সমাজ কাকে বলে ও এর বৈশিষ্ট্য

পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রত্যেকটা মানুষের কোন না কোন সমাজের অন্তর্ভুক্ত। আমরা সবাই সমাজে বসবাস করি। কিন্তু আমরা কি জানি সমাজ কাকে বলে ও এর বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি। চলুন জেনে নেয়া যাক।
সমাজ কাকে বলে ও এর বৈশিষ্ট্য

ভূমিকা

মানুষ সামাজিক জীব। তাই সংঘবদ্ধভাবে বসবাস করা মানুষের সহজাত ধর্ম। সমাজেই মানুষের জন্ম এবং এখানেই তার লালন-পালন। সমাজই ব্যক্তিকে সামাজিক জীব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। সমাজের মাধ্যমেই মানুষ সামাজিকতার শিক্ষা পায়।

যেহেতু অনেক প্রয়োজন নিয়ে মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়, তাই সেসব প্রয়োজন পূরণের তাগিদেই সে তৈরি করে জটিল সম্পর্কের সমাজ।

সমাজ কাকে বলে ও এর বৈশিষ্ট্য

সমাজের সংজ্ঞাঃ সাধারণত 'সমাজ' বলতে পারস্পরিক সম্পর্ককে বুঝায়। যখন কিছুসংখ্যক লোক এক বা একাধিক উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে একে অন্যের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে তখন তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের অবস্থাকে সমাজ বলে।

অন্যভাবে বলা যায়, সমাজ হলো সমস্বার্থ প্রণোদিত এমন একদল লোকের পারস্পরিক সমাবেশ, যারা পরস্পর পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত হয়ে একই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পরস্পরকে সহযোগিতা করে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা: অধ্যাপক লিকক (Leacock) বলেন, "সমাজের কোনো ভৌগোলিক আয়তন নেই, এটি আলোচনা করে মানুষকে নিয়ে, পরিবেশকে নিয়ে নয়।"
অধ্যাপক আর্নেস্ট বার্কার (Ernest Barker) বলেন, "সমাজ বলতে আমরা জাতির অন্তর্গত স্বেচ্ছায় প্রতিষ্ঠিত সংঘ বা সমিতির সমষ্টিকে বুঝি।"

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আর. এন. গিলক্রিস্ট (R. N. Gilchrist)-এর মতে, "কিছুসংখ্যক ব্যক্তি একে অপরের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে বসবাস করলে সমাজ গঠিত হয়।"

সমাজবিজ্ঞানী এডমন্ড বার্ক (Edmund Burke) বলেন, "সমাজ হলো একটি সংঘবদ্ধ প্রতিষ্ঠান।"

প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার ও পেজ (Maclver & Page) বলেন, "সমাজ হলো মানুষের আচার ও কার্যপ্রণালি, কর্তৃত্ব ও পারস্পরিক সাহায্য, বিভিন্ন সংঘ ও বিভাগ, মানবাচরণ নিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীনতা-এ সবকিছুর সমন্বয়ে গঠিত সদা পরিবর্তনশীল একটি জটিল ব্যবস্থা। সমাজ হলো নিয়ত পরিবর্তনশীল সামাজিক সম্পর্কের একটি প্রবহমান ধারা।"

প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী জিসবার্ট (Gisbert) বলেন, "সমাজ হলো সামাজিক সম্পর্কের জটিল জাল, যে সম্পর্ক দ্বারা প্রত্যেক মানুষ তার সঙ্গীদের সাথে সম্পর্কযুক্ত।"
সমাজবিজ্ঞানী ওয়েস্টারমার্ক (Westermark)-এর মতে, "সমাজ হলো একদল ব্যক্তির সমষ্টি যারা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জীবনযাপন করে।"

অধ্যাপক লাস্কি (Laski) বলেন, "সমাজ বলতে আমি বুঝি একদল লোককে, যারা পরস্পরের প্রয়োজন মিটানোর জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করে।"

মরিস জিন্সবার্গ (Morris Ginsberg)-এর মতে, "সমাজ হলো একদল মানুষের সমষ্টি যারা সাধারণ কিছু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হয় বা এমন আচরণ করে যা তাদের অন্যদের থেকে আলাদা করে।"

সমাজবিজ্ঞানী এফ. এইচ. গিডিংস (F. H. Giddings) বলেন, "সমাজ হলো সাধারণ স্বার্থপ্রণোদিত এমন একদল লোকের সমাবেশ, যার সদস্যরা তাদের অভিন্ন সাধারণ স্বার্থ সম্পর্কে জানে এবং তা অর্জনের জন্য পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করে।"

অধ্যাপক ডেভিড পোপেনো (David Popenoe) বলেন, "সমাজ হচ্ছে এমন একটি ব্যাপক সামাজিক গোষ্ঠী, যা মানবীয় মৌলিক প্রয়োজন মিটাতে পারে এমন সব সামাজিক অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করে।"
জি.ডি.এইচ. কোল (G. D. H. Cole) বলেন, "সমাজ হলো মানব সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে জটিল সংগঠিত সংঘ ও সংগঠন।"

উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, মানুষ বেঁচে থাকা এবং জীবনকে আরো উন্নত করার জন্য সর্বদা প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তাই মানুষ গড়ে তুলেছে তাদের নিজস্ব প্রথা ও জীবনযাত্রা প্রণালি। এর মাধ্যমেই মানুষ জীবনযাপন করে। আর এটিই হচ্ছে সমাজ। সুতরাং বলা যায়, সমাজ হচ্ছে একটি সংগঠন, যা গঠিত হয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সমন্বয়ে এবং যার ভিত্তি হচ্ছে সামাজিক সম্পর্ক।

সমাজের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা কর

জিয়া ভূমিকা: মানুষ সামাজিক জীব। আদিকাল থেকে মানুষ সমাজবদ্ধভাবে জীবনযাপন করে আসছে। সমাজ মানুষের সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের স্থান। মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনের সূচনা ও ব্যাপ্তির অভিব্যক্তিই সমাজ।

সমাজ হচ্ছে এমন এক জনসমষ্টি, যারা একটি সাধারণ ঐতিহ্য, প্রথা, রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান এবং জীবন প্রণালিতে অভ্যস্ত হয়ে পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশে বাস করে। সমাজের কোনো নির্দিষ্ট গড়ি বা আওতা নেই। এটি ক্ষুদ্রও হতে পারে, আবার বৃহৎও হতে পারে। সমাজ কোনো প্রকার ভৌগোলিক সীমারেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়।
সমাজের বৈশিষ্ট্যসমূহ সমাজের কতকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে এ বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. ভৌগোলিক এলাকা:সমাজের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য এবং প্রধান উপাদান হচ্ছে ভৌগোলিক এলাকা। কেননা কোনো না কোনো এলাকাতেই মানুষ বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে সমাজ সৃষ্টি করে। ভৌগোলিক এলাকা ব্যতীত সমাজ কল্পনা করা যায় না।

২. সংঘবদ্ধতা: কোনো ব্যক্তি সমাজ ব্যতীত একা বসবাস করতে পারে না। সে সর্বদাই অপরের সাহচর্য কামনা করে। ব্যক্তি হচ্ছে সমাজের অণু। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বহু ব্যক্তি সংঘবদ্ধভাবে বসবাস শুরু করলেই সমাজ সৃষ্টি হয়। সমাজের মানুষের সংখ্যার কোনো সীমারেখা নেই। তাই সংঘবদ্ধতা সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৩.পারস্পরিক সম্পর্ক ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া: মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বৈশিষ্ট্য। সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার সমাজকে পারস্পরিক সামাজিক সম্পর্কের প্রবাহ বলে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে একাধিক লোকের সমাবেশ হলেই তাকে সমাজ বলা যাবে না, লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থাকতে হবে।

৪. পারস্পরিক নির্ভরশীলতা: পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ব্যতীত সমাজ টিকে থাকতে পারে না। কেননা মানুষ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষাসহ অন্যান্য স্বার্থের জন্য সমাজবদ্ধ হয়। ফলে তারা বিভিন্ন কারণে পরস্পরের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে।

৫. পারস্পরিক সহযোগিতা: সমাজের প্রতিটি সদস্যই পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্কে আবদ্ধ। এই সহযোগিতা ছাড়া সমাজ টিকে থাকতে পারে না। পারস্পরিক সহযোগিতা সমাজজীবনের মূল চালিকাশক্তি। কোনো সমাজের লোক যখন বিপদাপদের সম্মুখীন হয় তখন অন্য সমাজের লোক তাদের প্রতি সাহায্যের হাত প্রসারিত করে বিপদমুক্ত করে। সমাজ হলো পারস্পরিক সৃজনশীল সহযোগিতা।

৬. সহমর্মিতা: সমাজের প্রত্যেক সদস্যই একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করে থাকে। স্নেহ, ভালোবাসা, আবেগ-অনুভূতি, সমবেদনা ইত্যাদি মানবিক গুণাবলি এবং সামাজিক বন্ধন ও পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা সমাজজীবনের মূলভিত্তি। সমাজজীবনের এ বৈশিষ্ট্যই সমাজকল্যাণের আদি প্রেরণা।

৭. স্থায়িত্ব: সমাজের অবশ্যই স্থায়িত্ব থাকতে হবে। সমাজ কেবল সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য হয় না। এর কার্যকাল ও কার্য পরিধি ব্যাপক, সুবিস্তৃত, দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী। কেননা ক্ষণস্থায়ী জনসমষ্টিকে সমাজ বলা যায় না। যেমন-মুসলমানগণ হজ পালনের সময় একই উদ্দেশ্যে একই স্থানে সমবেত হলেও তাদের সমাজ বলা যায় না।

৮. অভিন্ন লক্ষ্য ও মনোভাব: সমাজবিজ্ঞানী গিডিংসের মতে, "সমভাবাপন্ন একদল লোক যারা তাদের অভিন্ন সাধারণ উদ্দেশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত এবং এ উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার ভিত্তিতে সমবেতভাবে কাজ করে থাকে তাদের সমষ্টি হচ্ছে সমাজ।" 

অভিন্ন লক্ষ্য ও মনোভাব মানুষকে সংঘবদ্ধ হতে সহায়তা করে। কাজেই বলা যায়, অভিন্ন লক্ষ্য ও মনোভাব সমাজের একটি মৌলিক উপাদান ও বৈশিষ্ট্য।

৯. গতিশীলতা : সমাজ গতিশীল। আর পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য সমাজকে অবশ্যই গতিশীল হতে হবে। গতিশীলতার সাথে সমাজের প্রতিটি সদস্যকেই মানিয়ে চলতে হবে। নতুবা সমাজ পিছিয়ে যাবে। তাছাড়া সমাজে ফাটল সৃষ্টি হবে,বাড়বে দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং সামাজিক উন্নয়নের গতি হবে নিম্নমুখী।

১০. গোষ্ঠীচেতনা: গোষ্ঠীচেতনার নিগড়ে সমাজ গড়ে উঠে। গিডিংস, ম্যাকাইভার এবং ডারউইনপন্থি সমাজবিজ্ঞানীরা গোষ্ঠীচেতনাকে সমাজের জন্য অপরিহার্য বলে অভিহিত করেছেন। গোষ্ঠীচেতনা প্রবল হলেই সমাজের স্থায়িত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। আর গোষ্ঠীচেতনা ব্যতীত সামাজিক জীবন অসম্ভব। 

১১. সামাজিক প্রতিষ্ঠান: সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। প্রত্যেক সমাজেই সামাজিক প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান। সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমাজের রীতিনীতি, প্রথা মানুষের আচার-আচরণকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে। মানবজীবনের বহুমুখী প্রয়োজন পূরণ ও সংঘবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য প্রত্যেক সমাজেই বিবাহ, পরিবার, ধর্ম প্রভৃতি সামাজিক প্রতিষ্ঠান দেখা যায়।

১২. মূল্যবোধ: সমাজের অন্যতম ভিত্তি হলো সামাজিক মূল্যবোধ। মূল্যবোধের ফলেই সমাজে ন্যায়-অন্যায়, চিন্তা-চেতনা ইত্যাদির বিকাশ ঘটে। সামাজিক মূল্যবোধ সমাজজীবনে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। মূল্যবোধের অবক্ষয় হলে সমাজে অন্যায়-অবিচার ও অপরাধমূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পায়।

১৩. সামাজিক নিয়ন্ত্রণ: সামাজিক নিয়ন্ত্রণ সমাজের প্রত্যেক সদস্যকে নিয়ন্ত্রিত করে থাকে। সকল সমাজেই মূল্যবোধের পাশাপাশি ধর্ম, আইন-কানুন, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ও রীতিনীতি রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে সমাজবাসীদের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

১৪. ব্যাপক প্রত্যয়: সমাজ একটি ব্যাপক প্রত্যয়। সমাজ বলতে যেমন গোটা মানবসমাজকে বুঝানো যায়, তেমনি আবার তা সীমিত অর্থে যেমন-গ্রামসমাজ, উপজাতি সমাজ, নারী সমাজ, পুরুষ সমাজ, সমবয়সীদের সমাজ, কিংবা বিশেষ পেশাজীবী সমাজ যেমন- লেখক সমাজ, শ্রমিক সমাজ এভাবেও বুঝানো যেতে পারে।

১৫. দ্বন্দ্বযুক্ত সহযোগিতা: সমাজে দ্বন্দ্বযুক্ত সহযোগিতা বিদ্যমান। অর্থাৎ সমাজে যেমন পারস্পরিক সহযোগিতা আছে, আছে দ্বন্দুও। সহযোগিতার পাশাপাশি সমাজের বাসিন্দাদের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। এর মাধ্যমে সমাজ কাঠামোর আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। তবে দ্বন্দু-সংঘাত সমাজে দীর্ঘস্থায়ী হলে সমাজজীবন অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে।

কোনো সমাজের যৌথ জীবন সংগঠিত করার এক বিশেষ পন্থা। অন্যদিকে দেখা যায়, সমাজজীবনের কতকগুলো প্রথা, রীতিনীতি, মূল্যবোধ রয়েছে। যেগুলোকে রাষ্ট্র শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে। কেননা এসব মূলনীতিকে উপেক্ষা করলে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এভাবে সমাজও রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই বলা যায়, রাষ্ট্র ও সমাজ পরস্পরকে নিয়ন্ত্রণ করে।

রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে যথেষ্ট সম্পর্ক

একে অপরকে সহযোগিতা করে: রাষ্ট্র ও সমাজ এক না হলেও উভয়ে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে অবস্থান করতে পারে না। টিকে থাকার জন্য উভয়ে উভয়কে সহযোগিতা করে। রাষ্ট্র যেমন সামাজিক রীতিনীতি, প্রথা-প্রতিষ্ঠান, নীতি-ধর্ম ইত্যাদি অস্বীকার করতে পারে না, তেমনি সমাজও রাষ্ট্রের নিয়ম-নীতি ও আইন-কানুন অস্বীকার করতে পারে না।

রাষ্ট্রকে সমাজজীবনের মৌলিক প্রথা, রীতিনীতি প্রভৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে চলতে হয়। তাই বলা যায়, রাষ্ট্র ও সমাজ একে অপরের সহায়ক ও পরিপূরক।

উদ্দেশ্যগত সম্পর্ক: উদ্দেশ্যের দিক থেকে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে যথেষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্র মানুষের কল্যাণময় জীবনের প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে ব্যক্তিজীবনের উপর বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করে।

অনুরূপভাবে সমাজের লক্ষ্য মানুষের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলা। তাই সমাজ কতকগুলো সামাজিক বিধি বা নিয়ম সৃষ্টি করে সমাজবদ্ধ মানুষের আচার-আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এভাবে রাষ্ট্র ও সমাজ প্রায় অভিন্ন উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করে।

আইন ও নীতির সম্পর্ক:
রাষ্ট্রীয় আইন সাধারণভাবে সমাজের নীতিবোধের বিরোধী হতে পারে না। সুদীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি ও প্রথার ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় আইন প্রণীত হয়। রাষ্ট্রীয় আইন যদি সামাজিক স্বার্থের বিরোধী হয় তাহলে সমাজ রাষ্ট্রকে চাপ দিয়ে সে আইন পরিবর্তনে বাধ্য করে।

অনুরূপভাবে আইনও অকল্যাণকর সামাজিক প্রথাগুলোকে বেআইনি ঘোষণা করে নীতিবোধের প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এদিক থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।

মানবকল্যাণ সাধন:
মানবকল্যাণ সাধনে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সম্পর্ক পরিদৃষ্ট হয়। রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়েরই প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবকল্যাণ সাধন। এ উভয় প্রতিষ্ঠান মানবকল্যাণ সাধনে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। ফলশ্রুতিতে উভয়ের প্রতি জনগণ তাদের আনুগত্য প্রদর্শন করে।

সমাজের নিয়ন্ত্রক:
রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়ই মানবসৃষ্ট প্রতিষ্ঠান। মানবসৃষ্ট প্রতিষ্ঠান হয়ে আবার উভয়ই মানবসমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। রাষ্ট্র বিভিন্ন আইন-কানুন প্রণয়ন করে সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। আবার সমাজেরও কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে যা রাষ্ট্রকে মেনে চলতে হয়।

সমাজজীবন সংগঠন ও নিয়ন্ত্রণ:
রাষ্ট্রই সমাজজীবন সংগঠন ও নিয়ন্ত্রণ করার প্রধান দায়িত্ব পালন এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বিধান করে। রাষ্ট্র মানুষকে এমন কতকগুলো বিধি-বিধান পালন করতে বাধ্য করে যা সুশৃঙ্খল ও সুষ্ঠু সমাজজীবনের পক্ষে অপরিহার্য।

মানুষের আচরণ যাতে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত না করে রাষ্ট্র তা নিশ্চিত করে। তাছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের অস্তিত্বও রাষ্ট্রীয় নির্দেশের উপর নির্ভর করে। অপরদিকে, রাষ্ট্র সমাজের প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতিকে মেনে চলতে চেষ্টা করে।

রাষ্ট্র সমাজের অন্তর্ভুক্ত:
অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতে, রাষ্ট্র সমাজের একটি অংশবিশেষ। রাষ্ট্র হলো সমাজের অন্যান্য সংঘের মতো একটি সংঘ। কতিপয় সংঘের সমন্বয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয়। রাষ্ট্র ও সমাজ পরস্পর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক বিদ্যমান।

প্রথা ও আইনগত অভিন্নতা:
রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে প্রথা ও আইনগত অভিন্নতা রয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যেমন কতকগুলো বিধিবদ্ধ আইন-কানুন প্রণীত হয় তদ্রুপ সমাজও কতিপয় প্রথার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। যেমন অতীতে হিন্দু সমাজে সতীদাহ প্রথার প্রচলন ছিল। পরবর্তীতে আইন প্রণয়ন করে সে প্রথা রহিত করা হয়।

আদর্শের দিক থেকে সম্পর্ক: 
আদর্শের দিক থেকে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সম্পর্ক বর্তমান। রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়ের লক্ষ্য হলো সুশৃঙ্খল সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তির সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ সাধন করে আত্মবিকাশের পথ সুগম করা।

উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যদিও রাষ্ট্রের মধ্যে সমাজের সঠিক রূপ প্রতিফলিত হয় না, তবু রাষ্ট্রের মাধ্যমে সামাজিক শক্তির প্রতিফলন দেখা যায়। সমাজের উপর ভিত্তি করেই রাষ্ট্র গড়ে উঠে। তাই সমাজের প্রকৃতি নিশ্চিতভাবেই রাষ্ট্রীয় প্রকৃতিকে নির্ধারিত করে।

দাস সমাজে রাষ্ট্র দাস-মালিকদের, সামন্ত সমাজে রাষ্ট্র সামন্তদের এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজে রাষ্ট্র সর্বহারা শ্রেণির স্বার্থে কাজ করে। সুতরাং রাষ্ট্র ও সমাজ দুটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হলেও একে অপরকে ছাড়া সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে অবস্থান করতে পারে না। সমাজ ও রাষ্ট্র একে অন্যের পরিপূরক।

রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর

রাষ্ট্র সমাজজীবনের মূল সূত্র নির্ধারণ করে দিলেও রাষ্ট্র ও সমাজ এক নয়। ম্যাকাইভার, বার্কার, লাস্কি প্রমুখ আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্যমূলক আলোচনা করেছেন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে রাষ্ট্র হচ্ছে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রতিষ্ঠিত এক আবশ্যিক সংগঠন। আর সমাজ হচ্ছে চিরকালীন মানবীয় সংস্থা।

সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় প্রভৃতি সংগঠনকে নিয়েই সমাজের ধারণা গঠিত। উল্লিখিত ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, গঠন, উদ্দেশ্য ও পদ্ধতির ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।
রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য/বৈসাদৃশ্য
প্রাচীনকালে গ্রিক দার্শনিকগণ রাষ্ট্র ও সমাজকে অভিন্ন বলে মনে করতেন। প্লেটো ও এরিস্টটলের সময়ে রাষ্ট্র ছিল নগররাষ্ট্র। তবে আধুনিককালে রাষ্ট্র ও সমাজ এক ও অভিন্ন-এ ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক এবং পরস্পর নির্ভরশীলতা থাকলেও পার্থক্যও কম নয়। নিম্নে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যকার পার্থক্য/বৈসাদৃশ্য আলোচনা করা হলো:

১. রাষ্ট্রের পূর্বে সমাজের জন্ম: রাষ্ট্রের পূর্বে সমাজের জন্ম ও বিকাশ হয়েছে। মানব সভ্যতার আদি যুগে যখন আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রাষ্ট্রের উদ্ভব হয় নি, তখনো মানুষ কোনো না কোনো ধরনের সমাজে সামাজিক জীবনযাপন করতো।

সমাজবদ্ধ মানুষ পরবর্তীকালে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য প্রথমে পরিবার ও পরে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছে। এ প্রসঙ্গে ম্যাকাইভার বলেন, "Society proceeds the state just as it proceeds the family." অর্থাৎ পরিবারের মতোই সমাজ থেকে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে।

২. রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, সমাজ গড়ে উঠে: রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং রাজনৈতিক কৌশল, নীতি ও শক্তির উপর ভিত্তি করে টিকে থাকে। প্রত্যেক রাষ্ট্রেরই একটি সাংবিধানিক ভিত্তি থাকে। কিন্তু যখন কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মানুষ সংঘবদ্ধ হয় তখন সমাজ এমনিতেই গড়ে উঠে। এর জন্য কোনো সংবিধানের প্রয়োজন হয় না।

৩. সমাজ মাতা, রাষ্ট্র সন্তানস্বরূপ: সমাজ থেকেই রাষ্ট্রের সৃষ্টি। এজন্য সমাজকে মাতা এবং রাষ্ট্রকে তার সন্তান বলে আখ্যায়িত করা যায়। এদিক থেকে বিচার করলে রাষ্ট্রের চেয়ে সমাজের আঙ্গিক বিশাল বলে মনে হয়।

৪. রাষ্ট্র সীমিত, সমাজ বিশ্ববিস্তৃত: রাষ্ট্র একটি ভৌগোলিক প্রতিষ্ঠান, কিন্তু সমাজের সীমা বিশ্ববিস্তৃত। রাষ্ট্রের নাগরিকগণকে একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের অধিবাসী হতে হয়। সমাজ বিশ্বব্যাপী সংগঠন হতে পারে; যেমন-বিশ্ব মুসলিম সমাজ ও বিশ্ব খ্রিস্টান সমাজ ইত্যাদি।

অধ্যাপক লিকক বলেন, "The term society has no reference to a territorial occupation." অর্থাৎ সমাজ শব্দটির সাথে কোনো ভূখণ্ডের ধারণা জড়িত নেই।

৫. রাষ্ট্র রাজনৈতিক, সমাজ অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান: রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সমাজ সার্বভৌম ক্ষমতাহীন অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয় ও কর্তৃত্ব, কিন্তু সমাজের এরূপ রাজনৈতিক পরিচয় বা কর্তৃত্ব নেই।

৬. বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে: রাষ্ট্র বলপ্রয়োগে ক্ষমতা কার্যকর করার অধিকারী। কিন্তু সমাজের বলপ্রয়োগের ক্ষমতা নেই। সমাজের ভিত্তি হলো জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা। সমাজ তার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সহযোগিতা ও শুভেচ্ছামূলক পদ্ধতি অনুসরণ করে।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক বার্কার বলেন, "Society uses the method of voluntary action and process of persuation." অর্থাৎ সমাজ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং শুভেচ্ছামূলক পদ্ধতি অনুসরণ করে।

৭. পরিধির ক্ষেত্রে: পরিধির দিক থেকেও রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। রাষ্ট্রের পরিধি কম ও সীমিত। রাষ্ট্র কেবল মানুষের রাজনৈতিক জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু সমাজের পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। কেননা সমাজ মানুষের সার্বিক দিক পরিচালনা করে।

অর্থাৎ মানবজীবনের সমগ্র দিকই সমাজের পরিধিভুক্ত। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক বার্কার বলেন, "The state exists for one great but single purpose. Society exists for a number of purposes." অর্থাৎ রাষ্ট্র কেবল একটি বৃহৎ উদ্দেশ্যে কাজ করে। কিন্তু সমাজ বহুবিধ উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করে।

৮. রাষ্ট্র সমাজের অংশমাত্র: উইলসন ও কোল বলেন, "State is a part of society, not whole of it." অর্থাৎ রাষ্ট্র হলো সমাজের অংশ, সমগ্র নয়। মূলত বিভিন্ন শ্রেণি, গোষ্ঠী ও সংঘের দ্বারা যত প্রকার সামাজিক সম্পর্ক গড়ে উঠে সেগুলোর সবই সমাজের অন্তর্ভুক্ত। সমাজের মধ্যকার এরূপ অনেক সংঘ ও সংস্থার মতোই রাষ্ট্রও একটি সংঘ।

৯. উদ্দেশ্য: রাষ্ট্র ও সমাজের উদ্দেশ্যের মধ্যে যথেষ্ট ভিন্নতা রয়েছে। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য জনগণের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন, কিন্তু সমাজের উদ্দেশ্য বিশেষ কল্যাণ সাধন বা স্বার্থ সংরক্ষণ। মানুষ রাষ্ট্র গঠন করে কতিপয় বিশেষ উদ্দেশ্যে। কিন্তু সমাজ প্রাকৃতিক নিয়মেই গড়ে উঠে।

যেমন-রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য হলো স্থায়ীভাবে আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা এবং এজন্য সরকার বিভিন্ন আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করে। কিন্তু সমাজ মানবজীবনের নৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি উদ্দেশ্য সাধন করে।

১০. সাংগঠনিক দিক: সাংগঠনিক দিক থেকে রাষ্ট্র ও সমাজ এক নয়। রাষ্ট্র হলো রাজনৈতিক সংগঠন। আর সমাজ হলো মানুষের সামাজিক সম্পর্কের অভিব্যক্তি। রাষ্ট্রীয় সংগঠন গড়ে উঠে আইনসিদ্ধভাবে। আর সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে।

১১. সুসংগঠিত রূপ : রাষ্ট্র সুসংহত এবং সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সমাজ সব সময় রাষ্ট্রের মতো সুসংগঠিত নয়। রাষ্ট্রের সুসংগঠিত সরকার রয়েছে, কিন্তু সমাজের তা নেই।

১২. সদস্যপদ: নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্রের সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ সকল মানুষকেই কোনো না কোনো রাষ্ট্রের নাগরিক হতে হয়। কিন্তু কোনো সমাজের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাধীন। এক্ষেত্রে ব্যক্তির জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা নেই; বরং তা সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক। যে কেউ কোনো সমাজের সদস্য হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। আবার কেউ চাইলে একাধিক সমাজের সদস্য হতে পারে।

১৩. সার্বভৌমত্ব: সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে গণ্য হয়। সার্বভৌমত্ব না থাকলে রাষ্ট্র স্বাধীন হতে পারে না। কিন্তু সমাজের ক্ষেত্রে সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় না। সার্বভৌম ক্ষমতাবলে রাষ্ট্র শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তার আদেশ-নির্দেশ বাস্তবায়ন করে।

কিন্তু সমাজ প্রচলিত প্রথা, রীতিনীতির মাধ্যমে মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে না বিধায় সমাজের সার্বভৌমত্ব দরকার হয় না।

১৪. উপাদানের ভিন্নতা: রাষ্ট্রের চারটি উপাদানের মধ্যে সরকার একটি অপরিহার্য উপাদান। রাষ্ট্রের সকল ইচ্ছা ও অনিচ্ছা সরকারের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। অপরদিকে, সমাজের উপাদান বহুবিধ। এখানে নেতৃত্ব থাকলেও সংগঠিত কোনো সরকার নেই।

১৫. কল্যাণগত দিক: রাষ্ট্রের সৃষ্টি মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যে। তাই রাষ্ট্রের কল্যাণের ক্ষেত্র ব্যাপক। অর্থাৎ রাষ্ট্র সকল নাগরিকের সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত। অপরদিকে, সমাজের কল্যাণের ক্ষেত্র অনির্ধারিত ও সীমিত। : রাষ্ট্রের শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পরিচালনার জন্য একটি সুনিয়ন্ত্রিত সরকার থাকে।

১৬. সুনিয়ন্ত্রিত সরকারঃ সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়। অন্যদিকে, সমাজ পরিচালনার জন্য কোনো সরকার থাকে না। কেননা সমাজের বহুবিধ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য প্রয়োজন সমাজের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। এখানে কোনো সরকারের প্রয়োজন পড়ে না।

উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে নানা পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। রাষ্ট্রই সমাজজীবনকে সংগঠিত ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। রাষ্ট্র আছে বলেই সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা অটুট রয়েছে। তাছাড়া রাষ্ট্র সামাজিক রীতিনীতি ও আচার-ব্যবহারের প্রতি শ্রদ্ধার মনোভাব প্রদর্শন করে।

কেননা সমাজজীবনে প্রচলিত মূল্যবোধগুলোর প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করলে জনগণ রাষ্ট্রের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল হয়ে পড়বে। সুতরাং রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান।।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আর্টিকেলটিতে সমাজ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সমাজ শব্দের ব্যাপ্তি অনেক তাই এই সম্পর্কে জানা খুব জরুরি। দিক বিবেচনা করেই যাচাইকৃত তথ্য দ্বারা এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে।

আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে তার সম্পর্কে আপনি ধারণা পেয়েছেন।যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে তারাও এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।

এছাড়াও আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো যেমন বিজ্ঞান ভিত্তিক, সাধারণ জ্ঞানমূলক , চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী,বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।

কারণ এ ধরনের আর্টিকেলগুলো আমরা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকি।আর এই পোস্ট সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন মতামত কিংবা কোন পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে যাবেন। যাতে করে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। আরো অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানে শেষ করছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url