খনিজ কাকে বলে

সারা বিশ্বে ভুগর্ভস্থে প্রচুর পরিমানে খনিজ সম্পদ বিদ্যমান। যা আমাদের মানব সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুতবপুর্ন।এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আস্তে পারে যে খনিজ সম্পদ কি , কিভাবে সংগ্রহ করা হয়? চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
খনিজ কাকে বলে

ভুমিকা

টিন, লোহা, তামা, সোনা, চিনামাটির তৈরি থালাবাসন, প্রাকৃতিক গ্যাসসহ হাজার হাজার প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমরা পারিবারিক জীবন, শিল্পকারখানাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে আসছি। এগুলো মৌলিক, যৌগিক বা বিভিন্ন মৌল ও যৌগের মিশ্রণ হতে পারে। এদের মধ্যে অনেক পদার্থ খনি থেকে পাওয়া যায়। এগুলোই মূলত খনিজ।

খনিজ কাকে বলে

মাটির উপরিভাগে বা মাটির তলদেশে যে সকল পদার্থ থেকে আমরা প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যেমন-বিভিন্ন প্রকার ধাতু বা অধাতু ইত্যাদি সংগ্রহ করে থাকি তাদেরকে খনিজ বলা হয়। যে অঞ্চল থেকে খনিজ উত্তোলন করা হয় তাকে খনি বলে।

আকরিক কাকে বলে

যে সকল খনিজ থেকে লাভজনকভাবে ধাতু বা অধাতুকে সংগ্রহ বা নিষ্কাশন করা যায় সে সকল খনিজকে আকরিক বলে। যেমন-গ্যালেনা (PbS) থেকে লাভজনকভাবে লেড ধাতু নিষ্কাশন করা যায়, তাই গ্যালেনাকে লেড ধাতুর আকরিক বা লেড ধাতুর খনিজ বলা হয়। বক্সাইট থেকে লাভজনকভাবে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশন করা যায়।

অতএব বক্সাইটকে অ্যালুমিনিয়ামের আকরিক বা খনিজ বলা হয়। আবার, কাদামাটি থেকে লাভজনকভাবে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশন করা যায় না, সেজন্য কাদামাটি শুধু অ্যালুমিনিয়ামের খনিজ কিন্তু আকরিক নয়। অতএব, আমরা বলতে পারি আকরিক হলে সেটা অবশ্যই খনিজ হবে কিন্তু খনিজ হলে সেটা আকরিক নাও হতে পারে।

আয়রনের সালফাইডকে আয়রন পাইরাইটস (FeS₂) বলা হয়। আয়রন পাইরাইটস থেকে আয়রন ধাতু নিষ্কাশন করা যায়।

খনিজ সম্পদ কাকে বলে

মাটি, পানি বা বায়ুমণ্ডলের যে অংশ থেকে এগুলোকে সংগ্রহ করা হয় তাকে খনিজ বলে। খনিজ কঠিন হতে পারে, যেমন-লোহা বা তামার খনিজ। তরল হতে পারে, যেমন-পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেলের খনিজ, আবার গ্যাসীয় হতে পারে যেমন-প্রকৃতিক গ্যাসের খনিজ।

আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় যা রান্নার কাজে, যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বা বিভিন্ন শিল্পকারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পেট্রোলিয়ামের খনিজ রয়েছে, যা তারা সারা পৃথিবীতে রপ্তানি করছে এবং সমস্ত পৃথিবীর খনিজ তেলের চাহিদা পূরণ করছে।
দক্ষিণ আফ্রিকাতে রয়েছে সোনা ও হীরার খনিজ। এছাড়া বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পাওয়া যায়, যা দেশ তথা সমগ্র পৃথিবীর উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। তাই কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় এ খনিজগুলোকে একত্রে খনিজ সম্পদ বলা হয়।

খনিজ সম্পদ কোথায় পাওয়া যায়

আগে মনে করা হতো যে শুধু ভূগর্ভে বা মাটির নিচেই বুঝি খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। এখন আর এ ধারণা সঠিক বলা যায় না। কোনো কোনো খনিজ ভূগর্ভে আবার কোনো কোনো খনিজ ভূপৃষ্ঠে পাওয়া যায়। সালফার খনিজ ভূগর্ভে পাওয়া যায়। নেত্রকোনার বিজয়পুরে সাদা মাটি বা কেউলিন খনিজ ভূপৃষ্ঠেই পাওয়া যায়।
কক্সবাজারের সমুদ্রের বালিতে জিরকোনিয়ামের খনিজ জিরকন, আবার লোহার খনিজ হেমাটাইট, অ্যালুমিনিয়ামের খনিজ বক্সাইট এগুলো অনেক জায়গাতে ভূপৃষ্ঠেই পাওয়া যায়। হ্যালোজেনসমূহের খনিজ সমুদ্রের পানিতে পাওয়া যায়।

শিলা কাকে বলে

বিভিন্ন খনিজ পদার্থ মিশ্রিত হয়ে কিছু শক্ত কণা তৈরি হয়, ঐ শক্ত কণাসমূহ একত্র হয়ে যে পদার্থ তৈরি হয় তাকে শিলা বলে। এ সকল শিলা যেভাবে তৈরি হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে শিলা সাধারণত তিন প্রকারঃ
  • আগ্নেয় শিলা,
  • পাললিক শিলা ও 
  • রূপান্তরিত শিলা

আগ্নেয় শিলা কাকে বলে

আগ্নেয়গিরি থেকে যে গলিত পদার্থসমূহের মিশ্রণ বের হয় তাকে ম্যাগমা বলে। ম্যাগমা যখন ঠাণ্ডা হয়ে কঠিন পদার্থে পরিণত হয় তখন তাকে আগ্নেয় শিলা বলে। যেমন-গ্রানাইট। আগ্নেয় শিলা থেকে অনেক মূল্যবান খনিজ পাওয়া যায়।

পাললিক শিলা কাকে বলে

আবহাওয়া ও জলবায়ু ইত্যাদি পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টির পানি, বাতাস, কুয়াশা, ঝড় ইত্যাদির কারণে মাটির উপরিভাগের ভূ-ত্বকের কাদামাটি, বালিমাটি ইত্যাদি ধুয়ে কোনো কোনো জায়গায় পলি আকারে জমা হয় তারপরে পলির মধ্যে জমে থাকা কণাগুলো বিভিন্ন স্তরে স্তরে সজ্জিত হয়ে যে শিলা তৈরি হয় তাকে পাললিক শিলা বলে। যেমন- বেলেপাথর।

রূপান্তরিত শিলা

আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা বিভিন্ন তাপ ও চাপে পরিবর্তিত হয়ে নতুন ধরনের যে শিলা তৈরি হয় সেগুলোকে রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমন: কয়লা।মাটির নিচে শিলার বিভিন্ন স্তর সৃষ্টির প্রক্রিয়া মাটির নিচে শিলা বিভিন্ন স্তরে সজ্জিত থাকে।মধ্যাকর্ষণ বল ,তাপ ,চাপ এবং প্রাকৃতিক শক্তি প্রভাবে মাটির নিচে শিলা বিভিন্ন স্তর সৃষ্টি করে।

ধাতু নিষ্কাশন কাকে বলে

যে পদ্ধতিতে আকরিক থেকে ধাতু সংগ্রহ করা হয় তাকে ধাতু নিষ্কাশন বলে। বিভিন্ন ধাতুর ধর্মও ভিন্ন। সে কারণে সকল ধাতুকা পৃথক করতে নির্দিষ্ট কোন একটি প্রক্রিয়া নেই। তাই বিভিন্ন ধরনের নিষ্কাশন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন থাকে। কিছু কিছু অসক্রিয় ধাতু যেমন-সোনা, প্লাটিনাম এগুলোকে কখনো কখনো বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।

কিন্তু কম বা অধিক সক্রিয় ধাতুসমূহ সাধারণত যৌগ হিসেবে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় যেমন, ধাতুসমূহের অক্সাইড, সালফাইড, নাইট্রেট, কার্বনেট ও অন্যান্য অনেক প্রকার যৌগ হিসেবে। তাই সক্রিয় ধাতুসমূহের যৌগগুলোকে বিজারিত করে বা তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় তাদের যৌগ থেকে পৃথক করা হয়।

ধাতু আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশনের অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। ধাপগুলো হলো (i) আকরিককে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা (ii) আকরিক এর ঘনীকরণ (iii) ঘনীকৃত আকরিককে অক্সাইডে রূপান্তর (iv) ধাতব অক্সাইডকে মুক্ত ধাতুতে রূপান্তর (v) ধাতু বিশুদ্ধিকরণ।

তবে একটি নির্দিষ্ট ধাতুর জন্য সব সময় সবগুলো ধাপ প্রযোজ্য নয়। প্রত্যেকটি ধাতুর ধর্মের উপর ভিত্তি করেই সেই ধাতুর জন্য প্রযোজ্য ধাপগুলো ব্যবহার করতে হবে।

সংকর ধাতু কাকে বলে

কতকগুলো ধাতুকে একত্রে গলানোর পর গলিত মিশ্রণকে ঠান্ডা করলে যে ধাতু মিশ্রণ পাওয়া যায় তাকে সংকর ধাতু বলা হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ পর্যন্ত সময়কালকে তাম্রযুগ বলা হয়। কারণ এই সময়ে তামা দিয়ে মানুষ গয়না, অস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি তৈরি করত।

কিন্তু তামা নরম ধাতু বিধায় এই ধাতু দিয়ে যে অস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি তৈরি করা হতো তা বেশি দিন কার্যকর থাকত না। সেজন্য সেই প্রাচীনকালেই মানুষ গলিত কপারের সাথে গলিত টিন মিশিয়ে মিশ্রণকে ঠাণ্ডা করে ব্রোঞ্জ তৈরি করেছিল। ব্রোঞ্জ মূলত একটি সংকর ধাতু।

কোনো গরম গলিত ধাতুর মধ্যে অন্য কোনো গরম গলিত ধাতু বা অধাতু মিশিয়ে সেই মিশ্রণকে ঠাণ্ডা করলে যে কঠিন পদার্থ পাওয়া যায় তাকে বলা হয় সংকর ধাতু। প্রাচীনকালের মানুষদের সংকর ধাতু ব্রোঞ্জ আবিস্কার ছিল একটি যুগান্তকারী ঘটনা। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ থেকে ১০০০ পর্যন্ত সময়কালকে বলা হয় ব্রোঞ্জ যুগ। এই সময় ব্রোঞ্জ দ্বারা বিভিন্ন অস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি তৈরি করা হতো।

বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি করতে ধাতুর চেয়ে সংকর ধাতু বেশি উপযোগী। লোহা এবং কার্বন মিশিয়ে স্টিল নামক সংকর ধাতু তৈরি করা হয়। ছুরি, কাঁচি, রেলের চাকা, রেললাইন, জাহাজ, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি স্টিল দ্বারা তৈরি করা হয়। আবার গরম গলিত লোহার মধ্যে গলিত কার্বন, নিকেল ও ক্রোমিয়াম মিশিয়ে যে সংকর ধাতু তৈরি হয় তাকে স্টেইনলেস স্টিল বলে।

হাসপাতালে ডাক্তাররা যে ছুরি বা কাঁচি ব্যবহার করে তা স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি। গলিত কপার এবং গলিত জিংক একত্রে মিশিয়ে পিতল নামক সংকর ধাতু তৈরি হয়। বৈদ্যুতিক সুইচ, পাতিল ইত্যাদি তৈরিতে পিতল ব্যবহৃত হয়। কপার ও টিন মিশিয়ে সংকর কাঁসা বা ব্রোঞ্জ তৈরি হয়।

থালাবাসন, গ্লাস ইত্যাদি তৈরিতে ব্রোঞ্জ ব্যবহৃত হয়। অ্যালুমিনিয়াম, কপার, ম্যাগনেসিয়াম ম্যাঙ্গানিজ ও লোহার মিশ্রণে ডুরালমীন নামক সংকর ধাতু তৈরি করা হয়। এটি উড়োজাহাজের বডি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

লেখক এর মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে খনিজ সম্পদ শিলা এবং ধাতু সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যারা একটু বিজ্ঞান সম্পর্কে আগ্রহী তাদের অনেকের জানার আগ্রহ থাকে এই বিষয়গুলো। সেইদিক বিবেচনা করে আজকের এই আর্টিকেলটি লিখা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে এই সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেয়েছেন।

যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। এছাড়াও আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো যেমন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য , বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী,

বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।

আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url