মিশ্র অর্থনীতি কাকে বলে

বিভিন্ন রকমের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আছে তার মদ্ধে 'মিশ্র অর্থনীতি' এবং 'ইসলামী অর্থনীতি' সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক 'মিশ্র অর্থনীতি' এবং 'ইসলামী অর্থনীতি' কাকে বলে ও কত প্রকার ও কি কি
মিশ্র অর্থনীতি কাকে বলে

ভুমিকা

'মিশ্র অর্থনীতি' বলতে এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বুঝায় যেখানে সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রীয় মালিকানা উভয়ই স্বীকৃত। মিশ্র অর্থনীতিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ পাশাপাশি অবস্থান করে। ধনতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের একটি সংমিশ্রিত রূপই হলো মিশ্র অর্থনীতি।

মিশ্র অর্থব্যবস্থায় ধনতন্ত্রের ন্যায় সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা ও মুনাফা অর্জন এবং ব্যক্তি উদ্যোগের স্বাধীনতা থাকে, আবার, জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক খাতসমূহ এবং কিছু কিছু বৃহৎ ও মৌলিক শিল্পের পর রাষ্ট্রীয় মালিকানা বজায় থাকে।

মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একদিকে ব্যক্তিগত মালিকানা ও উদ্যোগের স্বাধীনতা থাকে এবং অন্যদিকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কার্যাবলি সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হয়।

মিশ্র অর্থনীতি কাকে বলে

অর্থনীতিবিদ স্যামুয়েলসন বলেন, "মিশ্র অর্থনীতি বলতে এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বুঝায় যেখানে উৎপাদন ও ভোগকার্য সংগঠিত করার ক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থার সাথে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সংমিশ্রণ ঘটে।"
আরো পড়ুনঃ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলতে কী বুঝায়
সংক্ষেপে বলা যায়, ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সংমিশ্রণে যে অর্থব্যবস্থা গড়ে ওঠে তাকে 'মিশ্র অর্থনীতি' (Mixed Economy) বলা হয়। মিশ্র অর্থব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের উদ্যোগই পাশাপাশি বিরাজ করে। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশে মিশ্র অর্থব্যবস্থা চালু রয়েছে।

মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ

মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

(১) সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা: মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সম্পত্তি ও উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকৃত। ধনতন্ত্রের মত মিশ্র অর্থব্যবস্থায় প্রত্যেক ব্যক্তি সম্পত্তি
ভোগ-দখল ও হস্তান্তর করতে পারে।

তবে বিশেষ বিশেষ সম্পত্তির ক্ষেত্রে যেমন কৃষি জমি ও শহরের আবাসিক জমি প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনেক সময় ব্যক্তিগত মালিকানার ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
(২) সরকারি খাত: মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় জনগুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহে সরকারি উদ্যোগে বিনিয়োগ পরিচালিত হয়। দেশের মৌলিক ও ভারী শিল্প, জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত এবং জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারি মালিকানায় ও নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়।

(৩) বেসরকারি খাত : মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হয়। তবে বেসরকারি বিনিয়োগের উপর সরকারের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে।

(৪) সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সহ-অবস্থান : মিশ্র অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সহ-অবস্থান। মিশ্র অর্থনীতিতে একদিকে যেমন কিছু কিছু খাত সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হয় তেমনি কিছু কিছু খাত বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হয়।

মিশ্র অর্থনীতিতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতই অর্থনীতিতে পরস্পরের সহযোগিতার ভিত্তিতে পাশাপাশি বিরাজ করে।

(৫) মিশ্র অর্থব্যস্থায় দাম ব্যবস্থার কার্যকারিতা: মিশ্র অর্থব্যবস্থায় দাম ব্যবস্থা কার্যকর থাকে। তবে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মত মিশ্র অর্থব্যবস্থায় দাম ব্যবস্থা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে না।

মিশ্র অর্থব্যবস্থায় অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে উৎপাদন ও ভোগ নিয়ন্ত্রণ হয়। এজন্য ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার তুলনায় মিশ্র অর্থব্যবস্থায় দাম ব্যবস্থার ভূমিকা অপেক্ষাকৃত কম।

(৬) ভোক্তার সার্বভৌমত্ব: মিশ্র অর্থনীতিতে ভোক্তার সার্বভৌমত্ব বজায় থাকে। ভোক্তার পছন্দের প্রতি লক্ষ্য রেখেই দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদিত হয় এবং ভোক্তা তার রুচি ও পছন্দমত দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় ও ভোগ করতে পারে। তবে সরকার প্রয়োজনবোধে কোনো দ্রব্যের উৎপাদন ও ভোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

(৭) মুনাফার উপস্থিতি : মিশ্র অর্থনীতিতে ধনতন্ত্রের ন্যায় ব্যক্তিগত মুনাফার অস্তিত্ব স্বীকৃত। বেসরকারি উদ্যোগ মুনাফার ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে মিশ্র অর্থনীতিতে মুনাফার অস্তিত্ব স্বীকার করা হলেও সরকার জনস্বার্থে দাম ও মুনাফা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

(৮) অর্থনৈতিক পরিকল্পনা: মিশ্র অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অস্তিত্ব বিদ্যমান। মিশ্র অর্থনীতিতে জাতীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। পরিকল্পনা সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কোন্ খাতে কি পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে তার উল্লেখ থাকে।

এ পরিকল্পনার মাধ্যমে সরকারি খাতের কার্যাবলি প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং বেসরকারি খাতের কর্মকাণ্ড পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

৯) ব্যক্তি স্বাধীনতা: মিশ্র অর্থনীতিতে পেশা নির্বাচন ও অর্থনৈতিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তি পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে। ব্যক্তির রুচি ও ইচ্ছা অনুযায়ী উৎপাদন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। মিশ্র অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি তার স্বকীয় সত্ত্বা নিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে।

(১০) শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ: মিশ্র অর্থনীতিতে সরকার শ্রমিক শ্রেণিকে শোষণের হাত থেকে
রক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ও কাজের সময় নির্ধারণ, শিল্প বিরোধের নিষ্পত্তি প্রভৃতি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সরকার শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে থাকে।

(১১) সামাজিক নিয়ন্ত্রণ: মিশ্র অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো বেসরকারি অর্থনৈতিক
কার্যাবলির উপর 'সামাজিক নিয়ন্ত্রণ' (Social control) বজায় থাকে। সরকার প্রয়োজনবোধে বেসরকারি উদ্যোগের ক্ষেত্র জাতীয়করণ করে সরাসরি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে অথবা সরকারি বাঁধা-নিষেধ আরোপের মাধ্যমে বেসরকারি উদ্যোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

সুতরাং মিশ্র অর্থনীতিতে একদিকে যেমন ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার ন্যায় সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা, বেসরকারি বিনিয়োগ, স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা এবং মুনাফার উপস্থিতি থাকে। তেমনি অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার ন্যায় সরকারি বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, সামাজিক নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে।

মিশ্র অর্থনীতিতে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার গুণাবলির সাথে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির গুণাবলির সার্থক সংমিশ্রণ ঘটে। এটাই হলো মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য।

ইসলামী অর্থনীতি কাকে বলে

ইসলাম মানব জাতির জন্য একটি শাশ্বত ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আর ইসলামী অর্থনীতি হলো এই জীবন ব্যবস্থারই একটি অংশ। ইসলামী জীবনবোধ থেকেই ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উৎপত্তি।
বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ ইসলামী অর্থনীতির সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।

"ইসলামী অর্থনীতি হলো এমন একটি সমাজবিজ্ঞান যা ইসলামের ড. এম. এ. মান্নান বলেন, আলোকে জনগণের অর্থনৈতিক সমস্যাবলি আলোচনা করে।" বিশিষ্ট ইসলামী অর্থনীতিবিদ ড. মনজের কাফ এর মতে,

"ইসলামী অর্থনীতি বলতে ঐ অর্থনীতিকে বুঝায় যেখানে ইসলামী আইন ও প্রতিষ্ঠানসমূহ অস্তিত্বশীল থাকে এবং যেখানে অধিকাংশ মানুষ ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী এবং এ বিশ্বাস অনুযায়ী জীবনযাপন করে।"

অর্থনীতিবিদ ড. সাবাহ ইলদিন জাইমের মতে, "ইসলামী অর্থনীতি বলতে ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা ও তাঁর আচরণের সুসংবদ্ধ বিশ্লেষণ ও অধ্যয়নকে বুঝায়।" এভাবে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ ইসলামী অর্থনীতির বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।

সংক্ষেপে বলা যায়, পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ তথা-ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাকেই 'ইসলামী অর্থনীতি' বলা হয়।

ইসলামী অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য

ইসলামী অর্থনীতির প্রধান বৈশষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:
(১) ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক পরিচালিত: ইসলামী অর্থনীতি এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যা ইসলামী শরীয়তের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে থাকে। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ হলো ইসলামী অর্থনীতির মূল উৎস। ইসলামী অর্থনীতিতে কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত পথেই যাবতীয় অর্থনৈতিক কার্যাবলি পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।

(২) সম্পদের মালিকানা: ইসলামী অর্থনীতিতে সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকৃত। তবে এ মালিকানা চূড়ান্ত নয়। ইসলামের যাবতীয় সম্পদের চূড়ান্ত মালিক হচ্ছে মহান আল্লাহতালা। মানুষ হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্ট এ সব ধন সম্পদের আমানতদার মাত্র। তাই ইসলামী অর্থনীতিতে সম্পদের আমানতকারী মালিকানা স্বীকার করে নেয়া হয়।

(৩) সুদমুক্ত অর্থনীতি: ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সুদবিহীন অর্থব্যবস্থা। 'সুদ' বা 'রিবা' বলতে কোনো পরিশ্রম না করে অর্থ শোষণ করা এবং লোকের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে বা ক্রয়বিক্রয়ের সময় ফাঁকি দিয়ে অর্থনৈতিক সুবিধা আদায় করাকে বুঝায়।

মানুষের অভাব বা অসহায়তার সুযোগ নিয়ে শোষণ করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। তাই ইসলামী অর্থব্যবস্থায়ব্যবসাকে 'হালাল' করা হয়েছে। কিন্তু সুদকে 'হারাম' ঘোষণা করা হয়েছে।

(৪) ভোক্তার নিয়ন্ত্রিত সার্বভৌমত্ব: ইসলামী অর্থনীতিতে ভোক্তার সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত; তবে তা অনিয়ন্ত্রিত নয়। ইসলামে অনেক পণ্য ও আয়কে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো ভোক্তাই হারাম পণ্য ভোগ করতে পারে না। তা ছাড়া, ইসলামে অপচয় ও অপব্যয় সমর্থন করা হয় না। তাই সামাজিক কল্যাণের স্বার্থে ইসলামী অর্থনীতিতে ভোক্তার সার্বভৌমত্ব আংশিক নিয়ন্ত্রিত।

(৫) উদ্যোক্তার সার্বভৌমত্ব: ইসলামী অর্থনীতিতে উদ্যোক্তার সার্বভৌমত্ব স্বীকার করা হয়। তবে রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো পণ্য উৎপাদনে উদ্যোক্তাকে নিবৃত্ত করা হয়।

(৬) শ্রমের মর্যাদা:ইসলামী অর্থনীতিতে শ্রমের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এবং শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মহানবী (স.) বলেছেন, শ্রমিকের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বেই তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও। অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন 'সেরা উপার্জন হচ্ছে কর্মীর হাতে (শ্রমের) উপার্জন যখন সে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে।'

(৭) নৈতিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ: ইসলামী অর্থনীতির সাথে নৈতিক মূল্যবোধ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে কোনো উৎপাদন ও ভোগ সমর্থন করা হয় না। এ জন্য ইসলামী অর্থনীতিতে মদ, জুয়া, ঘুষ, মজুতদারি, চোরাকারবারি, কালোবাজারি প্রভৃতি সমাজ বিরোধী ও নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে

(৮) সম্পদের ন্যায্য বণ্টন: ইসলামী অর্থনীতিতে সম্পদের ন্যায্য বণ্টনের ব্যবস্থা রয়েছে। মহান
আল্লাহ বলেন, "সম্পদ যেন মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হাতে কেন্দ্রীভূত না হয়" (আল-কুরআন)। এ জন্য ইসলামী অর্থব্যবস্থায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ জমা না রেখে বরং তা নিঃস্ব ও গরিবদের মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইসলামে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক অসমতা দূরীকরণের লক্ষ্যে যাকাত, ছদকা, ফেতরা প্রভৃতির মাধ্যমে ধনীদের বাড়তি সম্পদ গরিবদের মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

(৯) সম্পদ পুঞ্জিভূত করে না রাখা: ইসলামী অথ তিতে সম্পদ এককেন্দ্রিক ও পুঞ্জিভূত করে রাখাকে নিষেধ করা হয়েছে। ইসলামের অন্যতম বিধান লা বৈধ উপায়ে যে ধন-সম্পদ উপার্জন করা হবে তা সঞ্চয় করে পুঞ্জিভূত করে রাখা যাবে না। কারণ এর ফলে ধন-সম্পদের আবর্তন রুদ্ধ হয় এবং সম্পদের সুষম বণ্টন ব্যাহত হয়।

এ জন্য ইসলামী অর্থব্যবস্থায় সঞ্চয়ের মাধ্যমে সম্পদ পুঞ্জিভূত করার পরিবর্তে সম্পদের আবর্তনের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

(১০) সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা: ইসলামী অর্থনীতিতে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ইসলামী অর্থব্যবস্থায় ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ন্যায্য অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। এর ফলে ইসলামী অর্থ ব্যবস্থায় সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।

(১১) যাকাত ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা: ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো যাকাত ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা। ইসলামী বিধান অনুযায়ী 'নেছাব' পরিমাণ বা তার অধিক অর্থ-সম্পদ কারো কাছে এক বছর জমা থাকলে তাকে নির্দিষ্ট হারে যাকাত প্রদান করতে হয়।

যাকাত প্রদান সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিদের জন্য 'ফরজ' এবং অসহায় ও দুঃস্থ ব্যক্তিদের জন্য যাকাতের অর্থ প্রাপ্তি একটি অধিকার।যাকাতের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস পায় এবং সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় থাকে।

(১২) বায়তুল মাল: ইসলামী অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো 'বায়তুল মাল' বা সরকারি অর্থ তহবিল গঠন। ইসলামী অর্থব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় আয়ের একটি অংশ বায়তুল মালে জমা রাখা হয়। দেশের যে কোনো অসহায় ব্যক্তির বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে এ তহবিল থেকে অর্থের যোগান দেয়া হয়।

উপসংহার:সংক্ষেপে বলা যায়, ইসলামী অর্থনীতি একটি আদর্শ ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা। ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে অর্থব্যবস্থা পরিচালনা করাই হলো ইসলামী অর্থনীতির মূল বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে এবং ইসলামী শরীয়তের ভিত্তিতে মানুষের সকল অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে অর্থনৈতিক অর্থব্যবস্থাত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।বর্তমানে এর ব্যাপ্তি অনেক তাই এই সম্পর্কে জানা খুব জরুরি। সেইদিক বিবেচনা করেই যাচাইকৃত তথ্য দ্বারা এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে।

আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে তার সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়েছেন।যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।

এছাড়াও আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো যেমন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী,বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।

কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url