জঁ-জাক রুশো জীবনী

জ্যাঁ জ্যাক রুশোর জীবনী অনেক শিক্ষনীয়, তাই আমাদের তার জীবনী সম্পর্কে জানতে হবে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক জ্যাঁ জ্যাক রুশোর জীবনী সম্পর্কে।
জঁ-জাক রুশো জীবনী


ভূমিকা

সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আঠার শতকে যে কয়জন মহামানব রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে জ্যাঁ জ্যাক রুশো অন্যতম। তিনি ছিলেন একজন বাস্তববাদী দার্শনিক। তিনি তার রাষ্ট্রচিন্তায় উল্লেখ করেন যে, মানুষ হচ্ছে স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক জীব।

কিন্তু নানা রকম বাধা-বিপত্তি মানুষের স্বাধীনতার উপর বাধা সৃষ্টি করে। রুশো হচ্ছেন একজন বিখ্যাত দার্শনিক। নিম্নে রুশোর জীবনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো:

জাক রুশো কত সালে জন্মগ্রহন করেন

১৭১২ খ্রিস্টাব্দে দার্শনিক রুশো সুইজ্যারল্যান্ডের জেনেভার এক ক্যান্টনে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের কয়েকদিন পরই বুশোর মা মারা যান। রুশোর বাবা ছিলেন একজন ঘড়ি প্রস্তুতকারক। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বেহিসাবি। রুশোর শিশুকালেই তার বাবা তাকে ত্যাগ করে জেনেভা থেকে পালিয়ে যান।

জাক রুশোর বাল্যকাল ও শিক্ষাজীবন

বাবা রুশোকে পরিত্যাগ করার পর ১০ বছর বয়সে বুশো মামার বাড়িতে গিয়ে একটি স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয় নি। মাত্র ১৬ বছর বয়সে রুশো সবকিছু ছেড়ে অনির্দিষ্ট জীবনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। শুরু হয় তার ভবঘুরে জীবন। তিনি কোনোদিন আদর-স্নেহ পান নি। তাই কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলার ধার তিনি ধারতেন না।

ইতোমধ্যে ১৭২৮ খ্রিস্টাব্দে ক্রুশো এক ধনাঢ্য বিদুষী মহিলার সংস্পর্শে আসেন। এ সময়ে তিনি ঐ মহিলার গ্রন্থাগার থেকে প্লেটোর 'দি রিপাবলিক' গ্রন্থটি পড়েন এবং তার পৃষ্ঠপোষকতায় দর্শন, অঙ্কশাস্ত্র, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেন। এভাবেই বুশোর শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটে।

জাক রুশোর কর্মজীবন

দারিদ্র্যের চাপে অসহায় ও ভবঘুরে রুশো তার কর্মজীবনের প্রথমে কোনো এক ইতালীয় অভিজাতের খানসামা হিসেবে কাজ নেন এবং ছোটখাটো চৌর্যবৃত্তিতেও জড়িয়ে পড়েন। ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভেনিসের ফরাসি রাষ্ট্রদূতের সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে ১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য তিনি প্যারিস যান এবং সুধী সমাজের নৈকট্য লাভ করেন।

এ সময় তিনি 'বিশ্বকোষ গোষ্ঠীর' নায়ক দিদেরোর সাহচর্য লাভ করেন। কিন্তু চারিত্রিক বৈপরীত্যের কারণে এ সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয় নি। জীবনে তিনি বহু নারীর সান্নিধ্য পান এবং জেরেমি লেভাসির নাম্নী মহিলার সাথেই তার বন্ধুত্ব ছিল সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী। ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়।
এ সময় তিনি 'Academy of Dijon' নামক ফ্রান্সের এক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রবন্ধ লেখার জন্য পুরস্কারে ভূষিত হন। এ পুরস্কারে ছিল ৩০০ ফ্রাঙ্ক ও একটি সোনার পদক। আরো একবার তিনি "The Origin of Inequality' নামক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ব্যর্থ হন। অবশেষে ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে তার ভবঘুরে জীবনের অবসান ঘটে। বন্ধুদের কৃপায় তার একটি বাসস্থান জোটে।

জ্যাঁ জ্যাক রুশোর শেষজীবন

রুশোর শেষজীবনে আবারও দুর্ভোগ নেমে আসে। তার 'The Social Contract' প্রকাশিত হওয়ার পর প্যারিসে সমালোচনার ঝড় উঠে। নিরাপত্তার কারণে এসময় তিনি সুইজারল্যান্ডে পালিয়ে যান কিন্তু সেখানেও তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

৪ বছর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরির পর তিনি ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে গমন করেন এবং সেখানে ডেভিড হিউম ও এডমান্ড বার্ক তাকে আশ্রয় দান করেন। কিন্তু উগ্র মেজাজ ও দাম্ভিক স্বভাবের কারণে অচিরেই তাদের সাথে রুশোর মনোমালিন্য হয়।
প্রায় ১ বছর পর তিনি ইংল্যান্ড ত্যাগ করে পুনরায় দীর্ঘ ৩ বছর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর পর ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি আজীবন যে সমাজ ও শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের দ্বারা তার অবসান ঘটে। ফরাসি বিপ্লবের

জ্যাঁ জ্যাক রুশো কত সালে মৃত্যুবরণ করেন

৫ বছর পর তাকে ফ্রান্সের জাতীয় বীরের মর্যাদা প্রদান করা হয়। : ফরাসি বিপ্লবের ১ বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে এই মহান দার্শনিক মারা যান। তার মরদেহ স্থানান্তর করে জাতীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। পরিশেষে বলা যায় যে, অন্য যেকোনো দার্শনিকের চেয়ে রুশোর জীবন ছিল নানা ঘটনায় পরিপূর্ণ।

জন্মের পরই তার মা মারা যান এবং পরবর্তীতে তার পিতাও তাকে ত্যাগ করে অন্য দেশে চলে যান। এতে করে দুঃখ-দুর্দশা তার উপর ভীষণভাবে ভর করে। চরম প্রতিকূলতার মাঝেও রুশো তার জীবনে রাষ্ট্রদর্শনের ক্ষেত্রে এক অনন্য অবদান রেখে গেছেন, যা তাকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।

জ্যাঁ জ্যাক রুশোর রচনাবলী

১৭৫৬-১৭৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রুশো ব্যাপক জ্ঞানচর্চা করেন। এ জ্ঞানচর্চা ও পূর্ববর্তী রচনা প্রতিযোগিতায় অভিজ্ঞতার আলোকে বুশো অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করেন। এগুলো হচ্ছে 'A Discourses on the Moral Effects of the Arts and Science' (1750), Discourse on the Origin of Inequality' (1755), The Nouvelle Helosie' (1761), The Emile' (1762) e The Social Contract' (1762)।

এসব রচনার মধ্যে The Social Contract' গ্রন্থটি সর্বশ্রেষ্ঠ। এ গ্রন্থে তিনি তার রাজনৈতিক দর্শন ব্যাখ্যা করেন। তারপর দীর্ঘকাল তিনি ভবঘুরে জীবনযাপন করেন। কিন্তু এত কিছুর পরও রুশোর প্রতিভা চাপা পড়ে থাকে নি। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি রাষ্ট্রদর্শনের উপর বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন।

রুশোর রচনাবলি সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা

১। A Discourse on the Moral Effects of the Arts and Science : ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের 'Academy of Dijon' নামক প্রকল্প একটি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু ছিল শিল্প ও বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানুষের নৈতিক জীবনের পক্ষে কল্যাণকর না অকল্যাণকর।

রুশো শিল্প ও বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা মানব জাতির জন্য চরম অকল্যাণকর বলে যুক্তি উপস্থাপন করে 'A Discourse on the Moral Effects of the Arts and Science' নামে একটি প্রবন্ধ লিখে পাঠান এবং পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। বস্তুত এ প্রবন্ধখানিই রুশোর লিখিত প্রথম গ্রন্থ।

২।Discourse on the Origin of Inequality: রুশোর 'Discourse on the Origin of Inequality' গ্রন্থটি ১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। এ বছর আবার 'একাডেমি অব ডিজন' রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এবারের বিষয়বস্তু ছিল সামাজিক অসমতাকে কেন্দ্র করে।

রুশো মূলত রচনা প্রতিযোগিতার জন্যই Discourse on the Origin of Inequality' গ্রন্থটি রচনা করেন।এখানে সামাজিক অসমতার উৎপত্তি সংক্রান্ত বিষয় তুলে ধরেন। কিন্তু এবার তিনি পুরস্কার লাভে ব্যর্থ হন।

৩।The Nouvelle Helosie ও The Emile: রুশোর 'The Nouvelle Helosie' গ্রন্থটি ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। তবে এটিতে রুশো কোন বিষয়ে আলোচনা করেন তা সঠিক জানা যায় নি। তবে রুশো ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে 'The Emile' নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এটিও একটি সাড়া জাগানো গ্রন্থ। এটি মূলত শিক্ষার উপর রচিত।

৪।The Social Contract : রুশোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হচ্ছে 'The Social Contract'. এটি ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। নিম্নে বুশোর The Social Contract' গ্রন্থ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

ক. প্রকৃতির রাজ্য: বুশো "The Social Contract' গ্রন্থে বলেন, রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে মানুষ যে পরিবেশে বাস করতো সেটি ছিল প্রকৃতির রাজ্য। প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ সুখে-শান্তিতে ছিল। কিন্তু ক্রমে লোকসংখ্যা বাড়তে থাকায় সেখানে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রকৃতির রাজ্যের মানুষ পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠন করে।

খ. সাধারণ ইচ্ছা: রুশো তার 'The Social Contract' গ্রন্থে সাধারণ ইচ্ছা সম্পর্কে তার ধারণা ব্যক্ত করেন। রুশো সাধারণ ইচ্ছাবলতে জনগণের কল্যাণকামী ইচ্ছাকে বুঝিয়েছেন। রুশোর মতে, মানুষের ইচ্ছা দুই প্রকার। যথা-প্রকৃত ইচ্ছা ও অপ্রকৃত ইচ্ছা। আর মানুষের প্রকৃত ইচ্ছার সমন্বয়ই হচ্ছে সাধারণ ইচ্ছা।

গ.সার্বভৌম তত্ত্ব: রুশো তার 'The Social Contract' গ্রন্থে সাধারণ ইচ্ছার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সার্বভৌম তত্ত্ব প্রদান করেন। সার্বভৌম তত্ত্ব সম্পর্কে রুশোর ধারণা হক্স ও লকের ধারণা থেকে পৃথক। রুশোর সার্বভৌম তত্ত্বের মূলকথা হলো সাধারণ ইচ্ছার বাস্তব অনুশীলন বা প্রয়োগই সার্বভৌমত্ব।

ঘ. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা: রুশো তার 'The Social Contract' গ্রন্থে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার উপর বিশেষভাবে জোর দেন। তিনি বলেন, সার্বভৌম ক্ষমতা আইনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হলেই একটি রাষ্ট্র বৈধতা পায়, অর্থাৎ একটি রাষ্ট্র বৈধ রাষ্ট্রে রূপ নেয়। তিনি মনে করেন, প্রকৃত আইনের অনুশাসন ব্যতিরেকে রাষ্ট্র বৈধতা পায় না।

৫। রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ: রুশো তার "The Social Contract' গ্রন্থে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য নির্দেশ করেছেন। জনগণ হচ্ছে সার্বভৌমত্বের প্রতীক। অপরদিকে, সরকার কতিপয় ব্যক্তির সমষ্টি। তার মতে, সমগ্র জনসমষ্টি নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত কিন্তু সরকার গঠিত হয় নির্বাচিত কতিপয় লোকের দ্বারা। সরকার জনগণের প্রতিনিধিস্বরূপ।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে বিখ্যাত জ্যাঁ জ্যাক রুশোর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন।

আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে জ্যাঁ জ্যাক রুশোর বিস্তারিত ধারণা লাভ করেছেন।যদি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এটি আপনার বন্ধুবান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন যাতে করে তারাও সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে।

আর এ পোষ্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই এটা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন।এছাড়াও আপনি যদি বিজ্ঞানভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞান মূলক, বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের জীবনী ও আবিষ্কার, বাংলাদেশের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কিত আর্টিকেল করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন

তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।কারণ এ ধরনের আর্টিকেল আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url