অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলতে কী বুঝায়
অর্থনৈতিক ববস্থা সম্পর্কে অনেকের জানার আগ্রহ আছে। কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্যর অভাবে জানা হয়না।সেদিক বিবেচনা করেই আজকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলতে কী বুঝায় এবং কত প্রকার ও কি কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা
মানুষ যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশের মধ্যে বসবাস করে তার দ্বারাই মানুষের সকল অর্থনৈতিক কার্যাবলি তথা উৎপাদন, ভোগ, বিনিময়, বণ্টন প্রভৃতির প্রকৃতি ও পদ্ধতি নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্যভাবে বলা যায়, সমাজে মানুষের সম্পত্তির অধিকার, উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন, ভোগ প্রভৃতি
বিষয়ে অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদনে যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেই প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত কাঠামোকে 'অর্থনৈতিক ব্যবস্থা' বলা হয়। সংক্ষেপে বলা যায়, মানুষ যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও বিধিব্যবস্থার মধ্যে, অর্থনৈতিক কার্যাবলি পরিচালনা করে তাকেই 'অর্থনৈতিক ব্যবস্থা' (Economic system) বলা হয়।
অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলতে কী বুঝায়
যে সকল প্রতিষ্ঠানগত কাঠামো ও অর্থনৈতিক পরিবেশের দ্বারা মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালিত হয় তাকে 'অর্থনৈতিক ব্যবস্থা' বলা হয়। অর্থনীতিবিদ জি. গ্রোসম্যান এর ভাষায় ("The set of institutions that characterizes a given economy comprises its economic system.")।আরো পড়ুনঃ
(২) উদ্যোগের স্বাধীনতাঃ ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ব্যক্তিগত উদ্যোগের স্বাধীনতা। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় প্রত্যেক ব্যক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভোগ করে। কি উৎপাদন করা হবে, কোথায় উৎপাদন করা হবে, কিভাবে উৎপাদন করা হবে প্রভৃতি বিষয়গুলো সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ইচ্ছাশক্তি
(৩) মুনাফা অর্জন: ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফা অর্জন। ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যেক উৎপাদনকারীর লক্ষ্য হলো সর্বাধিক মুনাফা অর্জন। যে ক্ষেত্রে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব উৎপাদনকারীরা সে ক্ষেত্রেই মূলধন বিনিয়োগ করে থাকে।
(৪) ভোক্তার সার্বভৌমত্ব: ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে প্রত্যেক ব্যক্তি ভোগের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভোগ করে। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের পছন্দমত দ্রব্যসামগ্রী ভোগ করতে পারে। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে ভোক্তার রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এ জন্য বলা হয় যে, ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে ১২ 'ভোগকারী সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী' (Consumers are sovereign)।
(৫) অবাধ প্রতিযোগিতা: ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির ভিত্তি হলো প্রতিযোগিতা। মুনাফা বৃদ্ধির জন্য উৎপাদনকারী সর্বাধুনিক উৎপাদন কৌশল ও যন্ত্র প্রচলনের দ্বারা ব্যয় হ্রাসের চেষ্টা করে। নড়৩০ কৌশল উৎপাদনকারীরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য নতুন উদ্ভাবন ও প্রয়োগের মাধ্যমে সবচেয়ে কম খরচে উৎপাদনের চেষ্টা করে।
(৬) ব্যক্তি স্বাধীনতা: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি স্বাধীনতা স্বীকৃত, এ অর্থব্যবস্থায় উৎপাদক, ক্রেতা বা ভোক্তা, বিক্রেতা সবাই ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করে। উৎপাদকতপাদক,তার ইচ্ছামত দ্রব্য উৎপাদন করে। এ ধরনের অর্থব্যবস্থায় ভোক্তারাই পছন্দ অনুযায়ী দ্রব্য ক্রয় করে, বিক্রেতা তার সুবিধামত বাজারে দ্রব্য সরবরাহ করে এবং শ্রমিক তার ইচ্ছামত স্বাধীনভাবে যেখানে খুশি সেখানে কাজ করতে পারে।
(৭) শ্রেণি বিভক্ত সমাজ : ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শ্রেণি বিভক্ত সমাজের অস্তিত্ব। সম্পদের মালিকানার ভিত্তিতে সমাজে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত প্রভৃতি বিভিন্ন শ্রেণির উদ্ভব হয়। ফলে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় গোটা সমাজ একটি শ্রেণি বিভক্ত সমাজে পরিণত হয়।
(৯) শ্রেণি শোষণ : ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শ্রেণি শোষণ। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় বেশি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে শ্রমিকদেরকে কম মজুরি প্রদানসহ বিভিন্নভাবে শোষণ করে।
(১০) স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা: ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে উৎপাদন ও বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ থাকে না।
(১) ভোগের ক্ষেত্রে : ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে ভোগের ক্ষেত্রে দাম ব্যবস্থার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ক্রেতা বা ভোক্তা কোন্ দ্রব্য কি পরিমাণ ক্রয় করবে তা নির্ভর করে বিভিন্ন দ্রব্যের দামের উপর। প্রত্যেক ভোক্তা বা ক্রেতার উদ্দেশ্য হলো তার সীমিত আয় দ্বারা সর্বাধিক তৃপ্তি লাভ করা।
(২) উৎপাদন ক্ষেত্রে: উৎপাদন ক্ষেত্রে দাম ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় প্রত্যেক উৎপাদনকারীর লক্ষ্য হলো সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করা। যে সব দ্রব্য উৎপাদন করে উৎপাদনকারীর মুনাফা বেশি হবে উৎপাদনকারী সে দ্রব্যই উৎপাদন করবে। আবার, মুনাফা নির্ভর করে দ্রব্যের দামের ওপর।
(৩) উৎপাদন পদ্ধতি নির্ধারণ: উৎপাদন পদ্ধতির ওপরও দাম ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। কোনো দ্রব্য উৎপাদনের একাধিক বিকল্প পদ্ধতি থাকতে পারে। তন্মধ্যে যে পদ্ধতিতে উৎপাদন করলে উৎপাদন ব্যয় সর্বনিম্ন হয় উৎপাদনকারী সে পদ্ধতিই অনুসরণ করে থাকে।
(৪) উপকরণের বিলিবণ্টন: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণসমূহ কোন্ ক্ষেত্রে কি পরিমাণে নিয়োগ করা হবে তাও দাম ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য উপকরণসমূহের কি দাম দেয়া হবে তা বিবেচনা করেই উপকরণ নিয়োগ করা হয়।
(৬) অর্থনৈতিক কল্যাণ সর্বোচ্চকরণ: অর্থনৈতিক কল্যাণ সর্বোচ্চকরণের ক্ষেত্রেও দাম ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে প্রত্যেক উৎপাদনকারীর লক্ষ্য হলো সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করা এবং প্রত্যেক ভোগকারীর লক্ষ্য হলো সর্বাধিক তৃপ্তি লাভ করা। অর্থনীতিবিদ্ বেনহাম বলেন,
আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে তার সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়েছেন।যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।
এছাড়াও আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো যেমন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী,বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।
কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কত প্রকার ও কি কি
বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। এগুলো হলো
নিম্নরূপ:
(১) ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা।
নিম্নরূপ:
(১) ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা।
(২) নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা।
(৩) মিশ্র অর্থব্যবস্থা।
(৪) ইসলামী অর্থব্যবস্থা।
(৩) মিশ্র অর্থব্যবস্থা।
(৪) ইসলামী অর্থব্যবস্থা।
ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা কাকে বলে
ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা হলো এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে উৎপাদনের উপকরণসমূহের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকে এবং মুনাফার ভিত্তিতে উৎপাদন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ক্রেতা বা ভোগকারীর পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে এবং ভোগকারীর ইচ্ছা ও রুচি অনুযায়ী উৎপাদন করা হয়।
ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার ভিত্তি হলো অবাধ প্রতিযোগিতা। ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নির্ধারিত হয়। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ থাকে না;
বরং একটি স্বয়ংক্রিয় মূল্য ব্যবস্থার মাধ্যমেই সবকিছু নির্ধারিত হয়। এ জন্য ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থাকে 'বাজার অর্থনীতি'ও (Market economy) বলা হয়।
(১) সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা : ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে জমি, কল-কারখানা, যন্ত্রপাতি ও উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকৃত থাকে।
ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ
ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:(১) সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা : ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে জমি, কল-কারখানা, যন্ত্রপাতি ও উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকৃত থাকে।
প্রত্যেক ব্যক্তি তার সম্পত্তির অবাধ ভোগ দখলউত্তরাধিকারের অধিকার ভোগ করে। ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভোগ দখল ও বৃদ্ধি করার অধিকারই হলো ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলির মূল চালিকা শক্তি।
(২) উদ্যোগের স্বাধীনতাঃ ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ব্যক্তিগত উদ্যোগের স্বাধীনতা। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় প্রত্যেক ব্যক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভোগ করে। কি উৎপাদন করা হবে, কোথায় উৎপাদন করা হবে, কিভাবে উৎপাদন করা হবে প্রভৃতি বিষয়গুলো সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ইচ্ছাশক্তি
দ্বারা চালিত হয়। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উদ্যোগ গ্রহণের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে বলে একে 'স্বাধীন উদ্যোগের অর্থনীতি' (Free enterprise economy) বলা হয়।
(৩) মুনাফা অর্জন: ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফা অর্জন। ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যেক উৎপাদনকারীর লক্ষ্য হলো সর্বাধিক মুনাফা অর্জন। যে ক্ষেত্রে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব উৎপাদনকারীরা সে ক্ষেত্রেই মূলধন বিনিয়োগ করে থাকে।
(৪) ভোক্তার সার্বভৌমত্ব: ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে প্রত্যেক ব্যক্তি ভোগের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভোগ করে। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের পছন্দমত দ্রব্যসামগ্রী ভোগ করতে পারে। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে ভোক্তার রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এ জন্য বলা হয় যে, ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে ১২ 'ভোগকারী সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী' (Consumers are sovereign)।
(৫) অবাধ প্রতিযোগিতা: ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির ভিত্তি হলো প্রতিযোগিতা। মুনাফা বৃদ্ধির জন্য উৎপাদনকারী সর্বাধুনিক উৎপাদন কৌশল ও যন্ত্র প্রচলনের দ্বারা ব্যয় হ্রাসের চেষ্টা করে। নড়৩০ কৌশল উৎপাদনকারীরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য নতুন উদ্ভাবন ও প্রয়োগের মাধ্যমে সবচেয়ে কম খরচে উৎপাদনের চেষ্টা করে।
(৬) ব্যক্তি স্বাধীনতা: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি স্বাধীনতা স্বীকৃত, এ অর্থব্যবস্থায় উৎপাদক, ক্রেতা বা ভোক্তা, বিক্রেতা সবাই ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করে। উৎপাদকতপাদক,তার ইচ্ছামত দ্রব্য উৎপাদন করে। এ ধরনের অর্থব্যবস্থায় ভোক্তারাই পছন্দ অনুযায়ী দ্রব্য ক্রয় করে, বিক্রেতা তার সুবিধামত বাজারে দ্রব্য সরবরাহ করে এবং শ্রমিক তার ইচ্ছামত স্বাধীনভাবে যেখানে খুশি সেখানে কাজ করতে পারে।
(৭) শ্রেণি বিভক্ত সমাজ : ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শ্রেণি বিভক্ত সমাজের অস্তিত্ব। সম্পদের মালিকানার ভিত্তিতে সমাজে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত প্রভৃতি বিভিন্ন শ্রেণির উদ্ভব হয়। ফলে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় গোটা সমাজ একটি শ্রেণি বিভক্ত সমাজে পরিণত হয়।
(৮) আয় বণ্টনে অসমতা : ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আয়-বৈষম্য।
• ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা-বিদ্যমান থাকায় সমাজে আয়- কুণ্টনে অসমতা দেখা দেয়। দেশের সম্পদের বেশির ভাগই মুষ্টিমেয় পুঁজিপতির হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। ফলে সমাজে ব্যাপক আয়-বৈষম্য ৰিৱাজ করে।
(৯) শ্রেণি শোষণ : ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শ্রেণি শোষণ। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় বেশি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে শ্রমিকদেরকে কম মজুরি প্রদানসহ বিভিন্নভাবে শোষণ করে।
শ্রেণিগতভাবে দুর্বল হওয়ায় শ্রমিকরা দর-কষাকষির মাধ্যমে পুঁজিপতিদের নিকট থেকে ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা আদায় ক্রতে পারে না। ফলে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় শ্রেণি শোষণ ও শ্রেণি সংঘাত বিরাজ করে।
(১০) স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা: ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে উৎপাদন ও বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ থাকে না।
বাজারে কোনো পণ্যের দাম, চাহিদা ও যোগানের ঘাত-প্রতিঘাত আপনা-আপনি নির্ধারিত হয়ে থাকে। দাম নির্ধারণের এ পদ্ধতি হলো একটি 'স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা'। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে এই 'স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার' মাধ্যমেই সমাজের উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগ নিয়ন্ত্রিত হয়।
সংক্ষেপে বলা যায়, সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা, উদ্যোগের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জন, ভোক্তার সার্বভৌমত্ব, অবাধ প্রতিযোগিতা, সমাজের শ্রেণি বিভক্তি, আয়-বণ্টনে অসমতা, স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা-এগুলোই হলো ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য।
দাম ব্যবস্থা কি
'দাম ব্যবস্থা' (Price system) হলো এমন একটি অর্থনৈতিক পদ্ধতি যা দ্বারা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সমাজের উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ, বিনিয়োগ তথা সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় প্রত্যেক ব্যক্তি স্বাধীনভাবে অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে।কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী অর্থনৈতিক কার্যাবলি পরিচালিত হলেও ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থাকে 'শৃঙ্খলাবিহীন' বলা যায় না। কারণ, ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় বিভিন্ন ব্যক্তির স্বাধীন আচরণ ও কর্মকাণ্ড এক 'অদৃশ্য হস্ত' (Invisible hand) দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
অর্থনীতিবিদ এ্যাডাম স্মিথ এর ভাষায়, "ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় যে 'অদৃশ্য হস্ত' বিভিন্ন ব্যক্তির কর্মপ্রচেষ্টাকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করে তাকে 'দাম-প্রক্রিয়া' বলা হয়।" এই প্রক্রিয়ায় বাজারে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রীর দাম, উহার চাহিদা ও যোগানের ঘাত-প্রতিঘাতে আপনা-আপনি নির্ধারিত হয় এবং দ্রব্যের দামের কম-বেশির ফলে উৎপাদন,
বণ্টন, ভোগ ও বিনিয়োগ পরিচালিত হয়। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় কোন্ কোন্ দ্রব্য উৎপন্ন হবে, কতটুকু উৎপন্ন হবে, কিভাবে উৎপন্ন হবে, কে কতটুকু ভোগ করবে ইত্যাদি সব কিছুই স্বয়ংক্রিয় দাম-ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ ও বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণকারী-এই অদৃশ্য শক্তিকেই 'দাম ব্যবস্থা' (Price system) বলা হয়।
ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে দাম ব্যবস্থার ভূমিকা
ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে দাম ব্যবস্থা এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় কোন্ দ্রব্য উৎপন্ন হবে, কতটুকু উৎপন্ন হবে, কিভাবে উৎপন্ন হবে, কিভাবে তা বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে বণ্টিত হবে ইত্যাদি সব কিছুই দাম ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।এ দাম ব্যবস্থা হলো একটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি। এ স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা কিভাবে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন ও ভোগের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
(১) ভোগের ক্ষেত্রে : ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে ভোগের ক্ষেত্রে দাম ব্যবস্থার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ক্রেতা বা ভোক্তা কোন্ দ্রব্য কি পরিমাণ ক্রয় করবে তা নির্ভর করে বিভিন্ন দ্রব্যের দামের উপর। প্রত্যেক ভোক্তা বা ক্রেতার উদ্দেশ্য হলো তার সীমিত আয় দ্বারা সর্বাধিক তৃপ্তি লাভ করা।
এ জন্য ক্রেতা কোনো দ্রব্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে যখন দ্রব্যের দামের সমান উপযোগ লাভ করে তখনই সে ঐ দ্রব্য ক্রয় করে থাকে। সুতরাং ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে ক্রেতা বা ভোক্তা কোন্ দ্রব্য কি পরিমাণ ক্রয় করবে তা দাম ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে।
(২) উৎপাদন ক্ষেত্রে: উৎপাদন ক্ষেত্রে দাম ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় প্রত্যেক উৎপাদনকারীর লক্ষ্য হলো সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করা। যে সব দ্রব্য উৎপাদন করে উৎপাদনকারীর মুনাফা বেশি হবে উৎপাদনকারী সে দ্রব্যই উৎপাদন করবে। আবার, মুনাফা নির্ভর করে দ্রব্যের দামের ওপর।
দাম বেশি হলে মুনাফাও বেশি হবে। সুতরাং উৎপাদনকারী কোন্ দ্রব্য কি পরিমাণ উৎপাদন করবে তা দ্রব্যের দামের ওপর নির্ভর করেই সিদ্ধান্ত নেয়।
(৩) উৎপাদন পদ্ধতি নির্ধারণ: উৎপাদন পদ্ধতির ওপরও দাম ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। কোনো দ্রব্য উৎপাদনের একাধিক বিকল্প পদ্ধতি থাকতে পারে। তন্মধ্যে যে পদ্ধতিতে উৎপাদন করলে উৎপাদন ব্যয় সর্বনিম্ন হয় উৎপাদনকারী সে পদ্ধতিই অনুসরণ করে থাকে।
যে সব উপকরণের আপেক্ষিক মূল্য কম সে সব উপকরণ অধিক হারে ব্যবহার করলে উৎপাদন ব্যয় ন্যূনতম হবে এবং মুনাফা সর্বাধিক হবে। উৎপাদনকারী মুনাফা সর্বোচ্চকরণের লক্ষ্যে ন্যূনতম ব্যয় সম্পন্ন পদ্ধতিই অনুসরণ করবে। এভাবে দাম ব্যবস্থা উৎপাদন পদ্ধতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(৪) উপকরণের বিলিবণ্টন: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণসমূহ কোন্ ক্ষেত্রে কি পরিমাণে নিয়োগ করা হবে তাও দাম ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য উপকরণসমূহের কি দাম দেয়া হবে তা বিবেচনা করেই উপকরণ নিয়োগ করা হয়।
যেমন-যে শিল্পে শ্রমের জন্য বেশি দাম দেওয়া হয়, সেই শিল্পে শ্রমিকের নিয়োগ বেশি হবে; যে শিল্পে জমির দাম বেশি দেয়া হয়, সেই শিল্পে জমির বিনিয়োগ বেশি হবে। এভাবে দাম ব্যবস্থার মাধ্যমে উৎপাদনের উপকরণসমূহের কাম্য বিলিবণ্টন ঘটে।
(৫) আয় বণ্টনের ক্ষেত্রে: ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে আয় বণ্টনের ক্ষেত্রেও দাম ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় 'আয়ের প্রবাহ' (Income flow) চক্রাকারে আবর্তিত হয়। উৎপাদনকারীরা উৎপাদন ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদান নিয়োগ করে যে সব দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করে তা
বিক্রয় করে যে দাম বা আয় পায় তা আবার উপাদান দাম হিসেবে ভোগকারীদের হাতে যায়। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে দাম ব্যবস্থার মাধ্যমেই উৎপাদনকারীদের আয় ও ভোগকারীদের আয়ের মধ্যে
যোগসূত্র স্থাপিত হয়।
যোগসূত্র স্থাপিত হয়।
(৬) অর্থনৈতিক কল্যাণ সর্বোচ্চকরণ: অর্থনৈতিক কল্যাণ সর্বোচ্চকরণের ক্ষেত্রেও দাম ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে প্রত্যেক উৎপাদনকারীর লক্ষ্য হলো সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করা এবং প্রত্যেক ভোগকারীর লক্ষ্য হলো সর্বাধিক তৃপ্তি লাভ করা। অর্থনীতিবিদ্ বেনহাম বলেন,
"দাম ব্যবস্থাই উৎপাদনকারীর মুনাফা অর্জনের বাসনা এবং ভোগকারীর সর্বাধিক উপযোগ লাভের বাসনার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। এভাবে উৎপাদনকারীদের সর্বাধিক মুনাফা অর্জন ও ভোগকারীদের সর্বোচ্চ উপযোগ লাভের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং সমাজের সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক কল্যাণ অর্জনে দাম ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপসংহারে বলা যায়, ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সমাজের যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দাম ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। দাম ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজের আপাতবিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে সমন্বয় সাধিত হয় এবং সমগ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটি একটি সুনির্দিষ্ট ধারায় পরিচালিত হয়। এ কারণে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে দাম ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে অর্থনৈতিক অর্থব্যবস্থাত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।বর্তমানে এর ব্যাপ্তি অনেক তাই এই সম্পর্কে জানা খুব জরুরি। সেইদিক বিবেচনা করেই যাচাইকৃত তথ্য দ্বারা এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে।আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে তার সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়েছেন।যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।
এছাড়াও আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো যেমন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী,বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।
কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url