ক্রিষ্টোফার কলম্বাসের জীবনী


ক্রিষ্টোফার কলম্বাসের নাম আমরা অনেকেই জানি । কিন্তু আমরা কি তার জীবনী সম্পর্কে ।চলুন জেনে নেই তার জীবনী সম্পর্কে।
ক্রিষ্টোফার কলম্বাসের জীবনী

ক্রিষ্টোফার কলম্বাস কত সালে জন্মগ্রহন করেন

ইটালীর জেনোয়া নগরের এক তাঁতী পরিবারে আনুমানিক ১৪৫১ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে অক্টোবর মে, ইতালির জেনোয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। ক্রিস্টোফার কলম্বাস/ Christopher Colombus (১৪৫১-১৫০৬ খ্রিষ্টাব্দ) ইতালীয় নাবিক এবং স্পেনের নৌআভিযাত্রী। তার পুরো নাম ছিল ল্যাটিন ভাষায়- ক্রিস্টোফোরাস কলোম্বাস।
আর জেনোয়ার স্থানীয় ভাষায় তার নাম ছিল ক্রিস্টোফ্ফা করোম্বো।তাঁর বাবা ডোমেনিকো কলম্বো ছিলেন মধ্যবিত্ত উল ব্যবসায়ী। মায়ের নাম ছিল সুজানা ফনটানারোজা। তিনি ৪বার দুৰসাহসিক সমুদ্র যাত্রা করে অনেকগুলো দ্বীপ আবিস্কার করেন।

দরিদ্র ঘরের সন্তান হওয়ায় শৈশবে তার পক্ষে আর লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি। ১৪৭৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জেনোয়ার বণিকদের সাথে লিসবন, ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডে যান এবং একজন চার্ট প্রস্তুত কারক হিসাবে লিসবনে বসবাস করতে থাকেন। ঐ সময়ে পর্তুগীজরা আফ্রিকা প্রদক্ষিণ করে ভারতে যাবার সমুদ্র পথ আবিষ্কারের জন্য জোড় প্রচেষ্টা চালাতে থাকে।

মূলত পর্তুগীজদের এই প্রচেষ্টাই কলম্বাসকে সমুদ্র অভিযানের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। প্রথমে পর্তুগালের রাজার কাছে সহযোগিতা চেয়ে ব্যর্থ হলে তিনি স্পেনে চলে যান। কিন্তু সেখানেও প্রথমে রাণী অস্বীকৃতি জানালেও পরবর্তীতে স্পেনের রাণী ইসাবেলা তাকে পূর্ব ভারতে যাবার সমুদ্রাভিযানে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

ক্রিষ্টোফার কলম্বাসের সংক্ষিপ্ত জীবনী

পিতার বাণিজ্যের সেই সূত্রে কলম্বাস জানতে পেরেছিলেন- প্রাচ্যের উৎকৃষ্ট পোশাক, নানা ধরনের মসলা ও বিপুল ধনসম্পদের কথা। তাই তিনি শৈশব থেকেই ভারতবর্ষে আসার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। এর ভিতরে দশ বছর বয়সে তিনি প্রথম সমুদ্রযাত্রায় যান তার ভাইয়ের সঙ্গে। ১৪৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন।
এই প্রতিষ্ঠানের কাজে বিভিন্ন সময় সমুদ্রযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
কলম্বাসের ভাই তখন লিসবন শহরে বাস করত। তাঁর ভাইয়ের আহ্বাবানে, ১৪৭৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি পর্তুগালের লিসবনে চলে যান। এখানে ভাইয়ের সহায়তায় তিনি একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কাজ পেয়ে যান।

এই সময় স্থানীয় গির্জায় তাঁর সাথে পরিচয় হয়েছিল ফেলিপা মোয়িস দ্য পেরেস্ত্রল্লো নামে এক তরুণীর। উল্লেখ্য, ফেলিপার বাবা বার্তলোমিউ ছিলেন সম্রাট হেনরির নৌবাহিনীর এক উচ্চপদস্থ অফিসার কিছুদিনের ভিতরে ফেলিপা'র সাথে তাঁর প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং শেষ পর্যন্ত বিবাহ হয়। বিবাহের পর কলম্বাস শ্বশুরের বাড়িতে থাকা শুরু করেন।

শ্বশুরের কাছে তাঁর প্রথম যৌবনের সমুদ্র অভিযানের সব কাহিনি শুনে, নৌ অভিযানে নতুনভাবে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেন। অবসর সময়ে তিনি দেশ-বিদেশের নানা ভ্রমণ কাহিনি পাঠ করা শুরু করেন। দেশ ভ্রমণের ইচ্ছা নিয়ে প্রথম তিনি সে যুগের বিখ্যাত ভূগোলবিদ পাগোলো টোস্ক্যানেল্লি (Pagolo Toscanelli) কে একটি চিঠি লেখেন।
পাগোলো এই চিঠি পড়ে, তাঁকে সমুদ্র ভ্রমণে উৎসাহিত করেন এবং তাঁর তৈরি করা একটি সমুদ্রপথের একটা নকশা পাঠান। তিনি এই সাথে আরও জানান যে, এই নকশা নির্ভুল নয়, কিন্তু সমুদ্র পথে প্রাচ্যে যেতে এই নকশা বেশ সহায়ক হবে।

এরপর তিনি গোপনে সমুদ্রযাত্রা প্রস্তুতি নিতে থাকেন। পরে এটা জানাজানি হয়ে গেলে, সকলে এটাকে অবাস্তব পরিকল্পনা হিসেবে উপহাস করা শুরু করেন। প্রথমে তিনি পর্তুগালে সরকারি কর্মকর্তাদের তাঁর অভিযানের কথা বললে, তাঁরাও তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন।

এই সময় তাঁর স্ত্রী ফেলিপা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। যথাসাধ্য চিকিৎসার পরও ফেলিপা মৃত্যুবরণ করেন। সংসারের বন্ধন কেটে যাওয়ার পর, তিনি পুনরায় আর্থিক সাহায্য চেয়ে পর্তুগালের ভাইসরয়কে জানালেন। কলম্বাসের পরিকল্পনা শুনে অলাভজনক বিবেচনা ভাইসরয় এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

এই সময় কলম্বাসের সাথে পরিচয় ঘটে ফাদার পিরেজের। ফাদার পিরেজ ছিলেন স্পেনের রাজপরিবারের অন্তরঙ্গ বন্ধু এবং রানি ইসাবেলা তাকে অত্যন্ত সম্মান করতেন। কলম্বাসের ইচ্ছার কথা ফাদার রানি ইসাবেলাকে জানান এবং কলম্বাসকে সাহায্য করার কথা উত্থাপন করেন। ফাদারের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারলেন না ইসাবেলা।

ফাদার পিরেজ, রানি ইসাবেলা এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ ব্যক্তবর্গের অনুরোধে সম্রাট কলম্বাসের অনুরোধ গ্রহণ করেন। ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই এপ্রিল, সম্রাট এবং কলম্বাসের মধ্যে চুক্তি হয়। এই চুক্তিতে বলা হয়- কলম্বাসকে নতুন দেশের শাসনভার দেয়া হবে এবং অর্জিত সম্পদের এক-দশমাংশ অর্থ তাঁকে দেয়া হবে।

সম্রাটের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পাওয়ার পর, কলম্বাস তিনটি জাহাজ তৈরি করেন। সবচেয়ে বড় জাহাজ সান্তামারিয়া ছিল ১০০ টনের। অপর দুটি জাহাজ ছিল পিন্টা ৫০ টন, নিনা ৪০ টন। এরপর মোট ৮৭ জন নাবিক নিয়ে, ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা আগস্ট কলম্বাস অজানা সমুদ্রের পথে যাত্রা করলেন।

দীর্ঘদিন চলার পরও তিনি কোনো ডাঙার সন্ধান পেলেন না। ফলে নাবিকরা একসাথে বিদ্রোহ করে, জাহাজ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। কলম্বাস নাবিকদের শেষ পর্যন্ত সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হন। ১২ই অক্টোবর রোডারিপো নামক একজন নাবিক স্থলের চিহ্ন দেখতে পান। ১৩ই অক্টোবর কলম্বাস বাহমা দ্বীপপুঞ্জের একটি অজানা দ্বীপে পৌঁছান।

পরবর্তীকালে তিনি সেই দ্বীপের নাম রেখেছিলেন সান সালভাদর। বর্তমান নাম ওয়েস্টলিং আইল্যান্ড। এই দিনটি আজও উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় কলম্বাস দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। কলম্বাস ভেবেছিলেন তিনি এশিয়ার কোনো নতুন অংশে এসে পৌঁছেছেন। যেখানে তিনি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোনো ধনসম্পদ পেলেন না।

এরপর কলম্বাস কিউবা এবং অন্যান্য দ্বীপে যান। এরপর সিদ্ধান্ত নেন যে, এখানে সাময়িক আস্তানা স্থাপন করে স্পেনে ফিরে যাবেন। এরপর আরো বহু লোক এনে ধনরত্বের অনুসন্ধান করবেন। তিনি একটি দ্বীপকে হিস্পানিওয়ালা নাম দেন এবং এই দ্বীপে ৪২ জন নাবিকের থাকার ব্যবস্থা করে, স্পেনে ফিরে যান।

নতুন দ্বীপে পৌঁছাবার প্রমাণস্বরূপ তিনি কিছু স্থানীয় আদিবাসীকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। কলম্বাস এদেরকে ইন্ডিয়ান নামে অভিহিত করেছিলেন। কারণ, তাঁর ধারণা ছিল, এই আদিবাসীরা ছিলেন পূর্বভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মানুষ।


শূন্য হাতে রাজ্য স্থাপনের কোনো অভিযোগ পাওয়া গেল না। এরপর তদন্তকারী দল কলম্বাসের বিরুদ্ধে নির্বুদ্ধিতার শুরু করলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল আরো পশ্চিমে যাবেন। পথে তুমুল ঝড় উঠল। নিরুপায় কলম্বাস আশ্রয় নিলেন এক অজানা দ্বীপে। এবারে কলম্বাস পৌঁছেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক দ্বীপে। সেখান থেকে তিনি যান জ্যামাইকা দ্বীপে।

এই সময় তাঁর দেহ ভেঙে পড়েছিল। অজানা রোগে তাঁর সঙ্গীদের অনেকেই মারা গিয়েছিলেন। ফলে, ১৫০৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্পেনে ফিরে আসেন।

ক্রিষ্টোফার কলম্বাসের প্রথম সমুদ্র যাত্রা

তিনটি জাহাজ নিয়ে কলম্বাস ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা আগস্ট পালোস বন্দর থেকে তার সমুদ্রাভিযান শুরু করেন। অপেক্ষাকৃত উত্তম আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে তারা যাত্রা শুরু করে ৯ই আগষ্ট ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছান। সেখান থেকে ৬ই সেপ্টেম্বর উত্তর-পূর্ব বাণিজ্য বায়ুর সহায়তায় জাহাজগুলো ক্রমাগত পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

কিন্তু দীর্ঘদিন জাহাজ চালিয়েও তারা কোন স্থলভাগ দেখতে না পেয়ে নাবিকরা আশাহত হয়ে বিদ্রোহ করে। কিন্তু কলম্বাসের দৃঢ়তায় তারা সন্তুষ্ট হয়ে জাহাজ চালনা অব্যাহত রাখে। এই সময় কিছু পাখি পশ্চিম দিকে উড়ে যেতে দেখলে জাহাজের গতিপথও সেদিকে পরিবর্তন করা হয়।

অবশেষে ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জ পরিত্যাগের প্রায় ৩৩ দিন পর ১১ অক্টোবর অতি প্রত্যুষে বাহামা দ্বীপপুঞ্জের বাইরের দ্বীপগুলোর মধ্যে একটি দ্বীপ তাদের দৃষ্টিগোচর হয়। কলম্বাস ভারতের খুব কাছাকাছি এসেছেন মনে করে দ্বীপগুলোর নাম দেন ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ। কিন্তু পরবর্তী কালে প্রমাণিত হয় এগুলো ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ নয়।

তবুও তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে দ্বীপগুলোর নামকরণ করা হয় 'পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ”।তিনি বাহামা দ্বীপপুঞ্জের গুয়ানাহানী নামক যে ক্ষুদ্র দ্বীপে অবতরণ করেন তার নাম রাখেন সান সালভেদর। সেখানে তিনি বাহামা দ্বীপপুঞ্জে ভ্রমণ অব্যাহত রেখে ২৮ শে অক্টোবর বিখ্যাত কিউবা দ্বীপে পৌঁছান।

তিনি কিউবা দ্বীপটিকে এশিয়ার মূল ভূখন্ডের অংশ হিসাবে মনে করেছিলেন। এরপর তিনি আধুনিক হাইতি দ্বীপে যাত্রা করেন এবং নাম দেন হিসপানিওয়ালা। অবশেষে ১৪৯৩ খ্রিষ্টাব্দে জানুয়ারী মাসে কলম্বাস দেশের দিকে যাত্রা করেন।

মার্চ মাসে তিনি যখন ফেরত আসেন, তখন স্পেনের রাজা ও রানী “গভর্নর ও সমুদ্রের এডমিরাল" হিসাবে সম্বোধন করে তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানান।

ক্রিষ্টোফার কলম্বাসের দ্বিতীয় সমুদ্র যাত্রা 

প্রথম সমুদ্র যাত্রায় অনেকগুলো দ্বীপ আবিষ্কার এবং পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মসল্লার দ্বীপগুলো সহজে পাওয়া যাবে এরূপ নিশ্চয়তার ফলে ১৪৯৩ সালের ২৫ শে সেপ্টেম্বর কার্ডিজ বন্দর থেকে দ্বিতীয় সমুদ্র যাত্রা শুরু করেন।

সেখান থেকে ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জ অতিক্রম করে অধিকতর দক্ষিণ পথে কিছুদূর অগ্রসর হয়ে সোজা পশ্চিম দিকে ক্রমাগত জাহাজ চালিয়ে প্রায় ১ মাস পর যে দ্বীপে উপনীত হন তার নাম দেন 'ডমিনিকা'। তিনি দ্বীপটির সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, দ্বীপটি পর্বত সঙ্কুল এবং সবুজের সমারোহ একেবারে সাগর পর্যন্ত নেমে এসেছে।

সেখান থেকে হিসপানিওয়ালা যাবার পথে আবিষ্কৃত হয় আরও কতিপয় দ্বীপ। এই দ্বীপগুলো ভ্রমনের পর জাহাজগুলো উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর মধ্য দিয়ে একটি নতুন শহরে পৌঁছে। কলম্বাস এর নাম দেন 'ইসাবেলা'। এই সময় জ্যামাইকা দ্বীপ আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু মসল্লার দ্বীপ বা স্বর্ণের দেখা পাওয়া সম্ভব না হওয়ায় অবশেষে ১৪৯৬ সালের মার্চ মাসে তাকে স্পেনে ফিরে যেতে হয়।

ক্রিষ্টোফার কলম্বাসের তৃতীয় সমুদ্রযাত্রা

কলম্বাস তৃতীয় সমুদ্রযাত্রা শুরু করেন ১৪৯৮ সালের ১৩ই মে এবং ৬টি জাহাজসহ তিনি প্রথম মাদিরা যান। সেখান থেকে ক্যানরী দ্বীপপুঞ্জ হয়ে ভার্ডি অন্তরীপে যান এবং ক্রমাগত পশ্চিম দিকে জাহাজ চালিয়ে ত্রিনিদাদ দ্বীপ আবিষ্কার করেন। এখান থেকে পশ্চিমে অনতি দূরে তিনি একটি বিস্তৃর্ণ ভূভাগ (দক্ষিণ-আমেরিকা) দেখতে পান।

এই সময় তিনি দক্ষিণ আমেরিকার মূল ভাগের উপকূলে 'পাথুরিয়া' অঞ্চলে উপনীত হন যাকে তিনি পৃথিবীর মনোরম দেশগুলোর একটি বলে অভিহিত করেছেন। পরবর্তীতে তিনি আরও অগ্রসর হয়ে তৃতীয় স্পেনীয় বসতি সান্টা ডোমিনগো তে যান। পরে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে বিভিন্ন অভিযোগে তাকে প্রায় বন্দী অবস্থায় স্পেনে ফিরে আসতে হয়।

ক্রিষ্টোফার কলম্বাসের চতুর্থ সমুদ্র যাত্রা

সম্পূর্ণ প্রায় নিজস্ব উদ্যোগে ১৫০২ খ্রিষ্টাব্দে ৯ই মে কার্ডিজ বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেন। তিনি ক্যানরী দ্বীপপুঞ্জ হয়ে মার্টিনিকের দিকে জাহাজ চালাতে থাকেন। হিসপানিওয়ালা তার জন্য নিষিদ্ধ থাকায় তিনি মধ্য আমেরিকার উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। কলম্বাস মধ্য আমেরিকাকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপদ্বীপ বলে মনে করতেন।

এই সময় তিনি হন্ডুরাস অন্তরীপের কাছাকাছি বর্তমানে পূর্ব কোস্টারিকা ও উত্তর পানামার অন্তর্গত বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান চালান। ঐ অঞ্চলের ভেরাগুয়ার উপকূল থেকে তিনি দক্ষিণ কিউবা হয়ে জ্যামাইকার উত্তর উপকূলে ফিরে আসেন। তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে হিসপানিওয়ালাতে এসে প্রায় ১ বছর কাটানোর পর ১৫০৪ খ্রিষ্টাব্দে হিসপানিওয়ালা থেকে আগত উদ্ধারকারী জাহাজে পূনরায় স্পেনে ফিরে আসেন।

কলম্বাসের আবিষ্কারের ভৌগোলিক গুরুত্ব

ভৌগোলিক জ্ঞান ও ধারণার বিকাশ
(১) কলম্বাসের আবিষ্কারের মাধ্যমে ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যবর্তী ভূখন্ড সম্পর্কে মানুষ প্রথম জানতে পারে। তার আগে উক্ত ভূখন্ড ও তথাকার অধিবাসী সম্পর্কে মানুষের কোন ধারণা ছিল না।

(২) কলম্বাস নিয়ত বায়ুপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতি, সমুদ্রস্রোত, উষ্ণ ও শীতল স্রোতের অবস্থান এবং শৈবাল সাগর সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন।

(৩) কলম্বাস তার আবিষ্কৃত দক্ষিণ আমেরিকা সহ নতুন ভূখন্ডগুলোর ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু সম্পর্কে সুন্দর ধারণা প্রদান করেছেন।

(৪) তার আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশ সম্পর্কে কাল্পনিক ধারণার অবসান ঘটে। মানচিত্রে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার অবস্থান দেখানো হয়।

(৫) হিসপানিওয়ালা সম্পর্কে বলেন, এখানে দ্বীপ, বন্দর, পর্বত ও নদী রয়েছে এবং এখানকার
সমারোহ একেবারে সাগর পর্যন্ত নেমে এসেছে। গাছগুলো অনেক লম্বা। অধিবাসীরা প্রায় সকলেই উলঙ্গ চলাফেরা করে।

(৬) ডোমিনিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, পর্বত শঙ্কুল এই দ্বীপটির সৌন্দর্য মনোরম এবং সবুজের

(৭) দক্ষিণ আমেরিকার মূল ভূখন্ডের কথা বলতে গিয়ে তিনি ওরিনোকো নদীর সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন।

(৮) কলম্বাস তার প্রথম ভ্রমণ শেষে স্পেনের রাজদরবারে তার আবিষ্কৃত অঞ্চলের, গাছপালা, জীব জম্ভর একটি সুন্দর বিবরণ প্রদান করেন। যার মাধ্যমে জীব ভূগোলে তার অবদানের স্বীকৃতি মেলে।

ক্রিষ্টোফার কলম্বাস কত সালে মৃত্যুবরণ করেন

১৫০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে মে ভ্যাসাডোলিড শহরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাকে ডেমিঙ্গোতে সমাধি দেয়া হয়।

আমেরিকা কে এবং কত সালে আবিষ্কার করেন

১৪৯২ সালে আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস। তিনি ছিলেন এক স্প্যানিশ নৌ-অভিযাত্রী। স্পেনের রানি তাঁকে ভারতের নৌপথ আবিষ্কারের জন্য নৌবহর আর অর্থকড়ি দিয়েছিলেন। সেই নৌবহর নিয়ে ভারতের নৌপথ আবিষ্কার করতে গিয়ে তিনি এক আস্ত অনাবিষ্কৃত মহাদেশেরই খোঁজ বের করেন।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে বিখ্যাত ক্রিস্টোফার কলম্বাস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন।

আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে ক্রিস্টোফার কলম্বাস সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করেছেন।যদি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এটি আপনার বন্ধুবান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন যাতে করে তারাও সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে।

আর এ পোষ্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই এটা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন।এছাড়াও আপনি যদি বিজ্ঞানভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞান মূলক, বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের জীবনী ও আবিষ্কার, বাংলাদেশের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কিত আর্টিকেল করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন

তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।কারণ এ ধরনের আর্টিকেল আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url