বায়ুমণ্ডল কাকে বলে ও এর উপাদান গুলো কি কি
বায়ুমণ্ডলকে বলা যায় পৃথিবীর রক্ষা কবচ। আর তাই এ সম্পর্কে আমাদের পুরোপুরি ধারণা রাখতে হবে। চলুন জেনে নেয়া যাক বায়ুমণ্ডল কাকে বলে ও এর উপাদান গুলো কি কি।
মানব সভ্যতার বিকাশ ও স্থায়ীত্ব সম্পূর্ন অক্সিজেন নির্ভর। দহন ব্যতীত শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন রন্ধন কিংবা কোন উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্ভব নয়।
১২ কি.মি. উচ্চতা পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটারে ৬.৫° সে করে তাপমাত্রা কমতে থাকে। বায়ুমন্ডলের মোট বাতাসের ৭৫% এই স্তর ধারন কর। এই স্তরে সর্বোচ্চ পরিমান জলীয় বাষ্প ও মিহিকনা রয়েছে। ট্রপোস্ফিয়ার বা পরিবর্তনশীল মন্ডলে আবহাওয়ার পরিবর্তনের বিষয়টি সমাধা হয় বলে একে আবহাওয়া মন্ডল বা Weather sphere বলা হয়।
তাই সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে এ সম্পর্কে আর্টিকেল লেখা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে জলবায়ু সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করেছেন।
ভূমিকা
পৃথিবী সৌরজগতের সব থেকে আদর্শ ও বাসযোগ্য গ্রহ, যার প্রধান কারণ হল পৃথিবীকে ঘিরে থাকা বায়ুমন্ডল। বিজ্ঞানীরা নানা রকম গ্যাসীয় উপাদান, জলীয়বাষ্প ও ধূলিকণার উপস্থিতির জন্য বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলিকে নানা ভিত্তিতে বিভক্ত করেছেন। এদের মধ্যে, উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডল প্রধান সাতটি স্তরে বিভক্ত।নিম্নে বিস্তারিত…বায়ুমণ্ডল কাকে বলে
বায়ুমণ্ডল হলো পৃথিবীর উর্ধ্ব মন্ডলের গ্যাসীয় আবরণ। সাধারণভাবে বায়ুমণ্ডলের সংজ্ঞার্থে বলা যায়, পৃথিবীকে বেষ্টনকারী কিংবা পৃথিবীর ওপর ঝুলন্ত গ্যাসীয় আবরণ হল বায়ুমণ্ডল। বায়ুমন্ডলকে পৃথিবীর কঠিন ও জলীয় অংশের বাইরে একটি গ্যাসীয় হিসেবে অভিহিত করা হয়।প্রকৃতপক্ষে বায়ুমন্ডল হলো মহাকাশ এবং জীব মণ্ডলের মধ্যবর্তী পাতলা গ্যাসীয় আবরণ যা যে জিবমন্ডলের রক্ষাকারী স্তর হিসেবে চিহ্নিত। সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৮০ কিলোমিটার ঊর্ধ্বস্থান পর্যন্ত বায়ুমণ্ডল ধরা হয়।তবে কোন কোন আবহাওয়াবিদদের মতে বায়ুমণ্ডলের বহিসীমা পৃথিবীপৃষ্ঠ হতে ১০,০০০ কিলোমিটার বা ৬০০০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত।
বায়ুমন্ডলের উপাদান গুলো কি কি
পৃথিবীর বায়ুমন্ডল বিভিন্ন গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত হলেও মূলতঃ নাইট্রোজেন (N₂-৭৮%) ও অক্সিজেন (০২-২১% প্রায়) প্রায় ৯৯% বায়ুকুন্ডলী গঠন করেছে। তবে জলীয়বাষ্প ও ধুলিকণার পরিমান বাড়লে অন্যান্য গ্যাসীয় পদার্থের সাথে মূল উপাদানেরও পরিবর্তন হতে পারে। চলুন জেনে নেয়া যাক বায়ুমণ্ডলের উপাদান গুলোর নাম ও কার্যকারিতা।বায়ুমন্ডলে কত শতাংশ নাইট্রোজেন আছে
বায়ুমন্ডলের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন এই গ্যাসটির পরিমান প্রায় ৭৮.৩%। বায়ুমন্ডলে
নাইট্রোজেনের অবস্থানের কারণে বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ এবং বজ্র-বিদ্যুতের মত ঘটনাবলী সংঘটিত হয়ে থাকে। গ্যাসটির কোন বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ নেই। নাইট্রোজেন উদ্ভিজে প্রোটিন সরবরাহের ব্যাপারে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
নাইট্রোজেনের অবস্থানের কারণে বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ এবং বজ্র-বিদ্যুতের মত ঘটনাবলী সংঘটিত হয়ে থাকে। গ্যাসটির কোন বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ নেই। নাইট্রোজেন উদ্ভিজে প্রোটিন সরবরাহের ব্যাপারে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
এছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রেও এটি সহায়তা করে। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১২৮ কিলোমিটার ঊর্ধ্বস্থান পর্যন্ত নাইট্রোজেন অক্সিজেনকে ছাড়িয়ে দিয়ে অগ্নিকান্ড নিবারণ করে। এই প্রক্রিয়া না ঘটলে জীবজগৎ ভস্মীভূত হয়ে যেত। নাইট্রোজেন ব্যতিরেকে উদ্ভিজ্জের জন্ম-বৃদ্ধি ও বিকাশ সম্ভব নয়।
উদ্ভিজ নাইট্রোজেনকে যৌগ হিসাবে ব্যবহার করে।অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন সমন্বয়ে গঠিত, যৌগ বৃষ্টির সঙ্গে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হলে তা' মৃত্তিকার রসায়ন হিসাবে কাজ করে ও উদ্ভিদের দেহে প্রবেশ করে। উদ্ভিদের প্রোটপ্লাজমে নাইট্রোজেন অবস্থান করে এবং নাইট্রোজেনের কারণেই উদ্ভিজের পাতার রং সবুজ দেখায়।
নাইট্রোজেনের যৌগসমূহ কৃষি ক্ষেত্রে সার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মৎস ক্ষেত্রে প্লাংকটন সৃষ্টিতে নাইট্রোজেন যৌগ ইউরিয়া ব্যবহৃত হয়।
বায়ুমন্ডলে কত শতাংশ অক্সিজেন আছে
অক্সিজেনকে জীবনদায়িনি গ্যাস হিসাবে অভিহিত করা যায়। কারণ এটি ছাড়া জীবকূলের টিকে থাকা অসম্ভব। অক্সিজেন জ্বালানীতে বা দহনক্রিয়ায় সহায়তা করে তবে নিজে জ্বলে না। বায়ুমন্ডলে ২০.৮০% - ২১% পর্যন্ত অক্সিজেন রয়েছে এবং উর্দ্ধাকাশে ৬৮ কিলোমিটার পর্যন্ত এর উপস্থিতি সনাক্ত করা হয়েছে।তবে ১৬ কিলোমিটারের উপরে এর উপস্থিতি অনিয়মিত। অক্সিজেনের সাথে বিভিন্ন পদার্থের বিক্রিয়া হয় ধীরগতিতে যা' ধীর জারন বা Slow oxidation নামে পরিচিত। ঐ প্রক্রিয়ায় কোন আলোর প্রজ্বলন ঘটে না। মরীচা জারন প্রক্রিয়ার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ভূমিরূপের পরিবর্তনেও অক্সিজেনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
শিলার বিচূর্নীকরণে জারন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি জীবন্ত বস্তুর শ্বসন ক্রিয়া এবং দৈহিক তাপ উৎপাদনে অক্সিজেনের উপস্থিতি অপরিহার্য। শুধু ভূ- পৃষ্ঠস্থ নয়- জলভাগের প্রাণী ও জীবকূলও পানির মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহন করে থাকে। এককথায় প্রতিটি জীব এবং অনুজীবই অক্সিজেনের উপর নির্ভরশীল।
মানব সভ্যতার বিকাশ ও স্থায়ীত্ব সম্পূর্ন অক্সিজেন নির্ভর। দহন ব্যতীত শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন রন্ধন কিংবা কোন উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্ভব নয়।
বায়ুমন্ডলে কত শতাংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড আছে
কার্বন-ডাই-অক্সাইড একটি ভারী গ্যাস এবং মূলতঃ বায়ুমন্ডলের নীচ স্ত রে এটি সীমাবদ্ধ। এটি বায়ুমন্ডলের অত্যন্ত স্বল্প পরিমানে বিদ্যমান এবং উর্ধ্বাকাশে ৩২ কিলোমিটার পর্যন্ত এর উপস্থিতি সনাক্তকৃত।উনিশ শতকের পর থেকে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার বৃদ্ধিতে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমানও তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়ে গেছে যা' বৈশ্বিক উষ্ণায়নে মূল ভূমিকা পালন করছে।কার্বন-ডাই-অক্সাইড উদ্ভিজের জন্ম ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দিনের বেলায় উদ্ভিজ সালোক-সংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহন করে খাদ্য তৈরী করে।
ঐ উদ্ভিজ আবার প্রাণী জগতের খাদ্য সরবরাহ করে। এভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সমগ্র প্রানী জগতের টিকে থাকার ক্ষেত্রে অন্যতম মূখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে।'পৃথিবী সৃষ্টির প্রথম দিকে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান ছিল প্রায় ৪০% (Batse. 1958, Tikkha 2002)। উদ্ভিজ বিকাশর সাথে সাথে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান কমতে থাকে।
পরবর্তীতে ব্যাপক বন-জঙ্গল সৃষ্টি ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে কয়লা ও গ্রাফাইটের উদ্ভব ঘটে। প্রাণী দেহ থেকে সৃষ্টি হয় খনিজ ও গ্যাস। ঐ সব খনিজ ব্যাপক কার্বন-ডাই-অক্সাইড ধারন করে থাকে। ইদানীং জীবাশ্ম জ্বালানী বৃদ্ধিতে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেড়ে উত্তাপ বেড়ে যাচ্ছে।
কার্বন-ডাই-অক্সাইড অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়ার মাধ্যমে অগ্নি নির্বাপনে সহায়তা করে। পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় এটা পানির দ্রবণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। চুনাপাথরীয় এলাকায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকায় বৃষ্টির পানির সাথে বিক্রিয়ার মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠের পরিবর্তন সাধন করে থাকে। এছাড়া লৌহের অক্সাইড এর সাথে বিক্রিয়ার মাধ্যমে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
বায়ুমন্ডলে কত শতাংশ হাইড্রোজেন আছে
হাইড্রোজেন অত্যন্ত হালকা গ্যাস এবং বায়ুমন্ডলে মাত্র ০.০১% এর মত স্থান দখল করে। উর্দ্ধাকাশে ১১০ কিলোমিটার পর থেকে এর নিয়মিত উপস্থিতি সনাক্তকৃত হয়েছে। হাইড্রোজেন একটি দাহ্য গ্যাস এবং নিজেই জ্বলে। বর্তমানে হাইড্রোজেন থেকে ভারী পানি ও ব্যাপক ধ্বংশ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা তৈরী করা হয়েছে।বায়ুমন্ডলে কত শতাংশ ওজোন আছে
ওজোন অক্সিজেনের একটি বিশেষ রূপ। উর্দ্ধ বায়ুস্তরে স্বল্প পরিমানে এর অবস্থান। পাতলা ওজোন স্থরের মূল কাজ সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে জীবজগতকে রক্ষা করা। বর্তমানে গ্রীন হাউস গ্যাস বৃদ্ধিতে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু এলাকার ওজোন স্তরে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে যা' ওজোন হোল নামে পরিচিত।বায়ুমন্ডলে কত শতাংশ জলীয়বাস্প আছে
জলীয় বাষ্প বায়ুমন্ডলের সর্বাধিক পরিবর্তনশীল উপাদান। উষ্ণ ও আর্দ্র ক্রান্তীয় এলাকায় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমান ৪% পর্যন্ত হতে পারে। তবে শুষ্ক এলাকায় এটা ১% এর কম জলীয় বাষ্প সূর্যেও উত্তাপ শোষন করে। এ'ছাড়া এটা পৃথিবী থেকে বিকীর্ণ উত্তাপও শোষন করে।এভাবে বাতাসের জলীয় বাষ্প বায়ুমন্ডলের চাদর হিসাবে কাজ করে ভূ-পৃষ্ঠেকে অতিরিক্ত শৈত্য কিংবা উত্তাপ থেকে রক্ষা করে। জলীয় বাষ্প ঘনীভূত ও সম্পৃক্ত হয়েই পৃথিবীতে বৃষ্টি কিংব শিলাবৃষ্টি ঘটায় এবং বিভিন্ন ধরনের মেঘগুলো সৃষ্টি করে। জলীয় বাষ্পের পরিমান উচ্চতার সাথে সাথে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়।
বাতাসের জলীয় বাষ্পের ৫০% এরও বেশী থাকে ২০০০ মিটারের নীচে। এ'ছাড়া নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকেও এটা হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। ১০০-৩০০ অক্ষাংশের মধ্যে অধিকাংশ জলীয় বাষ্প সৃষ্টি হয়ে থাকে।
বায়ুমন্ডলে কত শতাংশ মিহিকনা আছে
বায়ুমন্ডলের মিহিকনাগুলি বিভিন্ন উৎস থেকে এসে থাকে। মিহি বালু বা ধুলি, ছাই, ধোঁয়া কিংবা সামুদ্রিক লবনের কনাগুলি বায়ুতে মিশ্রিত অবস্থায় থাকতে পারে। মিহিকনাগুলির অবস্থান বায়ুমন্ডলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এগুলি hygroscopic nuclei হিসাবে কাজ করে যা'র মাধ্যমে জলীয় বাষ্প মিহিকনাগুলিকে আশ্রয় করে বারিপাত সৃষ্টি করে।থাকে। ঐকারনে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের পর বাতাসে মিহিকনা বৃদ্ধিজনিত কারনে উত্তাপ হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় আকাশে দৃষ্টি নন্দন রং মিহিকনাগুলির কারনেই সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ ছাড়া কুয়াশা ও ধোঁয়াশা সৃষ্টিতেও মিহিকনাগুলি প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। মিহিকনাগুলি বায়ুমন্ডলের নিম্নস্তরেই সাধারণতঃ অবস্থান করে।
তবে মাঝে মধ্যে উলম্ব বায়ুস্রোত মিহিকনাগুলিকে উর্ধ্বে নিয়ে যায়। নিরক্ষীয় ও মেরু অঞ্চল অপেক্ষা ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের বায়ুতে ধুলিকনার পরিমান বেশী। বায়ু প্রবাহের কার্য বেশী থাকাটাই এর কারন।
বায়ুমন্ডলের উৎস
পৃথিবী সৃষ্টিলগ্নে গ্যাসীয় অবস্থায় ছিল পরবর্তীতে এটা তরলীকৃত হয় এবং উপরে কঠিন আস্তরন পড়ে। পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগের বেশীর ভাগ এখনও তরল। ভূ অভ্যন্তরের তরল বা আধা তরল ম্যাগমা অগ্নুৎপাতের মাধ্যমে বর্হিগত হয়। অগ্নুৎপাতে উৎক্ষিপ্ত পদার্থের ৬০% -৯০% পানি যার মধ্যে বায়ুমন্ডলের সমস্ত গ্যাসই বিদ্যমান।ম্যাগমা কঠিনতা প্রাপ্তির পর পৃথিবীর বহিরাবরন সৃষ্টি হয়েছে। অবশিষ্ট গ্যাস ও বাষ্প সহযোগে বায়ু মন্ডলের সৃষ্টি বলে বোদ্ধাদের ধারনা। এ'ছাড়া উর্ধ্বাকাশে বিচ্ছিন্নভাবে বিচরনশীল গ্যাসীয় পদার্থগুলিও মাধ্যাকর্ষনের প্রভাবে পৃথিবীর দিকে আকৃষ্ট হয়।
বায়ুমন্ডলের স্তর বিন্যাস
বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন স্ত র রয়েছে। প্রতিটি স্তরের ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলীর মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। স্তরসমূহের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হয় ধীরগতিতে।
- ট্রাপোস্ফিয়ার (Troposphere)ঃ গ্রীক শব্দ 'Tropo' এর অভিধানিক অর্থ হল 'Changing অথবা mixing অথবা Turbulence' (পরিবর্তন, মিশ্র আলোড়ন)। এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। মূলতঃ পরিচলন স্রোতের কারনে এরূপ হয়ে থাকে। এই স্তরের উচ্চতা নিরক্ষরেখার উপর ১৬ কি.মি. এবং মেরুতে ৭ কি. মি।
১২ কি.মি. উচ্চতা পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটারে ৬.৫° সে করে তাপমাত্রা কমতে থাকে। বায়ুমন্ডলের মোট বাতাসের ৭৫% এই স্তর ধারন কর। এই স্তরে সর্বোচ্চ পরিমান জলীয় বাষ্প ও মিহিকনা রয়েছে। ট্রপোস্ফিয়ার বা পরিবর্তনশীল মন্ডলে আবহাওয়ার পরিবর্তনের বিষয়টি সমাধা হয় বলে একে আবহাওয়া মন্ডল বা Weather sphere বলা হয়।
- ট্রপোপজ (Tropopose)ঃ ট্রাপোস্ফিয়ারের উপরে পাতলা স্তরের নাম ট্রপোপজ। এর উচ্চতা অক্ষাংশ অনুসারে পরিবর্তন হয়। প্রকৃতপক্ষে এটা ট্রাপোস্ফিয়ার ও স্ট্রাটোস্ফিয়ারের অর্ন্তবর্তী জোন (Transitional zone) যা' স্তরদ্বয়কে সংযুক্ত করে। স্তরটি এক রকম শান্ত এবং বায়ুমন্ডলের আলোড়ন এখানে তেমন অনুভূত হয় না।
নিম্নস্তরে তাপমাত্রা বাড়লে এর উচ্চতা বাড়ে আবার ঘূর্ণিবাত্যা বিরাজ করলে উচ্চতা কমে। তবে প্রতীপ ঘূর্ণিবাত্যা থাকলে উচ্চতা বাড়ে।
- স্ট্রাটোস্ফিয়ার (Stratosphore)ঃ সাধারণতঃ উর্ধ্বাকাশে ২০ কি.মি. থেকে ৫০ কি.মি. পর্যন্ত ট্রাটোস্ফিয়ারের বিস্তৃতি। এখানে বায়ু পাতলা, ঠান্ডা ও শুষ্ক। গড় তাপমাত্রা -৫৫° সে.। তবে নিরক্ষীয় অঞ্চলের উপরে ৬০০ থেকে ৮৭° সে পর্যন্ত হতে পারে। তাপমাত্রার পরিবর্তন এখানে
- ট্রাটোপোজ (Stratopose)ঃ স্ট্রাটোস্ফিায়ারের উপরের স্তরের নাম স্ট্রাটোপোজ। স্তরটি মূলতঃ ওজন গ্যাস দ্বারা আচ্ছাদিত। মাঝে মধ্যে এখানে বিরল ধরনের মেঘ দেখা যায় যা 'Mother of pearl cloud' (মুক্তার মা মেঘ) নামে অভিহিত।
- ওজোনোফিায়ার (Ozonosphere)ঃ ওজোন গ্যাসের স্তর মূলতঃ স্ট্রাটোস্ফিয়ারের মধ্যেই অবস্থান করে। তবে কোন কোন বিজ্ঞানী একে আলাদা স্তর হিসাবে বিবেচনা করেন।ওজোন স্তরের প্রধান কাজ হল সূর্যের অতি বেগুনী আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করা। স্ত রটিকে প্রকৃতপক্ষে ফিল্টারের সাথে তুলনা করা যায়।
ওজোন স্তরের পুরুত্ব বেশী নয় (৩ কি.মি.) তবে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি শোষন করাতে এর তাপমাত্রা বেড়ে যায়। কিলোমিটার প্রতি তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমান ৫° সে.। মূল ওজোন স্তরের বাইরেও স্ট্রাটোস্ফিয়ারে বিচ্ছিন্নভাবে ওজোন ছড়িয়ে আছে। এক হিসাব মতে ওজোন স্তর ১% ক্ষয় হলে আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মির আগমন ২% বেড়ে যায়।
১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত ওজোন স্তর বিভিন্ন স্থানে ৫%-৯% পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছিল তবে আশ্চর্যজনকভাবে ২০০৫ প্রর পর থেকে ওজোনের ক্ষত কিছুটা পুরন হয়েছে বলে জানা যায়।
- মেসোস্ফিায়ার (Mesosphere)ঃ স্ট্রাটোস্ফিয়ারের উপরে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরের নাম মেসোস্ফিয়ার। সমুদ্র সমতলের ৬০ কিলোমিটার উপর থেকে তাপমাত্রা ক্রমাগত কমতে থাকে। ৭. মেসোপোজ (Mesopose)ঃ মেসোস্ফিয়ারের উর্দ্ধসীমার নাম মেসোপোজ। এর পর থেকে তাপমাত্রা আবার বাড়তে থাকে।
- থার্মোস্ফিায়ার (Thermosphere)ঃ থার্মোস্ফিয়ার বায়ুমন্ডলের সামান্য অংশ দুরে অবস্থান করে। এখানে ক্ষুদ্র সৌর তরঙ্গ বিকিরণের কারনে তাপমাত্রা অত্যাধিক বেড়ে যায়। মূলতঃ অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন পরমানু কর্তৃক সৌরতাপ শোষিত হয় এবং তাপমাত্রা ১০০০° সে. এরও বেশী থাক
- আয়নোস্ফিয়ার (Ionosphere)ঃ এ স্তরের গভীরতা প্রায় ৮৮'৫ হতে ৯০ কিঃ মিঃ। আয়নাইজেশনের জন্য এ অঞ্চলকে আয়নোস্ফিয়ারও বলা হয়।Patterssen-এর মতে, ৬০ কিঃ মিঃ ঊর্ধ্বে এই স্তর অবস্থিত (অনেকের মতে, ৮০ কি.মি.)। এই স্ত রের ব্যাপ্তি ৬০/৮০-৫০০ কি.মি. উচ্চতা পর্যন্ত।
মেসোপজ-এর সীমানা থেকেই আয়ন সৃষ্টির সীমানা শুরু হয় এবং বায়ুর উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই স্তরের প্রধান উপাদান হলো আণবিক নাইট্রোজেন ও পারমাণবিক অক্সিজেন। এই দু'টি উপাদান সৌরশক্তির অতি শক্তিশালী গামা-রশ্মি ও এক্স-রে (X- Ray) রশ্মিকে খুব সহজে শোষণ করে। আর প্রতিটি অণু ও পরমাণুতে ধনাত্মক ইলেক্ট্রন সৃষ্টি করে থাকে।
এগুলোকে বলে আয়ন। এ সকল মুক্ত আয়ন/ইলেক্ট্রন বিদ্যুতের সৃষ্টি করে। এই স্তর থেকে বেতার তরঙ্গ (ক্ষুদ্র ও দীর্ঘ) প্রতিফলিত হয়- যার দরুন বেতার যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিবহন ক্ষমতার বিভিন্নতার উপর ভিত্তি করে আয়োনোস্ফিয়ার কয়েকটি স্তরে বিভক্তঃ
- D স্তরঃ ৬০-৯৯ কি.মি. উচ্চতায় অবস্থিত। সূর্যাস্তের সাথে সাথে এর কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে যায়। এই স্ত র মধ্যম ও উচ্চ Frequency বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত করে এবং নিম্ন Frequency শোষণ করে নেয়। সূর্যের অতিরিক্ত আলোকচ্ছটার সময় এই স্তরে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলন বন্ধ হয়ে যায়। সৌর কলঙ্কের কাজ বৃদ্ধি পেলেও এখানে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয় না।
- E স্তর বা কেনেলী- হিন্ডসাইড স্তরঃ এই স্তর ৯০-১৩০ কি.মি. উচ্চতায় অবস্থিত। E স্তর মধ্যম ও উচ্চ Frequency'র বেতার তরঙ্গ প্রেরণ করে।। আলট্রাভায়োলেট ফোটনের সাথে নাইট্রোজেন ও নাইট্রোজেন অনুর সমন্বয়ে স্তরটি গঠিত হয়।
- ঘূর্ণায়মান E স্তর ঃ এই স্তরে অতি উচ্চ Frequency 'র বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে থাকে। এ'ছাড়া অতি দ্রুত গতির বায়ু প্রবাহ এর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এখানে অরোরা আলো দেখা যায়।
- E₂স্তর (E₂ Layer)ঃ E₂ স্তরের উপরে এটি অবস্থিত। স্তরটি আলট্রাভায়োলেট ফোটন ও অক্সিজেন অনুর সমন্বয়ে গঠিত। এটি দিনের বেলায় ক্রিয়াশীল থাকে এবং রাত্রে এর কার্যকলাপ বন্ধ থাকে। F₁ স্তর (F₁ layer)ঃ এই স্তরটিও দিনের বেলা ক্রিয়াশীল থাকে। দীর্ঘ দুরত্বে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলন
- এই স্তরের কাজ। এটিও মধ্যম ও উচ্চ Frequency 'র বেতার তরঙ্গ প্রতিফলন করে।
- F₂স্তর (F₂ Layer)ঃ এটি দীর্ঘ দুরত্বে বেতার তরঙ্গ প্রেরণ করে থাকে। এর ক্রিয়া অনেকটা ঋতুভিত্তিক এবং সৌর কলঙ্কের ক্রিয়ার সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। দুপুরের পর এবং শীতের মধ্যভাগে এর কার্যকলাপ স্পষ্ট থাকে।F₁ স্তর ও F₂ স্তরকে একত্রে Apleton স্তর (Apleton layer) বলা হয়।
- G স্তর (G-layer)ঃ F₂ স্তরের উপরে আলট্রাভায়োলেট ফেটিনের সাথে নাইট্রোজেন পরমানুর মিশ্রণে G স্তর সৃষ্টি হযেছে। এখানে মুক্ত ইলেক্ট্রন সৃষ্টি হয়ে থাকে। স্তরটি অধিকাংশ সময়ে ক্রিয়াশীল থাকে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটি জলবায়ু কাকে বলে এবং এর উপাদান সম্পর্কে লেখা হয়েছে। জীবজগতের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বায়ুমণ্ডলের ভূমিকা অনস্বীকার্য। যেহেতু বায়ুমণ্ডল আমাদের ভূপৃষ্ঠর অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে তাই বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত ধারণা থাকা উচিত।তাই সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে এ সম্পর্কে আর্টিকেল লেখা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে জলবায়ু সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করেছেন।
যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। এছাড়াও আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো যেমন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য , বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী,
বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।
আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url