সংবিধান কাকে বলে ও এর শ্রেণীবিভাগ

সাধারণভাবে বলতে গেলে একটি দেশের সরকার কিভাবে গঠিত ও পরিচালিত হবে সে সম্পর্কে বিভিন্ন নিয়মাবলির সমষ্টিকে সংবিধান বলা হয়। চলুন জেনে জেওয়া যাক সংবিধান সম্পর্কে বিস্তারিত।
সংবিধান কাকে বলে ও এর শ্রেণীবিভাগ

ভূমিকা

সংবিধানই হচ্ছে কোন রাষ্ট্র বা সরকারের প্রধান চালিকাশক্তি। প্রত্যেক রাষ্ট্রের জন্যই এটা অপরিহার্য। সংবিধানবিহীন রাষ্ট্র কর্ণধারবিহীন জাহাজের সঙ্গে তুলনীয়। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল হতে শুরু করে অদ্যাবধি বহু চিন্তাবিদ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সংবিধানের সংজ্ঞা দিয়েছেন। এসব সংজ্ঞা হতে সংবিধানের যথার্থ প্রকৃতি ও স্বরূপ অনুধাবন করা যায়।

সংবিধানকে ভিত্তি করেই সরকার সংঘটিত হয় এবং এটা সরকারের বিভিন্ন বিভাগ যেমন-শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে দিয়ে এদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করে। এরিস্টটল সংবিধানকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, " সংবিধান এমন একটি জীবন পদ্ধতি যা রাষ্ট্র নিজের জন্য বেছে নিয়েছে।"

সংবিধান কাকে বলে

সংবিধান বিভিন্ন দার্শনিক ও বিশেষজ্ঞদের কাছে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত হয়েছে। তবে প্রায় প্রত্যেকেরই সংবিধানের ভিত্তিটা একই। চলুন কিছু প্রামাণ্য সংজ্ঞার ভিত্তিতে সংবিধান কাকে বলে সেটা জানা যাক

প্রামাণ্য সংজ্ঞা:

সংবিধান সম্পর্কে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর বিভিন্ন অভিমত রয়েছে। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের অভিমত প্রদান করা হলো:
সি. এফ. স্ট্রং (C. F. Strong) এর মতে, "সংবিধান হলো এমন কতকগুলো নিয়মের সমষ্টি, যা দ্বারা শাসকের ক্ষমতা ও শাসিতের অধিকার এবং উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়।"

লর্ড ব্রাইস (Lord Bryce) এর মতে, "সংবিধান হলো সেসব নিয়মকানুন ও রীতিনীতির সমষ্টি, যেগুলো রাষ্ট্রের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে।"
অধ্যাপক. এইচ. ফাইনার (Prof. H. Finer) এর মতে, "মৌলিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুষম ব্যবস্থাই সংবিধান।"

অধ্যাপক কে. সি. তুইয়ার (Prof. K. C. Wheare) এর মতে, "সংবিধান হলো সেই সমস্ত নিয়মাবলি যা রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও সরকারি ক্ষমতা প্রয়োগকারী বিভাগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।"

অধ্যাপক. এইচ. ফাইনার (Prof. H. Finer) এর মতে, "মৌলিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুষম ব্যবস্থাই সংবিধান।"

অধ্যাপক কে. সি. তুইয়ার (Prof. K. C. Wheare) এর মতে, "সংবিধান হলো সেই সমস্ত নিয়মাবলি যা রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও সরকারি ক্ষমতা প্রয়োগকারী বিভাগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।"

অধ্যাপক গিলক্রিস্ট (R. N. Gilchrist) এর মতে, "সবিধান হলো লিখিত বা অলিখিত নিয়মকানুন ও আইনের, সমষ্টি যা সরকারের সংগঠন সরকারের বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন এবং সংবিধানের নীতিমালা যার মাধ্যমে ঐসব ক্ষমতা চর্চা করা হয়।"

প্রফেসর লুইস এর মতে, "সবিধান হলো জনগণের নিকট ক্ষমতা বণ্টন অথবা সরকার পদ্ধতি নির্ধারণ।"

অস্টিন রেনী (Austin Ranny) এর মতে, "সংবিধান হলো লিখিত বা অলিখিত, বিধিসম্মত বা বিধিবহির্ভূত সকল নিয়মকানুন যা দেশের শাসনব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।"

সংজ্ঞা:

পরিশেষে বলা যায় যে, সংবিধান হলো সেই নিয়মের সমষ্টি যা সরকারের ক্ষমতা নির্ধারণ করে, বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করে এবং শাসক ও শাসিতের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে।

সংবিধানের উৎসসমূহ

সংবিধান হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নীতি এবং একটি দেশের মেরুদণ্ড স্বরূপ। সংবিধান ভিন্ন কোন রাষ্ট্রের অস্তি ত্ব কল্পনা করা যায় না। সংবিধান হলো রাষ্ট্র পরিচালনার দিকনির্দেশনা। সংবিধানের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। সংবিধান ছাড়া কোন রাষ্ট্রই সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে না।

সংবিধান হচ্ছে কোন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন যা অন্যান্য আইন এবং সরকারকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। প্রতিটি স্বাধীন দেশের জন্য সংবিধান অত্যাবশ্যক। আর উত্তম সংবিধানের মাধ্যমেই জনগণের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং শাসক শাসিতের সম্পর্ক নির্ণীত হয়। এরিস্টটলের মতে, "The way of life the state has chosen for itself."
সংবিধান প্রণয়ন বা সৃষ্টিতে যেসব বিষয় সাহায্য করে থাকে, সেগুলোকে সংবিধানের উৎস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বিভিন্ন উৎস থেকে সংবিধান প্রাণবন্ত হয়। নিম্নে সংবিধানের উৎসগুলোর বিবরণ দেয়া হলো

১. প্রচলিত রীতিনীতি ও অস্তার প্রথা। অতি প্রাচীনকাল থেকে, সমাজজীবন ব্যবস্থায় যেসব রীতিনীতি ও আচার প্রথা প্রচলিত হয়ে আসছে সেগুলো যখন কোন রাষ্ট্রের সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদন ও স্বীকৃতি লাভ করে, তখন সেগুলো সংবিধানের রীতিনীতি হিসেবে পরিগণিত হয়।

এসব প্রথা, রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার প্রভৃতি আইনের মত আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য না হলেও প্রতিটি দেশের শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে এগুলোর ভূমিকাকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। ব্রিটিশ সংবিধানের একটি বড় অংশই এরূপ রীতিনীতি ও প্রধানির্ভর। এজন্যই বলা হয় ব্রিটিশ সংবিধান তৈরি হয়নি, গড়ে উঠেছে।

২. মৌলিক দলিল: পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রের সংবিধানই লিখিত দলিলের সমষ্টি। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে সঙ্গতি রেখে জনপ্রতিনিধিগণ এরূপ সংবিধান প্রণয়ন করে থাকেন। সংবিধানের প্রায় সবকিছুই লিখিত থাকে।

১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে জর্জ ওয়াশিংটনের সভাপতিত্বে ফিলাডেলফিয়ায় আমেরিকার সংবিধান প্রণয়নের জন্য যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তার প্রস্তাবের ভিত্তিতে আমেরিকার সংবিধানের মৌলিক ধারাগুলো দলিল হিসেবে লিখিত হয়।

৩. বিধিক্য আইন: ভোটাধিকার, নির্বাচন পদ্ধতি, সরকারি কর্মচারীদের ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ে আইন পরিষদ কর্তৃক পাসকৃত আইন সংবিধানের উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে। বিধিবন্ধ আইন হচ্ছে আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইন এবং আইনসভা যখন তখন এগুলোকে পরিবর্তন করতে পারে।
যেমন- ১৮৩২, ১৮৬৭ ও ১৮৮৪-৮৫ সালে প্রণীত ভোটাধিকার সম্প্রসারণ সংস্কার আইন, ১৯১১ ও ১৯৪৯ সালে প্রণীত পার্লামেন্টের ক্ষমতা বিষয়ক 'পার্লামেন্ট আইন' ইত্যাদি ব্রিটিশ সংবিধানের উৎস বলে বিবেচিত।

৪. সনদ: নাগরিক অধিকার রক্ষা এবং রাজনৈতিক সংকট নিরসনের নিমিত্তে গৃহীত সনদ সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। যেমন- অধিকার সনদ, সংস্কার আইন, মীমাংসা আইন ইত্যাদি ব্রিটিশ সংবিধান রচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

ব্রিটিশ সংবিধানে দেখা যায়, ব্রিটেনের রাজন্যবর্গ কতকগুলো ঐতিহাসিক দলিল ও সনদের মাধ্যমে নাগরিকদের কিছু অধিকার স্বীকার করে নেয়।যেমন- ১২১৫ সালের ম্যাগনাকার্টা, ১৬২৮ সালের অধিকারের আবেদন পত্র, ১৬৮৯ সালের অধিকারের বিল ইত্যাদি।

৫. বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত। বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত সংবিধানের একটি অন্যতম উৎস। অনেক সময় বিচার বিভাগ জটিল কোন মামলার নিষ্পত্তির ব্যাপারে তাদের সুচিন্তিত রায় প্রদান করে থাকেন, যেগুলো সংবিধানের ধারা বা উপধারা হিসেবে সংযোজিত হয়।

বিচারপতি হিউজেস বলেছিলেন, "আমরা একটি সংবিধানের অধীন, কিন্তু সংবিধান হচ্ছে তাই বিচারকরা একে যেভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই বিচারকের রায় বা ব্যাখ্যা সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৬. প্রামাণ্য পুস্তকসমূহ। সংবিধান সম্পর্কে রচিত প্রামাণ্য পুস্তকসমূহকেও অনেকে সংবিধানের অন্যতম উৎস বলে বর্ণনা করেন। এসব প্রামাণ্য পুস্তকের মধ্যে ওয়াল্টার বেজহটের ইংল্যান্ডের সংবিধান (The English Constitutions অ্যানসনের সংবিধানের আইন ও রীতিনীতি, ডাইসির সংবিধানের আইন (Law of the Constitution) ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

৭. পার্লামেন্টের আইন: Parliament সংবিধানের একটি বড় উৎস। আইনসভা যেসব আইন পাস করে সেগুলোর মধ্যে সংবিধান সংক্রান্ত আইনগুলো ও সংশোধনগুলো সংবিধানের অংশে পরিণত হয়। পার্লামেন্টের সদস্যরা যেসব সুযোগ সুবিধা ও অধিকার ভোগ করেন অথবা তাদের মর্যাদা, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ইত্যাদি আইনের ন্যায় বলবৎযোগ্য। এগুলো সংবিধানের অংশবিশেষ।

৮. গণপরিষদ। অনেক সময় গণপরিষদকেও সংবিধানের উৎস বলা হয়। যেমন- বাংলাদেশে গণপরিষদ সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের জন্য খসড়া সংবিধান কমিটি গঠন করে।

৯. সন্ধি ও চুক্তি। বিভিন্ন সন্ধি ও চুক্তিসমূহ সংবিধান রচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। যেমন- ব্রিটিশ সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে ১৬২৮ সালে প্রবর্তিত 'The Petition of Rights', ১৬৮৯ সালের 'The Bill of Rights' এবং ১৭০০ সালের "The Act of Settlement পুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশেও সংবিধান রচনায় বিভিন্ন চুক্তি বা সম্মির অনন্য ভূমিকা পালন করে। তাই সন্যি ও চুক্তিসমূহকে সংবিধানের উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়।

১০. সাধারণ আইন। দীর্ঘদিন যাবৎ যে সমস্ত প্রথা বা আচার প্রচলিত ছিল, পরে সেগুলো নানা স্তর ও যুগ অতিক্রম করে সাধারণ আইনে পরিণত হয়েছে। সাধারণ আইন সংবিধান রচনার একটি অন্যতম অংশ। ব্রিটিশ সংবিধানের একটি প্রধান উৎস হলো সাধারণ আইন।

সংবিধানের শ্রেণীবিভাগ

বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সংবিধানের প্রকৃতি ও যথার্থ স্বরূপ জানার সুবিধার্থে সংবিধানের শ্রেণীবিভাগ কর্য হয়ে থাকে। সংবিধান বা শাসনতন্ত্রের প্রকারভেদ বা শ্রেণীবিভাগ নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মতভেদ দেখা যায়। যেমন-

ক. আইনসভার মাধ্যমে প্রণীত এবং বিভিন্ন সময় থেকে প্রচলিত বিভিন্ন প্রকার প্রথার সমন্বয়ের গঠিত এ দু'টি দৃষ্টিকোণ থেকে সংবিধানকে মূলত দুইভাগে ভাগ করা হয়। যথা।

  1. লিখিত সংবিধান এবং
  2. অলিখিত সংবিধান।
খ. সংশোধনের পদ্ধতি অনুযায়ী সংবিধানকে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা
  • সুপরিবর্তনীয় সংবিধান এবং
  • দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান।
গ. ক্ষমতা বণ্টনের পদ্ধতি অনুযায়ী সংবিধানকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

  • এককেন্দ্রিক সংবিধান,
  • যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান,
  • রাষ্ট্রশাসিত সংবিধান এবং
  • সংসদীয় সংবিধান।
ঘ. সরকার পরিচালনায় জনসাধারণের অংশগ্রহণের নীতি অনুযায়ী সংবিধানকে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যথা:
  1. গণতান্ত্রিক বা প্রজাতান্ত্রিক ও
  2. অভিজাততান্ত্রিক বা রাজতান্ত্রিক সংবিধান।
৫. রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে সংবিধানকে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা।
  1. নীতি সংবদ্য সংবিধান এবং
  2. নিরপেক্ষ সংবিধান।
চ. মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শাসনতন্ত্রকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা।
  1. বুর্জোয়া শাসনতন্ত্র বা সংবিধান এবং
  2. শ্রমিক শ্রেণীর সংবিধান।
লিখিত সংবিধান (Written constitution): একটি রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনার মৌলিক নিয়মকানুনগুলো যখন এক বা একাধিক দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে, তখন তাকে লিখিত সংবিধান বলে। লিখিত সংবিধানে বাষ্ট্র পরিচালনার অত্যাবশ্যক মূলনীতিগুলো সুস্পষ্টভাবে লিখিত থাকে।অধ্যাপক গেটেল বলেছেন, "যখন কোন দলিলে সরকারি প্রশাসনব্যবস্থার সকল মৌলিক নীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে,

তখন তাকে লিখিত সংবিধান বলে।এ সংবিধান সাধারণত একটি গণপরিষদ কনভেনশন কর্তৃক প্রণীত ও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়। এ সংবিধানসমূহ রীতিনীতি, প্রথা প্রভৃতির ভিত্তিতে গড়ে উঠে না। লিখিত সংবিধানের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও প্রাচীন উদাহরণ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান।

অলিখিত সংবিধান (Unwritten constitution): অলিখিত সংবিধান বলতে প্রচলিত প্রথা, দেশাচার ও রীতিনীতির সমষ্টিকেই বুঝায়। এরূপ সংবিধান নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও উদ্যোগের মাধ্যমে রচিত ও গৃহীত হয় না।

'গণপরিষদ' বা 'আইনসভা' এরূপ সংবিধান নির্দিষ্ট সময়ে রচিত করে না। যুক্তরাজ্য (UK) অলিখিত সংবিধানের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। এগুলো কোন দলিলে সন্নিবেশিত না থাকলেও লিখিত সংবিধানের মতোই এগুলো সরকার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

সুপরিবর্তনীয় সংবিধান (Flexible constitution):আইনসভা যে সংবিধানকে সাধারণ আইন প্রণয়ন পদ্ধতির ন্যায় সংশোধন বা পরিবর্তন করতে পারে তাকে সুপরিবর্তনীয় সংবিধান বলে। এরূপ সংবিধান পরিবর্তনের জন্য বিশেষ কোন পদ্ধতি অনুসরণের প্রয়োজন হয় না।

সাধারণভাবে আইনসভায় উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটদানকারীর সমর্থনে এ সংবিধান সংশোধন করা যায়। ইংল্যান্ডের অলিখিত সংবিধান এবং নিউজিল্যান্ডের লিখিত সংবিধান সুপরিবর্তনীয় সংবিধানের উদাহরণ।

সংবিধানের প্রকৃতি ও পরিধি

যে কোন ধরনের সরকারের উৎস হচ্ছে তার সংবিধান। বস্তুত যে কোন ধরনের সরকারের পথ নির্দেশকই হচ্ছে এর সংবিধান, যা সরকারের মৌলিক বিষয়াদির সাথে সংশ্লিষ্ট সমগ্র বিধিবিধানকেই অন্তর্ভুক্ত করে। Prof. Finer তাঁর 'The Theory and Practice of Modern Government' গ্রন্থে সংবিধানের প্রকৃতি সম্পর্কে বলেছেন,

"মৌল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সুষম ব্যবস্থাই সংবিধান।" (The system of fundamental political institutions is the constitution). Finer এর উক্তি ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করলে সংবিধানের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে দুটি বিষয় খুঁজে পাই। যথা:
  •  সুষম ব্যবস্থা (System) এবং
  • মৌল বিধানাবলি (Fundamentals)।
১।সুষম ব্যবস্থা: সুষম ব্যবস্থা কথাটির প্রসঙ্গে Prof. Finer এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, বিভিন্ন মৌল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান পরস্পরের সাথে অপরিহার্যভাবেই সম্পর্কযুক্ত এবং এগুলো যে সমাজে প্রচলিত রয়েছে, সে সমাজের প্রকৃতির সাথে নিবিড়ভাবে সম্বন্ধযুক্ত।

একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে এর সাথে সম্বন্ধযুক্ত অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান প্রসঙ্গে অধ্যয়ন করতে হবে। কারণ এদের সম্পর্কের দিক হতে বলতে গেলে প্রত্যেক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানেই একে অপরকে তাৎপর্য প্রদান করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আইনসভা,

নির্বাহি বিভাগ, নির্বাচকমণ্ডলী, রাজনৈতিক দল ইত্যাদি কোন সামঞ্জস্যে না আসা পর্যন্ত পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করে যেতে বাধ্য হয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ, আইনসভার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে নির্বাহি বিভাগ বা বিচার বিভাগ বা জনগণের ক্ষমতা হ্রাস পায়।

এতে বুঝা যায় যে, মৌল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের কোন একক যন্ত্রেরই অংশবিশেষ হিসেবে কাজ করে এবং কোনটিই অপরটি হতে এদের গুরুত্ব, প্রভাব এবং কার্যকারিতার দিক দিয়ে বিচ্ছিন্ন নয়।যখন ইংল্যান্ডে ১৯১১ সালের পার্লামেন্ট অ্যাক্ট হাউস অব লর্ডসের ক্ষমতা হ্রাস করেছিল,

তখন পার্লামেন্টের গণনির্বাচিত নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের মেয়াদ সাত বছর হতে পাঁচ বছরে হ্রাস করে তার এ ক্ষমতা বৃদ্ধিকে আংশিকভাবে প্রতিহত করা হয়। আবার যুক্তরাষ্ট্রে ন্যায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগ করে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষত আইনসভা এবং নির্বাহি বিভাগকে পৃথক করা হয়,

অথচ যেখানে ফলপ্রসূভাবে কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে নিবিড় সংযোগ থাকা উচিত সেখানে রাজনৈতিক দলই এ প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সংযোগ সাধনকারী হিসেবে কাজ করে মূল্যবান ভূমিকা পালন করে।সংক্ষেপে বলতে গেলে, সংবিধানের কোন অংশের যথার্থ তাৎপর্যকে বুঝতে হলে তাকে অন্যান্য অংশের সাথে একসাথে অধ্যয়ন করতে হবে

এবং সংবিধানের সকল অংশের মধ্যে অবশ্যই কার্যকারিতাগত সহযোগিতা থাকতে হবে। বস্তুত প্রত্যেক সংবিধানই এটার সমসাময়িক কালে সমাজের বিরাজমান বাস্তব পরিস্থিতি এবং প্রচলিত বিশ্বাসের ফলস্বরূপ। যে কোন সংবিধানই সমসাময়িক সমাজের প্রয়োজনসমূহ মিটানোর পথ নির্দেশ করতে সচেষ্ট হয়।

২।মৌল বিধানাবলি: মৌল বিধানাবলি বলতে দেশের মৌলিক আইন বা প্রত্যেক সংবিধানের দ্বারা নাগরিকগণের প্রতি নিশ্চিতকৃত মৌলিক নিশ্চয়তাগুলোকেই (Fundamental Gurantees) বুঝায়, যেগুলো ব্যতীত জনসাধারণের কল্যাণ সাধন করা সম্ভব নয়।

মূলত সকল রাষ্ট্রই এ কথা দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করে যে, এদের মৌলিক বিধান বা প্রতিষ্ঠানসমূহ রয়েছে এবং এরা এসব মৌলিক বিধানকে সংবিধান বা তার সমতুল্য অন্য কোন নামে অভিহিত করে থাকে। অন্তত সপ্তদশ শতাব্দীর পর হতেই গ্রেট ব্রিটেনে সংবিধান সাধারণ আইনের চেয়ে উচ্চতর ক্ষমতাশালী এবং অধিকতর মৌলিক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

বস্তুত মানুষের স্বাধীনতা, সম্পত্তি, পারিবারিক জীবন, ধর্ম, দেশ, বন্ধুত্ব ইত্যাদিকে কোন অবস্থাতেই প্রতিনিয়ত বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া যায় না। দৃষ্টান্তস্বরূপ, বাংলাদেশের সংবিধানে কতকগুলো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা বিধান মৌলিক হিসেবে স্বীকৃত এবং গৃহীত হয়েছে নাগরিকগণের জীবনধারণের স্বাধীনতা,

ব্যক্তিস্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, সুবিচার এবং সমআচরণ লাভের স্বাধীনতা, এককেন্দ্রিক প্রেসিডেন্সিয়াল সরকার ব্যবস্থা, বহুদলীয় ব্যবস্থা ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, মৌলিক বিধান বা প্রতিষ্ঠানগুলো যে অপরিবর্তনীয় তা নয়।

কোন জনসমাজে প্রচলিত আদর্শগত মূল্যবোধসমূহের সাথে মৌলিক বিধান বা প্রতিষ্ঠানগুলোর এক সুনিশ্চিত সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে এমন কোন মৌলিক বিধান নেই, যা পরিবর্তিত হয় না বা যা পরিবর্তন করা উচিতও নয়।

সংবিধানের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা বা উপকারিতা

একটি উত্তম ও কার্যকরী সংবিধান যে কোন রাষ্ট্রের অতি মূল্যবান সম্পদ। সংবিধানের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারিত হয়। সংবিধানের মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন বিভাগের ক্ষমতা বণ্টন এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। নিম্নে রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা বা উপকারিতা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. দেশের মৌলিক পরিচয় প্রতিটি নাগরিকেরই কর্তব্য ও দায়িত্ব হচ্ছে তার নিজ দেশের পরিচয় জানা। এমতাবস্থায় সংবিধান এ সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে থাকে। রাষ্ট্রীয় সীমানার বর্তমান ও

ভবিষ্যৎ নির্ধারণ, জাতীয় সঙ্গীত, পতাকা ও প্রতীক, ধর্মীয় অধিকার, রাষ্ট্রীয় ভাষা, নাগরিকত্ব জাতীয় স্মৃতি নিদর্শন, জাতীয় সংস্কৃতি প্রভৃতি মৌলিক বিষয় কিরূপ হবে সে সম্পর্কে সংবিধান ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে।

২. জাতীয় আদর্শ ও চেতনা লাভ: সংবিধানে কোন জাতির মৌলিক আদর্শ, লক্ষ্য ও ধ্যানধারণা স্পষ্টভাবে বর্ণিত থাকে। এসব মূল্যবোধ সংবিধানে এজন্যই লিপিবদ্ধ করা হয় যেন একটি জাতি নিজেকে অন্যান্য জাতি থেকে আলাদা পরিচয়ে চিনতে পারে, যা তাকে দেশের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে। ফলে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টিতে সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

৩. জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ সংবিধানে সে দেশের জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা থাকে। এমনকি অধিকারসমূহ কিভাবে সংরক্ষণ করা যাবে তার দিক নির্দেশনাও থাকে।

আর সংবিধান অধ্যয়ন করলে নাগরিকগণ তাদের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। ফলে তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠে। সরকার ব্যক্তির এরূপ কোন অধিকার ক্ষুণ্ণ করতে চাইলে সে আদালতের সাহায্য চাইতে পারে ফলে সরকার সেসব অধিকার লঙ্ঘনের সাহস পায় না।

৪. স্বৈরাচার রোধ অনেক সময় কোন কোন সরকার তার নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য স্বৈরশাসকে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে সংবিধান সরকারকে স্বৈরাচারী হতে বাঁধার সৃষ্টি করে। কেননা সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ ও মৌলিক আইন হিসেবে স্বীকৃতি পায়, ফলে সংবিধানের বাইরে গিয়ে সরকারের পক্ষে কোন স্বৈচ্ছাচারী আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হয় না।

৫. আন্তঃবিভাগের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা লাভ: সংবিধান পাঠে নাগরিকগণ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে। কোন বিভাগের কি কাজ এবং নাগরিকগণ তাদের কোন সমস্যা সমাধানের জন্য কোন বিভাগের দ্বারস্থ হবে সংবিধানে তার দিক নির্দেশ দেয়া থাকে। এর ফলে এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

৬. জরুরি বিধানাবলি: রাষ্ট্র সংকটকালীন সময়ে উপনীত হলে কিভাবে পরিচালিত হবে, যুদ্ধকালীন সময়ে রাষ্ট্রের কর্তব্য কি, কোন আইন বলবৎ থাকবে, নাগরিকদের কি কি অধিকার খর্ব বা রহিত করা হবে, মোটামুটি একটি নির্দেশনা সংবিধানে দেয়া থাকে। অতএব, এ সম্পর্কে ধারণা সংবিধান পাঠে নাগরিকরা জানতে পারে।

৭. সংবিধানের মর্যাদা উপলব্ধি: সাধারণ আইন থেকে সাংবিধানিক আইনের যে আলাদা মর্যাদা সংবিধান সংশোধন পদ্ধতির আলোকে তা উপলব্ধি করা যায়। সংবিধানে সাংবিধানিক আইন ও সাধারণ আইনের মধ্যে পার্থক্য করা হয় এবং এ ধরনের আইনের মধ্যে সাংবিধানিক আইন অধিকতর মর্যাদাযুক্ত বলে গণ্য করা হয়। এ কারণে সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাও আনুগত্যবোধের সৃষ্টি হয়।

৮. সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ: দেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে কোন ধরনের শাসনব্যবস্থা গ্রহণীয় হবে তা সংবিধানেই লিপিবদ্ধ করা হয়। কোন বিশেষ পন্থায় দেশের সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠবে সে সম্পর্কেও সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ থাকে।যেমন- বাংলাদেশ, ভারত ও ব্রিটেনের সরকার ব্যবস্থা পার্লামেন্ট শাসিত, 

প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন করে সময়োপযোগী সরকার পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। নির্দিষ্ট মেয়াদের পর সরকার ব্যবস্থা কোন নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিবর্তিত হবে, ভোটাধিকার ব্যবস্থা কেমন হবে,আইনসভার সদস্যদের যোগ্যতা কি হবে প্রভৃতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশ সংবিধানেই দেয়া থাকে।

৯. পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেশের সাথে অন্য দেশের সম্পর্ক কিরূপ হবে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি, নিরাপত্তা, সংহতি ও চুক্তি কোন নীতিতে পরিচালিত হবে তার একটি দিকনির্দেশনা সংবিধানে উল্লেখ থাকে।

এক দেশ যাতে অন্য দেশকে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ বা আক্রমণ করতে না পারে তারজন্য আন্তর্জাতিক সংবিধান আছে। উদাহরণ হিসেবে জাতিসংঘ সনদের কথা বলা যায়।

১০. আইনশৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: কোন দেশের উন্নয়নের মূলে সেদেশের সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা অনন্য ভূমিকা পালন করে। দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে কি বাহিনী গঠিত হবে, এদের ভূমিকা ও এখতিয়ার কি রকম হবে এবং নাগরিকগণ এক্ষেত্রে কি আচরণ করবে তার একটি নির্দেশনা সংবিধানে উল্লেখ থাকে।

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কোন কোন বাহিনী নিয়ে গঠিত হবে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ কিভাবে নির্ধারিত হবে, যুদ্ধকালীন সময়ে নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি হবে, সর্বাধিনায়ক কে হবেন ইত্যাদি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে নির্দেশনা সংবিধানে দেয়া থাকে। অতএব, সংবিধান এসব বিষয়ে নাগরিকদের সচেতন করতে সাহায্য করে।

আর সংবিধান সুষ্ঠু প্রশাসনের জন্য ক্ষমতা বণ্টন, দায়িত্ব পালন, তত্ত্বাবধান, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়া থাকে। কেউ এর বিরুদ্ধাচরণ কিংবা লঙ্ঘন করলে আইন অনুযায়ী শাস্তি পাবে। তাই সুষ্ঠু প্রশাসনের মাধ্যমে সুষ্ঠু দেশ পরিচালনায় সংবিধান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১২. শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক নির্ণয় উত্তম সংবিধানের মাধ্যমেই জনগণের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক নির্ণীত হয়। শাসন ও শাসিতের দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুনির্দিষ্ট বিধান সংবিধানে উল্লেখ থাকে। তাই এর মাধ্যমেই শাসন ও শাসিতের সম্পর্ক নির্ধারিত হয়।

১৩. অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি কি হবে, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নির্ধারণ এবং ভবিষ্যৎ এখতিয়ার কতটুকু হবে সে ব্যাপারে সংবিধানে নির্দেশ করা থাকে। দেশ তার প্রয়োজনে কি ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, পুঁজিবাদ, সাম্যবাদ না কি মিশ্র অর্থনীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হবে সে

বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ থাকে। ফলে দেশের অর্থনীতি সে অনুযায়ী পরিচালিত হয়। সুতরাং নাগরিকগণ সংবিধানের মাধ্যমে তার অর্থনৈতিক অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।

১৪. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা প্রতিটি রাষ্ট্রের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যাবশ্যক। কেননা জাতীয় উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। কোন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেন অস্থিতিশীল না হতে পারে সেজন্য সংবিধানে বিভিন্ন আইনকানুন ও নিয়মনীতি লিপিবদ্ধ থাকে। অতএব রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্যও সংবিধান অপরিহার্য।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সংবিধান হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূল চালিকাশক্তি। সংবিধান ছাড়া কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা অসম্ভব। সংবিধান ভিন্ন কোন রাষ্ট্র বা সংগঠনই সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে না। সংবিধানের মাধ্যমেই কোন দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষিত হয় এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হয়।

সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ও বিভিন্ন নিয়মকানুনসমূহ সন্নিবেশিত থাকে। ফলে নাগরিকগণ তাদের অধিকার ও দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে অবগত হতে পারে। অতএব একটি সর্বসম্মত মৌলিক নীতিমালা তথা সংবিধান প্রণয়নের বিকল্প নেই।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক উপলক্ষে আর্টিকেল থেকে আপনারা সংবিধান সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা লাভ করেছেন। আশা করি এই ধারণা দেশের সংবিধান সম্পর্কে আপনাদের সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। আর যদি আপনাদের জ্ঞানের সামান্যতম বৃদ্ধি হয় তাহলে আমাদের আর্টিকেল এর সফলতা অর্জিত হবে।

যদি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে সহপাঠীদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন যাতে করে তারাও এই সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। আর এ ধরনের জ্ঞান মূলক বিজ্ঞান ভিত্তিক কিংবা আরো অন্যান্য বিষয়ের ভিত্তিক আর্টিকেলগুলো পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।

পরিশেষে আর্টিকেলটি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ💚।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিপ্লব আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রত্যেকটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url