নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা কাকে বলে
নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা কাকে বলে এবং এর বৈশিষ্ট গুলো কি কি তা জানার জন্য নিম্নের আর্টিকেল টি সম্পুর্ন পড়ার অনুরোদ রইলো।
ভূমিকা
নির্দেশমূলক অর্থনীতি' (Command economy) হলো এমন এক ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। এ ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একটি 'কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ' (Central planning) থাকে।এ কর্তৃপক্ষের আদেশে বা নির্দেশেই সমাজে সব ধরনের অর্থনৈতিক কার্যাবলি পরিচালিত হয়। নির্দেশমূলক অর্থনীতিতে সম্পদের ওপর কোনো ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না। দেশের যাবতীয় উৎপাদনের উপকরণের মালিকানা রাষ্ট্রের হাতে ন্যস্ত থাকে।
রাষ্ট্রের পক্ষে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ পণ্যসামগ্রীর উৎপাদন, ভোগ, বণ্টনসহ যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে। দেশের সম্পদের ওপর কোনো ব্যক্তিগত মালিকানা বা কর্তৃত্ব থাকে না। কোনো ব্যক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী উৎপাদন, বণ্টন বা ভোগ পরিচালিত হয় না। রাষ্ট্রই হলো উৎপাদনের সকল উপকরণের মালিক।
এ ধরনের অর্থব্যবস্থায় প্রত্যেক ব্যক্তি তার সামর্থ্য বা যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করে এবং কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক পায়। নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থাকে 'সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি' (Socialistic economy) বা 'পরিকল্পিত অর্থনীতি'ও (Planned economy) বলা হয়।
(১) রাষ্ট্রীয় মালিকানা: নির্দেশমূলক অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানার অবসান।
নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা কাকে বলে
সংক্ষেপে বলা যায়, যে অর্থব্যবস্থায় সম্পদের ওপর কোনো ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না বা ব্যক্তির ইচ্ছামত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় না; বরং দেশের সকল সম্পদের মালিকানা রাষ্ট্রের হাতে থাকে এবং একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় তাকে 'নির্দেশমূলক' বা 'আদেশমূলক' অর্থব্যবস্থা (Command economy) বলা হয়।নির্দেশমূলক বা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ
নির্দেশমূলক বা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার কতকগুলো মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:(১) রাষ্ট্রীয় মালিকানা: নির্দেশমূলক অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানার অবসান।
কল-কারখানা, জমি এবং উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণের উপর কোনো ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না। দেশের সকল সম্পদ এবং উৎপাদনের উপকরণসমূহের উপর সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের জনগণ বা রাষ্ট্রই হলো সকল সম্পদের মালিক।
(২) ব্যক্তিগত মুনাফার অনুপস্থিতি: নির্দেশমূলক অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ব্যক্তিগত মুনাফার অবসান। সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানাই ব্যক্তিগত মুনাফার সুযোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা না থাকায় ব্যক্তিগত মুনাফার কোনো সুযোগ নেই।
(৩) সামাজিক কল্যাণ: নির্দেশমূলক অর্থনীতিতে দেশের উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা সামাজিক কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখেই পরিচালিত হয়। ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জন হলো উৎপাদনকারীর মূল লক্ষ্য। কিন্তু নির্দেশমূলক অর্থ ব্যবস্থায় সর্বাধিক সামাজিক কল্যাণ সাধন করাই হলো উৎপাদনের মূল লক্ষ্য।
(৪) অর্থনৈতিক পরিকল্পনা: নির্দেশমূলক অর্থনীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। নির্দেশমূলক অর্থ ব্যবস্থায় একটি 'কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ' (Central Planning Authority) থাকে। কোন্ দ্রব্য কি পরিমাণে উৎপাদিত হবে, কখন উৎপাদিত হবে, কিভাবে উৎপাদিত হবে এবং কিভাবে তা বণ্টিত হবে ইত্যাদি
সব কিছুই কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত হয়। এ জন্য নির্দেশমূলক অর্থনীতিকে পরিকল্পিত অর্থব্যবস্থাও বলা হয়।
(৪) অর্থনৈতিক পরিকল্পনা: নির্দেশমূলক অর্থনীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। নির্দেশমূলক অর্থ ব্যবস্থায় একটি 'কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ' (Central Planning Authority) থাকে।
(৪) অর্থনৈতিক পরিকল্পনা: নির্দেশমূলক অর্থনীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। নির্দেশমূলক অর্থ ব্যবস্থায় একটি 'কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ' (Central Planning Authority) থাকে।
কোন্ দ্রব্য কি পরিমাণে উৎপাদিত হবে, কখন উৎপাদিত হবে, কিভাবে উৎপাদিত হবে এবং কিভাবে তা বণ্টিত হবে ইত্যাদি সব কিছুই কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত হয়। এ জন্য নির্দেশমূলক অর্থনীতিকে পরিকল্পিত অর্থব্যবস্থাও বলা হয়।
(৫) উৎপাদন পদ্ধতি: নির্দেশমূলক অর্থনীতি বা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন ব্যবস্থা অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় (Command economy) উৎপাদনের উপকরণের উপর কোন ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না।
উৎপাদনের সকল উপকরণের উপর সামাজিক মালিকানা বা রাষ্ট্রীয় মালিকানা বজায় থাকে। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকায় মুনাফার উদ্দেশ্যেই উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে। কিন্তু নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় সকল উৎপাদন কার্যক্রম সরাসরি সরকার বা রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়।
নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় সামাজিক প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখেই উৎপাদন কাজ পরিচালিত হয়। কোন অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন বা কোন অদৃশ্য শক্তির কারসাজি উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। সব মিলিয়ে নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় জনকল্যাণমুখী ও নিরাপদ উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
(৬) বণ্টন পদ্ধতি : নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় বা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সুষম বণ্টন ব্যবস্থা। নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় বণ্টনের মূল নীতি হল প্রত্যেকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করবে এবং কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাবে।" (From each according to his ability to each according to his works)।
এজন্য নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় শোষণের কোন সুযোগ নেই নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় সমাজের আয় ও সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয় এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।
(৭) সামাজিক নিরাপত্তা ঃ নির্দেশমূলক অর্থনীতিতে সকল মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় মানুষের সকল মৌলিক প্রয়োজনীয় দ্রব্য; যথা-খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়।
(৮) সুষম উন্নয়ন : নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সুষম উন্নয়ন। নির্দেশমূলক ব্যবস্থায় সকল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত হয়। এতে অর্থনীতির বিভিন্ন খাত যেমন, কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ প্রভৃতি যথাযথ গুরুত্ব লাভ করে। এর ফলে অর্থনীতির সুষম উন্নয়ন ঘটে।
(৯) বেকারত্বহীনতা ৪ নির্দেশমূলক অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বেকারত্বহীনতা। নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা মাফিক উৎপাদন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। তাই নির্দেশমূলক ব্যবস্থায় সমাজে বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা কম থাকে।
(১০) বাণিজ্য-চক্রের অনুপস্থিতি: নির্দেশমূলক অর্থনীতিতে পরিকল্পিত উপায়ে উৎপাদন ও বণ্টন পরিচালিত হয় বিধায় অতি উৎপাদন বা কম উৎপাদনজনিত সঙ্কট দেখা দেয় না। ফলে নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় বাণিজ্য-চক্রজনিত সকল সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হয়।
(১১) শ্রমিকদের স্বার্থসংরক্ষণ: নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ। এ সমাজ ব্যবস্থায় পুঁজিপতিদের দ্বারা শ্রমিক শোষণের কোনো সুযোগ নেই। নির্দেশমূলক ব্যবস্থায় শ্রমিকদের সুস্থ ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবন, ন্যায্য মজুরি প্রদান, চাকুরির নিশ্চয়তা বিধানসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়। সঙ্গীতাচানোর ি
(১২) স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার অনুপস্থিতি: নির্দেশমূলক অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার অনুপস্থিতি। নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় ধনতন্ত্রের ন্যায় চাহিদা ও যোগানের ঘাত-প্রতিঘাতে আপনা-আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্য নির্ধারিত হয় না।
নির্দেশমূলক ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষই দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য নির্ধারণ করে এবং ক্রেতারা সেই দামেই দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করতে বাধ্য হয়।
সুতরাং সমাজতান্ত্রিক বা নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থার কতকগুলো মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণের উপর কোন ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না এবং যাবতীয় অর্থনৈতিক কার্যাবলি একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।
সুতরাং সমাজতান্ত্রিক বা নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থার কতকগুলো মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণের উপর কোন ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না এবং যাবতীয় অর্থনৈতিক কার্যাবলি একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।
ধনতান্ত্রিক ও নির্দেশমূলক/সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য
অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা এবং সমাজতান্ত্রিক বা নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থার মধ্যে বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এসব পার্থক্যগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল :১। সংজ্ঞা: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা হল এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে উৎপাদনের উপকরণের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা বিরাজ করে এবং উৎপাদন ও বণ্টন ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগের অবাধ স্বাধীনতার স্বীকৃত।
পক্ষান্তরে, সমাজতান্ত্রিক বা নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা হল এমন এক ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে উৎপাদনের উপকরণের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না এবং যাবতীয় অর্থনৈতিক কার্যাবলি। একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।
২। উপকরণের মালিকানাঃ ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সম্পত্তিসহ উৎপাদনের যাবতীয় উপকরণের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকে। পক্ষান্তরে, নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণের উপর ব্যক্তিগত মালিকানার অস্তিত্ব নেই। উৎপাদনের উপকরণের উপর রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক মালিকানা স্বীকৃত।
৩। ব্যক্তিগত উদ্যোগের স্বাধীনতাঃ ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত উদ্যোগের স্বাধীনতা বজায় । রাষ্ট্র বা সরকার ব্যক্তির অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে হস্তক্ষেপ করে না। থাকে পক্ষান্তরে, নির্দেশমূলক বা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত উদ্যোগের কোন স্বাধীনতা নেই। সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই পরিচালিত হয়।
৪। ভোগের স্বাধীনতা ঃ ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ভোক্তা-পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে। ভোক্তার চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখেই উৎপাদন কার্য পরিচালিত হয়। এজন্য ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় যথার্থই বলা হয়, ভোক্তা সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী (Consumer is the sovereign) |
পক্ষান্তরে, নির্দেশমূলক বা-সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ভোগের ক্ষেত্রে ভোক্তার পূর্ণ স্বাধীনতা নেই। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যা উৎপাদিত হয় ভোক্তারা তাই ভোগ করতে বাধ্য হয়।
পক্ষান্তরে, নির্দেশমূলক বা-সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ভোগের ক্ষেত্রে ভোক্তার পূর্ণ স্বাধীনতা নেই। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যা উৎপাদিত হয় ভোক্তারা তাই ভোগ করতে বাধ্য হয়।
৫। মুনাফাঃ ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হল মুনাফা অর্জন। প্রত্যেক উৎপাদনকারী এমনভাবে উৎপাদন কার্য পরিচালনা করে যাতে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জিত হয়। পক্ষান্তরে, নির্দেশমূলক বা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত মুনাফার কোন সুযোগ নেই।
নির্দেশমূলক বা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন ও বণ্টন পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হল সর্বাধিক সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করা।
৬। অবাধ প্রতিযোগিতাঃ ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মূল ভিত্তি হল অবাধ প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতেই উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। পক্ষান্তরে, নির্দেশমূলক অর্থনীতিতে অবাধ প্রতিযোগিতার কোন সুযোগ নেই। এ ধরনের অর্থব্যবস্থায় রাষ্ট্র বা কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষই উৎপাদন ও ভোগ নিয়ন্ত্রণ করে।
৭। শ্রেণি শোষণ : ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় শ্রেণি শোষণের অস্তিত্ব বিদ্যমান। উৎপাদনের উপকরণসমূহই মুষ্টিমেয় লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকায় শ্রেণি শোষণের উদ্ভব ঘটে। পক্ষান্তরে, নির্দেশমূলক বা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় শ্রেণি শোষণের কোন সুযোগ নেই। সম্পদেরউপর কোন ব্যক্তিগত মালিকানা না থাকায় কোন শ্রেণি বৈষম্যের অস্তিত্ব নেই।
৮। আয় বৈষম্যঃ ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সমাজে আয় বৈষম্য বিদ্যমান। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সমাজে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে প্রকট আয় বৈষম্য রয়েছে পক্ষান্তরে, নির্দেশমূলক বা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সমাজে আয় বৈষম্যের কোন সুযোগ নেই।সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় যেমন শ্রেণি-অস্তিত্ব নেই তেমনি আয় বৈষম্যেরও সুযোগ নেই।
৯।বণ্টন ব্যবস্থা : ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সম্পদের অসম বণ্টন বিদ্যমান। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকায় সম্পদ মুষ্টিমেয় লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। পক্ষান্তরে, নির্দেশমূলক বা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানার সুযোগ না থাকায় সম্পদ বণ্টনে কোন বৈষম্যের সুযোগ নেই।
সমাজতান্ত্রিক বণ্টন পদ্ধতির মূল নীতি হল 'প্রত্যেকে তার সার্মথ্য অনুযায়ী কাজ করবে এবং কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাবে।' (From each according to his ability to each according to his work.") সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয়।
১০। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা : ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ভূমিকা খুবই সীমিত। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা হল 'স্বাধীন উদ্যোগের অর্থনীতি' (Free Enterprise Economy)। পক্ষান্তরে, নির্দেশমূলক বা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার ভিত্তি হল অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।
নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ (Central planning Authority) থাকে। এই পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়।
১১। বাণিজ্যচক্র: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় বাণিজ্যচক্রজনিত বেকারত্ব বিরাজ করে। মুনাফা-তাড়িত এ অর্থব্যবস্থায় কখনও অতি-উৎপাদন; আবার, কখনও উৎপাদন স্বল্পতা দেখা দেয়। এর ফল বাণিজ্যচক্রজনিত বেকারত্ব সৃষ্টি হয়।
নির্দেশমূলক বা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় বাণিজ্যচক্রজনিত বেকারত্বের কোন আশঙ্কা নেই। পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিচালিত উৎপাদন ব্যবস্থায় বাণিজ্যচক্রজনিত বেকারত্বের উদ্ভব ঘটে না।
১২। দাম ব্যবস্থা: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তি হল 'দাম ব্যবস্থা' (Price System)। সমাজে কি উৎপাদন হবে; কিভাবে উৎপাদন হবে এবং কার জন্য উৎপাদিত হবে (What, how and for whom) ইত্যাদি সব কিছুই একটি 'স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার' মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। পক্ষান্তরে, নির্দেশমূলক বা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার ভূমিকা অনুপস্থিত।
কি উৎপাদন হবে, কিভাবে উৎপাদন করা হবে এবং কাদের জন্য উৎপাদন করা হবে ইত্যাদি সব কিছুই কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরিচালিত হয়।
সুতরাং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা এবং সমাজতান্ত্রিক নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থার মধ্যে বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন অর্থব্যবস্থার অধীনে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়াও কিছুটা ভিন্ন।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে অর্থনৈতিক অর্থব্যবস্থাত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।বর্তমানে এর ব্যাপ্তি অনেক তাই এই সম্পর্কে জানা খুব জরুরি। সেইদিক বিবেচনা করেই যাচাইকৃত তথ্য দ্বারা এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে।আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে তার সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়েছেন।যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।
এছাড়াও আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো যেমন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী,বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।
কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।
বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url