দৈর্ঘ্যের একক কি ও কাকে বলে
এখানে দৈর্ঘ্য, ভর, সময় এবং তাপমাত্রা এই চারটি রাশি পরিমাপ করার জন্য এককের কথা বলা হয়েছে। চলুন এই রাশিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত যেনে নেওয়া যাক।
তার কারণটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানের ভাষায় ভর আর ওজনের মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য। ভরের একক হচ্ছে কেজি। ওজনের অন্য একটি একক, তোমরা উপরের ক্লাসে সেগুলো জানবে। কাজেই বিজ্ঞানের ভাষায় তোমার ওজন ৩০ কেজি কথাটি ভুল, কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে আমরা সেটা নিয়ে মাথা ঘামাই না!
আমাদের চারপাশে ১ সেকেন্ডের কাছাকাছি অনেক উদাহরণ আছে। আমাদের হৃৎস্পন্দন সেকেন্ডে ১ বার করে হয়, কারো একটু বেশি, কারো একটু কম। আমরা চোখের পাতা ফেলি প্রতি দুই সেকেন্ডে একবার, কেউ একটু বেশি, কেউ একটু কম। নিশ্বাস নেই প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একবার, কেউ একটু বেশি, কেউ একটু কম!
এবং বরফের তাপমাত্রার পার্থক্য ১০০K অর্থাৎ কোনো কিছুর তাপমাত্রা ১০°০ বেড়ে গিয়েছে বলা যে কথা ১০K বেড়ে গিয়েছে বলা একই কথা। স্বাভাবিকভাবেই তুমি তাহলে প্রশ্ন করতে পার এই দুটি এককের মধ্যে পার্থক্য কী?
ভূমিকা
আপনি নিশ্চয় জানেন, ঠিকভাবে পরিমাপ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাঁচ কিলোমিটার হাঁটতে গিয়ে যদি দেখো আপনাকে পাঁচ মাইল হাঁটতে হচ্ছে তাহলে দেড়গুণ থেকে বেশি হাঁটতে হবে। আপনার মা যদি আপনাকে পাঁচ কেজি চাল আনতে বলে আর আপনি যদি পাঁচ পাউন্ড চাল নিয়ে আস, তাহলে অর্ধেক থেকেও কম চাল আনবে!দৈনন্দিন জীবনে এরকম ভুলত্রুটি আমরা কোনোভাবে কাটিয়ে উঠতে পারি কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এই ভুল মারাত্মক হতে পারে। পরিমাপে ভুল করেছিল বলে ১৯৮৩ সালের ২৩শে জুলাই এয়ার কানাডার যাত্রীবাহী একটি বোয়িং 767 বিমান মাঝপথে আবিষ্কার করল তার জ্বালানি শেষ।
বিন্দুমাত্র জ্বালানি ছাড়াই দক্ষ পাইলট সেটিকে কাছাকাছি পরিত্যক্ত একটা রেস কোর্সে নামিয়ে আনতে পেরেছিল। আবার একই ধরনের পরিমাপের হেরফেরের কারণে নাসার (NASA) ১২৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি মহাকাশযান ১৯৯৯ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর মঙ্গল গ্রহে বিধস্ত হয়েছিল। কাজেই পরিমাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।
দৈর্ঘ্যের একক কি ও কাকে বলে
দৈর্ঘ্যের আন্তর্জাতিক একক হচ্ছে মিটার, সংক্ষেপে m। যদিও পাশাপাশি ইঞ্চি এবং ফুটকে দৈনন্দিন জীবনে এখনও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। আমরা বিজ্ঞানের পরিমাপের জন্য এই বইয়ে মিটারকে দৈর্ঘ্যের একক হিসেবে ব্যবহার করব। তোমরা যারা একটা মিটারস্টিক হাতে নিয়েছ, তারা মিটার বলতে কতটুকু দূরত্ব বোঝায় সেটা অনুভব করতে পেরেছ।মোটামুটিভাবে বলা যায় একজন মানুষের পা থেকে কোমর পর্যন্ত দূরত্বটুকুই হচ্ছে এক মিটার। তবে একেবারে সঠিকভাবে এক মিটার দূরত্ব মাপার জন্য আগে একটি আদর্শ মিটারস্টিক ফ্রান্সের একটি মিউজিয়ামে রাখা ছিল। এখন এক মিটার দূরত্ব মাপার জন্য বিজ্ঞানীরা একটি মজার পদ্ধতি ব্যবহার করেন।
আলোর বেগ অনেক বেশি, এটি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার যায়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই অচিন্তনীয় আলোর বেগ ব্যবহার করে এক মিটার দূরত্ব বের করে ফেলেন। আলোর বেগ যেহেতু মহাবিশ্বের সব জায়গায় একই থাকে, তাই শুধু পৃথিবীর 'যে কোনো জায়গায় নয় মহাবিশ্বের যে কোনো জায়গায় এক মিটার দূরত্ব কতটুকু সেটা অনেক সূক্ষ্মভাবে বের করে ফেলা যাবে।
ভরের একক কি ও কাকে বলে
ভরের একক হচ্ছে কিলোগ্রাম বা সংক্ষেপে কেজি (kg)। এক সময় 'আসল' এক কেজি একটা ভর ফ্রান্সের একটি মিউজিয়ামে রাখা হতো। ২০১৯ সালের মে মাস থেকে 'আদর্শ' বা 'আসল' এককের জন্য কোনো মিউজিয়ামে রক্ষা করা ভরের উপর নির্ভর করতে হয় না। বিজ্ঞানের কিছু ধ্রুব থেকে সেগুলো বের করে ফেলা যায়।সম্ভবত আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে বেশি বার কেজি ব্যবহার করি। যেহেতু আমরা আজকাল পানি কিংবা সফট ড্রিঙ্কের বোতলে অভ্যস্ত হয়ে গেছি তাই বলতে পারি এক লিটারের বোতল বোঝাই পানি কিংবা সফট ড্রিঙ্কের ভর হচ্ছে এক কেজি। কিংবা সাধারণ গ্লাসের চার গ্লাস পানির ভর হচ্ছে এক কেজি।
তোমাদের কারো কারো মনে হয়ত খটকা লাগছে যে আমরা ওজন মাপার জন্য কেজি ব্যবহার করি, আমাদের ওজন ৩০ কেজি বলতে আমরা খুবই অভ্যস্ত, তাহলে প্রচলিত ওজন শব্দটা ব্যবহার না করে বার বার ভর কথাটা কেন ব্যবহার করছি?
তার কারণটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানের ভাষায় ভর আর ওজনের মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য। ভরের একক হচ্ছে কেজি। ওজনের অন্য একটি একক, তোমরা উপরের ক্লাসে সেগুলো জানবে। কাজেই বিজ্ঞানের ভাষায় তোমার ওজন ৩০ কেজি কথাটি ভুল, কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে আমরা সেটা নিয়ে মাথা ঘামাই না!
এক ভর অন্য ভরকে আকর্ষণ করে; পৃথিবীর ভর যেহেতু অনেক বেশি তাই তার আকর্ষণটাও বেশি, এই আকর্ষণটাই আসলে ওজন। চাঁদের ভর যেহেতু পৃথিবীর ভর থেকে কম তাই তুমি যদি চাঁদে যাও তাহলে দেখবে সেখানে তোমার উপর চাঁদের আকর্ষণও কম।অর্থাৎ তোমার মনে হবে তোমার ওজনও কম, এক লাফে তুমি অনেক উপরে উঠে যেতে পারবে।
কাজেই পৃথিবী এবং চাঁদ দুই জায়গাতেই তোমার ভর ৩০ কেজি হলেও পৃথিবী এবং চাঁদে তোমার ওজন ভিন্ন!দৈর্ঘ্যের বেলায় দেখেছি মিটারের পাশাপাশি ইঞ্চি এবং ফুটও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ভরের জন্যও কেজির পাশাপাশি পাউন্ড ব্যবহার হতো তবে আজকাল সেটি তুলনামূলকভাবে কম ব্যবহৃত হয়।
দৈর্ঘ্যের বেলাতে আমরা কম কিংবা বেশি দূরত্ব বোঝানোর জন্য সেন্টিমিটার বা কিলোমিটার ব্যবহার করেছি, ভরের বেলাতেও তাই। কম ভরের বেলায় আমরা গ্রাম (৪) ব্যবহার করি যেটা কিলোগ্রামের ১০০০ ভাগের এক ভাগ।
তার চাইতেও কম ভর মাপার জন্য আমরা মিলিগ্রাম (mg) ব্যবহার করি যেটা গ্রামের ১০০০ ভাগের এক ভাগ। তোমরা ওষুধের ট্যাবলেটে দেখবে সেখানকার সক্রিয় উপাদানটির পরিমাণ সবসময় mg-এ দেওয়া থাকে।
সময়ের একক কি ও কাকে বলে
যতগুলো রাশি আছে তার মধ্যে সময় রাশিটি নিশ্চয়ই আমাদের পরিচিত রাশি। এর মূল এককটি নিয়ে পৃথিবীতে কোনো বিভাজন নেই। সবাই সেকেন্ডকে (৪) সময়ের একক হিসেবে মেনে নিয়েছে।খাঁটি বিজ্ঞানের বেলায় এক সেকেন্ড ব্যাখ্যা করার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরমাণুর নির্দিষ্ট সংখ্যক কম্পনের সময়কে ধরে নিলেও আমরা মুখে 'এক হাজার এক' কথাটি উচ্চারণের জন্য প্রয়োজনীয় সময়কে এক সেকেন্ড হিসেবে অনুভব করতে পারি। দৈর্ঘ্য এবং ভরের বেলায় কিলোমিটার এবং কিলোগ্রাম থাকলেও সময়ের বেলায় কিলোসেকেন্ড নেই!
তোমরা সবাই জানো ৬০ সেকেন্ডে এক মিনিট এবং ৬০ মিনিটে এক ঘণ্টা ধরে নেওয়া হয়। তবে কিলোসেকেন্ড না থাকলেও মিলিসেকেন্ড আছে। সেটি হচ্ছে ১ সেকেন্ডের ১০০০ ভাগের এক ভাগ, তবে এই সময়টি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনুভব করার জন্য বেশ ছোট।
আমাদের চারপাশে ১ সেকেন্ডের কাছাকাছি অনেক উদাহরণ আছে। আমাদের হৃৎস্পন্দন সেকেন্ডে ১ বার করে হয়, কারো একটু বেশি, কারো একটু কম। আমরা চোখের পাতা ফেলি প্রতি দুই সেকেন্ডে একবার, কেউ একটু বেশি, কেউ একটু কম। নিশ্বাস নেই প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একবার, কেউ একটু বেশি, কেউ একটু কম!
তাপমাত্রার একক কি ও কাকে বলে
তাপমাত্রার আন্তর্জাতিক একক হচ্ছে কেলভিন (K), যদিও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কখনো ব্যবহার করি না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা তাপমাত্রার জন্য যে এককটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি সেটি হচ্ছে সেলসিয়াস (°C)। এই এককে পানি জমে বরফ হওয়ার তাপমাত্রা ধরা হয়েছে ০°C এবং পানি ফুটে বাষ্প হওয়ার তাপমাত্রা ধরা হয়েছে ১০০০০। তবে মজার বিষয় হচ্ছে কেলভিন এককের বেলাতেও পানি বাষ্পীভবনের তাপমাত্রাএবং বরফের তাপমাত্রার পার্থক্য ১০০K অর্থাৎ কোনো কিছুর তাপমাত্রা ১০°০ বেড়ে গিয়েছে বলা যে কথা ১০K বেড়ে গিয়েছে বলা একই কথা। স্বাভাবিকভাবেই তুমি তাহলে প্রশ্ন করতে পার এই দুটি এককের মধ্যে পার্থক্য কী?
পার্থক্য হচ্ছে ২৭৩.১৫০।অর্থাৎ সেলসিয়াস স্কেলের তাপমাত্রার সাথে ২৭৩.১৫ যোগ করলে কেলভিন স্কেল পাওয়া যায়। অর্থাৎ কেলভিন স্কেলে বরফের তাপমাত্রা হচ্ছে ০ ২৭৩.১৫ = ২৭৩.১৫ K এবং পানি বাষ্পীভবনের তাপমাত্রা হচ্ছে ১০০ ২৭৩.১৫ = ৩৭৩.১৫ K।
স্বাভাবিকভাবেই তুমি তাহলে প্রশ্ন করবে সেলসিয়াসের এত সহজ সরল স্কেলের সাথে এই বিচিত্র একটি সংখ্যা যোগ দিয়ে কেলভিন স্কেল তৈরি করার কারণ কী?কারণটি কিন্তু অত্যন্ত চমকপ্রদ। তুমি যে কোনো কিছুর তাপমাত্রা যত ইচ্ছা বাড়াতে পারবে, তার কোনো সীমা নেই! কিন্তু তাপমাত্রা যত ইচ্ছা কমাতে পারবে না। তাপমাত্রার একটা সর্বনিম্ন মান আছে।
সত্যি কথা বলতে কী তুমি এই তাপমাত্রার কাছাকাছি যেতে পারবে কিন্তু কখনই সেই তাপমাত্রায় পৌঁছাতে পারবে না। এটাকে বলে পরম শূন্য তাপমাত্রা। কেলভিন স্কেলটি তৈরি করা হয়েছে এই তাপমাত্রাকে শূন্য ডিগ্রি ধরে। সেলসিয়াস স্কেলে এই তাপমাত্রা হচ্ছে-২৭৩.১৫° তাই সেলসিয়াস স্কেলের সাথে ২৭৩.১৫ যোগ দিলে কেলভিন স্কেল পাওয়া যায়।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে বিভিন্ন একক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বর্তমানে এই বিষয়গুল একটি প্রয়োজনীয় জিনিসে পরিণত হয়েছে। তাই এ সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত ধারণা থাকা প্রয়োজন। সেই দিক বিবেচনা করে আজকের আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আইসোটোপ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন।যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লেগে থাকে তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব সহপাঠি কিংবা পারা প্রতিবেশীদের মাঝেও শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এ বিষয়ে সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে। আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন।
যাতে অন্যরাও উপকৃত হতে পারে। আর এ ধরনের আর্টিকেলগুলো পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। কারণ এখানে আমরা বিভিন্ন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি , বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক , স্বাস্থ্য বিষয়ক সহ আরো নানান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।
আশা করি এই আর্টিকেল গুলো আপনার জ্ঞান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url