আইসোটাপ কাকে বলে
আইসোটোপের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে কারণ এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমূহর বিস্তার। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে আইসোটোপ কাকে বলে ও এর ব্যবহার সমূহ আসলে কি? চলুন নিম্নে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক
ভূমিকা
কিছু কিছু আইসোটোপ রয়েছে যাদের নিউক্লিয়াস স্বতঃস্ফূর্তভাবে (নিজে নিজেই) ভেঙে আলফা রশ্মি, বিটা রশ্মি, গামা রশ্মি ইত্যাদি নির্গত করে তাদেরকে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বলে। এখন পর্যন্ত ৩০০০ সংখ্যক থেকে বেশি আইসোটোপ সম্বন্ধে জানা গেছে।এদের মধ্যে কিছু প্রকৃতিতে পাওয়া গেছে, অন্যগুলো গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন আইসোটোপ এবং তাদের তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে তোমাদের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই এখানে শুধু তাদের কিছু ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হবে।
তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ-এর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার দিয়ে মানুষ অনেক কিছু করতে পারে যেটি অন্যভাবে করা দুঃসাধ্য ছিল। বর্তমানে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ চিকিৎসাক্ষেত্রে, কৃষিক্ষেত্রে, খাদ্য ও বীজ সংরক্ষণে,বিদ্যুৎ উৎপাদনে, কোনো কিছুর বয়স নির্ণয়সহ আরও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
আইসোটাপ কাকে বলে
যে সকল পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা সমান কিন্তু ভরসংখ্যা ও নিউট্রন সংখ্যা ভিন্ন তাদেরকে একে অপরের আইসোটোপ বলে।
আইসোটোপ কে আবিষ্কার করেন
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক সডি এবং ফ্রান্সিস উইলিয়াম অ্যাস্টনকে আইসোটোপ আবিষ্কার করেন। এই বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরা আইসোটোপ আবিষ্কারে অনন্য অবদান রাখার জন্য রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান।তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ও তাদের ব্যবহার
চিকিৎসাক্ষেত্রে বর্তমানে বিভিন্ন প্রয়োজনে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমনঃ
চিকিৎসাক্ষেত্রে আইসোটোপের ব্যবহার
আইসোটোপ ব্যবহার করে রোগাক্রান্ত স্থানের ছবি তোলা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ টেকনিশিয়াম-99 (99 Tc) কে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। এই আইসোটোপ যখন শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে জমা হয় তখন ঐ তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ গামা রশ্মি বিকিরণ করে,তখন বাইরে থেকে গামা রশ্মি শনাক্তকরণ ক্যামেরা দিয়ে সেই স্থানের ছবি তোলা সম্ভব। এই তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ টেকনিশিয়াম-99 এর লাইফটাইম ৬ ঘণ্টা। তাই সামান্য সময়েই এর তেজস্ক্রিয়তা শেষ হয়ে যায় বলে এটি অনেক নিরাপদ।
রোগ নিরাময়ে আইসোটোপের ব্যবহার
সর্বপ্রথম থাইরয়েড ক্যানসার নিরাময়ে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়। রোগীকে পরিমাণমতো তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ১৩১১ সমৃদ্ধ দ্রবণ পান করানো হয়। এই আইসোটোপ থাইরয়েডে পৌঁছায়। এ আইসোটোপ থেকে বিটা রশ্মি নির্গত হয় এবং থাইরয়েডের ক্যানসার কোষকে ধ্বংস করে।এছাড়া ইরিডিয়াম আইসোটোপ ব্রেইন ক্যানসার নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। টিউমারের উপস্থিতি নির্ণয় ও নিরাময়ে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ 6°C০ ব্যবহার করা হয়। "Co থেকে নির্গত গামা রশ্মি ক্যানসারের কোষকলাকে ধ্বংস করে। রক্তের লিউকো রোগের চিকিৎসায় 32p এর ফসফেট ব্যবহার করা হয়।
কৃষিক্ষেত্রে আইসোটোপের ব্যবহার
ফসলের পুষ্টিতে
ফসলের পুষ্টির জন্য জমিতে পরিমাণমতো সার ব্যবহার করতে হয়। সার মূল্যবান বস্তু। তাই অতিরিক্ত ব্যবহার করা আর্থিক ক্ষতির কারণ। একদিকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সার পরিবেশের ক্ষতির কারণ, অপরদিকে প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমাণ সার ব্যবহার করা হলে ফসলের উৎপাদন কম হয়।তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করে জমিতে কী পরিমাণ নাইট্রোজেন ও ফসফরাস আছে তা জানা যায়। আর তা জেনে জমিতে আরও কী পরিমাণ নাইট্রোজেন ও ফসফরাস প্রয়োজন তারও হিসাব করা যায়।
উদ্ভিদ তেজস্ক্রিয় নাইট্রোজেন ও তেজস্ক্রিয় ফসফরাস মূলের মাধ্যমে গ্রহণ করে এবং তা উদ্ভিদের শরীরের বিভিন্ন অংশে শোষিত হয়। এসকল তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয়। টাইগার মুলার কাউন্টার ব্যবহার করে এ তেজস্ক্রিয় রশ্মি শনাক্ত ও পরিমাপ করা হয়।
ক্ষতিকারক পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করতে আইসোটোপের ব্যবহার
ফসলের জন্য ক্ষতিকারক পোকামাকড় সব সময়ই মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এগুলো যেমন ফসলের উৎপাদন কমায় তেমনই এদের মাধ্যমে রোগ-জীবাণুও উদ্ভিদে প্রবেশ করে। এ সকল পোকামাকড় ধ্বংস করার জন্য ফসলে এবং জমিতে কীটনাশক দেওয়া হয়।এ কীটনাশক পরিবেশ ও আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। শুধু তাই নয়, এ কীটনাশক ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের সাথে সাথে অনেক উপকারী পোকামাকড়ও ধ্বংস করে। তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ সমৃদ্ধ কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে জানা সম্ভব হয়েছে সর্বনিম্ন কতটুকু পরিমাণ কীটনাশক একটি ফসলের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
ফসলের মানোন্নয়নে আইসোটপের ব্যবহার
বিভিন্ন ধরনের নিয়ন্ত্রিত তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ভিদ কোষের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে উন্নত মানের ফসলে পরিণত করা হয়।বিদ্যুৎ উৎপাদনে আইসোটোপের ব্যবহার
কিছু কিছু পরমাণুকে ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরমাণুতে পরিণত করলে অর্থাৎ ফিশান বিক্রিয়া ঘটালে প্রচুর পরিমাণে তাপশক্তি বের হয়। এই তাপশক্তি ব্যবহার করে জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। আমরা সেটিকে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র বলি।তোমাদের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়ে এটি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।বাংলাদেশে পাবনা জেলার রূপপুরে বাংলাদেশ সরকার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে। এ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে দুই হাজার চারশত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ক্ষতিকর প্রভাব
তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ আমাদের অনেক উপকারে আসে সে কথা সত্যি কিন্তু এটি আমাদের জন্য ক্ষতির কারণও হতে পারে। তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ থেকে যে আলফা, বেটা ও গামা রশ্মি নির্গত হয় তা কোষের জিনগত পরিবর্তন ঘটাতে পারে যার ফলাফল হিসেবে ক্যানসারের মতো রোগ হতে পারে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তার জন্য কয়েক লক্ষ জীবন ধ্বংস হয়েছে। ১৯৮৬ সালে রাশিয়ার চেরোনোবিলে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে দুর্ঘটনা ঘটেছিল তার ফলে অনেক প্রাণ হারিয়েছে এবং ঐ এলাকায় পরিবেশ দূষণ ঘটেছে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে আইসোটোপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বর্তমানে আইসোটোপ একটি প্রয়োজনীয় জিনিসে পরিণত হয়েছে। তাই এ সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত ধারণা থাকা প্রয়োজন। সেই দিক বিবেচনা করে আজকের আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আইসোটোপ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন।যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লেগে থাকে তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব সহপাঠি কিংবা পারা প্রতিবেশীদের মাঝেও শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এ বিষয়ে সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে। আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন।
যাতে অন্যরাও উপকৃত হতে পারে। আর এ ধরনের আর্টিকেলগুলো পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। কারণ এখানে আমরা বিভিন্ন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি , বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক , স্বাস্থ্য বিষয়ক সহ আরো নানান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।
আশা করি এই আর্টিকেল গুলো আপনার জ্ঞান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url