জাতীয়তা কাকে বলে

জাতি, জাতীয়তা, জাতীয়তাবাদ এই বিষয়গুলো খুব গুরুতবপুর্ণ বিষয়। তাই এই বিষয়গুলো আমাদের প্রত্যেকের জানা উচিত। তো চলুন জেনে নেয়া যাক নিম্নে বিস্তারিত।
জাতীয়তা কাকে বলে


ভূমিকা

জাতীয়তা এমন একটি মানসিক অনুভূতি বা প্রত্যয়, যার অস্তিত্ব কখনো কোনো দেশকে একত্রিত করেছে। কোথাও আবার স্বৈরশাসনের নাগপাশ ছিন্ন করার তাগিদে একটি দেশ খণ্ড-বিখণ্ড করতে উদ্যত হয়েছে।

আর এজন্য দেশ ও জাতির জীবনে জাতীয়তা গভীরভাবে রেখাপাত করেছে। বিশ শতকে এ জাতীয়তা ভাবাদর্শের গুরুত্ব বিশেষভাবে অনুভূত হয়েছে। এটি চিহ্নিত হয়েছে একটি রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে।

জাতীয়তা কাকে বলে

জাতীয়তার অর্থ ও সংজ্ঞা: জাতীয়তার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Nationality. এ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Naras' থেকে উদ্ধৃত হয়েছে, যার অর্থ হলো জন্ম। সুতরাং উৎপত্তিগত অর্থে জাতীয়তা হলো একই বংশোদ্ভূত জনসমষ্টি।

সাধারণত কোনো জনসমষ্টির নিজের ইচ্ছানুযায়ী জাতীয় জীবন গড়ে তোলার মানসিক অনুভূতি ও অনুরাগকেই জাতীয়তা বলে। জাতীয়তা মানুষকে রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। এজন্য জাতীয়তাকে রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন 'জনসমাজ' বলে আখ্যায়িত করা হয়।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃপ্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লর্ড ব্রাইস (Lord Bryce)-এর মতে, "জাতীয়তা হচ্ছে ভাষা, সাহিত্য, ধ্যানধারণা, রাজনীতি এবং ঐতিহ্যের দ্বারা ঐক্যবদ্ধ একটি জনসমষ্টি, যারা অনুরূপভাবে সংগঠিত অন্যান্য জনসমষ্টি থেকে নিজেদের পৃথক বলে মনে করে।"

জন স্টুয়ার্ট মিল (John Stuwart Mill)-এর ভাষায়, "মানবজাতির কোনো অংশকে জাতীয়তাবাদী জনগোষ্ঠী আখ্যা দেওয়া যায়, যদি তারা নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সহানুভূতির দ্বারা আবদ্ধ হয়, স্বেচ্ছায় পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করে এবং নিজেদের একাংশের দ্বারা পরিচালিত সরকারের অধীনে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে।"

প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লাস্কি (Laski)-এর মতে, "জাতীয়তা সাধারণত এক প্রকার মানসিক ঐক্যবোধে উদ্বুদ্ধ জনসমাজ এবং এ ঐক্যবোধ উক্ত জনসমাজকে অন্যান্য মানবসমাজ থেকে পৃথক করে।"

অধ্যাপক গেটেল (Getiell) বলেছেন, "জাতীয়তা ব্যাপক অর্থে একটি ভাবগত ব্যাপার, একটি মানসিক অবস্থা, জীবনযাত্রা, চিন্তা ও অনুভূতির এক পদ্ধতি।" অধ্যাপক গার্নার (Garmer) বলেন, "জাতীয়তা হলো বংশগত বা অন্যান্য ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ একটি জনসমষ্টি বা একটি অংশ।"

অধ্যাপক ম্যাকাইভার (MacIver) বলেন, "জাতীয়তা হলো সম্প্রদায়ের সামাজিক ঐক্যবোধ, যা এক বিশেষ ঐতিহাসিক পরিবেশের ভিতর রাষ্ট্রের মাধ্যমে নিজের অভিব্যক্তির জন্য সক্রিয়।"

সমাজবিজ্ঞানী ডুর্খেইম বলেন, "জাতীয়তা হলো একটি জনসমষ্টি, যারা আইন মেনে বাস করতে ইচ্ছুক এবং রাষ্ট্র গঠন করে।"

হ্যান্স কোন (Hans Kohn)-এর মতে, "জাতীয়তা মূলত একটি মানসিক অবস্থা, একটি চেতনা।"

ফরাসি লেখক রেনান (Renan)-এর মতে, "The idea of nationality is essentially spiritual in characters." অর্থাৎ জাতীয়তার ধারণা এক প্রকার অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যগত সত্তা।

পরিশেষে বলা যায় যে, জাতীয়তা একটি ঐক্যবদ্ধ ধারণা, এক প্রকার মানসিক প্রবৃত্তি এবং ভাবপ্রবণতা। কোনো জনসমষ্টির মধ্যে ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস, ঐতিহ্যের বন্ধনে ঐক্যবোধ সৃষ্টি হলে তা জাতীয়তা হিসেবে গণ্য হয়।

জাতীয়তা কোনো নির্দিষ্ট মানুরগোষ্ঠী থেকে নিজেদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ঐতিহ্য, ভাষা প্রভৃতি বিষয়ে অন্যদের থেকে আলাদা ভাবতে শিক্ষা দেয়।

জাতি কাকে বলে

জাতি হলো জাতীয়তার চরম ও পরিস্ফুটিত রূপ। আধুনিক বিশ্ব রাজনীতিতে জাতি ও জাতীয়তা শব্দ দুটি অধিকতর পুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়। সাধারণত জাতি ও জাতীয়তা শব্দ দুটি একই অর্থে ব্যবহৃত হলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জাতি ও জাতীয়তা বিশেষ অর্থে ব্যবহূত হয়। জাতি ও জাতীয়তা মানুষের স্বাতন্ত্র্য ও ঐক্যবোধ থেকে জন্মলাভ করে বলে এর মাধ্যমে জাতির অভ্যুদয় ঘটে।

শাব্দিক অর্থে জাতি: ইংরেজি Nation' শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে 'জাতি'। 'Nation' শব্দটি ল্যাটিন শব্দ 'Natio' থেকে উদ্ধৃত। Natio' শব্দের অর্থ জন্ম। সুতরাং শাব্দিক অর্থে জাতি শব্দের মূল অর্থ দাঁড়ায় 'একই বংশোদ্ভূত জনসমষ্টি'।

জাতির সংজ্ঞাঃজাতি বলতে এমন এক জনসমষ্টিকে বুঝায়, যারা কতকগুলো সাধারণ ঐক্যবোধে আবদ্ধ ও সংগঠিত। অন্যভাবে বলা যায়, জাতি বলতে এমন এক জনসমষ্টিকে বুঝায়, যারা একই ভাষা, ধর্ম, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ভৌগোলিক এলাকায় ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করে এবং যারা অন্য কারো শাসন মানতে রাজি নয়।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা: অধ্যাপক ম্যাকাইভার (MacIver) তার 'The Modern State' গ্রন্থে বলেন, "জাতি হলো ঐতিহাসিক পরিস্থিতি দ্বারা সৃষ্ট, অধ্যাত্ম চেতনা দ্বারা সমর্থিত একত্রে বসবাস করার সংকল্পবদ্ধ সম্প্রদায়গত মনোভাবসম্পন্ন জনসমাজ, যারা নিজেদের জন্য সাধারণ সংবিধান রচনা করতে চায়।"

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন স্টুয়ার্ট মিল (John Stuart Mill) বলেন, "একটি মানবসমষ্টির মধ্যে এমন পারস্পরিক সহানুভূতির বন্ধন বিরাজমান, যা তাদের এবং অন্য মানুষের মধ্যে নেই।

তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পারস্পরিক সহযোগিতা করতে যতটা ইচ্ছুক হয়, অন্য কোনো মানুষের সাথে ততখানি হতে পারে না। তারা একই সরকারের অধীনে বসবাস করতে চায়। আর এরূপ মানবসমষ্টিকে জাতি বলা যেতে পারে।" 

প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লর্ড ব্রাইস (Lord Bryce) বলেন, "জাতি হচ্ছে জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত এবং রাজনৈতিকভাবে সুসংগঠিত এমন এক জনসমাধ্যি যারা হয় স্বাধীন নতুবা স্বাধীনতাকামী।"

অধ্যাপক জে. এইচ, হায়েস (3. H. Hayes) বলেন, "জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ জনসমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এবং সার্বভৌম স্বাধীনতা লাভ করে জাতিতে পরিণত হয়।"

অধ্যাপক র‍্যামজে মুইর (Ramsay Muir) বলেন, "জাতি এরূপ একটি জনসমষ্টি- যারা নিজেদের প্রকৃতিগতভাবে ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ বলে মনে করে। তাদের ঐক্যবোধ এত দৃঢ় ও বাস্তব যে, তারা একত্রে বাস করতে আনন্দ পায়, বিচ্ছিন্ন হলে অসম্পূষ্ট হয় এবং তাদের সাথে একই ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ নয় এরূপ লোকের শাসন সহ্য করতে পারে না।"

অধ্যাপক জিম্মান (Zimmern)-এর মতে, "কোনো নির্দিষ্ট আবাসভূমির সাথে সংশ্লিষ্ট, সংঘব্যভাবে বিশেষ অন্তরঙ্গ, গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাসম্পন্ন অনুভূতির প্রকাশই জাতীয়তাবোধ। এ জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ ব্যক্তিবর্গের সমষ্টিই জাতি।" 

অধ্যাপক আর, এন, গিলক্রিস্ট (R. N. R. Gilchrist) বলেন, "জাতি বলতে এমন এক জনসমষ্টিকে বুঝায় যাদের একতা বা সংগঠিত হওয়াকে কেন্দ্র করে একটি রাষ্ট্র গড়ে উঠে।"

অধ্যাপক বার্জেস (Burgoss)-এর মতে, "কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসকারী এবং জন্মসূত্রে আবদ্ধ জনগোষ্ঠীকে জাতি বলে।"

অধ্যাপক স্পেংলার (Spengler)-এর মতে, 'জাতি ভাষাভিত্তিক নয় কিংবা রাজনৈতিক বা বংশগতও নয়, বরং আধ্যাত্মিক ঐক্যের মূর্ত রূপ।"

অধ্যাপক গার্নার (Garnet)-এর মতে, "জাতি কেবল সাংস্কৃতিক ও আত্মিক সূত্রে আবদ্ধ কোনো সংগঠন নয়। জাতি বলতে রাজনৈতিক দিক থেকে সুসংগঠিত জনগোষ্ঠীকে বুঝায়।"

উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, জাতি বলতে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ এমন এক জনসমাজকে বুঝায় যারা একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডে বাস করে। জাতি স্বাধীন হতে পারে, আবার স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্তও থাকতে পারে।

জাতির সদস্যদের মধ্যে নিজেদের অতীত ইতিহাস, বীরত্বের উত্তরাধিকারী, সংগ্রাম ও ত্যাগের সমজাতীয় ঐতিহ্য, পারস্পরিক সহমর্মিতা, রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষার সাদৃশ্য আছে।

জাতীয়তাবাদ কাকে বলে

জাতীয়তাবাদকে আধুনিক বিশ্বের রাজনীতির অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি বলে গণ্য করা হয়। ষোল শতকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যাকিয়াভেলি সর্বপ্রথম এ মতবাদ প্রকাশ করেন। উনিশ ও বিশ শতকে জাতীয়তাবাদ বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
জাতীয়তাবাদ একদিন হাজার হাজার মানুষের মুক্তির মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু আজ উগ্র জাতীয়তাবাদ মানব সভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শাব্দিক অর্থে জাতীয়তাবাদ: ইংরেজি 'Nationality' শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে 'জাতীয়তাবাদ'। 'Nationality' শব্দটি ল্যাটিন শব্দ 'Natus' বা 'Natio' থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। 'Natus' বা 'Natio' শব্দের অর্থ জন্ম বা বংশ। সুতরাং শাব্দিক অর্থে জাতীয়তাবাদ শব্দের মূল অর্থ হচ্ছে 'একই বংশোদ্ভূত জনসমষ্টি'।

জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞাঃসাধারণত কোনো জনসমষ্টির নিজের ইচ্ছানুযায়ী জাতীয় জীবন গড়ে তোলার মানসিক অনুভূতি ও অনুরাগকেই জাতীয়তাবাদ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, যে শক্তি মানুষের শত ব্যবধানকে কমিয়ে একটি শক্তিতে পরিণত করে এবং যে শক্তি অন্য শক্তির কাছে মাথানত করে না তাই জাতীয়তাবাদ।

জাতীয়তাবাদ মানুষকে রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। এজন্য জাতীয়তাবাদকে 'রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন জনসমাজ' বলে আখ্যায়িত করা হয়।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃঅধ্যাপক ম্যাকাইভার (MacIver) বলেন, "জাতীয়তাবাদ হলো ঐতিহাসিক পরিস্থিতি দ্বারা সৃষ্ট অধ্যাত্ম চেতনা সংবলিত জনসমষ্টির সম্প্রদায়গত মনোভাব, যারা নিজেদের জন্য স্বতন্ত্র শাসনতন্ত্র রচনা করে একত্রে বসবাস করতে চায়।"

অধ্যাপক এল, এল, স্লাইডার (L. L. Snyder) তার The Meaning of Nationalism' গ্রন্থে বলেন, "জাতীয়তাবাদ হচ্ছে ইতিহাসের এক বিশেষ স্তরে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তি সংক্রান্ত চেতনার ফল। একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে বসবাসকারী জনসাধারণের মানসিকতা ও ভাবগত ঐক্যই এর প্রধান শর্ত।"

হ্যানস কোন (Hans Kohn)-এর মতে, "জাতীয়তাবাদ মূলত একটি মানসিক অবস্থা, যা কোনো জনসমষ্টির সংখ্যাগরিষ্ঠের মধ্যে পরিব্যাপ্ত অবস্থায় থাকে।"

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জে. এইচ, হায়েস (J. H. Hayes) বলেন, "জাতীয়তাবাদ হচ্ছে জাতীয়তা এবং দেশপ্রেম-এ দুটি আধুনিক অনাসক্ত

বিষয়ের এক আবেগপূর্ণ সমন্বয় ও অতিরঞ্জন।" 20 অধ্যাপক হ্যারল্ড লাঙ্কি (Harold Laski)-এর মতে, "জাতীয়তাবাদ সাধারণত এক প্রকার মানসিক ঐক্যবোধে উদ্বুদ্ধ জনসমাজ এবং এ ঐক্যবোধ উক্ত জনসমাজকে অবশিষ্ট মানবসমাজ থেকে পৃথক করে।" 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আরনল্ড জে. টয়েনবি (Arnold J. Toyenbee) বলেন, "জাতীয়তাবাদ বস্তুগত বা যান্ত্রিক কোনোকিছু নয়, বরং এক প্রকার আত্মিক ও মনস্তাত্ত্বিক অনুভূতি।"

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বার্নস (Burns)-এর মতে, "জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। কিন্তু এর অর্থ প্রত্যেক গোষ্ঠীর নিজস্বতার মধ্যে তারতম্যের অবসান নয়; বরং তাদের সৃজনশীল বিকাশ। সভ্যতা স্বার্থ এবং চরিত্রের বিভিন্নতা এবং সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে বিকাশ লাভ করে। জাতীয়তাবাদ এ বিভিন্নতা রক্ষায় ও সমন্বয় সাধনে সাহায্য করে।"

অধ্যাপক কার্ল ডয়েজ (Karl Deutsch) বলেন, "দেশের জনসাধারণের মধ্যে নিম্নশ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বহুসংখ্যক ব্যক্তি যখন সামাজিক যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সমাসীন জনগোষ্ঠীর সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত হয় তখনই জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি ঘটে।"

বার্ট্রান্ড রাসেল (Bertrand Russell)-এর মতানুসারে, “জাতীয়তাবাদ হলো একটি সাদৃশ্য ও ঐক্যের অনুভূতি যা পরস্পরকে ভালোবাসতে শিক্ষা দেয়।"

অধ্যাপক প্যাডেলফোর্ড ও অধ্যাপক লিংকন (Padelford & Lincoln) বলেন, "জাতীয়তাবাদ দুটি উপাদানের সংমিশ্রণ বিশেষ; একটি উপাদান হচ্ছে জাতীয়তার ধারণা সম্পর্কিত কোনো আদর্শবাদ এবং অপরটি হচ্ছে জাতীয় রাষ্ট্রের ভিতর ঐ আদর্শবাদকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে রূপদান।"

রোজা লুক্সেমবার্গ (Rosa Luxemburg) বলেন, "জাতীয় রাষ্ট্র এবং জাতীয়তাবাদ হলো এমন একটি শূন্য পাত্র যার মধ্যে প্রতিটি যুগ ও প্রত্যেক দেশের মানুষ এর মধ্যে তাদের বিশেষ অন্তর্বস্তু ঢেলে দেয়।"

অধ্যাপক লয়েড (Lloyd) বলেন, "জাতীয়তাবাদকে একটি ধর্ম হিসেবে অভিহিত করা যায়, কারণ এর মূল মানুষের অন্তস্তলে প্রোথিত।" অধ্যাপক স্পেংলার (Spenglar) বলেন, "বংশগত কিংবা ভাষাগত ঐক্য নয়; বরং ভাবগত ঐক্যই জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি করে।"

উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, জাতীয়তাবাদ একটি মানসিক ধারণা, এক প্রকার মানসিক প্রবৃত্তি এবং এক ধরনের ভাব প্রবণতা। এটি এমন একটি মানসিক অনুভূতি যা কোনো নির্দিষ্ট মানবগোষ্ঠী থেকে নিজেদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ঐতিহ্য, ভাষা, সাহিত্য, জীবনযাত্রা,

কৃষ্টি প্রভৃতি বিষয়ে সচেতন করে তোলে এবং অন্যদের থেকে আলাদা ভাবতে শিক্ষাদান করে। আর এ শিক্ষা থেকেই জনগণ জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র গঠনে ঐক্যবদ্ধ হয়।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে মৌলিক অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই মৌলিক অধিকার সম্পর্কে জানা উচিত কারন এটা আমাদের প্রাপ্য অধিকার। সেইদিক বিবেচনা করেই যাচাইকৃত তথ্য দ্বারা এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে।

আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে তার সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়েছেন।যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।

এছাড়াও আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো যেমন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী,বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।

কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url