রাষ্ট্রের মুখ্য উপাদান কয়টি
বর্তমানে বিশ্বের প্রতিটি মানুষই কোন না কোন রাষ্ট্রে বসবাস করে। আর তাই নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের উচিত রাষ্ট্রের উপাদান সমূহ এবং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। চলুন জেনে নেয়া যাক রাষ্ট্রের উপাদান সমূহ ও এর গুরুত্ব।
১।রাষ্ট্রের স্বীকৃতি: স্বীকৃতি রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একটি রাষ্ট্রকে অবশ্যই বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করতে হয়। অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভ করার জন্য রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিজের অবস্থান তুলে ধরে নানা প্রচারণা চালায়। কেননা কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রকে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র যতক্ষণ পর্যন্ত স্বীকৃতি না দেয় ততক্ষণ পর্যন্ত সেটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হতে পারে না।
৪. অধিকার ও সাম্য:অধিকার ও সাম্য পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নাগরিক যখন রাষ্ট্রের অধিকার দাবি করে সাম্যের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয় তখন রাষ্ট্র গড়ে উঠে। যখন একটি দেশ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয় তখন থেকে সে রাষ্ট্র অধিকার ও মর্যাদার অংশীদার হয়।বহির্বিশ্বে যখন একটি রাষ্ট্র তার মর্যাদা, সাম্য ও অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়
২. অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা: জনগণের জীবন, সম্পত্তি, অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রকে পুলিশ, বিডিআর ও আধা-সামরিক বাহিনীসহ আনসার-ভিডিপি গড়ে তুলতে হয়। আর এসব কাজ কেবল রাষ্ট্রের দ্বারাই করা সম্ভব, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সম্ভব নয়।
৩. পররাষ্ট্র সংক্রান্ত: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ধারণ ও সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রই প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য প্রত্যেক রাষ্ট্রই বিদেশে রাষ্ট্রদূত প্রেরণ করে এবং বিদেশ থেকে আগত রাষ্ট্রদূত বা কূটনৈতিক প্রতিনিধিকে গ্রহণ করে থাকে।
৪. শাসনকার্য পরিচালনা: রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য রাষ্ট্রে শাসন বিভাগ নামে একটি প্রশাসন বিভাগ গঠন করে। শাসনকার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ ও নীতিমালা প্রণয়ন করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমপরিচালনার জন্য শাসন বিভাগের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
৫. আইন প্রণয়ন, সংশোধন ও পরিবর্তন: বর্তমানে রাষ্ট্রের আইন বিভাগই আইন প্রণয়নের প্রধান উৎস। আইন ছাড়া কোনো রাষ্ট্রই চলতে পারে না। প্রত্যেক রাষ্ট্রের আইনসভাই জনগণের কল্যাণের জন্য যেকোনো আইন প্রণয়ন, প্রয়োজন অনুসারে সংশোধন ও পরিবর্তন বা বাতিল করে থাকে।
৬. বিচার বিভাগ গঠন ও পরিচালনা: রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে পেশিশক্তির ভয় দেখিয়ে বা জোর করে সবলেরা যাতে দুর্বলের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়ে জনসাধারণের জীবন, সম্পত্তি ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেজন্য প্রতিটি রাষ্ট্রে রয়েছে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ।
৭. আর্থিক কার্যাবলি সম্পাদন: আধুনিককালে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে রাষ্ট্র বহুবিধ আর্থিক কার্য সম্পাদন করে। খাজনা ও কর নির্ধারণ এবং তা আদায় করে সুষ্ঠুভাবে ব্যয় করা রাষ্ট্রের অবশ্য করণীয় কাজ। এজন্য রাষ্ট্র বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব বা বাজেট প্রণয়ন করার সাথে সাথে মুদ্রাও প্রবর্তন করে থাকে।
৮. শিক্ষা সংক্রান্ত কাজ: দেশের প্রত্যেকটি নাগরিককে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য রাষ্ট্র বিবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সুশিক্ষা প্রত্যেক নাগরিককে তার অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। আর এ সচেতনতা প্রত্যেক নাগরিকের অবশ্যই প্রয়োজন।
৯. জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষা: আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষা করা। রাষ্ট্র জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য হাসপাতাল, দাতব্য চিকিৎসালয়, হেলথ ক্লিনিক, শিশুসদন, মাতৃসদন, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, চিকিৎসা গবেষণা কেন্দ্র প্রভৃতি স্থাপন ও পরিচালনা করে থাকে। সুতরাং জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষায় রাষ্ট্রের গুরুত্ব অপরিসীম।
১১. শিল্প-বাণিজ্যের উন্নয়ন: জাতীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো শিল্প ও বাণিজ্যের ব্যাপক উন্নয়ন ও প্রসার। এজন্য রাষ্ট্র নতুন নতুন শিল্প স্থাপন, শিল্পপতিদের উৎসাহ প্রদান, শিল্পঋণ প্রদান, অভ্যন্তরীণ ও বহির্বাণিজ্য পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক-বিমা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করাও রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ।
১২. শ্রমিক কল্যাণ: রাষ্ট্রের শিল্পোৎপাদনের প্রধান উপাদান হলো শ্রমিক। তাই আধুনিক কল্যাণকর রাষ্ট্রসমূহ শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য বেতন-ভাতা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি প্রদান করে থাকে। এছাড়া নতুন নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন করে রাষ্ট্র শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে থাকে।
১৪. সামাজিক নিরাপত্তা বিধান: আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ হলো সামাজিক নিরাপত্তা বিধান। সামাজিক উন্নয়নের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা অপরিহার্য। রাষ্ট্র বর্তমানে অবসরপ্রাপ্তদের অবসর ভাতা, কল্যাণ ভাতা, বিমা, দুস্থ ভাতা, বিধবা ভাতা, বেকার ভাতা, বয়স্ক ভাতা ইত্যাদি সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বহুবিধ কল্যাণকর কার্য বাস্তবায়ন করছে।
১৫. চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা: জনগণের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে এবং ব্যক্তিত্বের সুষ্ঠু বিকাশ সাধনে সুষ্ঠু ও আনন্দদায়ক চিত্তবিনোদনের ভূমিকা অপরিসীম। তাই আধুনিক রাষ্ট্রগুলো জনগণের চিত্তবিনোদনের জন্য ব্যায়ামাগার, খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, গ্রন্থাগার নির্মাণ এবং রেডিও-টেলিভিশনে আনন্দদায়ক অনুষ্ঠান প্রচার করে।
আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে তার সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়েছেন।যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।
এছাড়াও আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো যেমন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী,বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।
কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
ভূমিকা
রাষ্ট্র হচ্ছে মূলত ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের সংজ্ঞা নির্দেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য থাকলেও রাষ্ট্রের উপাদান প্রশ্নে তাদের মধ্যে মোটামুটিভাবে মতৈক্য হয়েছে। রাষ্ট্রের সংজ্ঞা ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে এর উপাদানসমূহকে প্রধানত মুখ্য উপাদান ও গৌণ উপাদানে ভাগ করা যায়।রাষ্ট্র গঠনের জন্য মুখ্য উপাদান চারটি। মুখ্য উপাদানের যেকোনো একটির অভাবে রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। তেমনি রাষ্ট্রের গৌণ উপাদান হচ্ছে সেসব বিষয় যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও দাবিকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।
রাষ্ট্রের উপাদানসমূহ প্রধানত কয় ভাগে বিভক্ত
রাষ্ট্রের উপাদানসমূহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।যথা-
- মুখ্য উপাদান ও
- গৌণ উপাদান।
নিম্নে এগুলোসম্পর্কে আলোচনা করা হলো
রাষ্ট্রের মুখ্য উপাদান কয়টি
মুখ্য উপাদান: রাষ্ট্রের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে এর চারটি মূল উপাদান পরিলক্ষিত হয়।
উপাদানগুলো হলো
- নির্দিষ্ট ভূখন্ড
- স্থায়ী জনসমষ্টি
- সরকার
- সার্বভৌমত্ব
এসব উপাদানের একত্রে সমাবেশ ঘটলেই একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। নিম্নে রাষ্ট্রের মুখ্য উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলোঃ
নির্দিষ্ট ভূখন্ড কাকে বলে
রাষ্ট্র একটি ভৌগোলিক প্রতিষ্ঠান। তাই এর প্রধান উপাদান হলো একটি সুনির্দিষ্ট ভূখন্ড। কোনো রাষ্ট্রের অবশ্যই একটি সুনির্দিষ্ট ভূখন্ড থাকবে এবং দেশের জনগণ এ ভূখণ্ডেই বসবাস করবে। এ ভূখণ্ড অন্যান্য রাষ্ট্রের জনগণ কর্তৃক অধিকৃত ভূখণ্ড থেকে অবশ্যই পৃথক হতে হবে। জনসমষ্টি যদি রাষ্ট্রের প্রাণ হয় তবে ভূখণ্ড হবে তার দেহ।
যাযাবররা স্থায়ী ভূখণ্ডের অধিকারী নয় বলে তারা রাষ্ট্র গঠন করতে পারে না। রাষ্ট্রের আয়তন কত হবে তার কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। এর আয়তন কয়েক শ' থেকে কয়েক লক্ষ বর্গকিলোমিটার হতে পারে। তবে রাষ্ট্রের ভূখণ্ড বৃহৎ হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।
কারণ এতে রাষ্ট্র অরক্ষিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ রাষ্ট্রের সীমানা মধ্যম পর্যায়ে রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। কেননা এতে রাষ্ট্র শাসন করা যেমন সহজ হয় তেমনি তা অরক্ষিত হয়ে পড়ার আশঙ্কাও থাকে না
স্থায়ী জনসমষ্টি বলতে কি বোঝায়
স্থায়ী জনসমষ্টি রাষ্ট্রের দ্বিতীয় অপরিহার্য উপাদান। কেননা, জনগণ ব্যতীত রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। মানুষকে নিয়ে এবং মানুষের জন্যই রাষ্ট্র গঠিত হয়। অর্থাৎ মানুষ নিজ প্রয়োজনেই রাষ্ট্র গঠন করে। জনহীন মরুভূমি বা গহীন অরণ্যে রাষ্ট্র গঠিত হয় না। অবশ্য রাষ্ট্রের জনসংখ্যা কত হবে এর কোনো সুনির্দিষ্ট সংখ্যা নেই।
রাষ্ট্রের জনসংখ্যা কমও হতে পারে আবার বেশিও হতে পারে। যেমন- ০.৪৪ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট ভ্যাটিকান সিটি নামক ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের জনসংখ্যা মাত্র নয়শ বিশ জন। পক্ষান্তরে, চিনের জনসংখ্যা প্রায় দেড়শ কোটি। সুতরাং কমবেশি যাই হোক না কেন, স্থায়ী জনসমষ্টি রাষ্ট্রের অপরিহার্য উপাদান।
৩. সরকার: সরকার রাষ্ট্র গঠনের একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের ইচ্ছা, আদর্শ ও উদ্দেশ্য প্রকাশিত ও বাস্তবায়িত হয়। সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত এবং জনগণের ইচ্ছা বাস্তবায়িত হয়। সরকার রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইন প্রণয়ন, যুদ্ধ ঘোষণা এবং রাষ্ট্র সম্পর্কীয় বিভিন্ন কার্যসম্পাদন করে।
৩. সরকার: সরকার রাষ্ট্র গঠনের একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের ইচ্ছা, আদর্শ ও উদ্দেশ্য প্রকাশিত ও বাস্তবায়িত হয়। সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত এবং জনগণের ইচ্ছা বাস্তবায়িত হয়। সরকার রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইন প্রণয়ন, যুদ্ধ ঘোষণা এবং রাষ্ট্র সম্পর্কীয় বিভিন্ন কার্যসম্পাদন করে।
অবশ্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকার বিভিন্ন রূপ হতে পারে। তবে সরকারের রূপ বা প্রকৃতি কি হবে সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। সরকারের রূপ যাই হোক না কেন সরকারকে শাসন ক্ষমতা প্রয়োগের প্রয়োজনীয় শক্তির অধিকারী হতে হয়।
সার্বভৌমত্ব কাকে বলে
নির্দিষ্ট ভূখন্ড, জনগণ এবং সরকার থাকলেই কোনো জনসমষ্টিকে রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। এর জন্য প্রয়োজন সার্বভৌমত্ব। সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য উপাদান। সার্বভৌম ক্ষমতাই একটি রাষ্ট্রকে তার নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম।
এ ক্ষমতাবলেই রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরে সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর কর্তৃত্ব করে এবং স্বীয় সীমানা রক্ষায় পূর্ণ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। সার্বভৌমিকতার দ্বারাই কোনো জনসমষ্টি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে কি-না তা নিরূপণ করা যায়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এ ক্ষমতাবলে অন্য রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকে।
গৌণ উপাদান গুলো কি কি
রাষ্ট্রের মুখ্য উপাদানগুলোর যেকোনো একটির অনুপস্থিতিতে যেমন রাষ্ট্র গঠন সম্ব নয়, তেমনি রাষ্ট্রের গৌণ উপাদানসমূহ হচ্ছে সেসব উপাদান যেগুলোর অনুপস্থিতি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও দাবিকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। নিম্নে রাষ্ট্রের গৌণ উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো:
১।রাষ্ট্রের স্বীকৃতি: স্বীকৃতি রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একটি রাষ্ট্রকে অবশ্যই বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করতে হয়। অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভ করার জন্য রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিজের অবস্থান তুলে ধরে নানা প্রচারণা চালায়। কেননা কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রকে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র যতক্ষণ পর্যন্ত স্বীকৃতি না দেয় ততক্ষণ পর্যন্ত সেটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হতে পারে না।
২. স্থায়িত্ব: রাষ্ট্র একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। সরকারের পরিবর্তন হলেও রাষ্ট্রের কোনো পরিবর্তন হয় না। অন্যান্য সংস্থা রাষ্ট্রের মতো এমন দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অনেকেই স্থায়িত্বকে রাষ্ট্রের অন্যতম উপাদান বলে মনে করেন। তাদের মতে, যে রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব নেই, তাকে আর যাই হোক রাষ্ট্র বলা যায় না।
কিন্তু মার্কসবাদীরা রাষ্ট্রকে শাশ্বত বা চিরন্তন বলে মনে করেন। তাদের মতে, শোষণের হাতিয়ার হিসেবে যে রাষ্ট্রের উৎপত্তি, শ্রেণিহীন, শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে তা আপনা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ৩. জাতীয়তাবাদ: রাষ্ট্রের গৌণ উপাদানগুলোর মধ্যে জাতীয়তাবাদ অন্যতম। জাতীয়তাবাদ যখন চূড়ান্ত রূপ পরিগ্রহ করে তখন রাষ্ট্র গঠিত হয়।
অর্থাৎ রাষ্ট্র গঠনের মূলভিত্তি জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তাবাদ এমন এক শক্তি, যাকে পদদলিত করে কোনো শাসক টিকে থাকতে পারে না। যদি কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনসমাজ জাতীয়তাবাদের সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ না হয় তাহলে কোনোভাবেই রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না।
যেমন-১৯৭১ সালে জাতীয়তাবাদের গভীর মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাঙালিরা দলমত আর ভেদাভেদ ভুলে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। সুতরাং বলা যায় যে, জাতীয়তাবাদ রাষ্ট্রের অন্যতম হাতিয়ার।
৪. অধিকার ও সাম্য:অধিকার ও সাম্য পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নাগরিক যখন রাষ্ট্রের অধিকার দাবি করে সাম্যের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয় তখন রাষ্ট্র গড়ে উঠে। যখন একটি দেশ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয় তখন থেকে সে রাষ্ট্র অধিকার ও মর্যাদার অংশীদার হয়।বহির্বিশ্বে যখন একটি রাষ্ট্র তার মর্যাদা, সাম্য ও অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়
তখন তার সার্বভৌমত্ব অনেক সময় ক্ষুণ্ণ হয়।এ কারণে রাষ্ট্র বহির্বিশ্বে নিজের অধিকার আদায়ে সর্বদা তৎপর থাকে।অংশীদার হয়। বহির্বিশ্বে যখন একটি রাষ্ট্র তার মর্যাদা, সাম্য ও অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয় তখন তার সার্বভৌমত্ব অনেক সময় ক্ষুণ্ণ হয়।এ কারণে রাষ্ট্র বহির্বিশ্বে নিজের অধিকার আদায়ে সর্বদা তৎপর থাকে।
৫. স্বাধীনতা: একটি রাষ্ট্রের গৌণ উপাদানের মধ্যে স্বাধীনতা অন্যতম। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব যেমন অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতির উপর নির্ভরশীল, তেমনি স্বীকৃতি লাভের পর সেই রাষ্ট্রের অবশ্যই অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে বাধাহীনভাবে সম্পর্ক স্থাপন করার স্বাধীনতা থাকতে হবে। অর্থাৎ রাষ্ট্র তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য যেকোনো রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য করার একচেটিয়া স্বাধীনতা লাভ করবে। এরূপ স্বাধীনতায় কারো হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই।
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রাচীনকাল থেকে আজোবধি রাষ্ট্র গঠনের উপাদানসমূহ অপরিবর্তিত রয়েছে। তাই রাষ্ট্রের এসব উপাদান সম্পর্কে প্রায় সকলেই একমত। রাষ্ট্র গঠনের জন্য মুখ্য ও গৌণ উভয় উপাদানেরই প্রয়োজন রয়েছে।
তবে মুখ্য উপাদানের গুরুত্ব বেশি। মুখ্য উপাদানের যেকোনো একটি না থাকলে রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। আর একটি স্থায়ী ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের জন্য গৌণ উপাদানের প্রয়োজনীয়তাও অনস্বীকার্য। মোটকথা, রাষ্ট্রের ভিত্তি যদি হয় এর মুখ্য উপাদান, তাহলে গৌণ উপাদান এ ভিত্তিকে মজবুত করতে একান্ত আবশ্যক।
আধুনিক রাষ্ট্রের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
উত্তরা ভূমিকা: রাষ্ট্র একটি অতি প্রাচীন ও অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান। মানুষ সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। কেননা সমাজবদ্ধ মানুষের সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের কথা রাষ্ট্র ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। সমাজের নানাবিধ কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে সম্পাদন করার জন্যও রাষ্ট্রের কোনো বিকল্প নেই। সুদূর অতীতে নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল।বর্তমানেও এর প্রয়োজন রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এর প্রয়োজনীয়তা অক্ষুণ্ণ থাকবে। মোটকথা, সুখী, সুন্দর, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও মঙ্গলময় জীবনযাপনের জন্য রাষ্ট্রের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।রাষ্ট্রের গুরুত্ব/প্রয়োজনীয়তা রাষ্ট্র মূলত মানবকল্যাণের বৃহত্তর স্বার্থকে সামনে রেখে গড়ে উঠেছে বিধায় সময়ের পরিবর্তনের ধারায়
রাষ্ট্রের রূপের পরিবর্তন ঘটলেও এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এতটুকুও ক্ষুণ্ণ হয় নি, বরং আরো বৃদ্ধি পেয়েছে বলা যায়। নিম্নে রাষ্ট্রের গুরুত্ব/প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো:
১. সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষা: সার্বভৌমত্বই আধুনিক রাষ্ট্রের মূলভিত্তি। সার্বভৌম ক্ষমতা ছাড়া কোনো জনসমষ্টি রাষ্ট্র গঠন করতে পারে না।তাই সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষা করা রাষ্ট্রের অপরিহার্য কাজ। এ কাজ সম্পাদনের জন্য রাষ্ট্রকে সেনাবাহিনী গঠন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় যা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের দ্বারা করা সম্ভব নয়।
সুতরাং আধুনিককালে সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা সংরক্ষণে রাষ্ট্রের গুরুত্ব অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে।
২. অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা: জনগণের জীবন, সম্পত্তি, অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রকে পুলিশ, বিডিআর ও আধা-সামরিক বাহিনীসহ আনসার-ভিডিপি গড়ে তুলতে হয়। আর এসব কাজ কেবল রাষ্ট্রের দ্বারাই করা সম্ভব, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সম্ভব নয়।
৩. পররাষ্ট্র সংক্রান্ত: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ধারণ ও সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রই প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য প্রত্যেক রাষ্ট্রই বিদেশে রাষ্ট্রদূত প্রেরণ করে এবং বিদেশ থেকে আগত রাষ্ট্রদূত বা কূটনৈতিক প্রতিনিধিকে গ্রহণ করে থাকে।
এছাড়াও রাষ্ট্রকে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে বিভিন্ন ধরনের চুক্তি সম্পাদন করতে হয়। বর্তমান বিশ্বের কল্যাণমূলক কার্যাবলি সম্পাদনের মাধ্যমে জনগণের সমস্যা সমাধানের জন্য এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে। যে দেশের কূটনীতি যত বেশি উন্নত, সে দেশও তত বেশি উন্নত হয়।
৪. শাসনকার্য পরিচালনা: রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য রাষ্ট্রে শাসন বিভাগ নামে একটি প্রশাসন বিভাগ গঠন করে। শাসনকার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ ও নীতিমালা প্রণয়ন করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমপরিচালনার জন্য শাসন বিভাগের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
৫. আইন প্রণয়ন, সংশোধন ও পরিবর্তন: বর্তমানে রাষ্ট্রের আইন বিভাগই আইন প্রণয়নের প্রধান উৎস। আইন ছাড়া কোনো রাষ্ট্রই চলতে পারে না। প্রত্যেক রাষ্ট্রের আইনসভাই জনগণের কল্যাণের জন্য যেকোনো আইন প্রণয়ন, প্রয়োজন অনুসারে সংশোধন ও পরিবর্তন বা বাতিল করে থাকে।
রাষ্ট্রের প্রণীত আইন সর্বক্ষেত্রেই জনকল্যাণমুখী। তাই আইন প্রণয়নে রাষ্ট্রের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
৬. বিচার বিভাগ গঠন ও পরিচালনা: রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে পেশিশক্তির ভয় দেখিয়ে বা জোর করে সবলেরা যাতে দুর্বলের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়ে জনসাধারণের জীবন, সম্পত্তি ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেজন্য প্রতিটি রাষ্ট্রে রয়েছে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ।
আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা বিচার বিভাগের পবিত্র দায়িত্ব। এজন্য রাষ্ট্র নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ গঠন ও পরিচালনা করে।
৭. আর্থিক কার্যাবলি সম্পাদন: আধুনিককালে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে রাষ্ট্র বহুবিধ আর্থিক কার্য সম্পাদন করে। খাজনা ও কর নির্ধারণ এবং তা আদায় করে সুষ্ঠুভাবে ব্যয় করা রাষ্ট্রের অবশ্য করণীয় কাজ। এজন্য রাষ্ট্র বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব বা বাজেট প্রণয়ন করার সাথে সাথে মুদ্রাও প্রবর্তন করে থাকে।
৮. শিক্ষা সংক্রান্ত কাজ: দেশের প্রত্যেকটি নাগরিককে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য রাষ্ট্র বিবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সুশিক্ষা প্রত্যেক নাগরিককে তার অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। আর এ সচেতনতা প্রত্যেক নাগরিকের অবশ্যই প্রয়োজন।
কেননা জনগণ সচেতন হলে রাষ্ট্রে কোনো ধরনের স্বৈরশাসক ও একনায়ক জন্ম নিতে পারে না। এজন্য রাষ্ট্র স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।
৯. জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষা: আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষা করা। রাষ্ট্র জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য হাসপাতাল, দাতব্য চিকিৎসালয়, হেলথ ক্লিনিক, শিশুসদন, মাতৃসদন, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, চিকিৎসা গবেষণা কেন্দ্র প্রভৃতি স্থাপন ও পরিচালনা করে থাকে। সুতরাং জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষায় রাষ্ট্রের গুরুত্ব অপরিসীম।
১১. শিল্প-বাণিজ্যের উন্নয়ন: জাতীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো শিল্প ও বাণিজ্যের ব্যাপক উন্নয়ন ও প্রসার। এজন্য রাষ্ট্র নতুন নতুন শিল্প স্থাপন, শিল্পপতিদের উৎসাহ প্রদান, শিল্পঋণ প্রদান, অভ্যন্তরীণ ও বহির্বাণিজ্য পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক-বিমা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করাও রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ।
এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন ও এ সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রেও রাষ্ট্র একক দায়িত্ব পালন করে থাকে।
১২. শ্রমিক কল্যাণ: রাষ্ট্রের শিল্পোৎপাদনের প্রধান উপাদান হলো শ্রমিক। তাই আধুনিক কল্যাণকর রাষ্ট্রসমূহ শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য বেতন-ভাতা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি প্রদান করে থাকে। এছাড়া নতুন নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন করে রাষ্ট্র শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে থাকে।
১৩. জনহিতকর কাজ সম্পাদন: বর্তমানে প্রায় সকল রাষ্ট্রই কৃষিঋণ প্রদান, খাল খনন, সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ, রাস্তাঘাট-সেতু নির্মাণ ও মেরামত, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস বিতরণ প্রভৃতি জনহিতকর কাজ করে থাকে। সুতরাং জনহিতকর কাজ সম্পাদনে আধুনিক রাষ্ট্রের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
১৪. সামাজিক নিরাপত্তা বিধান: আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ হলো সামাজিক নিরাপত্তা বিধান। সামাজিক উন্নয়নের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা অপরিহার্য। রাষ্ট্র বর্তমানে অবসরপ্রাপ্তদের অবসর ভাতা, কল্যাণ ভাতা, বিমা, দুস্থ ভাতা, বিধবা ভাতা, বেকার ভাতা, বয়স্ক ভাতা ইত্যাদি সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বহুবিধ কল্যাণকর কার্য বাস্তবায়ন করছে।
১৫. চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা: জনগণের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে এবং ব্যক্তিত্বের সুষ্ঠু বিকাশ সাধনে সুষ্ঠু ও আনন্দদায়ক চিত্তবিনোদনের ভূমিকা অপরিসীম। তাই আধুনিক রাষ্ট্রগুলো জনগণের চিত্তবিনোদনের জন্য ব্যায়ামাগার, খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, গ্রন্থাগার নির্মাণ এবং রেডিও-টেলিভিশনে আনন্দদায়ক অনুষ্ঠান প্রচার করে।
১৬. উৎপাদন বৃদ্ধি: আধুনিককালে রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকে। রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান, খামার ও কলকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তাই আধুনিককালে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক।
১৭. বিবিধ কার্যাবলি: উল্লিখিত কার্যাবলি ছাড়াও রাষ্ট্র বিবিধ কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। যেমন- বেকার সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ, দারিদ্র্য দূরীকরণার্থে ঋণদান, উচ্চশিক্ষা গ্রহণার্থে বৃত্তি প্রদানসহ বহু সেবামূলক কাজ করে থাকে।
উপসংহার:উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রাষ্ট্র হলো সার্বভৌম ক্ষমতার আধার ও প্রতীক। সমাজে নিরাপত্তা বিধান, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করা কেবল রাষ্ট্রীয় শক্তির দ্বারাই সম্ভব। ব্যক্তি ও সমাজের সার্বিক কল্যাণে যখন যা করা দরকার রাষ্ট্র তাই করে থাকে। আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্র জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের স্বার্থরক্ষার জন্য কাজ করে থাকে। জনগণের কল্যাণ ও সেবার জন্য রাষ্ট্রের চেয়ে অন্য কোনো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান নেই। আর বর্তমানে রাষ্ট্রের কার্যাবলি আরো বৃদ্ধি পাওয়ায় এর গুরুত্বও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে রাষ্ট্রের উপাদান সমূহ এবং এর গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই রাষ্ট্রর উপাদান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানা উচিত। সেইদিক বিবেচনা করেই যাচাইকৃত তথ্য দ্বারা এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে।আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে তার সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়েছেন।যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।
এছাড়াও আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো যেমন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী,বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।
কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url