ হারিয়ে নিজেকে ভুল পথে পরিচালনা করেন। লাইপজিগের যুদ্ধের পর মিত্রশক্তি নেপোলিয়নকে সম্মানজনক ফ্রাংকফুর্ট প্রস্তাব দেয়।
প্রস্তাবে বলা হয়, নেপোলিয়ন বেলজিয়াম ও 'হল্যান্ড ত্যাগ করলে তাকে ফ্রান্সে রাজপদ দেওয়া হবে। কিন্তু নেপোলিয়ন রাজি হননি। কারণ তিনি তখনো নিজেকে অজেয় মনে করতেন। প্রকৃতপক্ষে মিত্রশক্তির ফ্রাংকফুর্ট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা ছিল নেপোলিয়নের জীবনে বড় ভুল।
ভ্রান্ত স্পেনীয় নীতি: স্পেনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং স্পেনের সিংহাসনে নিজ ভাই যোসেফ বোনাপার্টকে প্রতিষ্ঠিত করা নেপোলিয়নের জীবনে মারাত্মক এক ভুল ছিল। তিনি স্পেনবাসীর দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের উপর চরম আঘাত হেনে কূটনৈতিক অদূরদর্শিতার পরিচয় দেন। নেপোলিয়নের স্পেন আক্রমণ স্পেনবাসী কখনোই মেনে নেয়নি।
ফলে স্পেনবাসী জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। এ আন্দোলনের পরিণতিস্বরূপ উপদ্বীপের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে স্পেনবাসীর জাতীয়তাবাদী এ সংগ্রাম ইউরোপের অন্য দেশগুলোতেও প্রেরণা জোগায়।
যাহোক, স্পেনের মতো একটি ছোট দেশকে পরাস্ত করতে না পারায় তার সামরিক মর্যাদা বিনষ্ট হয়। প্রকৃতপক্ষে স্পেনেই নেপোলিয়নের সামরিক মর্যাদার সমাধি রচিত হয়। নেপোলিয়ন নিজেই বলেছেন, "স্পেনের ক্ষতেই আমার সর্বনাশ হয়।” (The Spanish ulcer ruined me.)।
সাম্রাজ্যের মধ্যে স্ববিরোধিতা: নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্যের বিপর্যয় ছিল একরূপ সুনিশ্চিত, কারণ সাম্রাজ্যের অন্তর্নিহিত স্বার্থ ছিল স্ববিরোধী ও অসংগতিপূর্ণ। ডেভিড থমসন-এর ভাষায়, "The Napoleonic Empire was doomed because of its inherent and self-defeating contradictions,
"২৯ ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে যুদ্ধের শুরু এবং ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে নেপোলিয়নের সিংহাসন ত্যাগ- এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটেনি। মহাদেশীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে নেপোলিয়ন ব্রিটেনের নৌশক্তি ও বাণিজ্য ধ্বংস করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। এ ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য নেপোলিয়নকে রাজ্যজয়ের এক সর্বাত্মক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হয়।
কিন্তু ফ্রান্সের আগ্রাসন ব্রিটেন তথা ইউরোপের প্রতিরোধ ও আক্রমণাত্মক মনোভাব যারপরনাই কঠোর করে তুলেছিল। এটি ছিল রাজ্যজয় ও প্রতিরোধের এক জটপাকানো আবর্ত, যা নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্যের সংহতির পক্ষে ক্ষতিকারক হয়।
নেপোলিয়নের বংশগত ও জাতীয়তাবাদী স্বার্থ ও নীতির মধ্যেও প্রচণ্ড অন্তর্বিরোধ ছিল, যা সাম্রাজ্যের ভিত্তি দুর্বল করে ফেলে। তিনি হল্যান্ড, নেপলস, ওয়েস্টফেলিয়া ও স্পেনের সিংহাসনে নিজের ভ্রাতাদের অভিষিক্ত করে ইউরোপে এক নতুন বংশানুক্রমিক ঐতিহ্য স্থাপন করেন, যা ছিল বিপ্লবী আদর্শের পরিপন্থী।
ফ্রান্সের স্বার্থেই তিনি এসব দেশকে পদানত করে রাখতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি একসময় মন্তব্য করেছিলেন, "My Policy is France before all."৩০ কিন্তু পূর্বতন পারিবারিক বংশানুক্রমিক ঐতিহ্য ও আধুনিক জাতীয়তাবাদের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করা সে সময় মোটেই সম্ভব ছিল না।
যে আদর্শের কথা প্রচার করে তিনি ক্ষমতার চরম শিখরে আরোহণ করেছিলেন, তা তিনি নিজেই ধ্বংস করে নিজের পতন অনিবার্য করে তুলেছিলেন।
সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক ত্রুটি: ১৮০৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক চরিত্রের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। বিপ্লবী যুদ্ধের সময় যে 'মহান সেনাবাহিনী' (Grand Army) নেপোলিয়ন গড়ে তুলেছিলেন, অস্টারলিজ ও জেনার যুদ্ধে ও স্পেনীয় অভিযানে তা প্রায় ধ্বংস হয়ে যায় এবং নেপোলিয়নকে বিদেশি সেনার উপর নির্ভর করতে হয়।
ফলে সেনাবাহিনীতে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয়। এই বিদেশি সেনাবাহিনীর আনুগত্য সম্বন্ধে নেপোলিয়নের নিজেরই যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। মস্কো অভিযানের অদূরদর্শিতা মস্কো অভিযান নেপোলিয়নের পতনের অপর প্রধান কারণ। প্রাকৃতিক অসুবিধা অগ্রাহ্য করে সুদূর মস্কো অভিযানে প্রবৃত্ত হয়ে তিনি মারাত্মক ভুল করেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ রুশ জনগণের গেরিলা যুদ্ধের ফলে অগণিত ফরাসি সেনা ও সেনাপতিগণ মৃত্যুবরণ করেন। হিটলারের মস্কো অভিযানের ন্যায় নেপোলিয়নের মস্কো অভিযানও চরম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
এই ব্যর্থতার ফলে নেপোলিয়নের সামরিক শক্তি ও তার ব্যক্তিগত মর্যাদা বিশেষভাবে ক্ষুণ্ণ হয় এবং এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ইউরোপের জনগণের মনে প্রবল জাতীয়তাবোধের সঞ্চার হয়। মস্কো অভিযান নেপোলিয়নের অদূরদর্শিতার অপর নিদর্শন বহন করে।
মহাদেশীয় ব্যবস্থার অসারতা ও প্রতিক্রিয়া: নেপোলিয়নের পতনের অন্য কারণ হলো মহাদেশীয় ব্যবস্থা।ইংল্যান্ডের ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই নেপোলিয়ন এই অবরোধপ্রথা অবলম্বন করেছিলেন। কিন্তু এটা কার্যকর করার জন্য যে নৌশক্তির প্রয়োজন ছিল, নেপোলিয়নের তা ছিল না।
এই অবরোধ প্রথা অবলম্বনের ফলে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো এক চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় এবং তাদের মনে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে এক দারুণ বিদ্বেষের সঞ্চার করে। সমুদ্রের উপর ইংল্যান্ডের নৌশক্তি অপ্রতিহত থাকায় ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে গোপন ব্যবসা-বাণিজ্য চলতে থাকলে মহাদেশীয় ব্যবস্থার অসারতা প্রতিপন্ন হয়।
এ ব্যবস্থার ফলে নেপোলিয়নের মিত্র রুশ সম্রাট আলেকজান্ডারও তার প্রতি বিদ্বিষ্ট হয়ে ওঠেন এবং অপর মিত্রশক্তিগুলোও তার বিরোধী হয়ে ওঠে।এ কথা অনস্বীকার্য, মহাদেশীয় অবরোধ কঠোরভাবে বলবৎ করতে গিয়ে নেপোলিয়ন নিজেই ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন এবং এই বিচ্ছিন্নতাই তাকে বিপর্যয়ের সম্মুখে ঠেলে দেয়।
এই মহাদেশীয় অবরোধ ইউরোপের জনগণের মনে নেপোলিয়নের প্রতি প্রবল ঘৃণার সঞ্চার করে। অবরোধ প্রথা কঠোরভাবে বলবৎ করতে গিয়ে তিনি বহু অহেতুক যুদ্ধের ও জটিলতার সৃষ্টি করেন, যা ফ্রান্সের পক্ষে ক্ষতিকর হয়।
এযাবৎ নেপোলিয়নের প্রবল সমর্থক মধ্যবিত্ত শ্রেণি বিদ্বিষ্ট হয়ে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়।
যে অর্থনৈতিক অস্ত্রের দ্বারা নেপোলিয়ন ব্রিটেনকে আঘাত করতে চেয়েছিলেন, সেই অস্ত্রের আঘাত তাকেই পেতে হলো।
পোপের প্রতি দুর্ব্যবহার:পোপের সঙ্গে বিবাদ ও পোপের প্রতি দুর্ব্যবহার নেপোলিয়নের পতনের অপর কারণ।নেপোলিয়ন পোপের অধিকারভুক্ত সব বন্দরে ব্রিটিশ পণ্যবাহী জাহাজের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার দাবি করেছিলেন, কিন্তু পোপ নিরপেক্ষ থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করলে নেপোলিয়নের সঙ্গে তার সংঘর্ষ বাধে।
নেপোলিয়ন পোপকে বন্দি করে তার রাজ্য দখল করেন।ফলে নেপোলিয়ন ফ্রান্সের ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের ঘৃণা ও বিদ্বেষ অর্জন করেন।ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের বিরোধিতা স্বদেশে নেপোলিয়নের জনপ্রিয়তা বহুলাংশে ক্ষুণ্ণ করে।
ব্রিটিশ নৌশক্তির প্রাধান্য: সমুদ্রের উপর ব্রিটিশ নৌশক্তির প্রাধান্য নেপোলিয়নের পতনের অপর কারণ।নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থা ব্রিটিশ শক্তিকে কোনো প্রকারেই খর্ব করতে পারেনি, বরং সমুদ্রের উপর ব্রিটিশ নৌশক্তি অপ্রতিহত থাকায় ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো ব্রিটেনের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং মহাদেশীয় ব্যবস্থার ব্যর্থতার এটাই ছিল প্রধান কারণ।
নীলনদের যুদ্ধে ও ট্রাফালগারের যুদ্ধে ফরাসি নৌশক্তি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। স্পেনের যুদ্ধেও ব্রিটিশ নৌশক্তি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।
ইউরোপীয় রাষ্ট্রজোট ও ফরাসি জাতির শান্তি কামনা: নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় শক্তিবর্গের রাষ্ট্রজোট ফ্রান্সের সামরিক শক্তিকে নানাভাবে বিপর্যস্ত করেছিল। ইউরোপের প্রায় সকল বৃহৎ শক্তি অস্ত্রধারণ করে নেপোলিয়নের সামরিক পরিকল্পনা এক প্রকার বানচাল করে দেয়।
এছাড়া দীর্ঘকালব্যাপী যুদ্ধবিগ্রহের ফলে ফরাসি জাতি শান্তির জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলে নেপোলিয়নের পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
পরিশেষে বলা যায়, সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতা নেপোলিয়ন সাফল্যের চরম শিখরে আরোহণ করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে শেষ পর্যন্ত তাকে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে ইউরোপের রাজনীতি থেকে বিদায় গ্রহণ করতে হয়।
১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে ঐতিহাসিক ওয়াটারলু যুদ্ধে তিনি পরাজিত হলে মিত্রশক্তি তাকে আটলান্টিক মহাসাগরের সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসন দেয়। সেখানেই তার ঘটনাবহুল রাজনৈতিক ও সামরিক জীবনের অবসান ঘটে। বিশ্বের ইতিহাসে নেপোলিয়নের মতো বীরের এরূপ করুণ পরিণতি পাঠকের মনে গভীর রেখাপাত করে।
নেপোলিয়ন কত সালে মৃত্যুবরণ করেন
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ৫ মে ১৮২১ খ্রীষ্টাব্দে হেলেনা দ্বীপে মৃত্যুবরন করেন। তিনি ১৮১৫ সালের ১৮ই জুন ওয়াটারলু যুদ্ধে তে পরাজিত হন এবং পরবর্তী ছয় বছর ব্রিটিশদের তত্ত্বাবধানে আটলান্টিক মহাসাগরের দীপ সেন্ট হেলেনা তে কাটান এবং নির্বাসিত অবস্থায় থাকাকালীন সময়ে মৃত্যুবরণ করেন।লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে ইতিহাসের অন্যতম বিচক্ষন রাজা নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সম্পর্কে। এখনো যথেষ্ট আগ্রহের সাথে তার জীবনী ও কর্ম সম্পর্কে অধ্যায়ন করা হয়।সেইদিক বিবেচনা করেই যাচাইকৃত তথ্য দ্বারা এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে।আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে তার সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়েছেন।যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।
এছাড়াও আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো যেমন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী,বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।
কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url