হিটলার কোন দেশের নাগরিক ছিলেন
বর্তমানে হিটলার কে চিনেনা এমন লোক হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু আপনি কি আসলেই জানেন যে হিটলার কোন দেশের নাগরিক ছিলেন এবং তিনি কি কারণে এতটা পরিচিত লাভ করেছেন?
৪। ইহুদিবিদ্বেষ: জার্মানিতে ইহুদিবিদ্বেষ ছিল বহু প্রাচীন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে তা আরও বৃদ্ধি পায়। হিটলার ইহুদিদের জার্মানির সকল বিপর্যয়ের জন্য দায়ী বলে প্রচার করতে থাকেন। সুদের কারবারি ও মুনাফাখোর বলে তাদের হেয় করতে থাকেন। মূলত ইহুদিরা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করত এবং
শিল্প-কারখানার মালিকানা তাদের ছিল। ইহুদিবিদ্বেষ জার্মানির মজ্জাগত ছিল বলে তার প্রচার ও অভিযোগ জার্মানরা খুব সহজেই গ্রহণ করে, যা তার ও নাৎসিদের উত্থানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৫। প্রজাতান্ত্রিক সরকারের সাংবিধানিক ত্রুটি-বিচ্যুতি: প্রজাতান্ত্রিক সরকারের অধীনে প্রণীত জার্মানির সংবিধানের ৪৮ নম্বর ধারায় প্রেসিডেন্টকে কিছু বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। যেমন- প্রয়োজনবোধে সংবিধান স্থগিত করা ও জরুরি অবস্থা ঘোষণা। কিন্তু প্রেসিডেন্টের চারিত্রিক দুর্বলতার কারণে এর অপব্যবহার শুরু হয়।
৭। হিটলারের সহযোগীদের ভূমিকা: হিটলারের উত্থানের পেছনে তার সহযোগী গ্রেগর স্টেসার, ওট্রোস্ট্রেসার, আনটেস্ট্র-রম, হেইনরিখ হিমলার, হারমান গোরিং পল, যোসেফ গোয়েবল্স, আলফ্রেড রোজেনবার্গ প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। গোরিং ও হিমলার বিরুদ্ধবাদীদের দমন এবং গোয়েবল্স নাৎসি প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
৮। জার্মান জাতির প্রজাতান্ত্রিক রীতিনীতির ঐতিহ্য না থাকা: জার্মানির পূর্বের ইতিহাস গণতান্ত্রিক শাসনের ইতিহাস নয়। তারা বরাবরই একনায়কের অধীনে শাসিত হতে হতে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল।
৯। হিটলারের ব্যক্তিগত যোগ্যতা: অবশ্য তার উত্থানে তার যোগ্যতাকে অস্বীকার করা যায় না। একজন সুদক্ষ মনোবিজ্ঞানী ও চতুর গণবক্তা হিসেবে হিটলার জার্মান জাতির বিশেষভাবে যুব সম্প্রদায়ের মনোভাব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলেন।
নাৎসি বাহিনী শুধু শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতায় ছিল তা নয়, নাৎসিবাদ জার্মানিতে এক সর্বগ্রাসী সামাজিক বিশ্বাসে পরিণত হয়। দেশের প্রচারপত্র, পত্র-পত্রিকা, শিক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদি নাৎসি ভাবধারা মানুষের মনে জাগ্রত করতে সহায়তা করে। জার্মান যুবসমাজের মাথায় এমনভাবে আর্যবর্ণের শ্রেষ্ঠত্ব ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যে, তারা ভাবতে শুরু করে তারাই শ্রেষ্ঠ জাতি, শ্রেষ্ঠ রক্ত।
ভূমিকা
যদি আপনি ইতিহাস পর্যালোচনা করেন তাহলে যতগুলো স্বৈরাচারী নেতাদের সম্পর্কে উল্লেখ আছে তাদের মধ্যে এডলফ হিটলার অন্যতম একজন। তিনি তার জীবনে তার ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে অনেক কুকীর্তি সাধন করেছিলেন।তিনি তার জীবন দশায় যে সকল কাজ করেছেন সেই সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে লেখার চেষ্টা করব। চলুন জেনে নেওয়া যাক তার সম্পর্কে বিস্তারিত।
হিটলার কোন দেশের নাগরিক ছিলেন
নাৎসিবাদের জনক ও নাৎসি দলের নেতা এডলফ হিটলার ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে এপ্রিল অস্ট্রিয়ার ব্রাউনাউতে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তিনি পুর্ন বয়সে জার্মানির নাগরিক ছিলেন পিতা অ্যালোয়েস হিটলার ছিলেন অস্ট্রীয় সরকারের শুল্ক বিভাগের একজন সাধারণ কর্মচারী। ১৩ বছর বয়সে তিনি পিতাকে হারান। তার মায়ের নাম ক্লারা হিটলার।অনেক ভাই- বোনের সঙ্গে পিতৃহারা হিটলারের জীবন অতিবাহিত হয় চরম দুঃখ-দারিদ্র্যে।লিন্জ নামক শহরে মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হলেও পড়াশোনা বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। পরে তিনি লাসবাক, স্ট্রেইয়ারে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
হিটলারের ক্ষমতা দখল
হিটলার ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভিয়েনায় চলে এসে একাডেমি অব আর্টস-এ ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। জীবনের কয়েকটি বছর এখানে অতিবাহিত করে রাজনীতিতে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। এ সময় তার মধ্যে মার্কস ও ইহুদিবিদ্বেষ, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রবিরোধী ভাবধারা জন্ম নেয়।১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মিউনিখে যান এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হউন্নীত হন।যুদ্ধে জার্মানির পরাজয় ও তার উপর চাপিয়ে দেওয়া ভার্সাই সন্ধি অন্য জার্মানদের মতো তার মনেও বিশেষ প্রভাব ফেলে। তিনি একে দেখেছেন ক্রোধ দিয়ে এবং গ্রহণ করেছেন প্রতিশোধ গ্রহণের বোধ নিয়ে।
১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে জার্মান শ্রমিক দলে যোগদান করেন, যার পরিবর্তিত নাম হয় 'ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি', সংক্ষেপে নাৎসি পার্টি। অল্পদিনের মধ্যে বাগ্মিতার জোরে এর ফুয়েরার বা প্রধান হন।তিনি ফ্যাসিবাদেরই জার্মান সংস্করণ নাৎসিবাদ।
নাৎসি পার্টি ফ্যাসিবাদের আদর্শ, কর্মপদ্ধতি, উদ্দেশ্য, স্বরূপকে আরও হিংস্রভাবে গ্রহণ করে। জার্মানির বিক্ষুব্ধ মানুষ নাৎসি দলে ভিড় করতে থাকে। যুদ্ধফেরত সৈনিক, রক্ষণশীল রাজতন্ত্রী, দুর্দশাগ্রস্ত ব্যবসায়ী এবং হতাশ শ্রমিকরা এ দলে ভিড় করতে থাকে।
ক্যাথলিকবিরোধী, ইহুদিবিরোধী, কমিউনিস্টবিরোধীরাও নাৎসি দলকে তাদের লক্ষ্য পূরণের হাতিয়ার হিসেবে মনে করে। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে হিটলার দলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গোয়েরিং, হেস, রোজেনবুর্গ, পোয়েম, গোয়েবল্স প্রমুখ সহকর্মীর সাহায্যে দলকে শক্তিশালী করে তোলেন।
দলের পতাকা ছিল রক্তবর্ণ এবং মাঝখানে সাদা রঙের মধ্যে শোভা পেত কালো স্বস্তিকা। দলীয় স্বার্থরক্ষা ও নেতৃবৃন্দের নিরাপত্তার জন্য ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় SA বাহিনী। এরা বোয়েমের নেতৃত্বে অন্য দল বিশেষ করে কমিউনিস্টদের হাত থেকে দলের সভাগুলোকে রক্ষা করা ছাড়াও অন্য দলের উপর হামলা,
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ভয়ভীতি প্রদর্শন, হত্যা, গুম ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করত। বাদামি রঙের পোশাক পরত বলে এদের 'ব্রাউন শার্ট'ও বলা হতো। সংস্কৃতির বিশুদ্ধতা ও আর্যরক্তের প্রতীক হিসেবে এরা 'স্বস্তিকা চিহ্ন' ব্যবহার করত। এছাড়া ছিল বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হিটলারের ব্যক্তিগত রক্ষীবাহিনী এসএস।
নাৎসি দলের স্লোগান ছিল 'উদ্দীপ্ত জার্মানি', 'ইহুদিগণ আমাদের দুর্ভাগ্য', 'ক্যাথলিক নিপাত যাক', 'ফুয়েরার (হিটলার) দীর্ঘজীবী হোন', 'আজ জার্মানি, আগামীকাল বিশ্ব' ইত্যাদি। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে হিটলার প্রখ্যাত জার্মান সেনাপতি লুডেনডর্ফ ও অন্য কয়েকজন সহযোগীর সহায়তায় জার্মান সরকারকে উৎখাতের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেন।
কিন্তু তার চেষ্টা ব্যর্থ হলে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান এবং নাৎসি পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। জেলে বসে তিনি নাৎসি দলের বাইবেল 'Mein Kampf' বা 'আমার সংগ্রাম' রচনা করেন। প্রায় নয় মাস জেল খাটার পর ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে ডিসেম্বর মুক্তিলাভ করে পার্টিকে সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
জার্মান প্রজাতান্ত্রিক সরকারের ব্যর্থতাগুলোকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি ভার্সাই সন্ধির বিরোধিতা, জার্মান জাতির ঐক্য, বিস্তৃত আবাসভূমি, কমিউনিজম ও ইহুদিবিদ্বেষ এবং দেউলিয়া অর্থনীতির সংস্কারসাধনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দলের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়তে থাকে।
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসের নির্বাচনে নাৎসিরা রাইখস্টাগের ৬০৮ আসনের মধ্যে ২৩০টি আসন লাভ করে একক বৃহত্তম দলে পরিণত হয়। অবশেষে ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ হিটলারকে জার্মান রাষ্ট্রের চ্যান্সেলর নিযুক্ত করেন। এ সময়ে হঠাৎ রাইখস্টাগ ভবনে আগুন লাগলে হিটলার এর জন্য কমিউনিস্টদের দায়ী করেন।
ফলে দেশে জরুরি অবস্থা জারি, রাজনৈতিক অধিকার খর্ব ও কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ২রা আগস্ট প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ মারা গেলে তিনি চ্যান্সেলর ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বময় ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য তিনি যুগপৎ শঠতা ও নিষ্ঠুরতার আশ্রয় গ্রহণ করেন। এভাবে জার্মানিতে হিটলারের সর্বময় একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
জার্মানিতে হিটলারের উত্থানের কারণ
১। অর্থনৈতিক মন্দা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে জার্মানির অর্থনীতি ছিল বিধ্বস্ত। এই বিধ্বস্ত অর্থনীতি নিয়ে মিত্রপক্ষের ক্ষতিপূরণের একটা অংশ পরিশোধ, ভার্সাই সন্ধির মাধ্যমে জার্মানির খনিজপ্রধান অঞ্চলগুলো কেড়ে নেওয়া এবং ফ্রান্স কর্তৃক রুহর দখল ইত্যাদি জার্মান অর্থনীতির উপর প্রচণ্ড প্রভাব ফেলে এবং জার্মানিতে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়।জার্মান মার্কের মূল্য আশ্চর্যজনকভাবে নিম্নগামী হয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব, উৎপাদন হ্রাস, করের বোঝায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির সীমিত আয় ও সঞ্চয় বিনষ্ট হওয়ায় তাদের জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। এদিকে, ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শুরু হওয়া বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা জার্মানির অর্থনৈতিক সংকটকে দীর্ঘস্থায়ী করে।
প্রজাতান্ত্রিক সরকার মন্দা থেকে উত্তরণে করণীয় দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলেও তারা তেমন কোনো আশার সঞ্চার করতে পারেনি। নাৎসিরা একে সরকারের দুর্বলতা বলে প্রচার করে এবং আর্থসামাজিক ব্যবস্থার উত্তরণে সকল শ্রেণির স্বার্থে সংস্কার সাধনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে, যা হিটলার বা নাৎসিদের উত্থানের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২। জার্মান জাতীয়তাবাদের তীব্রতা: জার্মানরা ছিল প্রচণ্ডভাবে জাতীয়তাবাদী। তাই ভার্সাই সন্ধির মাধ্যমে জার্মান জাতির প্রতি যে অপমানজনক শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল তা তারা কখনো মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারেনি।
তারা এর জন্য বিদেশি শক্তিগুলোর পাশাপাশি প্রজাতান্ত্রিক সরকারকে দায়ী বলে মনে করে। তারা সময়ের অপেক্ষায় ছিল।হিটলার নাৎসিবাদ থেকে সৃষ্ট জার্মানদের জাতীয়তাবাদী চেতনাকে কাজে লাগান। এ সময় তার প্রচারণা ও বক্তব্যের বিষয়বস্তু ছিল- জার্মানরাই পৃথিবী শ্রেষ্ঠ আর্য বংশোদ্ভূত।
তাই অনার্যদের জার্মান থেকে বহিষ্কার করতে হবে।জার্মান জাতির হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে হিটলার জার্মান জাতীয়তাবাদকে জাগ্রত করে নিজের ও নাৎসি পার্টির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেন, যা তার উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩। কমিউনিজমভীতি: অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জার্মানিতে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি এবং কমিউনিস্ট রাশিয়ার সাথে জার্মানির 'র্যাপাল্লোর' চুক্তি স্বাক্ষর জার্মান শিল্পপতিদের মনে কমিউনিজমভীতির জন্ম দেয়। কমিউনিস্টদের প্রতি প্রজাতান্ত্রিক সরকারের দুর্বলতা ও সহনশীল নীতি জার্মান শিল্পপতিদের হতাশ করে।
ফলে তারা একজন কমিউনিজমবিরোধী লৌহমানবের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। হিটলার এ সময় সমাজতন্ত্রীদের প্রবল বিরোধিতা করে নিজেকে সমাজতন্ত্রবাদের শত্রু বলে প্রচার করেন। নাৎসি গুপ্তবাহিনী SA ও SS দ্বারা সমাজতন্ত্রীদের বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও ধর্মঘট ভেঙে দেওয়া হয়।
এতে হিটলার সমাজতন্ত্রবিরোধীদের ও শিল্পপতিদের সমর্থন লাভ করেন। বুর্জোয়া শ্রেণির সমর্থন হিটলারের ক্ষমতালাভে যথেষ্ট সাহায্য করে।
৪। ইহুদিবিদ্বেষ: জার্মানিতে ইহুদিবিদ্বেষ ছিল বহু প্রাচীন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে তা আরও বৃদ্ধি পায়। হিটলার ইহুদিদের জার্মানির সকল বিপর্যয়ের জন্য দায়ী বলে প্রচার করতে থাকেন। সুদের কারবারি ও মুনাফাখোর বলে তাদের হেয় করতে থাকেন। মূলত ইহুদিরা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করত এবং
শিল্প-কারখানার মালিকানা তাদের ছিল। ইহুদিবিদ্বেষ জার্মানির মজ্জাগত ছিল বলে তার প্রচার ও অভিযোগ জার্মানরা খুব সহজেই গ্রহণ করে, যা তার ও নাৎসিদের উত্থানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৫। প্রজাতান্ত্রিক সরকারের সাংবিধানিক ত্রুটি-বিচ্যুতি: প্রজাতান্ত্রিক সরকারের অধীনে প্রণীত জার্মানির সংবিধানের ৪৮ নম্বর ধারায় প্রেসিডেন্টকে কিছু বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। যেমন- প্রয়োজনবোধে সংবিধান স্থগিত করা ও জরুরি অবস্থা ঘোষণা। কিন্তু প্রেসিডেন্টের চারিত্রিক দুর্বলতার কারণে এর অপব্যবহার শুরু হয়।
দ্বিতীয়ত প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল হিন্ডেনবার্গ ছিলেন আশি বছরের বৃদ্ধ। তার শাসনামলে তিনি বয়সের কারণে অনেক সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, যার সুযোগ পুরোমাত্রায় গ্রহণ করে নাৎসিরা।
৬। প্রজাতন্ত্রবিরোধী শক্তি: যুদ্ধোত্তর জার্মান রাজনীতিতে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাম ও ডানপন্থি দলগুলো ছিল অন্যতম। ডানপন্থিদের মধ্যে অধিকাংশ সদস্য ছিলেন সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, যাদের প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো আনুগত্য ছিল না। বাম দলগুলোর প্রজাতন্ত্রের প্রতি যে ধরনের আনুগত্য থাকা প্রয়োজন ছিল, তা ছিল না।
বাম স্পার্টকিস্টরা ছিল চরমভাবে প্রজাতন্ত্রবিরোধী। যদিও তারা নাৎসি তৎপরতার মুখে প্রজাতন্ত্রকে সমর্থন দিয়েছিল। হিটলারের বিয়ার হল আক্রমণ প্রজাতন্ত্রবিরোধী তৎপরতারই অংশ। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় সৈন্যবাহিনীর মধ্যেও প্রজাতান্ত্রিক সরকারের প্রতি কোনো আনুগত্য ছিল না, যা হিটলার ও নাৎসিদের উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছিল।
৭। হিটলারের সহযোগীদের ভূমিকা: হিটলারের উত্থানের পেছনে তার সহযোগী গ্রেগর স্টেসার, ওট্রোস্ট্রেসার, আনটেস্ট্র-রম, হেইনরিখ হিমলার, হারমান গোরিং পল, যোসেফ গোয়েবল্স, আলফ্রেড রোজেনবার্গ প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। গোরিং ও হিমলার বিরুদ্ধবাদীদের দমন এবং গোয়েবল্স নাৎসি প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে গোয়েবল্স এমনভাবে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিতেন, যা শুনে মানুষ ভুলে গিয়েছিল যে, তার প্রচারণায় মিথ্যা বলে কিছু থাকতে পারে।
৮। জার্মান জাতির প্রজাতান্ত্রিক রীতিনীতির ঐতিহ্য না থাকা: জার্মানির পূর্বের ইতিহাস গণতান্ত্রিক শাসনের ইতিহাস নয়। তারা বরাবরই একনায়কের অধীনে শাসিত হতে হতে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল।
তাই প্রজাতান্ত্রিক শাসনাধীনে এসে যুদ্ধ ও ভার্সাই সন্ধির কারণে বিধ্বস্ত জার্মানির অসুবিধাগুলোকে প্রজাতান্ত্রিক শাসনের দুর্বলতা বলেই মনে করে, যা হিটলারের উত্থানে সহায়ক হয়।
৯। হিটলারের ব্যক্তিগত যোগ্যতা: অবশ্য তার উত্থানে তার যোগ্যতাকে অস্বীকার করা যায় না। একজন সুদক্ষ মনোবিজ্ঞানী ও চতুর গণবক্তা হিসেবে হিটলার জার্মান জাতির বিশেষভাবে যুব সম্প্রদায়ের মনোভাব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলেন।
তিনি সমগ্র জাতির দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অভিযোগ ও চেতনাবোধকে অগ্নিঝরা বক্তব্যের মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে পুরো জাতিকে তার প্রতি সম্মোহিত করে তোলেন এবং তাদের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ প্রশস্ত করেন।
হিটলারের একনায়ক তন্ত্র প্রতিষ্ঠা
হিটলার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে জার্মানির সর্বত্র একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে জুলাই নাৎসি দল ছাড়া সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। একটি ট্রেড ইউনিয়ন ছাড়া সকল ট্রেড ইউনিয়ন নিষিদ্ধ করা হয়। ভাইমার প্রজাতন্ত্রের সংবিধান কার্যত রহিত করা হয়।আইনসভার অনুমোদন ছাড়াই আইন প্রণয়ন ও শাসনকার্য পরিচালনা করা শুরু হয়। প্রাদেশিক পরিষদ বিলুপ্ত করে এককেন্দ্রিক শাসন কাঠামো গড়ে তোলা হয়। দেশের সংবাদপত্র, বেতার, শিক্ষাসহ সকল প্রতিষ্ঠানের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। যেকোনো সময় দেশের যেকোনো নাগরিককে গ্রেফতার ও বিনাবিচারে আটক সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য বন্দিশিবির খোলা হয়। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে জুন রাতে বার্লিন, ব্রেসলাউ, মিউনিখসহ বিভিন্ন শহরে হিটলারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটানোর অভিযোগ এনে এক হাজারেরও বেশি লোককে হত্যা করা হয়।
হিটলারবিরোধী কোনো শিক্ষিত মানুষের পক্ষে জার্মানিতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ে। জার্মান বিজ্ঞানী ও সংস্কৃতিসেবীদের অনেকে দেশত্যাগে বাধ্য হন। আইনস্টাইন, হেনরিখ, টমাস মান্নি, ফিখটওয়ার, নগার, ব্রেখট ও ওয়েনবার্টসহ অনেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান।
নাৎসি বাহিনী শুধু শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতায় ছিল তা নয়, নাৎসিবাদ জার্মানিতে এক সর্বগ্রাসী সামাজিক বিশ্বাসে পরিণত হয়। দেশের প্রচারপত্র, পত্র-পত্রিকা, শিক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদি নাৎসি ভাবধারা মানুষের মনে জাগ্রত করতে সহায়তা করে। জার্মান যুবসমাজের মাথায় এমনভাবে আর্যবর্ণের শ্রেষ্ঠত্ব ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যে, তারা ভাবতে শুরু করে তারাই শ্রেষ্ঠ জাতি, শ্রেষ্ঠ রক্ত।
হিটলারের 'আমার সংগ্রাম' গ্রন্থকে জার্মানরা বাইবেলের মতো বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করতে থাকে। জার্মানিতে সর্বত্র উচ্চারিত হতে থাকে হাই হিটলার, হাই হিটলার।ভাইমার প্রজাতন্ত্রের অবক্ষয়ের মধ্যে হিটলার ও নাৎসিদের উত্থান নিহিত।
ভার্সাই সন্ধি ও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার ফলে জার্মানির জাতীয় জীবনে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট ও জার্মান জাতির প্রজাতান্ত্রিক শাসনের প্রতি আনুগত্যহীনতা যেমন ভাইমার প্রজাতন্ত্রের পতনের পেছনে কাজ করেছিল, তেমনি এগুলোর বিপরীতে হিটলারের নানামুখী কর্মকাণ্ড তার উত্থানে সাহায্য করে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে হিটলারের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বর্তমানে এই বিষয়গুল থেকে আমাদের অনেক শেখার ও সচেতন হওয়ার বিষয় রয়েছে। তাই এ সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত ধারণা থাকা প্রয়োজন। সেই দিক বিবেচনা করে আজকের আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে।আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আইসোটোপ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন।যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লেগে থাকে তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব সহপাঠি কিংবা পারা প্রতিবেশীদের মাঝেও শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এ বিষয়ে সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে।
আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন।যাতে অন্যরাও উপকৃত হতে পারে। আর এ ধরনের আর্টিকেলগুলো পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।
কারণ এখানে আমরা বিভিন্ন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি , বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক , স্বাস্থ্য বিষয়ক সহ আরো নানান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।
আশা করি এই আর্টিকেল গুলো আপনার জ্ঞান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url